Ajker Patrika

বন্ধ নয়, সমাধানের দাবি

অরূপ রায়, সাভার থেকে
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ০৩
Thumbnail image

পরিবেশ দূষণের দায়ে সাভারের হেমায়েপুরের চামড়াশিল্প নগর বন্ধ না করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা অর্জনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ট্যানারি মালিকেরা। ট্যানারি বন্ধ করা হলে চামড়া খাতে রপ্তানি আয়ে ধস নামবে বলে মনে করেন তাঁরা।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশন (বিসিক) কর্তৃপক্ষ মনে করে শিল্পনগরের কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার (সিইটিপি) আগের তুলনায় অনেক কার্যকর। এ অবস্থায় চামড়াশিল্প নগর বন্ধ করা সমীচীন হবে না।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সুপারিশে চামড়া শিল্পনগরী বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে কমিটি এ নিয়ে ফের আলোচনা করে। যেখানে শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধিও ছিলেন। বৈঠক শেষে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, চামড়াশিল্প নগর বন্ধ হচ্ছে। বর্জ্য পরিশোধনের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা নিয়ে এই শিল্পনগর চালাতে হবে।

পরিবেশ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাপেক্স ট্যানারি লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক এমএ মাজেদ বলেন, বিসিক কোটি কোটি টাকা খরচ করে সিইটিপি নির্মাণ করেছে, যা কাজে আসছে না। এখন এর দায়ভার নিতে হচ্ছে ট্যানারি মালিকদের। চামড়াশিল্প নগর বন্ধ না করে বর্জ্য পরিশোধনের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। ট্যানারি বন্ধ করা হলে চামড়া খাতে রপ্তানি আয়ে ধস নামবে।

এমএ মাজেদ বলেন, চামড়া শিল্পনগরে সারা বছর যে বর্জ্য হয়, কোরবানির সময় তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। শিল্পনগরের ভেতরে বিসিকের পক্ষ থেকে হিমাগারের ব্যবস্থা করা হলে কোরবানির সময় সিইটিপির ওপর চাপ কমে যাবে।

ইটিপি অর্থাৎ নিজস্ব বর্জ্য পরিশোধনাগার স্থাপনের বিষয়ে অ্যাপেক্সের এ কর্মকর্তা বলেন, ছয় মাস আগে তাঁরা ইটিপি নির্মাণের অনুমতি পেয়েছেন। বিসিক নকশা অনুমোদন না করায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।

শাহজালাল লেদার লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (উন্নয়ন) হুমায়ুন কবির বলেন, সিইটিপি শতভাগ কার্যকর না করে হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্প নগরে ট্যানারি স্থানান্তর করা উচিত হয়নি। চামড়াশিল্প নগর বন্ধ না করে কীভাবে সমস্যার সমাধান করা যায়, তার কর্মপরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ফেন্সি লেদারের সহকারী ব্যবস্থাপক রমজান আলী বলেন, বুড়িগঙ্গা বাঁচাতে ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর করা হলো। কিন্তু এখন সাভারের নদী দূষিত হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত সিইটিপি কেন শতভাগ কার্যকর হচ্ছে না, কেনই বা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা অর্জিত হচ্ছে না, তা খতিয়ে দেখা দরকার।

রমজান আলী বলেন, বাংলাদেশের চামড়া অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো। দেশের বাইরে এদেশের চামড়ার চাহিদা আছে। তাই ট্যানারি সচল রাখতে যা করা দরকার তা করতে হবে।

আনোয়ার ট্যানারির অন্যতম অংশীদার দিল মোহাম্মদ বলেন, পরিবেশ দূষণরোধে চামড়াশিল্প নগর বন্ধ করে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। চামড়াশিল্প নগর বন্ধ না করে এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখে পরিবেশ দূষণরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি ট্যানারির এক কর্মকর্তা বলেন, খরচ বাঁচাতে অনেক সময় সিইটিপি বন্ধ রেখে তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হয়। এর ফলে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। চামড়াশিল্প নগর বন্ধ না করে এ অনিয়ম বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

চামড়াশিল্প নগর বন্ধের বিষয়ে ট্যানারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, মাথা ব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলা সম্ভব নয়। পরিবেশ বাঁচাতে কার্যকর বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে।

চামড়াশিল্প নগরের প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র নাথ পাল বলেন, সিইটিপি আগের তুলনায় অনেক কার্যকর। চামড়া শিল্পনগরে এখন প্রতিদিন ১৮ থেকে ১৯ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। সিইটিপির পরিশোধন সক্ষমতা দিনে ২৫ হাজার ঘনমিটার। তবে কোরবানির সময় তিন মাস প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ঘনমিটার বর্জ্য উৎপাদিত হয়। তখন রেশনিং করে বর্জ্য শোধন করা যেতে পারে।

জিতেন্দ্র নাথ পাল বলেন, বন্ধ কোনো সমাধান নয়। ট্যানারি চালু রাখতে যা করণীয় তা-ই করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত