Ajker Patrika

মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫৫
মেয়ের কপালে চুমু দিয়ে   চলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধে

মানিকগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. বছির উদ্দিনের স্ত্রী ফুলতারা। অত্যন্ত কাছ থেকে তিনি দেখেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া টগবগে তরুণ বছির উদ্দিন আজ আর নেই, রয়ে গেছে তাঁর স্মৃতি। মুক্তিযুদ্ধের সেই দুঃসহ দিনের কথা মনে হলে আঁতকে ওঠেন ফুলতারা।

প্রবীণ ফুলতারার সঙ্গে কথা হয় জেলার ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরীর রাথুরা গ্রামে তাঁর বড় মেয়ে রিজিয়া বেগমের বাড়িতে। বয়সের ভারে আর নানা রোগ-শোকে কাতর সত্তরোর্ধ্ব এই নারী।

ফুলতারা বলেন, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি অনেক আগেই মারা গেছেন। বাড়িতে আমার স্বামী আর পাঁচ বছরের মেয়ে রিজিয়া। অভাবের সংসার। অল্প কৃষিজমি আর স্বামীর উপার্জনে কোনোমতে চলছিল সংসার। এরই মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। একদিন মাঝরাতে আমার স্বামী ফিসফিস করে বলল, ‘‘শোনো-আমি যুদ্ধে যাচ্ছি। দেশ স্বাধীন করেই তবে ঘরে ফিরব। কেউ জিজ্ঞেস করলে কিছু বলো না’’।’

প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী বলেন, ‘এরপর তিনি বললেন, ‘‘যদি মরে যাই, মনে দুঃখ নিয়ো না। দেশের জন্য জান দেওয়ার ভাগ্য সবার হয় না। এরপর ঘুমন্ত মেয়ের কপালে চুমা দিয়ে তিনি আস্তে আস্তে ঘরের বাইরে গেলেন। আমার কান্না শুনে মেয়েটির ঘুম ভেঙে গেল। গলা জড়িয়ে ধরে মেয়ের সেকি কান্না! স্ত্রী-সন্তান, পরিবার আর আমাদের চোখের পানি তাঁর পথ আটকাতে পারেনি’’।’

ফুলতারা বলেন, ‘তিনি মুক্তিযুদ্ধে গেলেন। কয়েক মাস তাঁর কোনো হদিস ছিল না। যখন শুনতাম অমুক জায়গায় এক মুক্তিযোদ্ধার লাশ পাওয়া গেছে। তখন বুক ফেটে কান্না আসত। এই বুঝি তার মৃত্যুর খবর আসে। একবার খবর আসে আমার স্বামী যুদ্ধে মারা গেছে। তখন ওই শিশুকন্যা এসে বুকে জড়িয়ে ধরে বাবা বাবা বলে কান্না শুরু করে। রাজাকারদের রক্তচক্ষু ও হুমকিতে শিশুমেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছি দিনের পর দিন।’

স্মৃতি হাতড়ে এ নারী বলেন, ‘উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নিখোঁজ থাকায় পরিবারে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। শ্বশুরবাড়ি থেকে ৮-১০ কিলোমিটার দূরে কাটিগ্রামে আমার পিতার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিই। দরিদ্র পিতা হাইজা ব্যাপারীর কোনো কাজ ছিল না তখন। অভাব-অনটনে মানবেতর জীবন কাটছে তাদের। একবেলা খাওয়ালেও দুবেলা না খেয়ে কাটাতে হয়েছে।’

ফুলতারা বলেন, ‘দেশ স্বাধীন যে দিন হইছে, ওই দিন গভীর রাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মেয়ের নাম ধরে ডাক দেয় তার বাবা। হুড়মুড়িয়ে উঠে দেখি তিনি সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার কান্নার আওয়াজে প্রতিবেশীরা আসে তাঁকে দেখতে। সবার চোখেই পানি। মেয়েকে ঘুম থেকে তুলে আদর করতে করতে বলতে লাগলেন, ‘‘মা গো আমরা স্বাধীন হইছি’’।’

ফুলতারার বাড়ি মানিকগঞ্জের ধানকোড়া ইউনিয়নের নয়াডিঙ্গী গ্রামে। তাঁর চার মেয়ে আর এক ছেলে। ফুলতারার ছেলে মো. শাহজাহান বলেন, ‘আমার বাবা দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এটাই আমাদের অনন্য গর্ব। বাবা দীর্ঘদিন রোগে ভুগে ২০০৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি মারা যান।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাশ্মীরে পর্যটকদের ওপর অতর্কিত গুলি, নিহত ২৬

চীনা পণ্যে শুল্ক ‘উল্লেখযোগ্য’ পরিমাণে কমিয়ে সুখে বসবাসের ঘোষণা ট্রাম্পের

২৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪১৪ কোটি টাকার অনিয়ম

কাশ্মীরে হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা

যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ না হলে মানবজাতির সামনে ‘চরম অন্ধকার’, ভ্যান্সের হুঁশিয়ারি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত