Ajker Patrika

ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষে সম্ভাবনার ডালি

শেখ জাবেরুল ইসলাম, গোপালগঞ্জ
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ০৯: ০৯
Thumbnail image

ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষের মাধ্যমে দেশের জলাবদ্ধ ও অনাবাদি পতিত জমি আসবে কৃষকদের ব্যবহারের আওতায়। এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ প্রসারিত হলে সারা বছর পানির নিচে থাকা দেশের সব অনাবাদি জমিও রূপ নেবে আবাদি জমিতে।

পানির ওপর বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় ডালি। বাঁশ, নাইলনের শক্ত নেট ও ছিদ্রযুক্ত পলিথিন দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে বানানো হয় এ ডালি। ভার্মি কম্পোস্ট মাটি আর জৈব সার ভর্তি করে সেই ডালিতে রোপণ করা হয় লাউ, কুমড়া, ঝিঙে, ধুন্দল, শসা ও চিচিঙ্গা।

গোপালগঞ্জে জলাবদ্ধ ও অনাবাদি পতিত জমিতে ডালি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে সাড়া ফেলে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। বিলের পানির ওপর ডালি তৈরি করে চাষাবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার সবজি। এ জেলায় এই প্রথম ডালি পদ্ধতিতে ৯০টি ডালিতে সবজির আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের উদ্ভাবিত নতুন এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এলাকার কৃষকেরা। আর এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ প্রসারিত হলে সারা বছর পানির নিচে থাকা অনাবাদি জমিও রূপ নেবে আবাদি জমিতে।

ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার একেবারে নেই বললেই চলে। পানি থাকার কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণও কম হয়। ফলে প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদন হয়। আর এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার একাংশে রয়েছে পাঁচটি বিল। এগুলো হলো পুবের বিল, জোয়ারিয়া বিল, মধুখালী বিল, হোগলার বিল ও তাড়াইল বিল। বছরের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধতার কারণে এসব বিলের প্রায় সব জমিই দীর্ঘ ৪০ বছর অনাবাদি পড়ে ছিল। সম্প্রতি বালাডাঙ্গা গ্রামের পুবের বিলে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বংশীয়দের ৮০ বিঘা জমি বাঁশের তৈরি বানা দিয়ে ঘিরে সেখানে হচ্ছে মাছ চাষ। তারই একটি অংশে করা হয়েছে বিশেষ পদ্ধতিতে এ সবজির আবাদ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাঁশের খুঁটির সঙ্গে ঝুলে আছে ডালি আর তার ওপরে নেটে ঝুলছে নানা ধরনের সবজি। দুই মাস আগে রোপণ করা সব গাছই এখন ভরে গেছে সবজিতে। লাভজনক হওয়ায় ভবিষ্যতে ডালি পদ্ধতিতে চাষাবাদ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করছেন টুঙ্গিপাড়ার অন্য কৃষকেরা।

ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ করা কৃষক আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে জমিতে কোনো ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব না, সব সময় পানি জমে থাকে, সে জমিতে ডালি পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। ডালি পদ্ধতিতে সবজি চাষ করতে কোনো প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না, কীটনাশকও তেমন স্প্রে করতে হয় না। পানি থাকার কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম।

পার্শ্ববর্তী জমির কৃষক জাহিদ বিশ্বাস আজকের পত্রিকাকে বলেন, এই ডালি পদ্ধতি আগে কোনো দিন দেখিনি। এখানে প্রথম দেখলাম। দেখে মনে হলো, এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে পতিত জমি আর কোনো দিন পড়ে থাকবে না।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক জৈব সার দিয়ে ডালিগুলো তৈরি করা হয়েছে। ৯০টি ডালি তৈরির জন্য প্রথমে একবার ৩ কেজি ডিএপি সার ব্যবহার করা হয়েছে। পরে আর কোনো রাসায়নিক সার এখানে ব্যবহার করা হয়নি। পানির ওপর ডালিগুলো থাকার কারণে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ছিল।

এ জন্য ছত্রাকনাশক বা কীটনাশক ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। প্রাথমিক পর্যায়ে ৯০টি ডালি তৈরি করা হয়েছে। পরে আরও ডালি বানানোর মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হবে। এই পদ্ধতিকে সম্প্রসারণ করা গেলে সারা দেশের দীর্ঘমেয়াদি অনাবাদি ও জলাবদ্ধ যে পতিত জমি রয়েছে, তার সদ্ব্যবহার করা যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত