Ajker Patrika

দেশে বিদ্যুৎ খাত সংস্কারে বছরে বাঁচবে ১৪ হাজার কোটি টাকা: গবেষণায় রোডম্যাপ

  • বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেলেও বিদ্যুতের চাহিদার কম প্রবৃদ্ধি, ব্যয়বহুল জ্বালানি ব্যবহার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে সীমিত সাফল্য এবং প্রতিকূল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এর আর্থিক সংকট বেড়েছে।
  • বিদ্যুৎ খাতে ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত রাজস্ব বৃদ্ধি যেখানে ১ দশমিক ৮ গুণ, সেখানে বিপিডিবির মোট বার্ষিক ব্যয় বেড়েছে ২ দশমিক ৬ গুণ। এ অবস্থায় সরকার এই সময়কালে মোট ১০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভর্তুকি বরাদ্দ করেছে।
  • ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের রিজার্ভ মার্জিন ৬৬ দশমিক ১ শতাংশে পৌঁছাতে পারে, যা সীমিত নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি দেশের জন্য অনেক বেশি। আইইইএফএর মূল্যায়ন অনুযায়ী, ২০৩০ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা হতে পারে ২৫ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট। আর এই সময়ে পরামর্শ অনুসরণ করলে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হবে ৩৫ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট। এতে ২০৩০ সালে রিজার্ভ মার্জিন দাঁড়াবে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশে।
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ৫৬
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিদ্যুৎ খাতে মূল সমস্যাগুলোর সমাধান করলে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) বছরে প্রায় ১৪ হাজার (১৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বা ১২০ কোটি মার্কিন ডলার) কোটি টাকা সাশ্রয় হতে পারে। বর্তমানে এই পরিমাণ অর্থ সরকারি ভর্তুকির মাধ্যমে ব্যয় হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জ্বালানি গবেষণা থিংক ট্যাংক ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিকস অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল অ্যানালাইসিসের (আইইইএফএ) এক নতুন গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সাশ্রয় অর্জন করা সম্ভব—যদি শিল্প খাতে যে পরিমাণ চাহিদা আছে তার অর্ধেক, যা বর্তমানে ক্যাপটিভ জেনারেটরের (নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন অবকাঠামো) মাধ্যমে পূরণ হয়, সেগুলো জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা যায়, ৩ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি যোগ করা যায় এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় লোডশেডিং ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা যায়। পাশাপাশি, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণে ক্ষতি ৮ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।

আইইইএফএর প্রতিবেদক এবং বাংলাদেশের জ্বালানিবিষয়ক প্রধান বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের রিজার্ভ মার্জিন (কোনো একটি নির্দিষ্ট অবকাঠামোর সক্ষমতার যে পরিমাণ অব্যবহৃত থাকে) বর্তমানে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশের আশপাশে, যা অতিরিক্ত সক্ষমতা সমস্যার ইঙ্গিত দেয় এবং বিপিডিবির ভর্তুকি নির্ভরতার একটি প্রধান কারণ এটি। বিদ্যুৎ শুল্কে একাধিক সমন্বয় সত্ত্বেও রাজস্ব ঘাটতি এবং ভর্তুকির প্রয়োজনীয়তা আগামী দিনগুলোতেও থাকবে। আমাদের প্রস্তাবিত রূপরেখা বিদ্যুৎ চাহিদার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য জ্বালানি দক্ষতা অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেয়, যা রিজার্ভ মার্জিন কমাতে সাহায্য করবে।’

শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আমাদের রূপরেখা প্রস্তাব করছে যে, নতুন জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ সীমিত রাখতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসার বাড়াতে হবে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ গ্রিড আধুনিকায়নের মাধ্যমে শিল্পগুলোকে গ্যাসচালিত ক্যাপটিভ প্ল্যান্টের পরিবর্তে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে এবং লোডশেডিং কমাতে হবে। আমরা দেখেছি, এ ধরনের পদক্ষেপ নিলে ভর্তুকির চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত বিপিডিবির বার্ষিক মোট ব্যয় ২ দশমিক ৬ গুণ বেড়েছে, যেখানে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৮ গুণ। এর ফলে অর্থনীতি সচল রাখতে সরকার মোট ১ লাখ ২৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বা ১০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে। তবু, এই সময়ে বিপিডিবির ক্ষতি হয়েছে ২৩ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ সরকার কেবল ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই বিপিডিবিকে ৩৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা বা ৩২২ কোটি মার্কিন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘ভর্তুকি প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হলে নিশ্চিত করতে হবে যে, শিল্প খাত পুরোপুরি জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডের ওপর নির্ভরশীল থাকবে। পাশাপাশি, গ্যাসচালিত যন্ত্রপাতি—যেমন: বয়লার—ধীরে ধীরে বিদ্যুৎ-চালিত যন্ত্রে রূপান্তর করতে হবে। এর ফলে বিপিডিবির বিদ্যুৎ বিক্রি থেকে রাজস্ব বাড়বে এবং অব্যবহৃত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি পেমেন্ট কমবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতকে টেকসই করার সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। তবে সঠিক রূপরেখা অনুসরণ করলে এখনো এই খাতকে সঠিক পথে নিয়ে আসা সম্ভব।’

সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ২০২৫ সাল থেকে জ্বালানি দক্ষতা ও চাহিদা স্থানান্তর ব্যবস্থাগুলো বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুৎ চাহিদার সঠিক পূর্বাভাস দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে প্রতিবেদনটি। আইইইএফএর হিসাব অনুসারে, ২০৩০ সালে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা হবে ২৫ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট। তবে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে প্রকাশিত সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) অনুযায়ী, এই চাহিদার সম্ভাব্য পরিমাণ হতে পারে ২৭ হাজার ১৩৮ মেগাওয়াট থেকে ২৯ হাজার ১৫৬ মেগাওয়াটের মধ্যে। অর্থাৎ, আইইইএফএর হিসাবে চাহিদা সরকারি হিসাবের চেয়ে একটু কম হবে বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।

একই সঙ্গে, জীবাশ্ম (মূলত কয়লাভিত্তিক) জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ বন্ধ রাখা এবং মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলচালিত কেন্দ্রের ব্যবহার ৫ শতাংশে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশ করেছে আইইইএফএ। যদি এই পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয় এবং পরিকল্পিত ৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ করা হয়, তবে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হবে ৩৫ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট।

শফিকুল আলম বলেন, ‘২০৩০ সালের উৎপাদন সক্ষমতা ৩৫ হাজার ২৩৯ মেগাওয়াট হওয়ায় তা সহজেই সে বছরের সম্ভাব্য সর্বোচ্চ চাহিদা (২৫ হাজার ৮৩৪ মেগাওয়াট) পূরণ করতে সহায়ক হবে। এর ফলে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে যে রিজার্ভ মার্জিন আছে ৬৬ দশমিক ১ শতাংশে, ২০৩০ সালে তা কমে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশে (নবায়নযোগ্য জ্বালানি অন্তর্ভুক্ত করে) এবং ২০ শতাংশে (নবায়নযোগ্য জ্বালানি বাদ দিয়ে) দাঁড়াবে। এটি ভারতের মতো দেশের রিজার্ভ মার্জিনের সমতুল্য।’

যাই হোক, ২০৩০ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের বিষয়টি জোর দিয়ে দেখা উচিত। কারণ, এটি দিনের বেলায় ব্যয়বহুল তেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কমাতে সহায়ক হবে। এ ছাড়া, সন্ধ্যায় তেলচালিত প্ল্যান্টের ব্যবহার কমাতে ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার তিন ঘণ্টার ব্যাটারি স্টোরেজ স্থাপনের প্রস্তাবও দিয়েছে আইইইএফএ। ভবিষ্যতে ব্যাটারি বা বিদ্যুৎ ধারণের জন্য স্টোরেজ স্থাপনের খরচ কমে গেলে আরও বেশি ব্যাটারি ব্যবহারের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘তবে বিদ্যুৎ খাতের সমস্যাগুলো সমাধানে বাংলাদেশের সাফল্য নীতিমালার ওপর নির্ভর করবে। কেবল জিডিপি-নির্ভর চাহিদার পূর্বাভাসের পরিবর্তে জ্বালানি দক্ষতার মতো বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিদ্যুৎ গ্রিড আধুনিকায়ন, গ্যাসের মূল্যহার সমন্বয় এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও কর্মীদের সাফল্য উদ্‌যাপনে আবুল খায়ের স্টিলের ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইস্পাত উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আবুল খায়ের স্টিল (একেএস) ৬ ডিসেম্বর তাদের সব কর্মীকে নিয়ে ‘একেএস-একসাথে আগামীর পথে’ শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। দিনব্যাপী এই উৎসবমুখর ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে দেশের প্রতিটি স্থান থেকে আবুল খায়ের স্টিলের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন।

সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। নামাজ ও খাবারের বিরতির পর একেএসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবার উদ্দেশে অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য দেন। বক্তব্যে কোম্পানির সাম্প্রতিক অর্জন ও মাইলফলকগুলো তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী রড একেএস টিএমটি বি৭০০ সি-আরের সফল উৎপাদন। বিশ্বের দ্রুততম রোলিং মিল স্থাপন। একেএস এবং কাউ ব্র্যান্ড কালার কোটেড স্টিলের মর্যাদাপূর্ণ সুপারব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড অর্জন।

এই আলোচনায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন এবং কর্মীদের সম্মিলিত সাফল্যের প্রতিচ্ছবিও উঠে আসে।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও র‍্যাফেল ড্র পর্বটি উদ্‌যাপনকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কিংবদন্তি শিল্পী জেমসের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা ও লেজার শো উপস্থিত সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

সমাপনী ভাষণে একেএস পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান হয়। এরপর নৈশভোজ ও ডিজে সেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইসলামী ব্যাংকের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির পরিচালনা পরিষদের বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার (৮ ডসিম্বের) ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম জুবায়দুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন।

সভায় এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব, অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মো. আবদুস সালাম, এফসিএ, এফসিএস, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এম মাসুদ রহমান, স্বতন্ত্র পরিচালক মো. আবদুল জলিল, ম্যানেজিং ডাইরেক্টর মো. ওমর ফারুক খাঁন, শরী’আহ সুপারভাইজরি কাউন্সলিরে সদস্য সচিব প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আব্দুস সামাদ এবং কোম্পানি সেক্রেটারি মো. হাবিবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ব্যাংকের নিট মুনাফা ছাড়া উৎসাহ বোনাস বন্ধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি
বাংলাদেশ ব্যাংক। ফাইল ছবি

কর ও সঞ্চিতি সংরক্ষণের পর নিট মুনাফা অর্জন না করলে কোনো ব্যাংকই আর উৎসাহ বোনাস দিতে পারবে না। পাশাপাশি মূলধন সংরক্ষণ ঘাটতি, প্রভিশন ঘাটতি বা পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকেই বোনাস দেওয়ার পথও পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে সব ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে।

সার্কুলারে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আনরিয়েলাইজড বা নগদায়ন না করা আয়ের ভিত্তিতে বোনাস দেওয়া আর্থিক শৃঙ্খলা ও সুশাসনের পরিপন্থী। তাই এখন থেকে শুধু নির্ধারিত নিট মুনাফা অর্জন করতে পারলেই উৎসাহ বোনাস দেওয়ার অনুমতি পাবে ব্যাংকগুলো।

আরও বলা হয়, পুঞ্জীভূত মুনাফা থেকে কোনো ধরনের উৎসাহ বোনাস দেওয়া যাবে না। রেগুলেটরি মূলধন বা প্রভিশনের ঘাটতি থাকলে বোনাস দেওয়া নিষিদ্ধ। প্রভিশন সংরক্ষণে বাড়তি সময় পাওয়া ব্যাংকগুলোও সেই সময়কাল মুনাফা হিসাবের ক্ষেত্রে দেখাতে পারবে না। বোনাস প্রদানে ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন কর্মসূচির উন্নতি ও খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে দৃশ্যমান সাফল্য বিবেচনায় নিতে হবে।

এদিকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান নির্দেশিকা কার্যকর থাকবে, যেখানে নিট মুনাফা ছাড়া বোনাস না দেওয়ার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তবে কোনো ব্যাংক নির্দিষ্ট সূচকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে বিশেষ বোনাসের জন্য আবেদন করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ০৩
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন পথচারীরা। ছবি: সংগৃহীত

ভ্যাটব্যবস্থাকে পুরোপুরি ডিজিটাল ও সহজ করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক নতুন পর্যায়ে এগোচ্ছে। মাত্র একটি ক্লিকেই ভ্যাট পরিশোধের সুযোগ ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে এবং বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহারও শুরু করেছে।

এনবিআর জানিয়েছে, শিগগির এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু করা হবে, যাতে সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভ্যাটের আওতায় আসে এবং নিবন্ধন ছাড়া আর কেউ ব্যবসা চালাতে না পারে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) সচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

মো. আবদুর রহমান বলেন, দেশের বড় একটি অংশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান এখনো ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়েছে। আগামী বছর এমন একটি মেকানিজম চালু করা হবে, যার মাধ্যমে ভ্যাট নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসার সুযোগ থাকবে না। বর্তমানে নিবন্ধিত ভ্যাটদাতা প্রতিষ্ঠান ৬ লাখ ৪৪ হাজার; লক্ষ্য আগামী এক থেকে দুই বছরের মধ্যে তা ৩০ থেকে ৪০ লাখে উন্নীত করা। শুধু চলতি মাসেই ১ লাখ নতুন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য—‘সময়মতো নিবন্ধন নিব, সঠিকভাবে ভ্যাট দিব’—ধরে আগামীকাল বুধবার সারা দেশে ভ্যাট দিবস পালিত হবে। ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর চলবে ভ্যাট সপ্তাহ। তবে নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়ায় এ বছরও স্থগিত থাকছে ভ্যাট পুরস্কার।

রিটার্ন জমাদানেও বড় পরিবর্তন আসছে বলে জানান মো. আবদুর রহমান খান। গত অর্থবছরে ১৭ লাখ ই-রিটার্ন জমা পড়লেও চলতি অর্থবছরে তা ৪০ লাখে পৌঁছানোর আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ২২ লাখ রিটার্ন। ভ্যাট আদায়েও গতি এসেছে—গত অর্থবছরে মোট রাজস্বের ৩৮ শতাংশ এসেছে ভ্যাট থেকে আর চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসেই ভ্যাট আদায় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২২ শতাংশ।

করদাতাদের ঝামেলা কমাতে ই-রিটার্নে ব্যবহৃত ব্যাংকসংক্রান্ত চারটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান আবদুর রহমান।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করদাতারা মনে করেন, রাজস্ব কর্মকর্তারা এসব তথ্য দেখতে পারবেন—এটি ভুল ধারণা।

চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৫৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে কেন—এ প্রশ্নের জবাবে আবদুর রহমান বলেন, রাজস্ব আদায় বাড়ানোর বাস্তব প্রয়োজন থেকেই এ লক্ষ্য নির্ধারণ। তবে কারও ওপর হয়রানি বা অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করা হবে না; মূলত যাঁরা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন, তাঁদের ক্ষেত্রেই কঠোরতা বাড়ানো হবে।

আমদানি করা মোবাইল ফোনে কর কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এটি সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত; এককভাবে এনবিআর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনবিআরের সদস্য (মূসক নীতি) মো. আজিজুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত