Ajker Patrika

যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের বাজার দখলের চেষ্টা ভারতে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নীতিনির্ধারণী অনিশ্চয়তা বৈশ্বিক ক্রেতাদের নতুন বিকল্পের সন্ধানে ঠেলে দিচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে ভারতের তৈরি পোশাক খাত জোর কদমে এগোচ্ছে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ভারতের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্বল্প শুল্ক সুবিধা ভারতীয় রপ্তানিকারকদের বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নিয়ে এসেছে।

কোচির কিটেক্স গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবু জ্যাকব দ্য হিন্দুকে বলেন, ‘বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই ইউরোপমুখী। এদের বেশিরভাগই ইউরোপীয় ইউনিয়নের শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় পড়েছে। কিন্তু ভারতও এখন যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (FTA) বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি সই করেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারেও শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের আশায় রয়েছে। ফলে, এই খাতের বাজারে ভারতের অবস্থান মজবুত হচ্ছে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির আওতায় ভারতীয় তৈরি পোশাক পণ্যগুলো শূন্য বা কম হারে শুল্ক সুবিধা পাচ্ছে, সেই সুযোগও ভারতকে এগিয়ে রাখছে। সাবু জ্যাকব বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির ফলে কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো থেকে যুক্তরাষ্ট্রমুখী রপ্তানি হ্রাস পায়। এই শূন্যস্থান পূরণে ভারতীয় পণ্য রপ্তানির পথ উন্মুক্ত হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, ভারতে এখন যেসব পণ্যে ১৫–২০ শতাংশ পর্যন্ত কম শুল্ক হার চলছে, তা যুক্তরাষ্ট্রমুখী তৈরি পোশাক খাতে ভারতের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান তৈরি করছে।

২০২৪ সালে ভারতের তৈরি পোশাক রপ্তানি সক্ষমতা ছিল ১৭ বিলিয়ন ডলার, যেখানে প্রায় ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়ে সক্ষমতার ৯৭ শতাংশ ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি সক্ষমতা ৫৬ বিলিয়ন ডলার এবং চীনের ১৪০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও লাগাতার শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেক ক্রেতাই বিকল্প খুঁজছেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সাবু জ্যাকব বলেন, ‘বিশ্বের তৈরি পোশাক বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও সুসংহত করতে ভারতের জন্য এটা বিশাল সুযোগ। সরকারও এই খাতকে কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হিসেবে দেখছে।’

সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাকের বাজার ধরতে কিটেক্স গার্মেন্টস বিশাল বিনিয়োগ করছে। প্রতিষ্ঠানটি তেলেঙ্গানায় তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ৩১ লাখ পিসে উন্নীত করতে সাড়ে ৩ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করছে। সাবু বলেন, ‘আমাদের ওয়ারাঙ্গল ইউনিটে ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং হায়দরাবাদ কারখানার উৎপাদন শুরু হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে।’

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কিটেক্স গার্মেন্টস ১০২০ কোটি টাকার রেকর্ড রাজস্ব আয় করেছে, যা আগের বছরের ৬৪১ কোটি টাকা থেকে ৫৯ শতাংশ বেশি। কর-পরবর্তী মুনাফা ৬৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৫২.৬ কোটি টাকা হয়েছে, যা ১২৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।

এই প্রবৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, সর্বোচ্চ সক্ষমতা ব্যবহার এবং কারখানার সামগ্রিক কর্মদক্ষতার উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন সাবু জ্যাকব।

গত এপ্রিলে তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল ও সিতারামপুরে কিটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের কারখানার জন্য ২৫ হাজার চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেয়। হায়দরাবাদ সংলগ্ন এই দুটি কারখানায় কোম্পানিটি ৩৫ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে, যেখানে প্রতিদিন ২২ লাখ পোশাক উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এক দশক ধরে নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তবে বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা চলমান থাকলে ক্রেতারা আরও বেশি ভারতসহ অন্য বাজারে ঝুঁকবে— এ আশঙ্কা অমূলক নয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বাংলাদেশকে এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিতকরণ, উৎপাদন সক্ষমতার উন্নয়ন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালা গ্রহণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লজ্জায় ধর্ষণের শিকার মায়ের আত্মহত্যা: ৮ বছরের মেয়েটি যাবে কোথায়

বলিদান ও শয়তান পূজার বুদ্ধি দিল চ্যাটজিপিটি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মহড়া শুরু, চলবে ৩০ জুলাই পর্যন্ত

বাংলাদেশ ব্যাংকে পোশাক নির্দেশনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি ৫৪ বিশিষ্ট নাগরিকের

সঞ্জয়ের ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ নিয়ে পারিবারিক উত্তেজনা তুঙ্গে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত