Ajker Patrika

নড়বড়ে পুঁজিবাজারে নতুন সম্ভাবনা

ডিসেম্বরে আসছে পরীক্ষামূলক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ

  • সোনা, রুপা ও পাম তেল দিয়ে শুরু হবে পরীক্ষামূলক লেনদেন
  • ওয়্যারহাউস ব্যবস্থায় সময় লাগবে
  • বাজারে আনতে হবে আস্থা ও স্বচ্ছতা
  • এখনই নয় ওয়্যারহাউসভিত্তিক কার্যক্রম
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা
ডিসেম্বরে আসছে পরীক্ষামূলক কমোডিটি এক্সচেঞ্জ

পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদি মন্দার মধ্যেই নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলতে যাচ্ছে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ। চলতি বছরের ডিসেম্বরে দেশে প্রথমবারের মতো এই কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্মে পরীক্ষামূলক লেনদেন শুরু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। শুরুতেই লেনদেন হবে তিনটি পণ্যের—সোনা, রৌপ্য ও অপরিশোধিত পাম তেল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারে নতুন এ বিনিয়োগ মাধ্যম চালু হলে অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য, দাম স্থিতিশীলতা, এবং পণ্যের নিরাপদ সরবরাহ নিশ্চিত হতে পারে।

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে পুঁজিবাজারে গড় লেনদেন কমেছে প্রায় ৪০ শতাংশ। একটানা দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু বিনিয়োগকারী। এই অবস্থায় বিকল্প বিনিয়োগ চ্যানেল হিসেবে কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর এই তোড়জোড় শুরু করেছে সিএসই। তবে এটি পরীক্ষামূলক লেনদেন হওয়ায় এখনই ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ বা গ্রহণপ্রক্রিয়া শুরু হবে না। কাগুজে বা ইলেকট্রনিক বিনিময়ই আপাতত চালু থাকবে। ভবিষ্যতে ওয়্যারহাউসভিত্তিক লেনদেন এবং পণ্যের পরিসর আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালু হলে দেশের ফাইন্যান্সিয়াল মার্কেট এক নতুন পরিসরে প্রবেশ করবে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও বিশ্বব্যাংক গ্রুপের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. এম মাশরুর রিয়াজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি নতুন দিগন্ত। এটি কেবল নতুন প্রোডাক্টই নয়, বাজারে পণ্যের পর্যাপ্ততা ও স্বচ্ছতা আনবে, লেনদেন সহজ করবে এবং সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

তবে কার্যক্রম শুরু নিয়ে কিছু প্রশ্নও উঠছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, এই প্ল্যাটফর্ম লাভজনকভাবে পরিচালিত হতে হবে। তা না হলে সরকারি ভর্তুকি প্রয়োজন হবে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। তদুপরি, পণ্যের ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনাও গুরুত্বপূর্ণ।

সিএসই জানিয়েছে, আইন ও বিধিবিধান প্রণয়নপ্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে। আইন গেজেট আকারে প্রকাশের পর ব্রোকারদের অনুমোদন দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ট্রেকহোল্ডারদের জন্য খসড়া আইন প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শিগগির বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) পাঠানো হবে। সনদপ্রত্যাশীদের আবেদন নেওয়ার পর বিএসইসির অনুমোদন সাপেক্ষে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হবে।

সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম সাইফুর রহমান মজুমদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগস্টের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করে সেপ্টেম্বরেই মক টেস্ট চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁর ভাষায়, ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ইকোসিস্টেম তৈরি প্রয়োজন, যা কিছুটা সময়সাপেক্ষ। তবে ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু করতে পারব বলেই আশা করছি।’

বিনিয়োগ কাঠামোয়ও থাকছে নতুনত্ব। এক্সচেঞ্জে পণ্য কেনার জন্য পুরো টাকা দিতে হবে না; মোট দামের ১০ থেকে ২০ শতাংশ মার্জিন জমা দিয়েই ক্রেতা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পণ্য কিনতে পারবেন। নির্ধারিত সময় শেষে বাজারমূল্য অনুযায়ী লাভ বা লোকসান নির্ধারিত হবে।

বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম বলেন, ‘কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর উদ্যোগ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা এর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি। এটি চালু হলে দেশের বাজার ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ হবে।’

পুঁজিবাজারের চরম অস্থিরতার মধ্যেও এমন উদ্যোগ অর্থনীতিতে স্বচ্ছতা, পণ্যের দামের ভারসাম্য এবং বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন দেখার বিষয়, এ সম্ভাবনাময় প্ল্যাটফর্ম কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত