Ajker Patrika

আর্জেন্টিনায় ডলারের সংকটে চীনা ইউয়ানের বাজার দখল  

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৩, ১৬: ২৫
Thumbnail image

আর্জেন্টিনায় ইউএস ডলার এতটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে যে আমেরিকার বহুজাতিক কোম্পানি হোয়ারপুল এখন দেশটিতে চীনের মুদ্রা ইউয়ান দিয়ে বিনিময় করছে। শুধু আর্জেন্টিনাতেই নয়। দক্ষিণ আমেরিকার সবগুলো দেশেই মার্কিন ডলারের দুষ্প্রাপ্যতা দেখা দিয়েছে। এতে অনেক কোম্পানিকে ইউয়ান গ্রহণ করতে হচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দিচ্ছে মোড়। 

বুয়েনস আয়ার্সের অর্থনীতিবিদ মার্সেলো এলিজোন্ডো বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার নেই, তাই চীন যে জরুরি সহায়তা দিচ্ছে তার প্রয়োজন। আর্জেন্টিনায় এভাবে চীনের মুদ্রার ব্যবহার জরুরি অবস্থার ফল। কিন্তু চীনের জন্য এটি ভূরাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার সূচনা বিন্দু।’ 

বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের আধিপত্য হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। মার্কিন-চীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা এর পেছনে বড় কারণ। তা ছাড়া, ইউক্রেনে আগ্রাসনের পর রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এটিও নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ডলারের বদলে অন্য মুদ্রায় বাণিজ্যর পথ খুলে দিয়েছে। 

উদাহরণস্বরূপ, প্রতিবেশী ব্রাজিল আরও ইউয়ান ব্যবহার করতে চায়। প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ডলারের বিকল্প খুঁজতে এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আর্জেন্টিনা অর্থনৈতিক মন্দায় পড়ে দ্রুত ও স্বল্পমেয়াদি সমাধানের জন্য ইউয়ান ব্যবহার শুরু করেছে। কারণ দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সামনে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং জিগজ্যাগিং নীতির চ্যালেঞ্জ রয়েছে। 

চীন সম্প্রতি আর্জেন্টিনাকে ১৮ বিলিয়ন ডলারের অর্ধেকের বেশি দুই দেশের বাণিজ্য-বিনিময়ে খরচ করার অনুমতি দিয়েছে। দেশ দুটি ২০০৯ সাল থেকে একটি দ্বিপক্ষীয় ‘অদলবদল চুক্তি’তে রয়েছে, যা তারল্য সংকটকালে বৈদেশিক রিজার্ভকে শক্তিশালী করার জন্য একটি বিমা নীতি। 

আর্জেন্টিনায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিনিময় করছে ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে

বুয়েনস আয়ার্সের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সিঅ্যান্ডটির ডিরেক্টর মারিয়া কাস্টিগ্লিওনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি একমাত্র বিকল্প ছিল চীনের ‘অদলবদল লাইন’ থেকে ইউয়ান ব্যবহার করা।’ 

আর্জেন্টিনার কাস্টমস এজেন্সি অনুসারে, ‘৫০০টিরও বেশি আর্জেন্টিনার কোম্পানিকে ইলেকট্রনিকস, অটো যন্ত্রাংশ, টেক্সটাইল প্রস্তুতকারক, তেল এবং খনির সংস্থাকে আমদানি মূল্য ইউয়ানে পরিশোধে অনুরোধ করা হয়েছে।’ 

আর্জেন্টিনার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, কর্মকর্তারা চীনা মুদ্রায় ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার সমতুল্য আমদানি অর্থ প্রদানের অনুমোদন দিয়েছেন। জুনের প্রথম ১০ দিনে আর্জেন্টিনার মুদ্রাবাজারে ইউয়ান লেনদেন হয়েছে প্রায় ২৮৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মে মাসের চেয়ে দ্বিগুণ। 

আর্জেন্টিনার অন্যতম বৃহত্তম এক্সচেঞ্জ মারকাডো আবিয়ের্তো ইলেক্ট্রনিকোর তথ্য অনুসারে, আর্জেন্টিনার বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে ইউয়ান লেনদেন সম্প্রতি দৈনিক রেকর্ড ২৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত মাসের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি। 

যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানভিত্তিক বাসন-কোসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হোয়ারপুল এখন আর্জেন্টিনার কোম্পানিগুলোর মধ্যে ডলারের পরিবর্তে ইউয়ান ব্যবহার দিকে নজর দিচ্ছে। ওয়াশিং মেশিন এবং অন্যান্য পণ্য তৈরির জন্য কোম্পানিটি গত বছর বুয়েনস আয়ার্সের বাইরে কারখানা নির্মাণের জন্য ৫২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। 

ডলারের সংকটে পণ্য আমদানিতে বেগ পেতে হচ্ছে কোম্পানিটিকে। সাময়িকভাবে উৎপাদনও বন্ধ রেখেছিল প্রতিষ্ঠানটি। তবে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি কিছু ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ ইউয়ানের বিনিময়ে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

হোয়ারপুল দক্ষিণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হুয়ান কার্লোস পুয়েন্তে বলেছেন, ‘আমাদের কিছু সময়ের জন্য কারখানাটি বন্ধ করতে হয়েছিল। এটি ব্যবসা, উৎপাদনশীলতা বা পণ্যর মানের জন্য ভালো নয়। আমরা আর্জেন্টিনায় উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ রপ্তানির পরিকল্পনা করেছি। ইউয়ান ব্যবহার করে কীভাবে আমরা উপকরণ আমদানি চালিয়ে যেতে পারি তা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে হঠাৎ মুদ্রা পরিবর্তন করা মোটেই সহজ নয়।’ 

আর্জেন্টিনার একটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকানযদি এটি পরিকল্পনামতো এগিয়ে যায়, তাহলে হোয়ারপুল মিরগর এবং নিউসানের মতো আর্জেন্টাইন কোম্পানিগুলোর শ্রেণিতে ঢুকে পড়বে, যারা মে থেকে আগস্টের মধ্যে ইউয়ানের মাধ্যমে ৬৩০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। আর্জেন্টিনার শুল্ক সংস্থা এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশ থাকায় অন্যান্য কোম্পানি ইউয়ান ব্যবহারের প্রস্তুতি নিচ্ছে। 

আর্জেন্টিনার মুদ্রার (পেসো) মূল্যমান গত ১২ মাসে অর্ধেক পড়ে গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার রিজার্ভ ২০১৬ সাল থেকে দেশটির ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে রয়েছে। পেসোর মূল্যমান চরমভাবে হ্রাস পাওয়ায় মে মাসে দেশটির বাণিজ্য ঘাটতি ১ দশমিক ২ বিলিয়নে ডলারে ঠেকেছে। দেশটির সরকার গত বুধবার এক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। 

চীন বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব বাড়ানোর জন্য নানা পদক্ষেপের মধ্যে ডলারের বিকল্প ইউয়ান ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। চীন ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীণ বাজারে ডলারের ব্যবহারও কমাচ্ছে। পিপলস ব্যাংক অব চায়না বছরের পর বছর ধরে প্রায় ৪০টি দেশের সঙ্গে মুদ্রা বিনিময় চুক্তি করেছে এবং ক্রস-বর্ডার ইউয়ান পেমেন্ট সিস্টেম চালু করেছে, যা সিআইপিএস নামে পরিচিত। 

আর্জেন্টিনার সরকারি কর্মকর্তারা ৪৪ বিলিয়ন ডলার সহায়তা ছাড়াও অগ্রিম নগদ অর্থের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সঙ্গে আলোচনার পর ইউয়ানে মূল্য পরিশোধের সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে আনুমানিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের রপ্তানিযোগ্য ফসল নষ্ট হওয়ার পর দেশটি আইএমএফের কোনো লক্ষ্যমাত্রা পালন করছে না, যা ডলারের ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত