Ajker Patrika

সারা দিনই ওষুধ কোম্পানির লোকজনের আনাগোনা, ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

সৈয়দপুর (নীলফামারী), প্রতিনিধি
আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২১, ১৩: ৩৯
সারা দিনই ওষুধ কোম্পানির লোকজনের আনাগোনা, ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

নীলফামারীর সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক বর্তমানে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দখলে। প্রতিদিন সকাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে থাকে তাঁদের অবাধ বিচরণ। সময়ে-অসময়ে তারা চিকিৎসকের চেম্বারের সামনে অবস্থানরত রোগীদের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে টানাহেঁচড়া করেন। জোড় করে ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলেন। এতে রোগীদের রোগের গোপনীয়তা গোপন থাকছে না। এমন অভিযোগ এখানকার সেবাগ্রহীতাদের।

এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সেবাগ্রহীতারা বলেন, চিকিৎসকেরা রোগীর চেয়ে কোম্পানির প্রতিনিধিদের বেশি সময় দিচ্ছেন। কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলায় বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির ৯ শতাধিক বিক্রয় প্রতিনিধি কর্মরত আছেন। তাঁদের ওপরে চাপ থাকে নির্দিষ্ট ওষুধ বিক্রি বাড়ানোর। আর তাঁদের ওষুধ বিক্রি বাড়ানো ও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে নির্ভর করে চাকরির পদোন্নতি ও বেতন-কমিশন। এ কারণে ব্যবস্থাপত্রে তাঁদের কোম্পানির ওষুধের নাম লেখাতে প্রতিনিধিরা অনেক সময় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে ওষুধ কোম্পানির কয়েকজন প্রতিনিধি অবস্থান করছেন। তাঁরা চিকিৎসকের রুম থেকে রোগীরা বের হলেই ব্যবস্থাপত্রের ছবি তোলার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। পরিচয় জানতে চাইলে তাঁদের একজন নিজেকে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দেন। নাম এবং কেন ভেতরে ঢুকেছিলেন জানতে চাইলেই দ্রুত তিনি সরে পড়েন। একই সময় হাসপাতালের নিচতলায় বহির্বিভাগের গেটের সামনে অবস্থান করছিলেন মুনতাসীর হোসেন নামে একজন। তিনি বলেন, 'একটি কোম্পানির হয়ে তিনি কাজ করেন। টার্গেট অনুপাতে চিকিৎসকেরা ওষুধ প্রেসক্রাইব করছেন কি না, পর্যবেক্ষণ করতে হয়। কোম্পানিকে বিশ্বাস করানোর জন্য ব্যবস্থাপত্রের ছবি মোবাইলে তুলে ইমেইলে পাঠাতে হয়।' 

এ বিষয়ে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ওমেদুল হাসান সম্রাট বলেন, 'নির্ধারিত সময়ের আগে কোনো প্রতিনিধিকেই চেম্বারে ঢুকতে দেওয়া হয় না।' 

সেবাগ্রহীতা আমিনুল ইসলাম (৪৩) বলেন, 'চিকিৎসকের চেম্বারের ভেতরে থাকা অবস্থায় এক কোম্পানির প্রতিনিধি চিকিৎসককে নগদ অর্থসহ কলম, লেখার প্যাড, চাবির রিং উপহার দেন।'

চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রাবেয়া খাতুন (৪৬) বলেন, 'চিকিৎসকের রুম থেকে বের হতেই একজন হাত থেকে ব্যবস্থাপত্রটি কেড়ে নিয়ে ছবি তোলেন। এরই মধ্যে প্রায় আরও ১৫ জন তাঁদের কোম্পানির ওষুধ ঠিকমতো লিখছেন কি না, ব্যবস্থাপত্রে তা খতিয়ে দেখেন। সেই সময় চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ি।'

আরিফুল (৩৮) ইসলাম নামে আরেক সেবাগ্রহীতা বলেন, 'আমার বাচ্চা দুই দিন ধরে অসুস্থ। তাই ডাক্তার দেখানোর জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। টিকিট কেটে বসে আছি, কিন্তু ডাক্তারের রুমে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। অথচ বাইরে রোগীদের প্রচুর ভিড়। তাই দীর্ঘক্ষণ ধরে আমরা অপেক্ষা করছি।'

অন্তঃবিভাগে ভর্তি শামসুজ্জোহা নামের এক রোগী বলেন, 'কোম্পানির প্রতিনিধিরা রোগীদের বলে দেন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা। কেউবা নিজেদের মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে বলেন অমুক ক্লিনিকে পরীক্ষা করান। বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে নার্সদের কাছে থাকা রোগীদের ফাইল নিয়েও টানাটানি করেন তাঁরা। নার্সরাও নির্দ্বিধায় ফাইল দিয়ে দেন।'

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলেমুল বাশার আজকের পত্রিকাকে বলেন, 'দুপুর ১২টার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশের জন্য বলা হয়। কাগজে লেখা এসংক্রান্ত নোটিশও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গেটে লাগানো আছে।' 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৩ আগস্ট বিমানবন্দরে বাধা পান তাপস, হাসিনাকে অনুরোধ করেন অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে- অডিও ফাঁস

স্ত্রী রাজি নন, সাবেক সেনাপ্রধান হারুনের মরদেহের ময়নাতদন্ত হবে না: পুলিশ

শাহজালালের তৃতীয় টার্মিনালে অবতরণ করল প্রথম ফ্লাইট

বাকৃবির ৫৭ শিক্ষকসহ ১৫৪ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

সাবেক সেনাপ্রধান হারুন ছিলেন চট্টগ্রাম ক্লাবের গেস্ট হাউসে, দরজা ভেঙে বিছানায় মিলল তাঁর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত