Ajker Patrika

কাজ না করেই নলডাঙ্গা মেয়রের টাকা উত্তোলন

নাটোর প্রতিনিধি
কাজ না করেই নলডাঙ্গা মেয়রের টাকা উত্তোলন

একটি গ্রামীণ সড়কের মাত্র ২০ হাত রাস্তায় খোয়া বিছিয়ে চলাচলের উপযোগী করতে সর্বোচ্চ খরচ হয় ২০ হাজার টাকার কম। খোয়া না ফেলেই রাস্তা মেরামত প্রকল্পের নামে পাঁচ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাটোরের নলডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান মনিরের বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, পৌরসভার প্যানেল মেয়র থেকে কাউন্সিলরদের হুমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে রেজল্যুশনে স্বাক্ষর, ভুয়া প্রকল্পের নামে ভাউচার বানিয়ে টাকা আত্মসাৎ, নিজের ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করার অভিযোগ উঠেছে মেয়রের বিরুদ্ধে।

মেয়র মনির নলডাঙ্গা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

পাঁচটি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় মেয়রের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগে লিখিত অভিযোগ করেছেন নলডাঙ্গা পৌরবাসী। এসব অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন কাউন্সিলররা। অভিযোগের একটি কপি আজকের পত্রিকার কাছে এসেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার আইন অনুসারে মেয়র ও তাঁর স্বজনদের নিজস্ব নামে ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করে উন্নয়নকাজে সম্পৃক্ত না হওয়ার সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও পৌরসভার কয়েকজন তালিকাভুক্ত ঠিকাদারের সঙ্গে অংশীদারত্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার নগর উন্নয়ন অবকাঠামো প্রকল্পের কাজ করছেন মেয়র মনির।

মৌসুমি ট্রেডিং নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে মেয়র মনির ও অন্য চার ঠিকাদারের করা অংশীদারি অঙ্গীকারনামা থেকে জানা গেছে, ঠিকাদার রইস উদ্দিন, জিল্লুর রহমান, সাবরিনা সুলতানা ও সোহাগ হোসেন নামমাত্র থাকলেও কাজটি করছেন মেয়র মনির।

পৌরসভার কাউন্সিলরদের অভিযোগ, গত মার্চে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ধোবাপুকুর কবরস্থান থেকে তেঁতুলতলা পর্যন্ত ২০ হাত সড়ক খোয়া দিয়ে মেরামতের জন্য পাঁচ লাখ টাকার প্রকল্প নিয়ে কাজ না করে টাকা তুলে নেন মেয়র মনির। পৌর এলাকায় ১৫টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রকল্পের ব্যয় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা হলেও ভুয়া ভাউচার দেখিয়ে পাঁচ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন তিনি।

তাঁদের আরও অভিযোগ, পৌর এলাকায় মশকনিধনের নামে ১২৫ টাকা লিটারের নিম্নমানের ভিকন স্প্রে কিনে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় দেখান তিনি। মুজিব জন্মশতবার্ষিকীর নামে একটি কনসার্ট আয়োজন করে সাত লাখ টাকা খরচ দেখিয়ে আদায় করেন মেয়র। পৌরসভা ভবন রং করতে ৫০ হাজার টাকা খরচ হলেও পাঁচ লাখ টাকার ভাউচার দেখিয়ে টাকা তুলে নিয়েছেন তিনি।

নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে মেয়র মনিরের অংশীদার রইস উদ্দিন বলেন, মেয়র এখনো তাঁদের সঙ্গে অংশীদারত্বে আছেন। আইনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মেয়রই মূলত প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে রয়েছেন।

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন বলেন, তাঁর এলাকার ২০ হাত রাস্তা খোয়া ফেলার নামে পাঁচ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন মেয়র। অথচ কোনো কাজ করা হয়নি। এ ছাড়া মেয়র পৌর পরিষদের মাসিক সভা ডেকে রেজল্যুশনে জোর করে তাঁদের স্বাক্ষর নেন। সভায় ঢুকে স্বাক্ষর না করে বের হয়ে যাওয়ার কোনো উপায় নেই।

পৌরসভার কাউন্সিলর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহামুদুল হাসান মুক্তা বলেন, মেয়র সরকারি ক্রয় নীতিমালা-২০০৮ লঙ্ঘন করে সব কাজ সম্পন্ন করেন। তাঁর কাজ জায়েজ করার জন্য পরে কাউন্সিলরদের ডাকেন। পৌরসভায় ঢুকলে তাঁর কথা না শুনে ফিরে আসার উপায় থাকে না।

তবে মেয়র মনির অংশীদারত্বে পৌরসভার কাজের ঠিকাদারির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে ঠিকাদারি করতেন। এখন তিনি পৌরসভার কোনো কাজের ঠিকাদারি করেন না। মুজিববর্ষ উদ্‌যাপনে কাউন্সিলর মাহাবুরকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিই সব খরচ করেছে। এ ছাড়া কাজ না করে রাস্তার বিল বাবদ পাঁচ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মেয়র বলেন, ‘এ ব্যাপারে সামনাসামনি কথা বলব।’

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাদিম সরওয়ার বলেন, মেয়র মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তবে কাউন্সিলররা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তাঁরা অভিযোগ দিলে তদন্ত করে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত