Ajker Patrika

মোটাতাজায় অনাগ্রহ, দেশি-মাঝারি গরুতে ভরসা ক্রেতাদের

শিপুল ইসলাম, রংপুর
মোটাতাজায় অনাগ্রহ, দেশি-মাঝারি গরুতে ভরসা ক্রেতাদের

সপ্তাহখানেক পরেই ঈদুল আজহা। এই ঈদের আগে মূল উৎসব থাকে পশু কেনাবেচায়। অন্য বছর ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে বিক্রি বাড়লেও এবার শেষ সপ্তাহে এসে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। তবে হাটে দেশি মাঝারি গরুর চাহিদা বেশি। 

গরুর দাম চড়া থাকলেও খামারি ও বিক্রেতারা বলছেন, গোখাদ্যের দাম বাড়ায় গরু বিক্রি করে তেমন পোষাচ্ছে না। বড় গরুর চাহিদা খুবই কম। তবে হাট ইজারাদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবারে বাইরের ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা উত্তরের হাটগুলোতে না আসায় এখনো তেমন বেচাকেনা জমে ওঠেনি। তাই পশুর দাম কিছুটা কম যাচ্ছে।

রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এবারে রংপুর বিভাগের আট জেলায় কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ১২ লাখ। কিন্তু এই অঞ্চলের খামারি ও গৃহস্থরা কোরবানিকে কেন্দ্রে করে প্রায় ১৫ লাখ পশু প্রস্তুত করেছেন।

রংপুরের পশুর বড় হাটগুলো হচ্ছে তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ, বড়াইবাড়িহাট, লালবাগ, বুড়িরহাট, চৌধুরানীর হাট, মিঠাপুকুর, শঠিবাড়ি, বৈরাতি, নজিরেরহাট, পাওটানাহাট, কান্দিরহাট, সৈয়দপুরহাট, দেউতি, জায়গিরহাট, বালুয়াহাট, মাদারগঞ্জহাট ও ভেন্ডাবাড়িহাট।

গতকাল বুধবার বিকেল ৫টায় রংপুরের ঐতিহ্যবাহী লালবাগ পশুর হাটে গিয়ে দেখা গেছে, কোরবানি উপলক্ষে স্বাভাবিক হাটগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ পশু উঠেছে। সামান্য ক্রেতা থাকলেও তাঁরা দেশি ও মাঝারি আকারের গরুর দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। মোটাতাজা অস্ট্রেলিয়ান জাতের গরুর চাহিদা কম। ক্রেতাদের উপস্থিতি কম থাকায় অনেক খামারি দর কষাকষি না করে ক্রেতাদের একদাম বলে দিচ্ছেন।

ওই হাটের অন্তত ২০ জন ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী গ্রাম থেকে দুর্বল গরু কিনে সেগুলোকে ক্ষতিকর বিভিন্ন বড়ি ও ইনজেকশন প্রয়োগ করে অল্প সময়ের মধ্যে মোটাতাজা করেন। সেই মোটাতাজা গরুগুলোই ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাটে তুলছেন। এর ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে ক্রেতারা অবগত হয়েছে। তাই এসব গরু কেনার ব্যাপারে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বেশি দাম হলেও তাঁরা দেশি গরু কিনছেন।

ওই হাটে কথা হয় পাওটানা এলাকার খামারি রাশেদুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খালি খড় আর ভুসি দিয়া গরু পালছি। কোনো ইনজেকশন, বড়ি খাওয়াই নাই। তিনটা গরু হাটোত নিয়া আসছি দুপুরে। দুই ঘণ্টায় দুইটা গরু এক লাখ ১০ হাজার টাকাত বেচাছি। খড়, ভূসি ফিডের যে দাম, তয় এবার গরুত তেমন লাভ হইল না।’

পাওটানা হাটে গরু বিক্রি করতে আশা বেতগাড়ী এলাকার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভাই, ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু বিক্রির জন্য তিন হাট ধরি ঘুরুছি। তাও ক্রেতা মেলোছে না। এবার বড় গরুর ক্রেতা হাটোত কম। সবায় অল্প টাকাত দেশি গরু কিনোছে।’

রংপুর নগরীর লালবাগ পশুহাটে গরু বেচাকেনাএকটি গরুর সাত ভাগে কোরবানি দেন বদরগঞ্জের কাঁচাবাড়ি এলাকার পশু ক্রেতা রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ভাই, সাতজন ভাগে কোরবানি দিই। আগেভাগে গরু কিনার আলচি যাতে আনা কম দামে পাই। তিন ঘণ্টা ঘুরি মাঝারি সাইজের দেশি একটা গরু ৫৫ হাজার টাকাত কিননো।’

বড়দরগা এলাকার আরেক ক্রেতা হাসিব আলী বলেন, ‘বড় মোটা গরুর ভেজাল বেশি, দামও অনেক। আমাদের মতো যারা মধ্যবিত্ত তাঁরা অল্পদামে ঘাস, খড় খাওয়া দেশি গরু কিনেছে।’

সদরের রতিরামপুর এলাকার গরুর পাইকার নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘মুই সোমবার তারাগঞ্জের হাটোত তিনকোনা গরু বেচার জন্যে নিয়া গেছনু। মোর গরু স্বাস্থ্যবান, মোটা দেখি কায়ও দাম করে নাই। আইজ লালবাগ হাটোত আনছু। এঁটেও দ্যাখো সবায় খালি দেশি গরু খোঁজে।’

লালবাগ গরুর হাটের রসিদ লেখক মর্ডানের বাসিন্দা রিয়াজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত হাটের চেয়ে আজকের হাটে বেচাকেনা ভালো হচ্ছে। দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত যে কয়টি রসিদ করেছি সবগুলোয় দেশি ও মাঝারি গরু। এবার এসব গরুর চাহিদায় বেশি।’

লালবাগ হাটের ইজারাদার আব্দুল্লাহ আল মাহামুদ পলাশ বলেন, ‘ঈদুল আজহার ১৫-২০ দিন আগেই ঢাকা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার পাইকারেরা গরু কিনতে আসে। এবার বাইরের পাইকার ও ব্যবসায়ী নেই, তাই বিক্রি কম। তবে শেষ দুই হাটে আশা করছি ভালো বিক্রি হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত