Ajker Patrika

চিরকুট লিখে আত্মহত্যা: সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়ে এসে পান মেয়ের লাশ

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
চিরকুট লিখে আত্মহত্যা: সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিয়ে এসে পান মেয়ের লাশ

বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা পড়ুয়া তিন সন্তান রেখে গোপনে বিয়ে করেন দক্ষিণখানের দক্ষিণ মোল্লারটেকের বাসিন্দা শাহীন ইসলাম (৪৮)। এ কারণে প্রথম স্ত্রী উম্মে সালমা ওরফে মনি তাঁকে ডিভোর্স দেন। কিন্তু জোর করেই সালমার বাসায় যাতায়াত ছিল শাহীনের। মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। মেয়ে সানজানা মোসাদ্দিকাকেও নির্যাতন করতেন। বাধ্য হয়ে শাহীন ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিতে যান উম্মে সালমা। ফিরে এসে দেখেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেয়ে (২১) ১০ তলা থেকে লাফ দিয়েছেন। হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র এবং দক্ষিণখান থানা পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এর আগে দক্ষিণখান মোল্লারটেকের ১০ তলা ভবন ধানসিঁড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেন সানজানা মোসাদ্দিকা। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে পড়ছিলেন। মৃত্যুর পরপরই তাঁর হাতে লেখা একটি চিরকুট উদ্ধার করে পুলিশ। ওই চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য আমার বাবা দায়ী। একটা ঘরে পশুর সাথে থাকা যায়। কিন্তু অমানুষের সাথে না। একজন অত্যাচারী রেপিস্ট যে কাজের মেয়েকেও ছাড়ে নাই। আমি তার করুণ ভাগ্যের সূচনা।’

থানা পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার কাজিরবাগ মুন্সীবাড়ীর মৃত শহিদুল ইসলামের ছেলে শাহীন ইসলাম এবং দক্ষিণখান মোল্লারটেক এলাকার আব্দুল হালিম মুন্সির মেয়ে উম্মে সালমা ওরফে মনির ১৯৯৭ সালে বিয়ে হয়। নানা বিষয় নিয়ে তাঁদের কলহ লেগেই থাকত। ওই দম্পতির দুই মেয়ে সানজানা (২১) ও ইস্টার (৭) এবং এক ছেলে মুত্তাকীম (৮)। সানজানা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মুত্তাকীম ও ইস্টার একটি মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। 

২০১৭ সালে গোপনে নিপা ইসলাম (২৪) নামে এক তরুণীকে বিয়ে করেন শাহীন ইসলাম। এরপর থেকে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়ে যায়। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকে স্ত্রী-সন্তানদের ভরণপোষণ ঠিকঠাক দিতেন না। চার-পাঁচ মাস আগে বিয়ের কথা জানতে পারেন প্রথম স্ত্রী। এতে তাঁদের সম্পর্কের আরও অবনতি হয়। চলতি বছরের ৭ জুন উম্মে সালমা শাহীনকে ডিভোর্স দেন এবং আলাদা বসবাস শুরু করেন। কিন্তু একপ্রকার জোর করেই প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে আসতেন তিনি।

সর্বশেষ গত শুক্রবার (২৬ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে শাহীন প্রথম স্ত্রীর বাসায় আসেন। ডিভোর্সের পরও বাসায় আসা-যাওয়া নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়। জোর করেই রাতে থেকে যান শাহীন। পরের দিন (শনিবার) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সানজানা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফি চাইলে রেগে যান শাহীন। খারাপ আচরণ শুরু করেন। সালমা প্রতিবাদ করলে দুজনকেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন শাহীন। একপর্যায়ে তাঁদের বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। তখন স্বামীর বিরুদ্ধে দক্ষিণখান থানায় অভিযোগ দিতে যান সালমা। বাইরে থাকতেই খবর পান, সানজানা পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন, তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সানজানাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

সানজানার মা উম্মে সালমা বাদী হয়ে দক্ষিণখান থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন। উম্মে সালমা রোববার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে ও আমার মেয়েকে প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত শাহীন। আমার মেয়ে এসব নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে। আমি চাই এর জন্য দায়ী শাহীনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণখান থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোসাম্মৎ রেজিয়া খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বহুতল ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ার পরই তার বাবা শাহীন পালিয়ে যান। পরে তার মা সালমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় সালমা আক্তার তাঁর প্রাক্তন স্বামী শাহীনকে একমাত্র আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি পলাতক রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’ 

একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আজিজুল হক মিঞা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঘটনার দিন দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে বাসার সিকিউরিটি গার্ড আলমের কাছ থেকে ছাদে কাপড় শুকানোর কথা বলে চাবি নেন সানজানা। আধা ঘণ্টা পর আশপাশের লোকজন শব্দ পেয়ে ছুটে গিয়ে ভবনটির নিচে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে দেখতে পান। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁরই হাতে লেখা চিরকুট পাওয়া গেছে, সেটি জব্দ করা হয়েছে। আর ওই চিরকুটের লেখা থেকেই প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সানজানাকে কেউ হত্যা করেননি বা ফেলে দেননি। তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন।’ 

এদিকে সানজানা মোসাদ্দিকাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে দায়ীদের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন তাঁর সহপাঠীরা। রোববার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘সানজানা হত্যার বিচার চাই’, ‘আত্মহত্যা নয়, হত্যা’ লেখা প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত