ডয়চে ভেলে

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় আর যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাঁদের মধ্যে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে আছেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আইনজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। কেউ কেউ এটাকে ‘পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল’ বলছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, যে কোনো বিচার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন তোলা সম্ভব, কিন্তু আইনগতভাবে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘এই বিচার তো প্রচলিত কোনো আইনের বিধান দ্বারা হচ্ছে না। এই বিচার তো স্বাভাবিক না, অস্বাভাবিক। এই আইনটা করা হয়েছিল একাত্তরের জন্য। এখন ২০২৪ সালে এই আইনে বিচার হচ্ছে। ভবিষ্যতে তো যারা ২০২৫ বা ২০২৬ সালে থাকবে, তাঁদের বেলায়ও হতে পারে।’
আইনের ব্যাখার বিষয়ে জানতে চাইলে জনাব পান্না বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো সেলফ কন্ট্রাডিক্টরি বিষয় আছে। ১৯৭১ সালের কয়েকজন অভিযুক্ত আছেন, যাদের বিচার এখানে চলছিল। সেগুলোও তো করতে হবে। এখন ’৭১-এর বিচার বাদ দিয়ে ২৪ সালের মামলা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে হোক আর যেভাবেই হোক, সেটা করতে হবে কেন? এটা তো ঠিক না। আমি মনে করি, এটা পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল।
এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে কে কী বলবে, সেটা কী আর এখন আমরা বলতে পারব? হাজারটা প্রশ্ন আপনি এমনিতেই করতে পারেন। কিন্তু আইনগতভাবে প্রশ্ন তোলার কি সুযোগ আছে?’
একই হত্যার দুটি বিচার হয়ে যাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ভিন্ন জিনিস। এখন পর্যন্ত তো কোনো হত্যার বিচার তো হয়নি। এখানে কোনো ডাবল জিও পার্টি হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আছে, এখানে শুধু তাঁদের বিচার হচ্ছে। আলাদা কোর্টে যেটা হচ্ছে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলে বিচার চলতে বাধা নেই।’
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা: সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ
অভিযোগ-১
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রনাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-২
শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক আসামি শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা তাঁদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৪
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা মহানগরীর চাঁনখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-৫
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়ছাত্র-জনতাকে গুলি করে তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ দেন এবং সেই সাথে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১৬ জুন দিন ধার্য করেন। এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে সেদিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে, যেখানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ১৩৫ পৃষ্ঠার। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। ট্র্যাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও মো. আব্দুস সোবহান তরফদার শুনানি করেন। এ সময় অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার শুরু হলো, তা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অবশ্যই উঠতে পারে। কারণ, এখানে যে চার্জগুলো আনা হচ্ছে, সেটা এই আইনের আওতায় আসে কি না, সেটা একটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা। এরপর ৫ আগস্ট বা তাঁর আগের ঘটনা নিয়ে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, সেখানে খণ্ড আকৃতির সংজ্ঞা নিয়ে ওই আইনের আন্ডারে বিচার করছে, সেটা সব সময় একটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। পুরো বিষয়টা বোঝা যাবে চার্জ গঠন হলে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং এ আইনের সংমিশ্রণে যখন ট্রায়াল শুরু হবে, তখন বুঝতে পারবে ওনারা আইনসিদ্ধভাবে বিচার করছেন, নাকি করেননি। এটা অবশ্যই বলে রাখা উচিত, হত্যার জন্য ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে। আবার একই হত্যার ঘটনায় আলাদাভাবে একটা মামলা পেন্ডিং আছে। যেমন ধরেন চাঁনখাঁরপুলে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আবার গণহত্যার জন্য এখানে বিচার করা হচ্ছে। ফলে শুরু থেকেই একই ঘটনায় দুই আইন ব্যবহার করে প্যারালাল প্রোসেডিং চলছে। এটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছি। ফলে একপর্যায়ে দুটোই আইনের চোখে ভুল বিচার হিসেবে গণ্য হবে।’
উদাহরণ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘যেমন ধরেন আপনি আমার চেম্বারে এলেন এবং যাওয়ার সময় একটা মোবাইল ও দুইটা ঘড়ি চুরি করে নিয়ে গেছেন। এই ঘটনায় আমি আপনার বিরুদ্ধে প্রথমে ঘড়ি চুরির জন্য একটা মামলা দিলাম এবং পরে ঘড়ি ও মোবাইল চুরির জন্য আরেকটা মামলা দিলাম। কিন্তু দুইটা মামলা তো একসঙ্গে কোনোভাবেই চলতে পারে না। যেকোনো একটা চলছে। কিন্তু এখানে যখন আপনি সংবিধানের বাইরে বিচার করে ফেলছেন, তখন দুইটাই বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এক বিচারের জন্য দুইটা সাজা হতে পারে না। যেটাকে আমরা ডাবল জিও পার্টি বলি। আপনি পুরো আইনটাকে কমপ্লিট করছেন না। দুইটা শব্দ নিয়ে বলছেন, এইটা ওই আইনে আসে সেটা তো ভুল। আপনি তো ওই আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল পড়েননি।’
এ পর্যন্ত মোট ৩৩৯টি অভিযোগ
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে, যেখানে ৩৯টির তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিসকেস হয়েছে ২২টি। এসব মিসকেসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন, যাদের মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি ৮৭ জন।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে বলেন, বিএনপি নেতা হিসেবে বলেন আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বলেন, আমি মনে করি, যে কোনো বিচার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হওয়া উচিত। এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিচার তো এখনো হয়নি। ফলে বিচার হলে বলা যাবে, বিচারটা সঠিকভাবে হয়েছে, নাকি হয়নি। আর একই ঘটনায় দুইটা বিচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা হত্যাকাণ্ডের একটাই বিচার হবে।’
ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ অধিকতর সংশোধন করে গত বছরের ২৪ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, এখন থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা মামলার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। বার কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে বলেও গেজেটে জানানো হয়। প্রথম দফায় ট্রাইব্যুনাল আইনে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার যে ধারাটি খসড়ায় রাখা হয়েছিল, তা বাদ দে্য়ও হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ তখন মনে করেছিল, এই বিচারের সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়কে জড়ানো ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিষয় যুক্ত করা হলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কিন্তু নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আন্দোলনের মুখে গত ১১ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থকগোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ।
গাজী মোনাওয়ার হুসাইন আরেও বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে, তার পরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার অভিযোগও ট্রাইব্যুনালে
কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পারিবারিক কলহ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত বিষয়সহ অপ্রাসঙ্গিক কিছু অভিযোগও জমা পড়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার-বহির্ভূত অভিযোগও নিয়ে আসেন বিচারপ্রার্থীরা। ট্রাইব্যুনালের প্রতি মানুষের আস্থা থেকেই হয়তো তাঁরা এমনটি করেছেন।’
তামিম আরেও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ অনেকেই জানে না যে, এখানে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) কোন ধরনের বিচার হয়। এ জন্য অনেকেই তাঁদের সব ধরনের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। আমরা ইতিমধ্যে পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রী’র বিভেদ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত অভিযোগসহ নানা ধরনের অভিযোগ পেয়েছি, যেগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে না বলে সেগুলো আমরা আর তদন্তে পাঠাই না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে। এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে ইতিমধ্যে বিচার শেষে একাধিক ব্যক্তির রায় কার্যকরও হয়েছে।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় আর যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাঁদের মধ্যে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে আছেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আইনজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। কেউ কেউ এটাকে ‘পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল’ বলছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, যে কোনো বিচার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন তোলা সম্ভব, কিন্তু আইনগতভাবে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘এই বিচার তো প্রচলিত কোনো আইনের বিধান দ্বারা হচ্ছে না। এই বিচার তো স্বাভাবিক না, অস্বাভাবিক। এই আইনটা করা হয়েছিল একাত্তরের জন্য। এখন ২০২৪ সালে এই আইনে বিচার হচ্ছে। ভবিষ্যতে তো যারা ২০২৫ বা ২০২৬ সালে থাকবে, তাঁদের বেলায়ও হতে পারে।’
আইনের ব্যাখার বিষয়ে জানতে চাইলে জনাব পান্না বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো সেলফ কন্ট্রাডিক্টরি বিষয় আছে। ১৯৭১ সালের কয়েকজন অভিযুক্ত আছেন, যাদের বিচার এখানে চলছিল। সেগুলোও তো করতে হবে। এখন ’৭১-এর বিচার বাদ দিয়ে ২৪ সালের মামলা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে হোক আর যেভাবেই হোক, সেটা করতে হবে কেন? এটা তো ঠিক না। আমি মনে করি, এটা পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল।
এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে কে কী বলবে, সেটা কী আর এখন আমরা বলতে পারব? হাজারটা প্রশ্ন আপনি এমনিতেই করতে পারেন। কিন্তু আইনগতভাবে প্রশ্ন তোলার কি সুযোগ আছে?’
একই হত্যার দুটি বিচার হয়ে যাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ভিন্ন জিনিস। এখন পর্যন্ত তো কোনো হত্যার বিচার তো হয়নি। এখানে কোনো ডাবল জিও পার্টি হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আছে, এখানে শুধু তাঁদের বিচার হচ্ছে। আলাদা কোর্টে যেটা হচ্ছে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলে বিচার চলতে বাধা নেই।’
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা: সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ
অভিযোগ-১
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রনাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-২
শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক আসামি শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা তাঁদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৪
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা মহানগরীর চাঁনখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-৫
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়ছাত্র-জনতাকে গুলি করে তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ দেন এবং সেই সাথে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১৬ জুন দিন ধার্য করেন। এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে সেদিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে, যেখানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ১৩৫ পৃষ্ঠার। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। ট্র্যাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও মো. আব্দুস সোবহান তরফদার শুনানি করেন। এ সময় অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার শুরু হলো, তা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অবশ্যই উঠতে পারে। কারণ, এখানে যে চার্জগুলো আনা হচ্ছে, সেটা এই আইনের আওতায় আসে কি না, সেটা একটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা। এরপর ৫ আগস্ট বা তাঁর আগের ঘটনা নিয়ে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, সেখানে খণ্ড আকৃতির সংজ্ঞা নিয়ে ওই আইনের আন্ডারে বিচার করছে, সেটা সব সময় একটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। পুরো বিষয়টা বোঝা যাবে চার্জ গঠন হলে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং এ আইনের সংমিশ্রণে যখন ট্রায়াল শুরু হবে, তখন বুঝতে পারবে ওনারা আইনসিদ্ধভাবে বিচার করছেন, নাকি করেননি। এটা অবশ্যই বলে রাখা উচিত, হত্যার জন্য ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে। আবার একই হত্যার ঘটনায় আলাদাভাবে একটা মামলা পেন্ডিং আছে। যেমন ধরেন চাঁনখাঁরপুলে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আবার গণহত্যার জন্য এখানে বিচার করা হচ্ছে। ফলে শুরু থেকেই একই ঘটনায় দুই আইন ব্যবহার করে প্যারালাল প্রোসেডিং চলছে। এটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছি। ফলে একপর্যায়ে দুটোই আইনের চোখে ভুল বিচার হিসেবে গণ্য হবে।’
উদাহরণ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘যেমন ধরেন আপনি আমার চেম্বারে এলেন এবং যাওয়ার সময় একটা মোবাইল ও দুইটা ঘড়ি চুরি করে নিয়ে গেছেন। এই ঘটনায় আমি আপনার বিরুদ্ধে প্রথমে ঘড়ি চুরির জন্য একটা মামলা দিলাম এবং পরে ঘড়ি ও মোবাইল চুরির জন্য আরেকটা মামলা দিলাম। কিন্তু দুইটা মামলা তো একসঙ্গে কোনোভাবেই চলতে পারে না। যেকোনো একটা চলছে। কিন্তু এখানে যখন আপনি সংবিধানের বাইরে বিচার করে ফেলছেন, তখন দুইটাই বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এক বিচারের জন্য দুইটা সাজা হতে পারে না। যেটাকে আমরা ডাবল জিও পার্টি বলি। আপনি পুরো আইনটাকে কমপ্লিট করছেন না। দুইটা শব্দ নিয়ে বলছেন, এইটা ওই আইনে আসে সেটা তো ভুল। আপনি তো ওই আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল পড়েননি।’
এ পর্যন্ত মোট ৩৩৯টি অভিযোগ
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে, যেখানে ৩৯টির তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিসকেস হয়েছে ২২টি। এসব মিসকেসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন, যাদের মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি ৮৭ জন।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে বলেন, বিএনপি নেতা হিসেবে বলেন আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বলেন, আমি মনে করি, যে কোনো বিচার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হওয়া উচিত। এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিচার তো এখনো হয়নি। ফলে বিচার হলে বলা যাবে, বিচারটা সঠিকভাবে হয়েছে, নাকি হয়নি। আর একই ঘটনায় দুইটা বিচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা হত্যাকাণ্ডের একটাই বিচার হবে।’
ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ অধিকতর সংশোধন করে গত বছরের ২৪ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, এখন থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা মামলার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। বার কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে বলেও গেজেটে জানানো হয়। প্রথম দফায় ট্রাইব্যুনাল আইনে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার যে ধারাটি খসড়ায় রাখা হয়েছিল, তা বাদ দে্য়ও হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ তখন মনে করেছিল, এই বিচারের সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়কে জড়ানো ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিষয় যুক্ত করা হলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কিন্তু নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আন্দোলনের মুখে গত ১১ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থকগোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ।
গাজী মোনাওয়ার হুসাইন আরেও বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে, তার পরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার অভিযোগও ট্রাইব্যুনালে
কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পারিবারিক কলহ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত বিষয়সহ অপ্রাসঙ্গিক কিছু অভিযোগও জমা পড়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার-বহির্ভূত অভিযোগও নিয়ে আসেন বিচারপ্রার্থীরা। ট্রাইব্যুনালের প্রতি মানুষের আস্থা থেকেই হয়তো তাঁরা এমনটি করেছেন।’
তামিম আরেও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ অনেকেই জানে না যে, এখানে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) কোন ধরনের বিচার হয়। এ জন্য অনেকেই তাঁদের সব ধরনের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। আমরা ইতিমধ্যে পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রী’র বিভেদ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত অভিযোগসহ নানা ধরনের অভিযোগ পেয়েছি, যেগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে না বলে সেগুলো আমরা আর তদন্তে পাঠাই না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে। এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে ইতিমধ্যে বিচার শেষে একাধিক ব্যক্তির রায় কার্যকরও হয়েছে।
ডয়চে ভেলে

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় আর যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাঁদের মধ্যে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে আছেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আইনজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। কেউ কেউ এটাকে ‘পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল’ বলছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, যে কোনো বিচার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন তোলা সম্ভব, কিন্তু আইনগতভাবে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘এই বিচার তো প্রচলিত কোনো আইনের বিধান দ্বারা হচ্ছে না। এই বিচার তো স্বাভাবিক না, অস্বাভাবিক। এই আইনটা করা হয়েছিল একাত্তরের জন্য। এখন ২০২৪ সালে এই আইনে বিচার হচ্ছে। ভবিষ্যতে তো যারা ২০২৫ বা ২০২৬ সালে থাকবে, তাঁদের বেলায়ও হতে পারে।’
আইনের ব্যাখার বিষয়ে জানতে চাইলে জনাব পান্না বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো সেলফ কন্ট্রাডিক্টরি বিষয় আছে। ১৯৭১ সালের কয়েকজন অভিযুক্ত আছেন, যাদের বিচার এখানে চলছিল। সেগুলোও তো করতে হবে। এখন ’৭১-এর বিচার বাদ দিয়ে ২৪ সালের মামলা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে হোক আর যেভাবেই হোক, সেটা করতে হবে কেন? এটা তো ঠিক না। আমি মনে করি, এটা পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল।
এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে কে কী বলবে, সেটা কী আর এখন আমরা বলতে পারব? হাজারটা প্রশ্ন আপনি এমনিতেই করতে পারেন। কিন্তু আইনগতভাবে প্রশ্ন তোলার কি সুযোগ আছে?’
একই হত্যার দুটি বিচার হয়ে যাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ভিন্ন জিনিস। এখন পর্যন্ত তো কোনো হত্যার বিচার তো হয়নি। এখানে কোনো ডাবল জিও পার্টি হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আছে, এখানে শুধু তাঁদের বিচার হচ্ছে। আলাদা কোর্টে যেটা হচ্ছে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলে বিচার চলতে বাধা নেই।’
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা: সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ
অভিযোগ-১
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রনাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-২
শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক আসামি শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা তাঁদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৪
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা মহানগরীর চাঁনখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-৫
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়ছাত্র-জনতাকে গুলি করে তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ দেন এবং সেই সাথে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১৬ জুন দিন ধার্য করেন। এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে সেদিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে, যেখানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ১৩৫ পৃষ্ঠার। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। ট্র্যাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও মো. আব্দুস সোবহান তরফদার শুনানি করেন। এ সময় অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার শুরু হলো, তা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অবশ্যই উঠতে পারে। কারণ, এখানে যে চার্জগুলো আনা হচ্ছে, সেটা এই আইনের আওতায় আসে কি না, সেটা একটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা। এরপর ৫ আগস্ট বা তাঁর আগের ঘটনা নিয়ে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, সেখানে খণ্ড আকৃতির সংজ্ঞা নিয়ে ওই আইনের আন্ডারে বিচার করছে, সেটা সব সময় একটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। পুরো বিষয়টা বোঝা যাবে চার্জ গঠন হলে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং এ আইনের সংমিশ্রণে যখন ট্রায়াল শুরু হবে, তখন বুঝতে পারবে ওনারা আইনসিদ্ধভাবে বিচার করছেন, নাকি করেননি। এটা অবশ্যই বলে রাখা উচিত, হত্যার জন্য ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে। আবার একই হত্যার ঘটনায় আলাদাভাবে একটা মামলা পেন্ডিং আছে। যেমন ধরেন চাঁনখাঁরপুলে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আবার গণহত্যার জন্য এখানে বিচার করা হচ্ছে। ফলে শুরু থেকেই একই ঘটনায় দুই আইন ব্যবহার করে প্যারালাল প্রোসেডিং চলছে। এটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছি। ফলে একপর্যায়ে দুটোই আইনের চোখে ভুল বিচার হিসেবে গণ্য হবে।’
উদাহরণ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘যেমন ধরেন আপনি আমার চেম্বারে এলেন এবং যাওয়ার সময় একটা মোবাইল ও দুইটা ঘড়ি চুরি করে নিয়ে গেছেন। এই ঘটনায় আমি আপনার বিরুদ্ধে প্রথমে ঘড়ি চুরির জন্য একটা মামলা দিলাম এবং পরে ঘড়ি ও মোবাইল চুরির জন্য আরেকটা মামলা দিলাম। কিন্তু দুইটা মামলা তো একসঙ্গে কোনোভাবেই চলতে পারে না। যেকোনো একটা চলছে। কিন্তু এখানে যখন আপনি সংবিধানের বাইরে বিচার করে ফেলছেন, তখন দুইটাই বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এক বিচারের জন্য দুইটা সাজা হতে পারে না। যেটাকে আমরা ডাবল জিও পার্টি বলি। আপনি পুরো আইনটাকে কমপ্লিট করছেন না। দুইটা শব্দ নিয়ে বলছেন, এইটা ওই আইনে আসে সেটা তো ভুল। আপনি তো ওই আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল পড়েননি।’
এ পর্যন্ত মোট ৩৩৯টি অভিযোগ
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে, যেখানে ৩৯টির তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিসকেস হয়েছে ২২টি। এসব মিসকেসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন, যাদের মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি ৮৭ জন।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে বলেন, বিএনপি নেতা হিসেবে বলেন আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বলেন, আমি মনে করি, যে কোনো বিচার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হওয়া উচিত। এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিচার তো এখনো হয়নি। ফলে বিচার হলে বলা যাবে, বিচারটা সঠিকভাবে হয়েছে, নাকি হয়নি। আর একই ঘটনায় দুইটা বিচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা হত্যাকাণ্ডের একটাই বিচার হবে।’
ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ অধিকতর সংশোধন করে গত বছরের ২৪ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, এখন থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা মামলার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। বার কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে বলেও গেজেটে জানানো হয়। প্রথম দফায় ট্রাইব্যুনাল আইনে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার যে ধারাটি খসড়ায় রাখা হয়েছিল, তা বাদ দে্য়ও হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ তখন মনে করেছিল, এই বিচারের সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়কে জড়ানো ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিষয় যুক্ত করা হলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কিন্তু নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আন্দোলনের মুখে গত ১১ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থকগোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ।
গাজী মোনাওয়ার হুসাইন আরেও বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে, তার পরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার অভিযোগও ট্রাইব্যুনালে
কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পারিবারিক কলহ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত বিষয়সহ অপ্রাসঙ্গিক কিছু অভিযোগও জমা পড়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার-বহির্ভূত অভিযোগও নিয়ে আসেন বিচারপ্রার্থীরা। ট্রাইব্যুনালের প্রতি মানুষের আস্থা থেকেই হয়তো তাঁরা এমনটি করেছেন।’
তামিম আরেও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ অনেকেই জানে না যে, এখানে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) কোন ধরনের বিচার হয়। এ জন্য অনেকেই তাঁদের সব ধরনের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। আমরা ইতিমধ্যে পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রী’র বিভেদ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত অভিযোগসহ নানা ধরনের অভিযোগ পেয়েছি, যেগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে না বলে সেগুলো আমরা আর তদন্তে পাঠাই না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে। এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে ইতিমধ্যে বিচার শেষে একাধিক ব্যক্তির রায় কার্যকরও হয়েছে।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তাঁর বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি এই মামলায় আর যে দুজনকে আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তাঁদের মধ্যে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন কারাগারে আছেন। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
আইনজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। কেউ কেউ এটাকে ‘পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল’ বলছেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, যে কোনো বিচার নিয়ে হাজারো প্রশ্ন তোলা সম্ভব, কিন্তু আইনগতভাবে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী জেড আই খান পান্নাও মনে করেন, এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘এই বিচার তো প্রচলিত কোনো আইনের বিধান দ্বারা হচ্ছে না। এই বিচার তো স্বাভাবিক না, অস্বাভাবিক। এই আইনটা করা হয়েছিল একাত্তরের জন্য। এখন ২০২৪ সালে এই আইনে বিচার হচ্ছে। ভবিষ্যতে তো যারা ২০২৫ বা ২০২৬ সালে থাকবে, তাঁদের বেলায়ও হতে পারে।’
আইনের ব্যাখার বিষয়ে জানতে চাইলে জনাব পান্না বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো সেলফ কন্ট্রাডিক্টরি বিষয় আছে। ১৯৭১ সালের কয়েকজন অভিযুক্ত আছেন, যাদের বিচার এখানে চলছিল। সেগুলোও তো করতে হবে। এখন ’৭১-এর বিচার বাদ দিয়ে ২৪ সালের মামলা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে হোক আর যেভাবেই হোক, সেটা করতে হবে কেন? এটা তো ঠিক না। আমি মনে করি, এটা পলিটিক্যাল ট্রাইব্যুনাল।
এই বিচার নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘ভবিষ্যতে কে কী বলবে, সেটা কী আর এখন আমরা বলতে পারব? হাজারটা প্রশ্ন আপনি এমনিতেই করতে পারেন। কিন্তু আইনগতভাবে প্রশ্ন তোলার কি সুযোগ আছে?’
একই হত্যার দুটি বিচার হয়ে যাচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ভিন্ন জিনিস। এখন পর্যন্ত তো কোনো হত্যার বিচার তো হয়নি। এখানে কোনো ডাবল জিও পার্টি হচ্ছে না। যাদের বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আছে, এখানে শুধু তাঁদের বিচার হচ্ছে। আলাদা কোর্টে যেটা হচ্ছে, সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হলে বিচার চলতে বাধা নেই।’
বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা: সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ
অভিযোগ-১
২০২৪ সালের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আসামি শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়া এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রনাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে হত্যা, হত্যার চেষ্টা, নির্যাতন এবং অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার অপরাধগুলো সংঘটনের প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে ব্যর্থতা, অপরাধ সংঘটনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শান্তি প্রদান না করা এবং ষড়যন্ত্র করার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-২
শেখ হাসিনা কর্তৃক ছাত্র জনতার ওপর হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের হত্যা করে নির্মূলের নির্দেশ এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কর্তৃক আসামি শেখ হাসিনার ওই নির্দেশ বাস্তবায়নে তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং অধীনস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশনা দিয়ে কার্যকর করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ প্রদান, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করেছে, যা তাঁদের জ্ঞাতসারে কার্যকর করা হয়েছে।
অভিযোগ-৩
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্থ ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ-নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে স্বল্প দূরত্ব থেকে সরাসরি নিরীহ নিরস্ত্র আন্দোলনকারী ছাত্র আবু সাঈদের বুক লক্ষ্য করে বিনা উসকানিতে একাধিক গুলি চালিয়ে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের দ্বারা অপরাধ সংঘটনের নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণ করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।
অভিযোগ-৪
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান কামাল, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা মহানগরীর চাঁনখাঁরপুল এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়জন ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে উল্লিখিত আসামিদের জ্ঞাতসারে এবং তাঁদের কর্তৃক হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা এবং ষড়যন্ত্র করার মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
অভিযোগ-৫
শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য এবং মারণাস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে হত্যার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আসামি আসাদুজ্জামান খান কামাল ও আসামী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় তাঁদের অধীনস্ত ও নিয়ন্ত্রণাধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণের অংশ হিসেবে ৫ আগস্ট ২০২৪ ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানার সামনে এবং আশপাশ এলাকায় আন্দোলনরত নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর তৎকালীন সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিরীহ নিরস্ত্র ছয়ছাত্র-জনতাকে গুলি করে তাঁদের মধ্যে পাঁচজনের মরদেহ এবং একজনকে জীবিত ও গুরুতর আহত অবস্থায় আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের হত্যার নির্দেশ, প্ররোচনা, উসকানি, সহায়তা, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্রসহ অন্যান্য অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।
প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনাল-১ শেখ হাসিনাসহ অপর দুই আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ দেন এবং সেই সাথে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ১৬ জুন দিন ধার্য করেন। এই মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করে সেদিন আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ট্র্যাইব্যুনালকে বলেন, মোট ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়েছে, যেখানে আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ১৩৫ পৃষ্ঠার। এই মামলায় সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। ট্র্যাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও মো. আব্দুস সোবহান তরফদার শুনানি করেন। এ সময় অন্য প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যে বিচার শুরু হলো, তা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে কি না, জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সাইদ আহমেদ রাজা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘অবশ্যই উঠতে পারে। কারণ, এখানে যে চার্জগুলো আনা হচ্ছে, সেটা এই আইনের আওতায় আসে কি না, সেটা একটা অনেক বড় বিষয়। আমাদের বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে থেকে যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁদের জন্য এই ট্রাইব্যুনালটা করা। এরপর ৫ আগস্ট বা তাঁর আগের ঘটনা নিয়ে যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে, সেখানে খণ্ড আকৃতির সংজ্ঞা নিয়ে ওই আইনের আন্ডারে বিচার করছে, সেটা সব সময় একটা প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থায় থাকতে পারে। পুরো বিষয়টা বোঝা যাবে চার্জ গঠন হলে। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং এ আইনের সংমিশ্রণে যখন ট্রায়াল শুরু হবে, তখন বুঝতে পারবে ওনারা আইনসিদ্ধভাবে বিচার করছেন, নাকি করেননি। এটা অবশ্যই বলে রাখা উচিত, হত্যার জন্য ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে। আবার একই হত্যার ঘটনায় আলাদাভাবে একটা মামলা পেন্ডিং আছে। যেমন ধরেন চাঁনখাঁরপুলে একজনকে হত্যা করা হয়েছে, সেই ঘটনায় মামলা হয়েছে। আবার গণহত্যার জন্য এখানে বিচার করা হচ্ছে। ফলে শুরু থেকেই একই ঘটনায় দুই আইন ব্যবহার করে প্যারালাল প্রোসেডিং চলছে। এটা তো সবাই দেখতে পাচ্ছি। ফলে একপর্যায়ে দুটোই আইনের চোখে ভুল বিচার হিসেবে গণ্য হবে।’
উদাহরণ দিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘যেমন ধরেন আপনি আমার চেম্বারে এলেন এবং যাওয়ার সময় একটা মোবাইল ও দুইটা ঘড়ি চুরি করে নিয়ে গেছেন। এই ঘটনায় আমি আপনার বিরুদ্ধে প্রথমে ঘড়ি চুরির জন্য একটা মামলা দিলাম এবং পরে ঘড়ি ও মোবাইল চুরির জন্য আরেকটা মামলা দিলাম। কিন্তু দুইটা মামলা তো একসঙ্গে কোনোভাবেই চলতে পারে না। যেকোনো একটা চলছে। কিন্তু এখানে যখন আপনি সংবিধানের বাইরে বিচার করে ফেলছেন, তখন দুইটাই বাতিল হয়ে যাবে। কারণ এক বিচারের জন্য দুইটা সাজা হতে পারে না। যেটাকে আমরা ডাবল জিও পার্টি বলি। আপনি পুরো আইনটাকে কমপ্লিট করছেন না। দুইটা শব্দ নিয়ে বলছেন, এইটা ওই আইনে আসে সেটা তো ভুল। আপনি তো ওই আইনের উদ্দেশ্য কী ছিল পড়েননি।’
এ পর্যন্ত মোট ৩৩৯টি অভিযোগ
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মোট ৩৩৯টি অভিযোগ দাখিল হয়েছে, যেখানে ৩৯টির তদন্ত কার্যক্রম (কমপ্লেইন্ট রেজিস্টার অনুসারে) চলমান। তদন্তের প্রাথমিক সত্যতার আলোকে মিসকেস হয়েছে ২২টি। এসব মিসকেসে সর্বমোট অভিযুক্ত ব্যক্তি ১৪১ জন, যাদের মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন ৫৪ জন, আর ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামি ৮৭ জন।
সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘আইনজীবী সমিতির সভাপতি হিসেবে বলেন, বিএনপি নেতা হিসেবে বলেন আর বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বলেন, আমি মনে করি, যে কোনো বিচার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছভাবে হওয়া উচিত। এখন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়েছে। কিন্তু বিচার তো এখনো হয়নি। ফলে বিচার হলে বলা যাবে, বিচারটা সঠিকভাবে হয়েছে, নাকি হয়নি। আর একই ঘটনায় দুইটা বিচার হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। একটা হত্যাকাণ্ডের একটাই বিচার হবে।’
ট্রাইব্যুনালের আইন সংশোধন
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩ অধিকতর সংশোধন করে গত বছরের ২৪ নভেম্বর গেজেট প্রকাশ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩ সংশোধন করে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’ করা হয়। অধ্যাদেশে বলা হয়, এখন থেকে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা মামলার বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে।
ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আদেশ দিতে পারবে ট্রাইব্যুনাল। বার কাউন্সিলের অনুমতি সাপেক্ষে বিদেশি আইনজীবী নিয়োগ করা যাবে বলেও গেজেটে জানানো হয়। প্রথম দফায় ট্রাইব্যুনাল আইনে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনার যে ধারাটি খসড়ায় রাখা হয়েছিল, তা বাদ দে্য়ও হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদ তখন মনে করেছিল, এই বিচারের সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়কে জড়ানো ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দল বা সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিষয় যুক্ত করা হলে এই আইনকে অযথাই প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কিন্তু নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আন্দোলনের মুখে গত ১১ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এতে ট্রাইব্যুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থকগোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর (প্রশাসন) গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম বলেন, সংশোধনীর পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রদানের ক্ষমতা রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) মনে করে, এটি একটি যথোপযোগী উদ্যোগ।
গাজী মোনাওয়ার হুসাইন আরেও বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য আইনেও সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বা সংগঠনের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার বিধান আছে, তার পরও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো একটি আন্তর্জাতিক মানের আইন বা ট্রাইব্যুনালে সংগঠন বা ব্যক্তির বিচার হলে তা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’
স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়ার অভিযোগও ট্রাইব্যুনালে
কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পারিবারিক কলহ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত বিষয়সহ অপ্রাসঙ্গিক কিছু অভিযোগও জমা পড়েছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার-বহির্ভূত অভিযোগও নিয়ে আসেন বিচারপ্রার্থীরা। ট্রাইব্যুনালের প্রতি মানুষের আস্থা থেকেই হয়তো তাঁরা এমনটি করেছেন।’
তামিম আরেও বলেন, ‘সাধারণ মানুষ অনেকেই জানে না যে, এখানে (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে) কোন ধরনের বিচার হয়। এ জন্য অনেকেই তাঁদের সব ধরনের অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। আমরা ইতিমধ্যে পারিবারিক কলহ, স্বামী-স্ত্রী’র বিভেদ, জায়গা-জমির বিরোধ, চাকরিসংক্রান্ত অভিযোগসহ নানা ধরনের অভিযোগ পেয়েছি, যেগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়ে না বলে সেগুলো আমরা আর তদন্তে পাঠাই না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১০ সালে। এই ট্রাইব্যুনালের অধীনে ইতিমধ্যে বিচার শেষে একাধিক ব্যক্তির রায় কার্যকরও হয়েছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৪ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
৮ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
৮ ঘণ্টা আগেতৌফিকুল ইসলাম, ঢাকা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। এ অবস্থায় আবারও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঢাকা-নিউ জলপাইগুঁড়ি পথে মিতালী এক্সপ্রেস, ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা পথে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৩৮তম আন্তসরকার রেলওয়ে সভার (আইজিআরএম) প্রস্তুতিমূলক সভায় ভারতকে পুনরায় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ে ৬ অক্টোবর ওই সভা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে চিঠি প্রস্তুত করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সেই চিঠি পাঠানো হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ মন্ত্রণালয় চিঠিটি ভারতকে পাঠাবে বলে রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড প্রতিবছর আইজিআরএম করে। ৩৮তম আইজিআরএম ২০২৬ সালের মার্চে ঢাকায় হওয়ার কথা। তবে সেটি হবে কি না এখনো চূড়ান্ত নয়।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে ভারতকে। আন্তদেশীয় ট্রেন চালু করতে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে আবারও চিঠি লিখব। আমাদের দিক থেকে আগ্রহের যে কমতি নেই, সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভায়।’
প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা সেতু দিয়ে পরিচালনার বিষয়ে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতীয় রেলওয়েকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে। এ প্রস্তাবে রাতের বেলা ট্রেন পরিচালনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীদের অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ভারতীয় রেলওয়েকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভায়।
একসঙ্গে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়েকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে প্রস্তুতিমূলক আইজিআরএম সভা থেকে।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের এন্ড টু এন্ড কাস্টম ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করার জন্য খুলনা স্টেশনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথে যাতায়াতের জন্য আলাদা ভিসা দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠাবে রেল মন্ত্রণালয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, উভয় দেশের পণ্য পরিবহনে রেলপথ ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ এবং পণ্যবাহী ট্রেন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দর্শনা-গেদে, পেট্রাপোল-বেনাপোল এবং রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, সভায় প্রায় ২৯টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল, আন্তসীমান্ত যোগাযোগ এবং যৌথ প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তদেশীয় ট্রেন চালানোর জন্য এর আগেও ভারতকে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ভারত সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি। নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যুতে ট্রেন চালাতে চায় না তারা। বর্তমানে পণ্যবাহী ট্রেন চলছে। তবে তা আগের তুলনায় কম। ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে এ সরকারের আমলে পুনরায় এসব ট্রেন চালু হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসা বা অন্য জরুরি ভিসা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দিল্লি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে উভয় দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ট্রেন চলাচলের প্রস্তাব দিলে ভারতের সেটা বিবেচনায় নিয়ে চালানো উচিত। ভূরাজনীতির বাইরেও বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ। মানুষের এই ট্রেনগুলো প্রয়োজন। ফলে যাত্রীবাহী আন্তদেশীয় ট্রেনগুলো চালু হলে উভয় দেশের জনগণের জন্য ভালো হবে। এটা যত দ্রুত সম্ভব চালু করা উচিত।’

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি। এ অবস্থায় আবারও চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
ঢাকা-নিউ জলপাইগুঁড়ি পথে মিতালী এক্সপ্রেস, ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস এবং খুলনা-কলকাতা পথে বন্ধন এক্সপ্রেস চলাচল করত। রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই থেকে এসব ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাসংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ৩৮তম আন্তসরকার রেলওয়ে সভার (আইজিআরএম) প্রস্তুতিমূলক সভায় ভারতকে পুনরায় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল মন্ত্রণালয়ে ৬ অক্টোবর ওই সভা হয়। বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে চিঠি প্রস্তুত করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে সেই চিঠি পাঠানো হবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এ মন্ত্রণালয় চিঠিটি ভারতকে পাঠাবে বলে রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে ও ভারতীয় রেলওয়ে বোর্ড প্রতিবছর আইজিআরএম করে। ৩৮তম আইজিআরএম ২০২৬ সালের মার্চে ঢাকায় হওয়ার কথা। তবে সেটি হবে কি না এখনো চূড়ান্ত নয়।
জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এর আগেও কয়েকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে ভারতকে। আন্তদেশীয় ট্রেন চালু করতে, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারতকে আবারও চিঠি লিখব। আমাদের দিক থেকে আগ্রহের যে কমতি নেই, সেটা আমরা প্রমাণ করতে চাই। এ ছাড়া আরও অনেক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভায়।’
প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা গেছে, এ সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুই দেশের মধ্যে আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন পদ্মা সেতু দিয়ে পরিচালনার বিষয়ে দ্রুততম সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে ভারতীয় রেলওয়েকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠাবে। এ প্রস্তাবে রাতের বেলা ট্রেন পরিচালনার বিষয়টিও উল্লেখ করা হবে। এ ছাড়া আন্তদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে যাত্রীদের অতিরিক্ত মালামাল পরিবহনের জন্য লাগেজ ভ্যান সংযুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে ভারতীয় রেলওয়েকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই সভায়।
একসঙ্গে রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ রেলওয়েকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে প্রস্তুতিমূলক আইজিআরএম সভা থেকে।
বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনের এন্ড টু এন্ড কাস্টম ও ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শেষ করার জন্য খুলনা স্টেশনে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া রেলপথে যাতায়াতের জন্য আলাদা ভিসা দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ভারত সরকারকে চিঠি পাঠাবে রেল মন্ত্রণালয়।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, উভয় দেশের পণ্য পরিবহনে রেলপথ ব্যবহারে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ এবং পণ্যবাহী ট্রেন বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দর্শনা-গেদে, পেট্রাপোল-বেনাপোল এবং রোহনপুর-সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মতামতের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয় চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আইজিআরএমের প্রস্তুতিমূলক সভার কার্যবিবরণী সূত্রে জানা যায়, সভায় প্রায় ২৯টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল, আন্তসীমান্ত যোগাযোগ এবং যৌথ প্রকল্পসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
রেলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আন্তদেশীয় ট্রেন চালানোর জন্য এর আগেও ভারতকে দুই দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ভারত সেভাবে আগ্রহ দেখায়নি। এমনকি চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি। নিরাপত্তাসংক্রান্ত ইস্যুতে ট্রেন চালাতে চায় না তারা। বর্তমানে পণ্যবাহী ট্রেন চলছে। তবে তা আগের তুলনায় কম। ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ রয়েছে। ফলে এ সরকারের আমলে পুনরায় এসব ট্রেন চালু হবে কি না, সেটা অনিশ্চিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিকিৎসা বা অন্য জরুরি ভিসা দেওয়াকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে দিল্লি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে উভয় দেশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ ট্রেন চলাচলের প্রস্তাব দিলে ভারতের সেটা বিবেচনায় নিয়ে চালানো উচিত। ভূরাজনীতির বাইরেও বাংলাদেশ-ভারত প্রতিবেশী দেশ। মানুষের এই ট্রেনগুলো প্রয়োজন। ফলে যাত্রীবাহী আন্তদেশীয় ট্রেনগুলো চালু হলে উভয় দেশের জনগণের জন্য ভালো হবে। এটা যত দ্রুত সম্ভব চালু করা উচিত।’

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
০৭ জুন ২০২৫
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৪ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
৮ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।
দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশমালা হস্তান্তর করা হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সুপারিশে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারকে আদেশ জারি করার পরামর্শ দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৫টি সংস্কার প্রস্তাব তিন ভাগে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। এগুলোর মধ্যে ৯টি নির্বাহী আদেশ এবং ২৮টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংবিধান-সম্পর্কিত বাকি ৪৮টি বাস্তবায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। দুটির বেশির ভাগ বিষয় এক হলেও একটির গণভোটের বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে।
বিকল্প দুটি প্রস্তাবে গণভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আদেশ জারির পর থেকে যেকোনো দিন বা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট করতে পারবে। তবে কবে করবে, সেই সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। সরকারকে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। তিনি মনে করেন, জনগণ গণভোটে সনদ প্রত্যাখ্যান করবে না।
রমজান মাসের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ভোটের দিন গণভোট চেয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আসছে নভেম্বরে ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভোটের আগে গণভোট দাবি করেছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির ভিত্তি হিসেবে দুটি প্রস্তাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের কথা বলা হয়েছে। জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন। যার জন্য গণভোট, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার অপরিহার্য।
বিকল্প প্রস্তাব-১-এ বলা হয়েছে, গণভোটের আগে জনগণকে জানাতে এবং সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের প্রস্তুত করা খসড়া বিল গণভোটে দেওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ৪৮ প্রস্তাব বিল আকারে করতে হবে। সেখানে গণভোটের প্রশ্ন হবে ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং এতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার-সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহ সমর্থন করছেন?’ গণভোট করতে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
গণভোটের ফল ইতিবাচক হলে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দ্বৈত ভূমিকা পালন করবেন। তাঁরা নিয়মিত সংসদ সদস্যের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা একই অনুষ্ঠানে প্রথমে এমপি এবং পরে সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হয়ে যাবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। স্পিকারই পরিষদের সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান সংস্কার কার্যকরের ৪৫ দিনের মধ্যে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
বিকল্প প্রস্তাব-২-এ আদেশ খসড়া বিলের কথা বলা নেই। সে ক্ষেত্রে গণভোটের প্রশ্ন থাকবে, ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং তাতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি সমর্থন করেন?’ এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে এবং এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। বাকি ধারাগুলো একই আছে।
সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা সম্পর্কে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত এবং গণভোটে যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সব রকম বিধিবিধান প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করবেন। আদেশ জারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আদেশ দেবে বলেছি। সরকার আইনি এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিবেচনা করেই নিশ্চয় একটি সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটা সরকারের হাতে রেখেছি।’
জুলাই জাতীয় সনদে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির (নোট অব ডিসেন্ট) কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে সেটি রাখা হয়নি। দলগুলোর দেওয়া আপত্তি নিয়ে কী হবে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা সরকারকে বলেছেন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন ৪৮ বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
সংবিধান-সম্পর্কিত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশন নিয়োগ, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ।
অধ্যাদেশে জারির জন্য ২৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, বিচারক ও সাবেক বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, তিনটি সরকারি কর্ম কমিশন গঠন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা বন্ধ করা, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের করণীয়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশোধন।
নির্বাহী আদেশে জুলাই সনদের ৯টি প্রস্তাব বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ, আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা, আইনজীবীদের আচরণবিধি, গণহত্যা এবং ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন।
রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন উপায়ের সুপারিশ কমিশন তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের মতামত, আমাদের কমিশনের সম্মানিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিকতার প্রেক্ষাপটে আমরা সুপারিশগুলো তৈরি করেছি। এই সুপারিশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ যেন একটি আইনি ভিত্তি পায়। ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়।’
সব দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, যারা স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এনসিপির সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে, হচ্ছে। তাঁর আশা, এনসিপি স্বাক্ষর করবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন।
দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই সুপারিশমালা হস্তান্তর করা হয়। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলন করেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
সুপারিশে প্রথমে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি, পরে আদেশের প্রশ্নে গণভোট এবং সর্বশেষ আগামী জাতীয় সংসদকে দ্বৈত ভূমিকা (সংবিধান সংস্কার পরিষদ ও জাতীয় সংসদ) পালনের ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারকে আদেশ জারি করার পরামর্শ দিয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দুই ধাপের সংলাপের ভিত্তিতে রাষ্ট্রকাঠামোর বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৮৫টি সংস্কার প্রস্তাব তিন ভাগে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। এগুলোর মধ্যে ৯টি নির্বাহী আদেশ এবং ২৮টি অধ্যাদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সংবিধান-সম্পর্কিত বাকি ৪৮টি বাস্তবায়নের জন্য দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন। দুটির বেশির ভাগ বিষয় এক হলেও একটির গণভোটের বিষয়ে ভিন্নতা রয়েছে।
বিকল্প দুটি প্রস্তাবে গণভোটের দিনক্ষণ ঠিক করা সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পর থেকে জাতীয় নির্বাচনের দিন পর্যন্ত যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আদেশ জারির পর থেকে যেকোনো দিন বা জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট করতে পারবে। তবে কবে করবে, সেই সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। সরকারকে বলা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য। তিনি মনে করেন, জনগণ গণভোটে সনদ প্রত্যাখ্যান করবে না।
রমজান মাসের আগে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ভোট করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এর মধ্যে বিএনপি ভোটের দিন গণভোট চেয়েছে।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী আসছে নভেম্বরে ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ভোটের আগে গণভোট দাবি করেছে।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারির ভিত্তি হিসেবে দুটি প্রস্তাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতা ও অভিপ্রায়ের কথা বলা হয়েছে। জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের জন্য সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণের অনুমোদন প্রয়োজন। যার জন্য গণভোট, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন ও পরিষদ কর্তৃক সংবিধান সংস্কার অপরিহার্য।
বিকল্প প্রস্তাব-১-এ বলা হয়েছে, গণভোটের আগে জনগণকে জানাতে এবং সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব পালনের সুবিধার্থে জাতীয় সনদের অন্তর্ভুক্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে সরকারের প্রস্তুত করা খসড়া বিল গণভোটে দেওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ৪৮ প্রস্তাব বিল আকারে করতে হবে। সেখানে গণভোটের প্রশ্ন হবে ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং এতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার-সম্পর্কিত খসড়া বিলের প্রস্তাবসমূহ সমর্থন করছেন?’ গণভোট করতে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় আইন তৈরি করতে বলা হয়েছে।
গণভোটের ফল ইতিবাচক হলে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা দ্বৈত ভূমিকা পালন করবেন। তাঁরা নিয়মিত সংসদ সদস্যের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদের দায়িত্ব পালন করবেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা একই অনুষ্ঠানে প্রথমে এমপি এবং পরে সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হলে সংবিধান সংস্কার বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে গৃহীত হয়ে যাবে এবং সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে। স্পিকারই পরিষদের সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন। সংবিধান সংস্কার কার্যকরের ৪৫ দিনের মধ্যে আগামী সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের (পিআর) ভিত্তিতে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে।
বিকল্প প্রস্তাব-২-এ আদেশ খসড়া বিলের কথা বলা নেই। সে ক্ষেত্রে গণভোটের প্রশ্ন থাকবে, ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং তাতে সন্নিবেশিত সংবিধান সংস্কার প্রস্তাবসমূহের প্রতি সমর্থন করেন?’ এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে এবং এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে। বাকি ধারাগুলো একই আছে।
সংস্কার পরিষদের ক্ষমতা সম্পর্কে কমিশনের সহসভাপতি বলেন, সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্যরা জুলাই জাতীয় সনদে বর্ণিত এবং গণভোটে যদি জনগণের সম্মতি পাওয়া যায়, সেই বিষয়গুলো সংবিধানে সংযুক্ত করার জন্য প্রয়োজন সব রকম বিধিবিধান প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্ধন, পরিমার্জন করবেন। আদেশ জারির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার আদেশ দেবে বলেছি। সরকার আইনি এবং বিভিন্ন বিষয়ে বিবেচনা করেই নিশ্চয় একটি সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা এটা সরকারের হাতে রেখেছি।’
জুলাই জাতীয় সনদে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আপত্তির (নোট অব ডিসেন্ট) কথা উল্লেখ থাকলেও বাস্তবায়নের সুপারিশে সেটি রাখা হয়নি। দলগুলোর দেওয়া আপত্তি নিয়ে কী হবে জানতে চাইলে আলী রীয়াজ বলেন, তাঁরা সরকারকে বলেছেন এগুলো জনগণের কাছে নিয়ে যেতে। জনগণের রায় পাওয়ার পর রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নেবে। কমিশন ৪৮ বিষয়ে জনগণের সম্মতি-অসম্মতিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
সংবিধান-সম্পর্কিত ৪৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সংবিধান সংশোধন, রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধানমন্ত্রীর পদের মেয়াদ, প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদে থাকার বিধান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব, আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ, সুপ্রিম কোর্টের বিকেন্দ্রীকরণ, স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ, ন্যায়পাল নিয়োগ, সরকারি কর্ম কমিশন নিয়োগ, মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক নিয়োগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের নিয়োগ।
অধ্যাদেশে জারির জন্য ২৮টি প্রস্তাবের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ, বিচারক ও সাবেক বিচারকদের জন্য পালনীয় আচরণবিধি, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা, স্বাধীন ও স্থায়ী জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গঠন, তিনটি সরকারি কর্ম কমিশন গঠন, স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন, বৈধ উৎসবিহীন আয়কে বৈধতা দানের চর্চা বন্ধ করা, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদ ও আয়-ব্যয়ের তথ্য প্রকাশ, দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে রাজনৈতিক দলসমূহের করণীয়, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর সংশোধন।
নির্বাহী আদেশে জুলাই সনদের ৯টি প্রস্তাব বর্তমান সরকার বাস্তবায়ন করতে পারবে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ, আদালত ব্যবস্থাপনা সংস্কার ও ডিজিটাইজ করা, আইনজীবীদের আচরণবিধি, গণহত্যা এবং ভোট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে স্বাধীন কমিশন গঠন।
রাজনৈতিক দল এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন উপায়ের সুপারিশ কমিশন তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, বিশেষজ্ঞদের মতামত, আমাদের কমিশনের সম্মানিত সদস্যদের অভিজ্ঞতা এবং আন্তরিকতার প্রেক্ষাপটে আমরা সুপারিশগুলো তৈরি করেছি। এই সুপারিশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ যেন একটি আইনি ভিত্তি পায়। ভবিষ্যতের পথরেখা হিসেবে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়।’
সব দলের জুলাই সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে আলী রীয়াজ বলেন, যারা স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। এনসিপির সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে, হচ্ছে। তাঁর আশা, এনসিপি স্বাক্ষর করবে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইয়ুব মিয়া ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
০৭ জুন ২০২৫
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
৮ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
৮ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিপুলসংখ্যক জামিন দেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে শোকজ করে তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এবং ফোন করে তিনজন বিচারপতি, যথা বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেনকে ওই নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাস্তবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ উল্লিখিত তিনজন বিচারপতিকে কোনো শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেননি, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন, যা আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়।
তথ্য চাওয়ার বিষয়টি আদালতের বিশেষ একটি যোগাযোগব্যবস্থা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নানা সংবাদে ব্যবহৃত তথ্যে মূল বিষয়টি বিকৃত ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি গণমাধ্যম আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ প্রচার করবে, যাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকে এবং জনগণ বিভ্রান্ত না হয়।
কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ওঠার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যেমন ধরেন, আপনারা জানেন সাম্প্রতিককালে আপনারা কেউ এটা ইনভেস্টিগেট (অনুসন্ধান) করেননি। আপনাদের অনুরোধ করব, ইনভেস্টিগেট করেন যে, একটা উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ এক দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মামলায় জামিন দিয়েছেন। জামিন তিনি দিতেই পারেন, কিন্তু চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব?’

তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
আজ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলামের পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিপুলসংখ্যক জামিন দেওয়ায় হাইকোর্ট বিভাগের তিনজন বিচারপতিকে শোকজ করে তাঁদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সংবাদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মো. মোয়াজ্জেম হোছাইন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে এবং ফোন করে তিনজন বিচারপতি, যথা বিচারপতি আবু তাহের সাইফুর রহমান, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি জাকির হোসেনকে ওই নোটিশ সম্পর্কে অবহিত করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাস্তবে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ উল্লিখিত তিনজন বিচারপতিকে কোনো শোকজ বা কারণ দর্শানোর নোটিশ দেননি, বরং প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন, যা আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার একটি নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়।
তথ্য চাওয়ার বিষয়টি আদালতের বিশেষ একটি যোগাযোগব্যবস্থা উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নানা সংবাদে ব্যবহৃত তথ্যে মূল বিষয়টি বিকৃত ও ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বলে তা জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের প্রতি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা হচ্ছে, প্রতিটি গণমাধ্যম আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে বিষয়টির সত্যতা যাচাই করে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সংবাদ প্রচার করবে, যাতে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ন থাকে এবং জনগণ বিভ্রান্ত না হয়।
কয়েক দিন আগে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা ওঠার কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘যেমন ধরেন, আপনারা জানেন সাম্প্রতিককালে আপনারা কেউ এটা ইনভেস্টিগেট (অনুসন্ধান) করেননি। আপনাদের অনুরোধ করব, ইনভেস্টিগেট করেন যে, একটা উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ এক দিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ মামলায় জামিন দিয়েছেন। জামিন তিনি দিতেই পারেন, কিন্তু চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব?’

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
০৭ জুন ২০২৫
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৪ ঘণ্টা আগে
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে এবং অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
৮ ঘণ্টা আগেবাসস, ঢাকা

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। ২০০৮ সালের পর এটিই হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে ও অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
মিলার জানান, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ভোটের সময় স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগেও সহায়তা করবে ইইউ।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয় পক্ষ সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই জাতীয় সনদকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে মসৃণ করতে সহায়ক হবে।
সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের পদক্ষেপগুলোকে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
‘এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’—উল্লেখ করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে ইইউর অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
মিলার আসন্ন নির্বাচনকে ‘দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের সুযোগ’ বলে মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে।
এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌপরিবহন খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে তাঁরা একমত হন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনায় বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি এ পি মোলারমায়ার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ডেনমার্কের এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে এই অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি বৃহৎ প্রতিনিধিদল পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)। ২০০৮ সালের পর এটিই হবে ইইউর প্রথম পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন।
আজ মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এ তথ্য জানান।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ইইউর নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনটি এখনো চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে ১৫০ থেকে ২০০ জন সদস্য থাকতে পারেন, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভোটের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে ও অন্যরা ভোটের এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশে পৌঁছাবেন।
মিলার জানান, ২০০৮ সালের পর এই প্রথম ইইউ বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে।
রাষ্ট্রদূত আরও জানান, ভোটের সময় স্থানীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক নিয়োগেও সহায়তা করবে ইইউ।
প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে উভয় পক্ষ সাংবিধানিক সংস্কার, নির্বাচন প্রস্তুতি, বিচার বিভাগ ও শ্রম খাতের সংস্কার, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক এবং দেশের সার্বিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন।
রাষ্ট্রদূত মিলার জুলাই জাতীয় সনদকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দলিল’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এটি গণতান্ত্রিক রূপান্তরকে মসৃণ করতে সহায়ক হবে।
সম্প্রতি অনুমোদিত শ্রম আইন সংস্কার ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা জোরদারের পদক্ষেপগুলোকে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।
‘এগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’—উল্লেখ করে ফেব্রুয়ারির নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য করতে নির্বাচন কমিশনকে ইইউর অব্যাহত সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
মিলার আসন্ন নির্বাচনকে ‘দেশের ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের সুযোগ’ বলে মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ইইউ বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের প্রক্রিয়াকে সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বৈঠকে উভয় পক্ষ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে।
এর মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তির সম্ভাবনা এবং বিমান ও নৌপরিবহন খাতে নতুন সুযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ ছাড়া মানব পাচার ও অবৈধ অভিবাসন প্রতিরোধে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার বিষয়ে তাঁরা একমত হন।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া টার্মিনালের উন্নয়ন ও পরিচালনায় বৈশ্বিক শিপিং কোম্পানি এ পি মোলারমায়ার্সকের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি চলছে।
রাষ্ট্রদূত মিলার বলেন, ডেনমার্কের এই প্রতিষ্ঠান প্রায় ৮০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করে লালদিয়াকে এই অঞ্চলের অন্যতম আধুনিক টার্মিনালে উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে।
বৈঠকে নির্বাচনী পরিবেশ, প্রার্থীদের যোগ্যতা ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও আলোচনা হয়।

জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নির্দেশদাতা উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে আনা ৫টি অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
০৭ জুন ২০২৫
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেন গত ১৫ মাস বন্ধ রয়েছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াতে মানুষের ব্যাপক ভোগান্তি হচ্ছে। ট্রেন তিনটি পুনরায় চালানোর জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের তরফ থেকে এ পর্যন্ত দুই দফা ভারতকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৩ ঘণ্টা আগে
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশের প্রশ্নে সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা এর আগে যেকোনো দিন গণভোট করতে পারবে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সুপারিশে এই প্রস্তাব দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গতকাল মঙ্গলবার এই সুপারিশমালা জমা দিয়েছে...
৪ ঘণ্টা আগে
তিন বিচারপতিকে কোনো শোকজ নোটিশ দেওয়া হয়নি। প্রশাসনিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কেবল মামলাসংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এটি আদালত ব্যবস্থাপনার অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়ার নিয়মিত দাপ্তরিক বিষয়। তাই আদালতসংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশের আগে সত্যতা যাচাই করতে গণমাধ্যমের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছেন সুপ্রি
৮ ঘণ্টা আগে