Ajker Patrika

কাঙ্ক্ষিত ঋণ যাচ্ছে না চামড়া খাতে

জয়নাল আবেদীন খান, ঢাকা
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২২, ১২: ১০
Thumbnail image

কোরবানির পশুর সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়াই মূলত চাহিদার ৬০ শতাংশের বেশি পূরণ করে থাকে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চামড়া খাতে ঋণের প্রতিশ্রুতি ও বিতরণ কমে গেছে। পাশাপাশি চামড়া সংগ্রহেও ভাটা পড়েছে। যার বড় কারণ, ব্যবসায়ীদের চামড়া কেনায় পর্যাপ্ত অর্থের সংকট। অধিকাংশ ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আর টাকার জোগান কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা চাহিদামতো চামড়া কিনতে পারছেন না। এতে অনেক এলাকায় পশুর চামড়া অবিক্রীত থাকে। যার ফলে চামড়া বিক্রির অর্থ থেকে বঞ্চিত হয় গরিব ও অসহায় মানুষ।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি ২০২২ সালে ঈদের সময় চামড়া কিনতে ১১টি ব্যাংক ব্যবসায়ীদের ৪৪৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এই প্রতিশ্রুতির পরিমাণ ২০২১ সালে ছিল ৫৮৩ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা খেলাপি পরিশোধ ব্যতীত পেয়েছিলেন প্রায় ৬০ কোটি টাকা। আর ২০২০ সালে ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ৬৪৪ কোটি টাকা। কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা পেয়েছিলেন মাত্র ৬৫ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) সূত্র থেকে জানা গেছে, কাঁচা চামড়া সংগ্রহের জন্য মোট ঋণের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশের ৬১টি তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১১টি ৯ মাস মেয়াদে ঋণ দিতে প্রতিশ্রুতি দেয়। প্রতিশ্রুতিও খুব একটা পূরণ করা হয় না। ২০২২ সালে ৪৪৩ কোটি টাকা প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ব্যাংকগুলো ছাড় করেছে মাত্র ১৭০ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালে চামড়া খাতে এই ছাড় করা ঋণের মোট অর্থের পরিমাণ ছিল ১৬৫ কোটি টাকা। তার আগের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালে এই পরিমাণ ছিল ২৩০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২২ সালের মার্চ শেষে চামড়া খাতে মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ২৬৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৭ হাজার ১২৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। বেসরকারি ব্যাংকে ৪ হাজার ৯৫৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকে ১৮২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আর ২০২২ সালের মার্চ শেষে এ খাতে খেলাপি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৪১ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেকের বেশি জোগান আসে প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহার কোরবানির পশুর চামড়া থেকে। এ সময়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা হলে একদিকে মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে, অন্যদিকে কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। এ লক্ষ্যে চামড়া ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে, যাতে চামড়া অবিক্রীত অবস্থায় নষ্ট না হয়।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঈদের সময় চামড়া খাতে ঋণের চাহিদা প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু অধিকাংশ ব্যাংক এ খাতে ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। হাতে গোনা কয়েকটি ব্যাংক চামড়া খাতে ৯ মাস মেয়াদি ঋণ দেয়। যার বরাদ্দ থাকে ৫০০ কোটির কম। আর ব্যবসায়ীরা পেয়ে থাকেন বরাদ্দের নামমাত্র একটা অংশ। এতে একটা শুভঙ্করের ফাঁকি রয়েছে। তবে ব্যাংক খেলাপির নামে ঋণ দিতে আগ্রহ কম দেখায়। অথচ ব্যাংকের অন্যান্য খাতে খেলাপি অনেক বেশি। ব্যাংক থেকে চাহিদা অনুযায়ী ঋণ পেলে চামড়ার চাহিদা পূরণ হতো ও গরিব-দুঃখী মানুষের উপকার হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত