কামরুল হাসান

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
এই অবস্থায় পাল্টা গুলি চালালে প্রাণহানি অনিবার্য। দূরে দাঁড়ানো পুলিশের ছোট দলটির প্রধান পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে চুপ হয়ে গেলেন। আর সেই সুযোগে অস্ত্রধারী যুবকটি একটি মোটরবাইকেলের পেছনে উঠে চম্পট দেন।
এ ঘটনা আমাকে বলেছিলেন একসময়ের ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা এসি আকরাম হোসেন। তবে সেই অভিযানে তিনি নিজে ছিলেন না, ছিলেন তাঁর টিমের এক পরিদর্শক। এরপর সেই তরুণ সন্ত্রাসীকে ধরতে প্রায় এক বছর ছক কষেছিলেন তিনি। ধরেছিলেন ১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে পুরোনো ডিওএইচএসের বাসা থেকে। সেই বাসা চিনতেও ফ্রিজ বহন করা একটি ভ্যানের পিছু নিতে হয়েছিল পুলিশকে। নতুন কেনা ফ্রিজ সেই সন্ত্রাসীর বাসায় যাচ্ছে শুনেই ভ্যানের পিছু নিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিনের সেই ভয়ংকর তরুণ এখন কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি সুইডেন আসলাম নামে পরিচিত। আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে। তবে কারাগারে থাকলেও লক্ষ্মী ছেলের মতো ভেতরে বসে নেই। মোবাইল ফোনে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকার অপরাধজগৎ। কারাগারে তাঁর সেল থেকে দুটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছিল। এসব ফোন দিয়ে তিনি কারাগারের বাইরে থাকা পাণ্ডাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁদের এবং সেই সব মামলার সাক্ষীদের হুমকি দিতেন। সেই হুমকিতে বাদী ও সাক্ষী আর আদালতে যান না। সাক্ষীর অভাবে বেশির ভাগ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এখন বাকি আছে মাত্র একটি মামলা। সেই মামলা থেকে খালাস পেলেই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন অনায়াসে।
ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের সুবাদে প্রায় প্রতিদিন বিকেলের দিকে দল বেঁধে আমরা যেতাম মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে সহকারী পুলিশ সুপার পদের একজন কর্মকর্তা জনসংযোগের দায়িত্বে থাকতেন। তাঁর কক্ষে বসে দিনের বিভিন্ন ঘটনা শুনতাম। দরকার হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলতাম। জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বসতেন ডিবি অফিসের ভেতরে একটি টিনশেডে। ডিবি অফিসের মূল ভবনের দোতলায় বসতেন দক্ষিণের ডিসি আর নিচতলায় ডিবির ডিসি। নিচের একটি বড় কক্ষের ভেতরে হার্ডবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট কক্ষ বানানো। এ রকম একটি কক্ষে বসতেন এসি আকরাম হোসেন। ’৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল খুনের ঘটনায় তাঁর কারাদণ্ড হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর গত বছরের ১৬ জুলাই তিনি মারা যান।
১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে আমরা বসে আছি জনসংযোগ শাখার সহকারী কমিশনার মিয়া আব্দুস ছালামের রুমে। হঠাৎ ওয়াকিটকিতে ব্যাপক শোরগোল। বড় এক আসামি ধরা পড়েছে। ঘণ্টাখানেক পর সেই আসামিকে আনা হয় কড়া পাহারায়। আমরা দৌড়ে গেলাম আকরাম হোসেনের রুমে। দেখি হ্যান্ডকাফ পরা তরুণকে আরও শক্ত করে বাঁধা হচ্ছে। সেই তরুণকে আমরা সহজেই চিনে ফেললাম, তিনিই হলেন সুইডেন আসলাম। এসি আকরাম তাঁর অভিযান নিয়ে সহজে কিছু বলতেন না, সেদিনও বললেন না। তবে তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা সুইডেন আসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম; কিন্তু আসলাম কোনো কথা বললেন না। যা জিজ্ঞাসা করি, মাথা নিচু করে থাকেন। তাঁকে দফায় দফায় রিমান্ডে আনা হলেও মুখ খোলেন না। পরে আমরা খোঁজ করে বের করি ভয়ংকর সব তথ্য। সে কথায় পরে আসি।
আসলামের বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ জিন্নাত আলী। পরিবারটির আদি বাস ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামে। তবে পরিবারের কেউ এই গ্রামে থাকেন না। আসলামের বাবা-চাচারা স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার ইন্দিরা রোডে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতার পর জিন্নাত আলী ফার্মগেটে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে আসলাম দ্বিতীয়।
আসলাম এসএসসি পাস করেন তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল (বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি বিদ্যালয়) থেকে। স্কুলজীবনে তিনি ভালো ফুটবল খেলতেন। আন্তজেলা স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। তেজগাঁও কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েই বনে যান উঠতি রংবাজ। সে সময় ফার্মগেট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন আজাদ-বাপ্পি নামে দুই ভাই। একদিন ফার্মগেটের নিউ স্টার হোটেল থেকে বাপ্পিকে জোর করে তুলে নিয়ে যান আসলাম ও তাঁর লোকজন। এরপর মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেন। এতে দুই ভাইয়ের পতন ঘটে, উত্থান হয় আসলামের। শাকিল নামের এক কিশোর হত্যার মধ্য দিয়ে আসলামের এই কাজে হাতেখড়ি বলে অভিযোগ আছে। ১৯৮৭ সালে পূর্ব রাজাবাজার নাজনীন স্কুলের ভেতরে মায়ের সামনে খুন হয় শাকিল। তখন সুইডেন আসলামের সঙ্গে ছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের সুমন ওরফে চাংখা সুমন, ব্যাটারি বাবু ওরফে কিলার বাবু, মণিপুরিপাড়ার বিআরটিসি কোয়ার্টারের আমজাদ হোসেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাবু এবং কলাবাগানের সাবু।
ফার্মগেট এলাকায় সে সময় চাইনিজ নামের আরেক সন্ত্রাসীর বেশ নামডাক ছিল। তাঁর সহযোগী ছিলেন শাকিল। চাইনিজের সঙ্গে সম্পর্ক করতে তাঁর সুইডেনপ্রবাসী বোন ইতিকে বিয়ে করেন সুইডেন আসলাম। চাইনিজ তাঁর বোনের সঙ্গে সুইডেনে চলে গেলে শাকিলকে নৃশংসভাবে খুন করেন আসলাম। এরপর তিনিও স্ত্রীর কাছে সুইডেনে চলে যান। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। সুইডেনেই ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় আসলামের। ইতি ঢাকায় এসে মামুন নামের এক সন্ত্রাসীকে বিয়ে করেন। আসলামের সহযোগীরা এর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ’৯৫ সালের মে মাসে পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী আগা শামীমের আস্তানায় সমঝোতার কথা বলে মামুনকে ডাকা হয়। মামুন সেখানে যান ভারতীয় সন্ত্রাসী গোপাল কর ও নুরুল ইসলামকে নিয়ে। আসলামের লোকেরা সেখানেই তাঁদের তিনজনকে গুলি করে খুন করেন। ২০০৪ সালের জুন মাসে এ মামলার রায় হয়। সন্ত্রাসী আগা শামীমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আসলাম এ মামলা থেকে খালাস পান। সে সময় মামুন ও ইতির বিয়েতে সহায়তা করেছিলেন আসলামের সেকেন্ড ইন কমান্ড বিপুল। একদিন মধুবাগের মাঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিপুলের দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে আসলাম তাঁকে খুন করান বলে অভিযোগ। বিপুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কলাবাগানের কিসলুকেও মেরে ফেলা হয়। আসলামের আরেক সহযোগী ছিলেন গাব্বু। তাঁর স্ত্রী আসমা একবার পুলিশকে আসলামের গতিবিধির কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। একদিন তেজগাঁও রেললাইনের বস্তিতে গাব্বুর সামনেই তাঁর স্ত্রী আসমাকে বুকে গুলি করে খুন করা হয়। তখনো মূল অভিযোগ ছিল আসলামের দিকে। মিরপুরে রানা, সাজ্জাদ, টাঙ্গাইলের ছাত্রনেতা শামীম তালুকদারও তাঁর হাতে খুন হয়েছিলেন। নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে কারওয়ান বাজারের পিচ্চি হান্নান, মগবাজারের সুব্রত বাইন ও টিক্কার সঙ্গে এক হয়েছিলেন আসলাম। তখন শোনা যেত, বিএনপির এক নেতার প্রশ্রয় পাচ্ছিলেন আসলাম। অবশ্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার তাঁকে শীর্ষসন্ত্রাসী ঘোষণা দিয়ে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে।
এটা মনে আছে, সুইডেন আসলাম গ্রেপ্তারের পর তাঁর সাবেক স্ত্রী ইতি তাঁর মাকে নিয়ে ভোরের কাগজের তৎকালীন ক্রাইম রিপোর্টার পারভেজ খানের কাছে এসেছিলেন তাঁর ওপর নির্যাতন ও সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ জানাতে। পরে পারভেজ খান তাঁদের ইস্কাটনের জনকণ্ঠ ভবনে আমার কাছে নিয়ে আসেন। ইতির করা অভিযোগের ভিত্তিতে জনকণ্ঠে রিপোর্টও হয়। ইতি আমাকে বলেছিলেন, তিনি সুইডেন আসলামকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শত্রুর সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, আসলাম মনে করতেন, হাত থেকে অস্ত্র ফেলে দিলেই তাঁকে মরতে হবে। ইতির বিষয়ে দুই দিন আগে কথা বলেছিলাম সুইডেন আসলামের এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাকে বললেন, ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ইতি সুইডেনে চলে যান। সেখানে বিষাদগ্রস্ত হয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যা করেন।
এই লেখার জন্য সুইডেন আসলামের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হালনাগাদ তথ্য নিয়েছিলাম গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে। তাতে দেখা গেল, বিভিন্ন সময়ে সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়েছে, যার ৯টি হত্যা মামলা। বাকিগুলো অপহরণ ও চাঁদাবাজি। অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন এবং ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। পরে এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পান। এখন তাঁর বিরুদ্ধে আছে শুধু একটি হত্যা মামলা। সেটা হলো গালিব হত্যা মামলা। এই খুনের পরই গ্রেপ্তার হন আসলাম। মাহমুদুল হক খান গালিব ছিলেন তেজগাঁওয়ের যুবলীগের নেতা। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ তেজকুনিপাড়ার বাসার সামনে খুন হন। এ মামলার আসামি শাহীন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বলেছিলেন, সুইডেন আসলামের উপস্থিতিতে দেলু ও মাসুদ গুলি করে খুন করেন গালিবকে। গালিবের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন শম্পা তেজগাঁও থানায় মামলা করেছিলেন। কিন্তু আসলামের ভয়ে এই মামলার সাক্ষীরা আর আদালতে যান না। ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৪ জন। এই একটি মামলাতেই আসলামের জামিন হয়নি।
ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আসলাম তাঁর চাচা শেখ মো. আবদুল লতিফের মেয়ে সিমিকে বিয়ে করেন। সিমি এখন তাঁর ছোট বোন শ্যামলী আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ইন্দিরা রোডের বাড়িতেই থাকেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন তরুণ রিপোর্টার শাহরিয়ার হাসান। কিন্তু স্বামী সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাননি সিমি। এত দিন পর এই পরিচয়ে তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না, এই পরিচয়ও বহন করতে চান না। সারাক্ষণ থাকেন অজানা এক আশঙ্কায়।
সিমি এখন একাকী। তিনি বিশ্বাস করেন, বাকি জীবন আসলামকে জেলেই কাটাতে হবে। তাঁর সঙ্গে ছোট বোন শ্যামলীও বললেন, ‘মামলাগুলো যে অবস্থায় থাকুক না কেন, তিনি যে কখনো জেল থেকে বের হতে পারবেন, এটা আর আমাদের বিশ্বাস হয় না।’
সিমির কাছে প্রশ্ন ছিল, এমন একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসীর সঙ্গে জীবন বেঁধে কী পেলেন, তাঁর হিসাব কষেছেন? সিমি কোনো জবাব দেন না, শূন্যের দিকে চেয়ে থাকেন, সেই প্রশ্নের জবাব হয়তো তাঁর নিজের কাছেও নেই।
আরও পড়ুন:

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
এই অবস্থায় পাল্টা গুলি চালালে প্রাণহানি অনিবার্য। দূরে দাঁড়ানো পুলিশের ছোট দলটির প্রধান পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে চুপ হয়ে গেলেন। আর সেই সুযোগে অস্ত্রধারী যুবকটি একটি মোটরবাইকেলের পেছনে উঠে চম্পট দেন।
এ ঘটনা আমাকে বলেছিলেন একসময়ের ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা এসি আকরাম হোসেন। তবে সেই অভিযানে তিনি নিজে ছিলেন না, ছিলেন তাঁর টিমের এক পরিদর্শক। এরপর সেই তরুণ সন্ত্রাসীকে ধরতে প্রায় এক বছর ছক কষেছিলেন তিনি। ধরেছিলেন ১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে পুরোনো ডিওএইচএসের বাসা থেকে। সেই বাসা চিনতেও ফ্রিজ বহন করা একটি ভ্যানের পিছু নিতে হয়েছিল পুলিশকে। নতুন কেনা ফ্রিজ সেই সন্ত্রাসীর বাসায় যাচ্ছে শুনেই ভ্যানের পিছু নিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিনের সেই ভয়ংকর তরুণ এখন কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি সুইডেন আসলাম নামে পরিচিত। আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে। তবে কারাগারে থাকলেও লক্ষ্মী ছেলের মতো ভেতরে বসে নেই। মোবাইল ফোনে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকার অপরাধজগৎ। কারাগারে তাঁর সেল থেকে দুটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছিল। এসব ফোন দিয়ে তিনি কারাগারের বাইরে থাকা পাণ্ডাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁদের এবং সেই সব মামলার সাক্ষীদের হুমকি দিতেন। সেই হুমকিতে বাদী ও সাক্ষী আর আদালতে যান না। সাক্ষীর অভাবে বেশির ভাগ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এখন বাকি আছে মাত্র একটি মামলা। সেই মামলা থেকে খালাস পেলেই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন অনায়াসে।
ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের সুবাদে প্রায় প্রতিদিন বিকেলের দিকে দল বেঁধে আমরা যেতাম মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে সহকারী পুলিশ সুপার পদের একজন কর্মকর্তা জনসংযোগের দায়িত্বে থাকতেন। তাঁর কক্ষে বসে দিনের বিভিন্ন ঘটনা শুনতাম। দরকার হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলতাম। জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বসতেন ডিবি অফিসের ভেতরে একটি টিনশেডে। ডিবি অফিসের মূল ভবনের দোতলায় বসতেন দক্ষিণের ডিসি আর নিচতলায় ডিবির ডিসি। নিচের একটি বড় কক্ষের ভেতরে হার্ডবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট কক্ষ বানানো। এ রকম একটি কক্ষে বসতেন এসি আকরাম হোসেন। ’৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল খুনের ঘটনায় তাঁর কারাদণ্ড হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর গত বছরের ১৬ জুলাই তিনি মারা যান।
১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে আমরা বসে আছি জনসংযোগ শাখার সহকারী কমিশনার মিয়া আব্দুস ছালামের রুমে। হঠাৎ ওয়াকিটকিতে ব্যাপক শোরগোল। বড় এক আসামি ধরা পড়েছে। ঘণ্টাখানেক পর সেই আসামিকে আনা হয় কড়া পাহারায়। আমরা দৌড়ে গেলাম আকরাম হোসেনের রুমে। দেখি হ্যান্ডকাফ পরা তরুণকে আরও শক্ত করে বাঁধা হচ্ছে। সেই তরুণকে আমরা সহজেই চিনে ফেললাম, তিনিই হলেন সুইডেন আসলাম। এসি আকরাম তাঁর অভিযান নিয়ে সহজে কিছু বলতেন না, সেদিনও বললেন না। তবে তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা সুইডেন আসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম; কিন্তু আসলাম কোনো কথা বললেন না। যা জিজ্ঞাসা করি, মাথা নিচু করে থাকেন। তাঁকে দফায় দফায় রিমান্ডে আনা হলেও মুখ খোলেন না। পরে আমরা খোঁজ করে বের করি ভয়ংকর সব তথ্য। সে কথায় পরে আসি।
আসলামের বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ জিন্নাত আলী। পরিবারটির আদি বাস ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামে। তবে পরিবারের কেউ এই গ্রামে থাকেন না। আসলামের বাবা-চাচারা স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার ইন্দিরা রোডে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতার পর জিন্নাত আলী ফার্মগেটে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে আসলাম দ্বিতীয়।
আসলাম এসএসসি পাস করেন তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল (বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি বিদ্যালয়) থেকে। স্কুলজীবনে তিনি ভালো ফুটবল খেলতেন। আন্তজেলা স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। তেজগাঁও কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েই বনে যান উঠতি রংবাজ। সে সময় ফার্মগেট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন আজাদ-বাপ্পি নামে দুই ভাই। একদিন ফার্মগেটের নিউ স্টার হোটেল থেকে বাপ্পিকে জোর করে তুলে নিয়ে যান আসলাম ও তাঁর লোকজন। এরপর মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেন। এতে দুই ভাইয়ের পতন ঘটে, উত্থান হয় আসলামের। শাকিল নামের এক কিশোর হত্যার মধ্য দিয়ে আসলামের এই কাজে হাতেখড়ি বলে অভিযোগ আছে। ১৯৮৭ সালে পূর্ব রাজাবাজার নাজনীন স্কুলের ভেতরে মায়ের সামনে খুন হয় শাকিল। তখন সুইডেন আসলামের সঙ্গে ছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের সুমন ওরফে চাংখা সুমন, ব্যাটারি বাবু ওরফে কিলার বাবু, মণিপুরিপাড়ার বিআরটিসি কোয়ার্টারের আমজাদ হোসেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাবু এবং কলাবাগানের সাবু।
ফার্মগেট এলাকায় সে সময় চাইনিজ নামের আরেক সন্ত্রাসীর বেশ নামডাক ছিল। তাঁর সহযোগী ছিলেন শাকিল। চাইনিজের সঙ্গে সম্পর্ক করতে তাঁর সুইডেনপ্রবাসী বোন ইতিকে বিয়ে করেন সুইডেন আসলাম। চাইনিজ তাঁর বোনের সঙ্গে সুইডেনে চলে গেলে শাকিলকে নৃশংসভাবে খুন করেন আসলাম। এরপর তিনিও স্ত্রীর কাছে সুইডেনে চলে যান। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। সুইডেনেই ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় আসলামের। ইতি ঢাকায় এসে মামুন নামের এক সন্ত্রাসীকে বিয়ে করেন। আসলামের সহযোগীরা এর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ’৯৫ সালের মে মাসে পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী আগা শামীমের আস্তানায় সমঝোতার কথা বলে মামুনকে ডাকা হয়। মামুন সেখানে যান ভারতীয় সন্ত্রাসী গোপাল কর ও নুরুল ইসলামকে নিয়ে। আসলামের লোকেরা সেখানেই তাঁদের তিনজনকে গুলি করে খুন করেন। ২০০৪ সালের জুন মাসে এ মামলার রায় হয়। সন্ত্রাসী আগা শামীমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আসলাম এ মামলা থেকে খালাস পান। সে সময় মামুন ও ইতির বিয়েতে সহায়তা করেছিলেন আসলামের সেকেন্ড ইন কমান্ড বিপুল। একদিন মধুবাগের মাঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিপুলের দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে আসলাম তাঁকে খুন করান বলে অভিযোগ। বিপুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কলাবাগানের কিসলুকেও মেরে ফেলা হয়। আসলামের আরেক সহযোগী ছিলেন গাব্বু। তাঁর স্ত্রী আসমা একবার পুলিশকে আসলামের গতিবিধির কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। একদিন তেজগাঁও রেললাইনের বস্তিতে গাব্বুর সামনেই তাঁর স্ত্রী আসমাকে বুকে গুলি করে খুন করা হয়। তখনো মূল অভিযোগ ছিল আসলামের দিকে। মিরপুরে রানা, সাজ্জাদ, টাঙ্গাইলের ছাত্রনেতা শামীম তালুকদারও তাঁর হাতে খুন হয়েছিলেন। নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে কারওয়ান বাজারের পিচ্চি হান্নান, মগবাজারের সুব্রত বাইন ও টিক্কার সঙ্গে এক হয়েছিলেন আসলাম। তখন শোনা যেত, বিএনপির এক নেতার প্রশ্রয় পাচ্ছিলেন আসলাম। অবশ্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার তাঁকে শীর্ষসন্ত্রাসী ঘোষণা দিয়ে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে।
এটা মনে আছে, সুইডেন আসলাম গ্রেপ্তারের পর তাঁর সাবেক স্ত্রী ইতি তাঁর মাকে নিয়ে ভোরের কাগজের তৎকালীন ক্রাইম রিপোর্টার পারভেজ খানের কাছে এসেছিলেন তাঁর ওপর নির্যাতন ও সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ জানাতে। পরে পারভেজ খান তাঁদের ইস্কাটনের জনকণ্ঠ ভবনে আমার কাছে নিয়ে আসেন। ইতির করা অভিযোগের ভিত্তিতে জনকণ্ঠে রিপোর্টও হয়। ইতি আমাকে বলেছিলেন, তিনি সুইডেন আসলামকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শত্রুর সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, আসলাম মনে করতেন, হাত থেকে অস্ত্র ফেলে দিলেই তাঁকে মরতে হবে। ইতির বিষয়ে দুই দিন আগে কথা বলেছিলাম সুইডেন আসলামের এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাকে বললেন, ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ইতি সুইডেনে চলে যান। সেখানে বিষাদগ্রস্ত হয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যা করেন।
এই লেখার জন্য সুইডেন আসলামের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হালনাগাদ তথ্য নিয়েছিলাম গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে। তাতে দেখা গেল, বিভিন্ন সময়ে সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়েছে, যার ৯টি হত্যা মামলা। বাকিগুলো অপহরণ ও চাঁদাবাজি। অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন এবং ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। পরে এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পান। এখন তাঁর বিরুদ্ধে আছে শুধু একটি হত্যা মামলা। সেটা হলো গালিব হত্যা মামলা। এই খুনের পরই গ্রেপ্তার হন আসলাম। মাহমুদুল হক খান গালিব ছিলেন তেজগাঁওয়ের যুবলীগের নেতা। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ তেজকুনিপাড়ার বাসার সামনে খুন হন। এ মামলার আসামি শাহীন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বলেছিলেন, সুইডেন আসলামের উপস্থিতিতে দেলু ও মাসুদ গুলি করে খুন করেন গালিবকে। গালিবের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন শম্পা তেজগাঁও থানায় মামলা করেছিলেন। কিন্তু আসলামের ভয়ে এই মামলার সাক্ষীরা আর আদালতে যান না। ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৪ জন। এই একটি মামলাতেই আসলামের জামিন হয়নি।
ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আসলাম তাঁর চাচা শেখ মো. আবদুল লতিফের মেয়ে সিমিকে বিয়ে করেন। সিমি এখন তাঁর ছোট বোন শ্যামলী আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ইন্দিরা রোডের বাড়িতেই থাকেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন তরুণ রিপোর্টার শাহরিয়ার হাসান। কিন্তু স্বামী সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাননি সিমি। এত দিন পর এই পরিচয়ে তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না, এই পরিচয়ও বহন করতে চান না। সারাক্ষণ থাকেন অজানা এক আশঙ্কায়।
সিমি এখন একাকী। তিনি বিশ্বাস করেন, বাকি জীবন আসলামকে জেলেই কাটাতে হবে। তাঁর সঙ্গে ছোট বোন শ্যামলীও বললেন, ‘মামলাগুলো যে অবস্থায় থাকুক না কেন, তিনি যে কখনো জেল থেকে বের হতে পারবেন, এটা আর আমাদের বিশ্বাস হয় না।’
সিমির কাছে প্রশ্ন ছিল, এমন একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসীর সঙ্গে জীবন বেঁধে কী পেলেন, তাঁর হিসাব কষেছেন? সিমি কোনো জবাব দেন না, শূন্যের দিকে চেয়ে থাকেন, সেই প্রশ্নের জবাব হয়তো তাঁর নিজের কাছেও নেই।
আরও পড়ুন:
কামরুল হাসান

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
এই অবস্থায় পাল্টা গুলি চালালে প্রাণহানি অনিবার্য। দূরে দাঁড়ানো পুলিশের ছোট দলটির প্রধান পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে চুপ হয়ে গেলেন। আর সেই সুযোগে অস্ত্রধারী যুবকটি একটি মোটরবাইকেলের পেছনে উঠে চম্পট দেন।
এ ঘটনা আমাকে বলেছিলেন একসময়ের ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা এসি আকরাম হোসেন। তবে সেই অভিযানে তিনি নিজে ছিলেন না, ছিলেন তাঁর টিমের এক পরিদর্শক। এরপর সেই তরুণ সন্ত্রাসীকে ধরতে প্রায় এক বছর ছক কষেছিলেন তিনি। ধরেছিলেন ১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে পুরোনো ডিওএইচএসের বাসা থেকে। সেই বাসা চিনতেও ফ্রিজ বহন করা একটি ভ্যানের পিছু নিতে হয়েছিল পুলিশকে। নতুন কেনা ফ্রিজ সেই সন্ত্রাসীর বাসায় যাচ্ছে শুনেই ভ্যানের পিছু নিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিনের সেই ভয়ংকর তরুণ এখন কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি সুইডেন আসলাম নামে পরিচিত। আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে। তবে কারাগারে থাকলেও লক্ষ্মী ছেলের মতো ভেতরে বসে নেই। মোবাইল ফোনে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকার অপরাধজগৎ। কারাগারে তাঁর সেল থেকে দুটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছিল। এসব ফোন দিয়ে তিনি কারাগারের বাইরে থাকা পাণ্ডাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁদের এবং সেই সব মামলার সাক্ষীদের হুমকি দিতেন। সেই হুমকিতে বাদী ও সাক্ষী আর আদালতে যান না। সাক্ষীর অভাবে বেশির ভাগ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এখন বাকি আছে মাত্র একটি মামলা। সেই মামলা থেকে খালাস পেলেই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন অনায়াসে।
ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের সুবাদে প্রায় প্রতিদিন বিকেলের দিকে দল বেঁধে আমরা যেতাম মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে সহকারী পুলিশ সুপার পদের একজন কর্মকর্তা জনসংযোগের দায়িত্বে থাকতেন। তাঁর কক্ষে বসে দিনের বিভিন্ন ঘটনা শুনতাম। দরকার হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলতাম। জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বসতেন ডিবি অফিসের ভেতরে একটি টিনশেডে। ডিবি অফিসের মূল ভবনের দোতলায় বসতেন দক্ষিণের ডিসি আর নিচতলায় ডিবির ডিসি। নিচের একটি বড় কক্ষের ভেতরে হার্ডবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট কক্ষ বানানো। এ রকম একটি কক্ষে বসতেন এসি আকরাম হোসেন। ’৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল খুনের ঘটনায় তাঁর কারাদণ্ড হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর গত বছরের ১৬ জুলাই তিনি মারা যান।
১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে আমরা বসে আছি জনসংযোগ শাখার সহকারী কমিশনার মিয়া আব্দুস ছালামের রুমে। হঠাৎ ওয়াকিটকিতে ব্যাপক শোরগোল। বড় এক আসামি ধরা পড়েছে। ঘণ্টাখানেক পর সেই আসামিকে আনা হয় কড়া পাহারায়। আমরা দৌড়ে গেলাম আকরাম হোসেনের রুমে। দেখি হ্যান্ডকাফ পরা তরুণকে আরও শক্ত করে বাঁধা হচ্ছে। সেই তরুণকে আমরা সহজেই চিনে ফেললাম, তিনিই হলেন সুইডেন আসলাম। এসি আকরাম তাঁর অভিযান নিয়ে সহজে কিছু বলতেন না, সেদিনও বললেন না। তবে তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা সুইডেন আসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম; কিন্তু আসলাম কোনো কথা বললেন না। যা জিজ্ঞাসা করি, মাথা নিচু করে থাকেন। তাঁকে দফায় দফায় রিমান্ডে আনা হলেও মুখ খোলেন না। পরে আমরা খোঁজ করে বের করি ভয়ংকর সব তথ্য। সে কথায় পরে আসি।
আসলামের বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ জিন্নাত আলী। পরিবারটির আদি বাস ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামে। তবে পরিবারের কেউ এই গ্রামে থাকেন না। আসলামের বাবা-চাচারা স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার ইন্দিরা রোডে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতার পর জিন্নাত আলী ফার্মগেটে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে আসলাম দ্বিতীয়।
আসলাম এসএসসি পাস করেন তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল (বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি বিদ্যালয়) থেকে। স্কুলজীবনে তিনি ভালো ফুটবল খেলতেন। আন্তজেলা স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। তেজগাঁও কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েই বনে যান উঠতি রংবাজ। সে সময় ফার্মগেট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন আজাদ-বাপ্পি নামে দুই ভাই। একদিন ফার্মগেটের নিউ স্টার হোটেল থেকে বাপ্পিকে জোর করে তুলে নিয়ে যান আসলাম ও তাঁর লোকজন। এরপর মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেন। এতে দুই ভাইয়ের পতন ঘটে, উত্থান হয় আসলামের। শাকিল নামের এক কিশোর হত্যার মধ্য দিয়ে আসলামের এই কাজে হাতেখড়ি বলে অভিযোগ আছে। ১৯৮৭ সালে পূর্ব রাজাবাজার নাজনীন স্কুলের ভেতরে মায়ের সামনে খুন হয় শাকিল। তখন সুইডেন আসলামের সঙ্গে ছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের সুমন ওরফে চাংখা সুমন, ব্যাটারি বাবু ওরফে কিলার বাবু, মণিপুরিপাড়ার বিআরটিসি কোয়ার্টারের আমজাদ হোসেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাবু এবং কলাবাগানের সাবু।
ফার্মগেট এলাকায় সে সময় চাইনিজ নামের আরেক সন্ত্রাসীর বেশ নামডাক ছিল। তাঁর সহযোগী ছিলেন শাকিল। চাইনিজের সঙ্গে সম্পর্ক করতে তাঁর সুইডেনপ্রবাসী বোন ইতিকে বিয়ে করেন সুইডেন আসলাম। চাইনিজ তাঁর বোনের সঙ্গে সুইডেনে চলে গেলে শাকিলকে নৃশংসভাবে খুন করেন আসলাম। এরপর তিনিও স্ত্রীর কাছে সুইডেনে চলে যান। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। সুইডেনেই ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় আসলামের। ইতি ঢাকায় এসে মামুন নামের এক সন্ত্রাসীকে বিয়ে করেন। আসলামের সহযোগীরা এর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ’৯৫ সালের মে মাসে পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী আগা শামীমের আস্তানায় সমঝোতার কথা বলে মামুনকে ডাকা হয়। মামুন সেখানে যান ভারতীয় সন্ত্রাসী গোপাল কর ও নুরুল ইসলামকে নিয়ে। আসলামের লোকেরা সেখানেই তাঁদের তিনজনকে গুলি করে খুন করেন। ২০০৪ সালের জুন মাসে এ মামলার রায় হয়। সন্ত্রাসী আগা শামীমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আসলাম এ মামলা থেকে খালাস পান। সে সময় মামুন ও ইতির বিয়েতে সহায়তা করেছিলেন আসলামের সেকেন্ড ইন কমান্ড বিপুল। একদিন মধুবাগের মাঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিপুলের দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে আসলাম তাঁকে খুন করান বলে অভিযোগ। বিপুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কলাবাগানের কিসলুকেও মেরে ফেলা হয়। আসলামের আরেক সহযোগী ছিলেন গাব্বু। তাঁর স্ত্রী আসমা একবার পুলিশকে আসলামের গতিবিধির কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। একদিন তেজগাঁও রেললাইনের বস্তিতে গাব্বুর সামনেই তাঁর স্ত্রী আসমাকে বুকে গুলি করে খুন করা হয়। তখনো মূল অভিযোগ ছিল আসলামের দিকে। মিরপুরে রানা, সাজ্জাদ, টাঙ্গাইলের ছাত্রনেতা শামীম তালুকদারও তাঁর হাতে খুন হয়েছিলেন। নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে কারওয়ান বাজারের পিচ্চি হান্নান, মগবাজারের সুব্রত বাইন ও টিক্কার সঙ্গে এক হয়েছিলেন আসলাম। তখন শোনা যেত, বিএনপির এক নেতার প্রশ্রয় পাচ্ছিলেন আসলাম। অবশ্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার তাঁকে শীর্ষসন্ত্রাসী ঘোষণা দিয়ে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে।
এটা মনে আছে, সুইডেন আসলাম গ্রেপ্তারের পর তাঁর সাবেক স্ত্রী ইতি তাঁর মাকে নিয়ে ভোরের কাগজের তৎকালীন ক্রাইম রিপোর্টার পারভেজ খানের কাছে এসেছিলেন তাঁর ওপর নির্যাতন ও সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ জানাতে। পরে পারভেজ খান তাঁদের ইস্কাটনের জনকণ্ঠ ভবনে আমার কাছে নিয়ে আসেন। ইতির করা অভিযোগের ভিত্তিতে জনকণ্ঠে রিপোর্টও হয়। ইতি আমাকে বলেছিলেন, তিনি সুইডেন আসলামকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শত্রুর সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, আসলাম মনে করতেন, হাত থেকে অস্ত্র ফেলে দিলেই তাঁকে মরতে হবে। ইতির বিষয়ে দুই দিন আগে কথা বলেছিলাম সুইডেন আসলামের এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাকে বললেন, ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ইতি সুইডেনে চলে যান। সেখানে বিষাদগ্রস্ত হয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যা করেন।
এই লেখার জন্য সুইডেন আসলামের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হালনাগাদ তথ্য নিয়েছিলাম গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে। তাতে দেখা গেল, বিভিন্ন সময়ে সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়েছে, যার ৯টি হত্যা মামলা। বাকিগুলো অপহরণ ও চাঁদাবাজি। অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন এবং ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। পরে এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পান। এখন তাঁর বিরুদ্ধে আছে শুধু একটি হত্যা মামলা। সেটা হলো গালিব হত্যা মামলা। এই খুনের পরই গ্রেপ্তার হন আসলাম। মাহমুদুল হক খান গালিব ছিলেন তেজগাঁওয়ের যুবলীগের নেতা। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ তেজকুনিপাড়ার বাসার সামনে খুন হন। এ মামলার আসামি শাহীন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বলেছিলেন, সুইডেন আসলামের উপস্থিতিতে দেলু ও মাসুদ গুলি করে খুন করেন গালিবকে। গালিবের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন শম্পা তেজগাঁও থানায় মামলা করেছিলেন। কিন্তু আসলামের ভয়ে এই মামলার সাক্ষীরা আর আদালতে যান না। ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৪ জন। এই একটি মামলাতেই আসলামের জামিন হয়নি।
ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আসলাম তাঁর চাচা শেখ মো. আবদুল লতিফের মেয়ে সিমিকে বিয়ে করেন। সিমি এখন তাঁর ছোট বোন শ্যামলী আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ইন্দিরা রোডের বাড়িতেই থাকেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন তরুণ রিপোর্টার শাহরিয়ার হাসান। কিন্তু স্বামী সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাননি সিমি। এত দিন পর এই পরিচয়ে তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না, এই পরিচয়ও বহন করতে চান না। সারাক্ষণ থাকেন অজানা এক আশঙ্কায়।
সিমি এখন একাকী। তিনি বিশ্বাস করেন, বাকি জীবন আসলামকে জেলেই কাটাতে হবে। তাঁর সঙ্গে ছোট বোন শ্যামলীও বললেন, ‘মামলাগুলো যে অবস্থায় থাকুক না কেন, তিনি যে কখনো জেল থেকে বের হতে পারবেন, এটা আর আমাদের বিশ্বাস হয় না।’
সিমির কাছে প্রশ্ন ছিল, এমন একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসীর সঙ্গে জীবন বেঁধে কী পেলেন, তাঁর হিসাব কষেছেন? সিমি কোনো জবাব দেন না, শূন্যের দিকে চেয়ে থাকেন, সেই প্রশ্নের জবাব হয়তো তাঁর নিজের কাছেও নেই।
আরও পড়ুন:

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
এই অবস্থায় পাল্টা গুলি চালালে প্রাণহানি অনিবার্য। দূরে দাঁড়ানো পুলিশের ছোট দলটির প্রধান পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে চুপ হয়ে গেলেন। আর সেই সুযোগে অস্ত্রধারী যুবকটি একটি মোটরবাইকেলের পেছনে উঠে চম্পট দেন।
এ ঘটনা আমাকে বলেছিলেন একসময়ের ডাকসাইটে পুলিশ কর্মকর্তা এসি আকরাম হোসেন। তবে সেই অভিযানে তিনি নিজে ছিলেন না, ছিলেন তাঁর টিমের এক পরিদর্শক। এরপর সেই তরুণ সন্ত্রাসীকে ধরতে প্রায় এক বছর ছক কষেছিলেন তিনি। ধরেছিলেন ১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে পুরোনো ডিওএইচএসের বাসা থেকে। সেই বাসা চিনতেও ফ্রিজ বহন করা একটি ভ্যানের পিছু নিতে হয়েছিল পুলিশকে। নতুন কেনা ফ্রিজ সেই সন্ত্রাসীর বাসায় যাচ্ছে শুনেই ভ্যানের পিছু নিয়েছিল গোয়েন্দা পুলিশ।
সেদিনের সেই ভয়ংকর তরুণ এখন কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম। ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে তিনি সুইডেন আসলাম নামে পরিচিত। আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি জেলে। তবে কারাগারে থাকলেও লক্ষ্মী ছেলের মতো ভেতরে বসে নেই। মোবাইল ফোনে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকার অপরাধজগৎ। কারাগারে তাঁর সেল থেকে দুটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছিল। এসব ফোন দিয়ে তিনি কারাগারের বাইরে থাকা পাণ্ডাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। শুধু তা-ই নয়, তাঁর বিরুদ্ধে যাঁরা মামলা করেছিলেন, তাঁদের এবং সেই সব মামলার সাক্ষীদের হুমকি দিতেন। সেই হুমকিতে বাদী ও সাক্ষী আর আদালতে যান না। সাক্ষীর অভাবে বেশির ভাগ মামলা থেকে খালাস পেয়েছেন তিনি। এখন বাকি আছে মাত্র একটি মামলা। সেই মামলা থেকে খালাস পেলেই কারাগার থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন অনায়াসে।
ক্রাইম রিপোর্টিংয়ের সুবাদে প্রায় প্রতিদিন বিকেলের দিকে দল বেঁধে আমরা যেতাম মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে। সেখানে সহকারী পুলিশ সুপার পদের একজন কর্মকর্তা জনসংযোগের দায়িত্বে থাকতেন। তাঁর কক্ষে বসে দিনের বিভিন্ন ঘটনা শুনতাম। দরকার হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথাও বলতাম। জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা বসতেন ডিবি অফিসের ভেতরে একটি টিনশেডে। ডিবি অফিসের মূল ভবনের দোতলায় বসতেন দক্ষিণের ডিসি আর নিচতলায় ডিবির ডিসি। নিচের একটি বড় কক্ষের ভেতরে হার্ডবোর্ড দিয়ে ছোট ছোট কক্ষ বানানো। এ রকম একটি কক্ষে বসতেন এসি আকরাম হোসেন। ’৯৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুবেল খুনের ঘটনায় তাঁর কারাদণ্ড হয়। জেল থেকে বের হওয়ার পর গত বছরের ১৬ জুলাই তিনি মারা যান।
১৯৯৭ সালে ২৬ মে বিকেলে আমরা বসে আছি জনসংযোগ শাখার সহকারী কমিশনার মিয়া আব্দুস ছালামের রুমে। হঠাৎ ওয়াকিটকিতে ব্যাপক শোরগোল। বড় এক আসামি ধরা পড়েছে। ঘণ্টাখানেক পর সেই আসামিকে আনা হয় কড়া পাহারায়। আমরা দৌড়ে গেলাম আকরাম হোসেনের রুমে। দেখি হ্যান্ডকাফ পরা তরুণকে আরও শক্ত করে বাঁধা হচ্ছে। সেই তরুণকে আমরা সহজেই চিনে ফেললাম, তিনিই হলেন সুইডেন আসলাম। এসি আকরাম তাঁর অভিযান নিয়ে সহজে কিছু বলতেন না, সেদিনও বললেন না। তবে তাঁর অনুমতি নিয়ে আমরা সুইডেন আসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম; কিন্তু আসলাম কোনো কথা বললেন না। যা জিজ্ঞাসা করি, মাথা নিচু করে থাকেন। তাঁকে দফায় দফায় রিমান্ডে আনা হলেও মুখ খোলেন না। পরে আমরা খোঁজ করে বের করি ভয়ংকর সব তথ্য। সে কথায় পরে আসি।
আসলামের বাবার নাম শেখ মোহাম্মদ জিন্নাত আলী। পরিবারটির আদি বাস ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার আলগা ইউনিয়নের সাঁথিয়া গ্রামে। তবে পরিবারের কেউ এই গ্রামে থাকেন না। আসলামের বাবা-চাচারা স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকার ইন্দিরা রোডে বসবাস শুরু করেন। স্বাধীনতার পর জিন্নাত আলী ফার্মগেটে রড-সিমেন্টের ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর তিন ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে আসলাম দ্বিতীয়।
আসলাম এসএসসি পাস করেন তেজগাঁও পলিটেকনিক স্কুল (বর্তমানে তেজগাঁও সরকারি বিদ্যালয়) থেকে। স্কুলজীবনে তিনি ভালো ফুটবল খেলতেন। আন্তজেলা স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় খেলেছেন। তেজগাঁও কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েই বনে যান উঠতি রংবাজ। সে সময় ফার্মগেট এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতেন আজাদ-বাপ্পি নামে দুই ভাই। একদিন ফার্মগেটের নিউ স্টার হোটেল থেকে বাপ্পিকে জোর করে তুলে নিয়ে যান আসলাম ও তাঁর লোকজন। এরপর মারধর করে রাস্তায় ফেলে দেন। এতে দুই ভাইয়ের পতন ঘটে, উত্থান হয় আসলামের। শাকিল নামের এক কিশোর হত্যার মধ্য দিয়ে আসলামের এই কাজে হাতেখড়ি বলে অভিযোগ আছে। ১৯৮৭ সালে পূর্ব রাজাবাজার নাজনীন স্কুলের ভেতরে মায়ের সামনে খুন হয় শাকিল। তখন সুইডেন আসলামের সঙ্গে ছিলেন পূর্ব রাজাবাজারের সুমন ওরফে চাংখা সুমন, ব্যাটারি বাবু ওরফে কিলার বাবু, মণিপুরিপাড়ার বিআরটিসি কোয়ার্টারের আমজাদ হোসেন, পূর্ব রাজাবাজারের বাবু এবং কলাবাগানের সাবু।
ফার্মগেট এলাকায় সে সময় চাইনিজ নামের আরেক সন্ত্রাসীর বেশ নামডাক ছিল। তাঁর সহযোগী ছিলেন শাকিল। চাইনিজের সঙ্গে সম্পর্ক করতে তাঁর সুইডেনপ্রবাসী বোন ইতিকে বিয়ে করেন সুইডেন আসলাম। চাইনিজ তাঁর বোনের সঙ্গে সুইডেনে চলে গেলে শাকিলকে নৃশংসভাবে খুন করেন আসলাম। এরপর তিনিও স্ত্রীর কাছে সুইডেনে চলে যান। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। সুইডেনেই ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় আসলামের। ইতি ঢাকায় এসে মামুন নামের এক সন্ত্রাসীকে বিয়ে করেন। আসলামের সহযোগীরা এর প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। ’৯৫ সালের মে মাসে পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী আগা শামীমের আস্তানায় সমঝোতার কথা বলে মামুনকে ডাকা হয়। মামুন সেখানে যান ভারতীয় সন্ত্রাসী গোপাল কর ও নুরুল ইসলামকে নিয়ে। আসলামের লোকেরা সেখানেই তাঁদের তিনজনকে গুলি করে খুন করেন। ২০০৪ সালের জুন মাসে এ মামলার রায় হয়। সন্ত্রাসী আগা শামীমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলেও আসলাম এ মামলা থেকে খালাস পান। সে সময় মামুন ও ইতির বিয়েতে সহায়তা করেছিলেন আসলামের সেকেন্ড ইন কমান্ড বিপুল। একদিন মধুবাগের মাঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিপুলের দুই হাত বিচ্ছিন্ন করে আসলাম তাঁকে খুন করান বলে অভিযোগ। বিপুলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা কলাবাগানের কিসলুকেও মেরে ফেলা হয়। আসলামের আরেক সহযোগী ছিলেন গাব্বু। তাঁর স্ত্রী আসমা একবার পুলিশকে আসলামের গতিবিধির কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। একদিন তেজগাঁও রেললাইনের বস্তিতে গাব্বুর সামনেই তাঁর স্ত্রী আসমাকে বুকে গুলি করে খুন করা হয়। তখনো মূল অভিযোগ ছিল আসলামের দিকে। মিরপুরে রানা, সাজ্জাদ, টাঙ্গাইলের ছাত্রনেতা শামীম তালুকদারও তাঁর হাতে খুন হয়েছিলেন। নিজের সাম্রাজ্য ঠিক রাখতে কারওয়ান বাজারের পিচ্চি হান্নান, মগবাজারের সুব্রত বাইন ও টিক্কার সঙ্গে এক হয়েছিলেন আসলাম। তখন শোনা যেত, বিএনপির এক নেতার প্রশ্রয় পাচ্ছিলেন আসলাম। অবশ্য বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার তাঁকে শীর্ষসন্ত্রাসী ঘোষণা দিয়ে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে।
এটা মনে আছে, সুইডেন আসলাম গ্রেপ্তারের পর তাঁর সাবেক স্ত্রী ইতি তাঁর মাকে নিয়ে ভোরের কাগজের তৎকালীন ক্রাইম রিপোর্টার পারভেজ খানের কাছে এসেছিলেন তাঁর ওপর নির্যাতন ও সম্পদ লুটপাটের অভিযোগ জানাতে। পরে পারভেজ খান তাঁদের ইস্কাটনের জনকণ্ঠ ভবনে আমার কাছে নিয়ে আসেন। ইতির করা অভিযোগের ভিত্তিতে জনকণ্ঠে রিপোর্টও হয়। ইতি আমাকে বলেছিলেন, তিনি সুইডেন আসলামকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড থেকে ফেরাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শত্রুর সংখ্যা এত বেড়ে গিয়েছিল যে, আসলাম মনে করতেন, হাত থেকে অস্ত্র ফেলে দিলেই তাঁকে মরতে হবে। ইতির বিষয়ে দুই দিন আগে কথা বলেছিলাম সুইডেন আসলামের এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাকে বললেন, ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ইতি সুইডেনে চলে যান। সেখানে বিষাদগ্রস্ত হয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যা করেন।
এই লেখার জন্য সুইডেন আসলামের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের হালনাগাদ তথ্য নিয়েছিলাম গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে। তাতে দেখা গেল, বিভিন্ন সময়ে সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা হয়েছে, যার ৯টি হত্যা মামলা। বাকিগুলো অপহরণ ও চাঁদাবাজি। অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় তাঁর যাবজ্জীবন এবং ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। পরে এসব মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে অব্যাহতি পান। এখন তাঁর বিরুদ্ধে আছে শুধু একটি হত্যা মামলা। সেটা হলো গালিব হত্যা মামলা। এই খুনের পরই গ্রেপ্তার হন আসলাম। মাহমুদুল হক খান গালিব ছিলেন তেজগাঁওয়ের যুবলীগের নেতা। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ তেজকুনিপাড়ার বাসার সামনে খুন হন। এ মামলার আসামি শাহীন আদালতে জবানবন্দি দিয়ে বলেছিলেন, সুইডেন আসলামের উপস্থিতিতে দেলু ও মাসুদ গুলি করে খুন করেন গালিবকে। গালিবের স্ত্রী শাহেদা নাসরিন শম্পা তেজগাঁও থানায় মামলা করেছিলেন। কিন্তু আসলামের ভয়ে এই মামলার সাক্ষীরা আর আদালতে যান না। ২৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন ১৪ জন। এই একটি মামলাতেই আসলামের জামিন হয়নি।
ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর আসলাম তাঁর চাচা শেখ মো. আবদুল লতিফের মেয়ে সিমিকে বিয়ে করেন। সিমি এখন তাঁর ছোট বোন শ্যামলী আর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ইন্দিরা রোডের বাড়িতেই থাকেন। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাসায় গিয়েছিলেন তরুণ রিপোর্টার শাহরিয়ার হাসান। কিন্তু স্বামী সম্পর্কে কোনো কথা বলতে চাননি সিমি। এত দিন পর এই পরিচয়ে তিনি কারও সঙ্গে কথা বলতে চান না, এই পরিচয়ও বহন করতে চান না। সারাক্ষণ থাকেন অজানা এক আশঙ্কায়।
সিমি এখন একাকী। তিনি বিশ্বাস করেন, বাকি জীবন আসলামকে জেলেই কাটাতে হবে। তাঁর সঙ্গে ছোট বোন শ্যামলীও বললেন, ‘মামলাগুলো যে অবস্থায় থাকুক না কেন, তিনি যে কখনো জেল থেকে বের হতে পারবেন, এটা আর আমাদের বিশ্বাস হয় না।’
সিমির কাছে প্রশ্ন ছিল, এমন একজন ভয়ংকর সন্ত্রাসীর সঙ্গে জীবন বেঁধে কী পেলেন, তাঁর হিসাব কষেছেন? সিমি কোনো জবাব দেন না, শূন্যের দিকে চেয়ে থাকেন, সেই প্রশ্নের জবাব হয়তো তাঁর নিজের কাছেও নেই।
আরও পড়ুন:

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।
জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।
তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
০১ জানুয়ারি ২০২২
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

বিদেশ থেকে পার্সেল এসেছে—এমন দাবি করে কাস্টমস থেকে তা ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
গতকাল সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের কুনিপাড়া এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ওই তরুণের নাম মো. নূরে আলম ওরফে তুহিন (২৪)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
পরে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজুহাতে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে বিকাশ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা আদায় করেন নূরে আলম। টাকা পাওয়ার পর নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন তিনি।
ভুক্তভোগী আদালতের শরণাপন্ন হলে রামপুরা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার। পরে নূরে আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সিআইডি জানায়, প্রতারক চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
০১ জানুয়ারি ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

জুয়া ও প্রতারণায় জড়িত থাকায় ৫০ হাজারের বেশি এমএফএস (মোবাইলভিত্তিক আর্থিক লেনদেন সেবা) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ (স্থগিত) করেছে বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট)। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত এই নম্বরগুলো স্থগিত করা হয়।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় বিএফআইইউর প্রতিনিধি এ তথ্য জানান।
সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স), এনএসআই (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স), এনটিএমসি (ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার), সিআইডি (ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট), বিএফআইইউ, এমএফএস ও মোবাইল অপারেটরদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত) করা হয়েছে, সেগুলো থেকে কোথায় কোথায় টাকা লেনদেন করা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
ডিজিএফআই প্রতিনিধি জানান, অনলাইন জুয়ার মতো আর্থিক নানা প্রতারণায় বেনামি সিম ব্যবহার করা হচ্ছে। সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া সিম বিক্রি করছে। মানুষের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। বিকাশের অ্যাপ নকল করা হয়েছে। নাগরিকদের ডেটাবেইস ডার্ক ওয়েবে পাওয়া যাচ্ছে। এটা নিয়ে নানা অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।
সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, সরকার সতর্ক করার পরও অনেক গণমাধ্যমের অনলাইন পোর্টালে এখনো জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। এ ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করলে যেকোনো মুহূর্তে বিনা নোটিশে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমের পোর্টাল বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রায় সব কটি মিডিয়ার পোর্টালে এখনো অনিরাপদ কনটেন্ট আসে। জুয়ার বিজ্ঞাপন আসে। এখান থেকে তারা টাকা পায়।
১৯ অক্টোবর পর্যন্ত জুয়ার বিজ্ঞাপন বন্ধে সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে গণমাধ্যমগুলো তা মানছে না বলে অভিযোগ করেন বিশেষ সহকারী। তিনি বলেন, বেশ কিছু অনলাইন পোর্টাল জুয়ার বিজ্ঞাপন ও অনিরাপদ কনটেন্ট বিজ্ঞাপন প্রচার করছে। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা যেকোনো মুহূর্তে বন্ধ করে দেব। যেহেতু একাধিক নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমরা পাবলিকলি কোনো নোটিশ দেব না।’
অনলাইন জুয়া বন্ধে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। তিনি জানান, সরকারের হিসাবে গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৮২০টি এমএফএস নম্বর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ১ হাজার ৩৩১টি ওয়েব পোর্টালের লিংক পাওয়া গেছে।
সরকারের চ্যালেঞ্জ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, যখনই একটা নম্বর ব্লক করা হয়, তখন এর চেয়ে বেশিসংখ্যক বা সমসংখ্যক নম্বর ব্যবহার করে সিগন্যাল-হোয়াটসঅ্যাপের মতো গ্রুপগুলোয় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আইপি পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটের নাম একটু পরিবর্তন করা হয়। এভাবে নতুন ওয়েবসাইট বানিয়ে আবার শুরু করা হয়। এমএফএস, ওয়েব লিংক বন্ধ করার পর এ চক্রগুলো আবার অ্যাপ তৈরি ফেলে। অ্যাপগুলো অনেক ক্ষেত্রেই পাবলিশড নয়, এপিকে হিসেবে ব্যবহার করে।

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
০১ জানুয়ারি ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
১০ দিন আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

দেশে বসেই আন্তর্জাতিক পর্নো সাইটে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা। ভিডিও বানিয়ে আপলোড করতেন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে। শুধু নিজেরাই নন, এই দম্পতি অন্যদেরও এ কাজে যুক্ত করতেন বলে অভিযোগ। অবশেষে সেই আলোচিত যুগলকে বান্দরবানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
আজ সোমবার ভোরে বান্দরবান সদর উপজেলার হাজীপাড়ার বালাঘাটা এলাকা থেকে সিআইডির এলআইসি ও সাইবার পুলিশ সেন্টার (সিপিসি) ইউনিটের সদস্যরা এই যুগলকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তার হওয়া যুগল হলেন মুহাম্মদ আজিম (২৮) ও তাঁর স্ত্রী বৃষ্টি (২৮)। আজ বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় সিআইডি।
গ্রেপ্তার আজিমের বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বুরুমছড়া গ্রামে এবং বৃষ্টির বাড়ি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আন্ধারমানিক (খালপাড়) গ্রামে।
সিআইডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই যুগল ২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক এক পর্নো সাইটে প্রথম ভিডিও আপলোড করেন। এরপর এক বছরের মধ্যে তাঁরা ১১২টি ভিডিও আপলোড করেছেন, যেগুলো বিশ্বব্যাপী ২ কোটি ৬৭ লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে।
এই যুগল এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন যে, ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে আন্তর্জাতিক পারফর্মার র্যাঙ্কিংয়ে তাঁদের অবস্থান উঠে আসে অষ্টম স্থানে। ভিডিও আপলোড ছাড়াও তাঁরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রচারণা চালাতেন। এসব প্ল্যাটফর্মে নতুনদের এ কাজে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানানো হতো।
তদন্তকারীরা বলছেন, আগ্রহীদের ‘ক্রিয়েটর’ হিসেবে যুক্ত করতে তাঁরা টেলিগ্রাম চ্যানেলে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিজ্ঞাপন দিতেন। নতুন কেউ যুক্ত হলে তাঁকে নগদ অর্থ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হতো। কেউ যোগাযোগ করলে তাঁদের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে উৎসাহিত করতেন আজিম ও বৃষ্টি।
সিআইডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই যুগল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে পারেননি। তবে অনলাইনে তাঁদের বিলাসবহুল জীবনধারার নানা ছবি পাওয়া যায়, যা সমাজে নেতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। এসব কার্যক্রম সামাজিক ও নৈতিকভাবে যেমন উদ্বেগজনক, তেমনি দেশের প্রচলিত আইনেরও লঙ্ঘন।
অভিযানের সময় তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, ক্যামেরা, ট্রাইপডসহ ভিডিও ধারণের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি জব্দ করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। একই সঙ্গে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে সিআইডি।
সিআইডির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পর্নোগ্রাফি ছড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।

ব্যস্ত ফার্মগেটে হঠাৎ গুলির শব্দ। সুদর্শন এক তরুণ দুই হাত প্রসারিত করে ঝড়ের গতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দুই হাতে দুটি অস্ত্র ধরা। সেই অস্ত্র দুটি থেকে খইয়ের মতো গুলি ফুটছে। বেপরোয়া তরুণের কাছে ঘেঁষার সাধ্য কারও নেই। গুলি থেকে বাঁচতে নিরাপদ স্থানে যেতে মরিয়া মানুষ।
০১ জানুয়ারি ২০২২
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
৬ দিন আগে
এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানিয়েছে, নূরে আলম একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তিনি ফেসবুকে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানান, তাঁর নামে বিদেশ থেকে একটি পার্সেল এসেছে, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাস্টম হাউসে জমা আছে। পার্সেল ছাড়াতে টাকা লাগবে—এ দাবি করে পার্সেলের ছবিও পাঠান তিনি।
৯ দিন আগে
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সভায় উপস্থিত বিএফআইইউ প্রতিনিধি বলেন, এমএফএস অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জুয়া ও প্রতারণা বন্ধে বিটিআরসির (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেওয়া হবে। যেসব অ্যাকাউন্ট ব্লক (স্থগিত)
৯ দিন আগে