রাহুল শর্মা, ঢাকা

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে পাঠদানের বাইরে এসব কাজ তাঁরা করছেন। এসব কাজের চাপে সিলেবাস শেষ করা যায় না। এতে শিখন ঘাটতি থেকে যায় শিক্ষার্থীদের। এর প্রভাব পড়ছে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানবহির্ভূত এই ব্যস্ততার চিত্র উঠে এসেছে একটি জরিপে। ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত সরকারি দায়িত্ব পালন’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন একটি দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদেরা।
জরিপে বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষকের অসন্তুষ্টিও উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফল দেখে শিক্ষাবিদেরা সরকারি এসব কাজ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অথবা বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) দিয়ে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
পাঠদানের বাইরে বারোয়ারি কাজ করানোর কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অপেশাদার আচরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জরিপের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বহুমুখী কাজ করানোর কারণে সার্বিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষায় সংকট তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শিখন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুগল ফরমে ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেন দেশের আট বিভাগের ৪৭ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯৬ শিক্ষক। এর মধ্যে ৫৩৫ জন সহকারী শিক্ষক ও ১৬১ জন প্রধান শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ৩৪ শতাংশের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১ থেকে ৫ বছর, ২৪ শতাংশের ৫ থেকে ১০ বছর, ১৬ শতাংশের ১০ থেকে ১৫ বছর, ১৫ শতাংশের ১৫ থেকে ২০ বছর এবং ১১ শতাংশের অভিজ্ঞতা ২০ বছরের বেশি। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ও এনভিভো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক (২০২২-২৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন। শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ও মহিলা শিক্ষক ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন।
শিক্ষকেরা ব্যস্ত বারোয়ারি সরকারি কাজে
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকেরা অন্তত ২০ ধরনের সরকারি কাজে অংশ নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটারের ছবি তোলার কাজে সহযোগিতা, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, শিক্ষার্থীদের ওজন ও চোখ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের এইচপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষার্থীদের জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন, ফাইলেরিয়া নির্মূল ও খুদে ডাক্তার কার্যক্রম, ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম, টিসিবির চাল বিতরণ, আদমশুমারি, ভূমি জরিপ, খানা জরিপ, ক্যাচমেন্ট ম্যাপ তৈরি, স্যানিটেশন জরিপ ও মৌসুমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি।
এগুলোর বাইরে শিক্ষকদের নিজ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উপবৃত্তি, বিভিন্ন সমাবেশ আয়োজন (মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ), রেজিস্ট্রার হালনাগাদ, উপবৃত্তি রেজিস্ট্রেশন, উপজেলা-জেলা অফিসে বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ। এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে। বাধ্য হয়ে এসব পদের কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে অফিস সহায়ক ও দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর এলাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা প্রহরী এবং অফিস সহায়ক পদে কোনো জনবল নেই। তাই বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বও শিক্ষকদেরই পালন করতে হয়।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পাঠদানের বাইরের কাজে যায় ৬০ কর্মদিবস
জরিপের তথ্য বলছে, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনে শিক্ষকেরা বছরে অন্তত ৬০ দিন ব্যয় করেন। অর্থাৎ ওসব কাজের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকেরা এসব দিনে পাঠদান করাতে পারেন না। বদলি শিক্ষকের ব্যবস্থা করা না গেলে ওই শিক্ষকের ক্লাসগুলো হয় না। এতে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) বিভিন্ন নথিপত্র ও বিভিন্ন সময়ে জারি করা অফিস আদেশ ঘেঁটে সরকারি কাজে নির্বাচিত শিক্ষকদের ৬০ দিন পাঠদানবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত থাকার তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
একাধিক অফিস আদেশের তথ্য বলছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে ১৫ থেকে ৩০ দিন, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে ১৮ দিন, টিসিবির চাল বিতরণ কার্যক্রমে ৭ দিন, মৌসুমি প্রতিযোগিতায় ২ দিন, অন্যান্য কার্যক্রমে অন্তত ৩ দিন সময় দিতে হয়।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট কর্মদিবস ছিল ১৮৬ দিন। চলতি শিক্ষাবর্ষেও কর্মদিবসের সংখ্যা প্রায় একই।
প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটিও প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাজের চাপ কমানোর সুপারিশ করেছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের শিক্ষণ-শিখনবহির্ভূত কাজের চাপ যুক্তিসংগতভাবে কমিয়ে আনতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মানী নেই, ইচ্ছার বাইরে বাড়তি কাজ
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, পাঠদানবহির্ভূত সরকারি বিভিন্ন কাজ করলেও বেশির ভাগ শিক্ষক এ জন্য কোনো সম্মানী পান না। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক পাঠদানবহির্ভূত সরকারি কাজের জন্য সম্মানী না পাওয়ার কথা জানান। ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, কিছু কাজের জন্য সম্মানী দেওয়া হলেও তা পরিশ্রমের তুলনায় অপ্রতুল। বাকি ৮ শতাংশ সম্মানী পান বলে জানিয়েছেন।
জরিপের তথ্য বলছে, বেশির ভাগ শিক্ষক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কাজে অংশ নেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, তাঁরা ইচ্ছার বাইরে বাধ্য হয়ে এসব কাজে অংশ নেন। বাকি ১৬ শতাংশ জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকেরা জানান, এসব দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় ভোগেন তাঁরা।
শিক্ষকেরা মনে করেন, পাঠের অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁদের মানসিক ও পেশাগত স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলছে। এ থেকে পরিত্রাণের পদক্ষেপ নিয়ে তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
কারা দেন অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পাঠদানবহির্ভূত কার্যক্রমের বেশির ভাগই শিক্ষকেরা করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায়।
শিক্ষকেরা জানান, ৫৩ শতাংশ সরকারি কাজ করার সরাসরি নির্দেশ আসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। ২৫ শতাংশ কাজের নির্দেশনা দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বাকি কাজগুলো বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকেরা করেন।
যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ জুলাইয়ের একটি অফিস আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের কৃমি সংক্রমণের মাত্রা নির্ণয়ের লক্ষ্যে ১৬ জেলার শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করতে শিক্ষকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তত্ত্বাবধানে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বছরে দুবার কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করানো হয়। এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য নির্ধারিত জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হবে।
আদেশে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরিপ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, মূলত অন্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে শিক্ষক-কর্মকর্তারা এসব কাজে (পাঠদানবহির্ভূত) অংশ নেন।
কারা করতে পারেন এসব কাজ
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, ঢালাওভাবে শিক্ষকদের দিয়ে সব কাজ না করিয়ে যে মন্ত্রণালয়ের কাজ সেই মন্ত্রণালয়ের জনবল দিয়েই করানো উচিত। বেকার তরুণ-তরুণীদের দিয়ে এসব কাজ করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ১৫ শতাংশ শিক্ষক। এ ছাড়া অফিস সহকারী নিয়োগ করে এসব কাজ করানোর পরামর্শ ১৯ শতাংশ শিক্ষকদের। বাকি ২০ শতাংশ শিক্ষক জানান, এনজিও, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়ে এসব কাজ করানো উচিত।
জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষকেরা পাঠদানবহির্ভূত বহু কাজের সঙ্গে জড়িত। এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা-ই বাস্তব চিত্র। এসব কাজের জন্য পঠন-পাঠনে তাঁদের মন দেওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সারাক্ষণই শিক্ষা প্রশাসনেই ব্যস্ত সময় পার করেন।’
ভূমি জরিপ কি শিক্ষার কাজ?—এমন প্রশ্ন করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এটা তো ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ। টিকার কাজ কি শিক্ষার কাজ? দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে বণ্টন করা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের প্রচুর জনবল আছে। তাদের নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো যায়। শিক্ষকদের কোনোভাবেই শ্রেণিকক্ষের বাইরে অতি জরুরি প্রয়োজন বা জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগের সময় ছাড়া আর কোনো কাজে যুক্ত করা যাবে না। পঠন-পাঠনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
বাইরের অতিরিক্ত কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষায়
জরিপে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পাঠদানবহির্ভূত অতিরিক্ত কাজের ফলে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বিকল্প শিক্ষকের অভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলে। এতে শিখন ঘাটতি হয়, যা শিক্ষার্থীদের ফলাফলসহ সার্বিক পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ শিক্ষক জানান, বাইরের কাজের চাপে ওই সময় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। ৩৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, মাঝে মাঝে অন্য শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। ১৫ শতাংশ শিক্ষক জানান, অন্য শিক্ষক ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের শিখনে কাজে লাগে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষকেরা প্রায়ই ক্লাস নিতে পারেন না। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অনেক সরকারি কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, যা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। একজন শিক্ষক অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে মুক্ত থাকলে পাঠদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এতে শিশুরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে।
বেতনভাতা, মর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট অধিকাংশ শিক্ষক
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষক অসন্তুষ্ট। ৮৭ শতাংশ শিক্ষক জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে বেতনভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর বাইরে তাঁরা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, মিড ডে মিল চালু, মনিটরিং কার্যক্রম চালু, বিদ্যালয় সময়সূচি পুনর্বিবেচনা, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বেতন গ্রেড উন্নতির দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা বলছেন, এই গ্রেড তাঁদের পেশার মর্যাদার জন্য সংগতিপূর্ণ নয়।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার রাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
যা বললেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
জরিপের সার্বিক ফলাফলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ১৩ জুলাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা অবগত। কীভাবে শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ কমিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। আমরাও মনে করি, শিক্ষকদের শিক্ষকতার কাজেই থাকা দরকার। আমাদের দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্যই এটি (পাঠদানবহির্ভূত কাজ) থেকে সরে আসা প্রয়োজন।’
বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিধান রঞ্জন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত। এ বিষয়ে পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে। বিষয়টির বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে পাঠদানের বাইরে এসব কাজ তাঁরা করছেন। এসব কাজের চাপে সিলেবাস শেষ করা যায় না। এতে শিখন ঘাটতি থেকে যায় শিক্ষার্থীদের। এর প্রভাব পড়ছে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানবহির্ভূত এই ব্যস্ততার চিত্র উঠে এসেছে একটি জরিপে। ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত সরকারি দায়িত্ব পালন’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন একটি দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদেরা।
জরিপে বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষকের অসন্তুষ্টিও উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফল দেখে শিক্ষাবিদেরা সরকারি এসব কাজ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অথবা বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) দিয়ে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
পাঠদানের বাইরে বারোয়ারি কাজ করানোর কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অপেশাদার আচরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জরিপের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বহুমুখী কাজ করানোর কারণে সার্বিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষায় সংকট তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শিখন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুগল ফরমে ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেন দেশের আট বিভাগের ৪৭ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯৬ শিক্ষক। এর মধ্যে ৫৩৫ জন সহকারী শিক্ষক ও ১৬১ জন প্রধান শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ৩৪ শতাংশের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১ থেকে ৫ বছর, ২৪ শতাংশের ৫ থেকে ১০ বছর, ১৬ শতাংশের ১০ থেকে ১৫ বছর, ১৫ শতাংশের ১৫ থেকে ২০ বছর এবং ১১ শতাংশের অভিজ্ঞতা ২০ বছরের বেশি। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ও এনভিভো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক (২০২২-২৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন। শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ও মহিলা শিক্ষক ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন।
শিক্ষকেরা ব্যস্ত বারোয়ারি সরকারি কাজে
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকেরা অন্তত ২০ ধরনের সরকারি কাজে অংশ নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটারের ছবি তোলার কাজে সহযোগিতা, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, শিক্ষার্থীদের ওজন ও চোখ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের এইচপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষার্থীদের জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন, ফাইলেরিয়া নির্মূল ও খুদে ডাক্তার কার্যক্রম, ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম, টিসিবির চাল বিতরণ, আদমশুমারি, ভূমি জরিপ, খানা জরিপ, ক্যাচমেন্ট ম্যাপ তৈরি, স্যানিটেশন জরিপ ও মৌসুমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি।
এগুলোর বাইরে শিক্ষকদের নিজ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উপবৃত্তি, বিভিন্ন সমাবেশ আয়োজন (মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ), রেজিস্ট্রার হালনাগাদ, উপবৃত্তি রেজিস্ট্রেশন, উপজেলা-জেলা অফিসে বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ। এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে। বাধ্য হয়ে এসব পদের কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে অফিস সহায়ক ও দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর এলাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা প্রহরী এবং অফিস সহায়ক পদে কোনো জনবল নেই। তাই বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বও শিক্ষকদেরই পালন করতে হয়।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পাঠদানের বাইরের কাজে যায় ৬০ কর্মদিবস
জরিপের তথ্য বলছে, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনে শিক্ষকেরা বছরে অন্তত ৬০ দিন ব্যয় করেন। অর্থাৎ ওসব কাজের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকেরা এসব দিনে পাঠদান করাতে পারেন না। বদলি শিক্ষকের ব্যবস্থা করা না গেলে ওই শিক্ষকের ক্লাসগুলো হয় না। এতে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) বিভিন্ন নথিপত্র ও বিভিন্ন সময়ে জারি করা অফিস আদেশ ঘেঁটে সরকারি কাজে নির্বাচিত শিক্ষকদের ৬০ দিন পাঠদানবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত থাকার তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
একাধিক অফিস আদেশের তথ্য বলছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে ১৫ থেকে ৩০ দিন, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে ১৮ দিন, টিসিবির চাল বিতরণ কার্যক্রমে ৭ দিন, মৌসুমি প্রতিযোগিতায় ২ দিন, অন্যান্য কার্যক্রমে অন্তত ৩ দিন সময় দিতে হয়।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট কর্মদিবস ছিল ১৮৬ দিন। চলতি শিক্ষাবর্ষেও কর্মদিবসের সংখ্যা প্রায় একই।
প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটিও প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাজের চাপ কমানোর সুপারিশ করেছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের শিক্ষণ-শিখনবহির্ভূত কাজের চাপ যুক্তিসংগতভাবে কমিয়ে আনতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মানী নেই, ইচ্ছার বাইরে বাড়তি কাজ
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, পাঠদানবহির্ভূত সরকারি বিভিন্ন কাজ করলেও বেশির ভাগ শিক্ষক এ জন্য কোনো সম্মানী পান না। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক পাঠদানবহির্ভূত সরকারি কাজের জন্য সম্মানী না পাওয়ার কথা জানান। ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, কিছু কাজের জন্য সম্মানী দেওয়া হলেও তা পরিশ্রমের তুলনায় অপ্রতুল। বাকি ৮ শতাংশ সম্মানী পান বলে জানিয়েছেন।
জরিপের তথ্য বলছে, বেশির ভাগ শিক্ষক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কাজে অংশ নেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, তাঁরা ইচ্ছার বাইরে বাধ্য হয়ে এসব কাজে অংশ নেন। বাকি ১৬ শতাংশ জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকেরা জানান, এসব দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় ভোগেন তাঁরা।
শিক্ষকেরা মনে করেন, পাঠের অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁদের মানসিক ও পেশাগত স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলছে। এ থেকে পরিত্রাণের পদক্ষেপ নিয়ে তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
কারা দেন অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পাঠদানবহির্ভূত কার্যক্রমের বেশির ভাগই শিক্ষকেরা করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায়।
শিক্ষকেরা জানান, ৫৩ শতাংশ সরকারি কাজ করার সরাসরি নির্দেশ আসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। ২৫ শতাংশ কাজের নির্দেশনা দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বাকি কাজগুলো বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকেরা করেন।
যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ জুলাইয়ের একটি অফিস আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের কৃমি সংক্রমণের মাত্রা নির্ণয়ের লক্ষ্যে ১৬ জেলার শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করতে শিক্ষকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তত্ত্বাবধানে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বছরে দুবার কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করানো হয়। এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য নির্ধারিত জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হবে।
আদেশে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরিপ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, মূলত অন্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে শিক্ষক-কর্মকর্তারা এসব কাজে (পাঠদানবহির্ভূত) অংশ নেন।
কারা করতে পারেন এসব কাজ
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, ঢালাওভাবে শিক্ষকদের দিয়ে সব কাজ না করিয়ে যে মন্ত্রণালয়ের কাজ সেই মন্ত্রণালয়ের জনবল দিয়েই করানো উচিত। বেকার তরুণ-তরুণীদের দিয়ে এসব কাজ করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ১৫ শতাংশ শিক্ষক। এ ছাড়া অফিস সহকারী নিয়োগ করে এসব কাজ করানোর পরামর্শ ১৯ শতাংশ শিক্ষকদের। বাকি ২০ শতাংশ শিক্ষক জানান, এনজিও, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়ে এসব কাজ করানো উচিত।
জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষকেরা পাঠদানবহির্ভূত বহু কাজের সঙ্গে জড়িত। এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা-ই বাস্তব চিত্র। এসব কাজের জন্য পঠন-পাঠনে তাঁদের মন দেওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সারাক্ষণই শিক্ষা প্রশাসনেই ব্যস্ত সময় পার করেন।’
ভূমি জরিপ কি শিক্ষার কাজ?—এমন প্রশ্ন করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এটা তো ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ। টিকার কাজ কি শিক্ষার কাজ? দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে বণ্টন করা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের প্রচুর জনবল আছে। তাদের নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো যায়। শিক্ষকদের কোনোভাবেই শ্রেণিকক্ষের বাইরে অতি জরুরি প্রয়োজন বা জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগের সময় ছাড়া আর কোনো কাজে যুক্ত করা যাবে না। পঠন-পাঠনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
বাইরের অতিরিক্ত কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষায়
জরিপে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পাঠদানবহির্ভূত অতিরিক্ত কাজের ফলে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বিকল্প শিক্ষকের অভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলে। এতে শিখন ঘাটতি হয়, যা শিক্ষার্থীদের ফলাফলসহ সার্বিক পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ শিক্ষক জানান, বাইরের কাজের চাপে ওই সময় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। ৩৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, মাঝে মাঝে অন্য শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। ১৫ শতাংশ শিক্ষক জানান, অন্য শিক্ষক ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের শিখনে কাজে লাগে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষকেরা প্রায়ই ক্লাস নিতে পারেন না। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অনেক সরকারি কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, যা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। একজন শিক্ষক অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে মুক্ত থাকলে পাঠদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এতে শিশুরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে।
বেতনভাতা, মর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট অধিকাংশ শিক্ষক
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষক অসন্তুষ্ট। ৮৭ শতাংশ শিক্ষক জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে বেতনভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর বাইরে তাঁরা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, মিড ডে মিল চালু, মনিটরিং কার্যক্রম চালু, বিদ্যালয় সময়সূচি পুনর্বিবেচনা, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বেতন গ্রেড উন্নতির দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা বলছেন, এই গ্রেড তাঁদের পেশার মর্যাদার জন্য সংগতিপূর্ণ নয়।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার রাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
যা বললেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
জরিপের সার্বিক ফলাফলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ১৩ জুলাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা অবগত। কীভাবে শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ কমিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। আমরাও মনে করি, শিক্ষকদের শিক্ষকতার কাজেই থাকা দরকার। আমাদের দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্যই এটি (পাঠদানবহির্ভূত কাজ) থেকে সরে আসা প্রয়োজন।’
বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিধান রঞ্জন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত। এ বিষয়ে পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে। বিষয়টির বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
রাহুল শর্মা, ঢাকা

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে পাঠদানের বাইরে এসব কাজ তাঁরা করছেন। এসব কাজের চাপে সিলেবাস শেষ করা যায় না। এতে শিখন ঘাটতি থেকে যায় শিক্ষার্থীদের। এর প্রভাব পড়ছে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানবহির্ভূত এই ব্যস্ততার চিত্র উঠে এসেছে একটি জরিপে। ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত সরকারি দায়িত্ব পালন’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন একটি দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদেরা।
জরিপে বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষকের অসন্তুষ্টিও উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফল দেখে শিক্ষাবিদেরা সরকারি এসব কাজ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অথবা বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) দিয়ে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
পাঠদানের বাইরে বারোয়ারি কাজ করানোর কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অপেশাদার আচরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জরিপের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বহুমুখী কাজ করানোর কারণে সার্বিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষায় সংকট তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শিখন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুগল ফরমে ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেন দেশের আট বিভাগের ৪৭ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯৬ শিক্ষক। এর মধ্যে ৫৩৫ জন সহকারী শিক্ষক ও ১৬১ জন প্রধান শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ৩৪ শতাংশের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১ থেকে ৫ বছর, ২৪ শতাংশের ৫ থেকে ১০ বছর, ১৬ শতাংশের ১০ থেকে ১৫ বছর, ১৫ শতাংশের ১৫ থেকে ২০ বছর এবং ১১ শতাংশের অভিজ্ঞতা ২০ বছরের বেশি। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ও এনভিভো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক (২০২২-২৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন। শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ও মহিলা শিক্ষক ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন।
শিক্ষকেরা ব্যস্ত বারোয়ারি সরকারি কাজে
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকেরা অন্তত ২০ ধরনের সরকারি কাজে অংশ নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটারের ছবি তোলার কাজে সহযোগিতা, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, শিক্ষার্থীদের ওজন ও চোখ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের এইচপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষার্থীদের জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন, ফাইলেরিয়া নির্মূল ও খুদে ডাক্তার কার্যক্রম, ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম, টিসিবির চাল বিতরণ, আদমশুমারি, ভূমি জরিপ, খানা জরিপ, ক্যাচমেন্ট ম্যাপ তৈরি, স্যানিটেশন জরিপ ও মৌসুমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি।
এগুলোর বাইরে শিক্ষকদের নিজ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উপবৃত্তি, বিভিন্ন সমাবেশ আয়োজন (মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ), রেজিস্ট্রার হালনাগাদ, উপবৃত্তি রেজিস্ট্রেশন, উপজেলা-জেলা অফিসে বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ। এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে। বাধ্য হয়ে এসব পদের কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে অফিস সহায়ক ও দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর এলাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা প্রহরী এবং অফিস সহায়ক পদে কোনো জনবল নেই। তাই বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বও শিক্ষকদেরই পালন করতে হয়।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পাঠদানের বাইরের কাজে যায় ৬০ কর্মদিবস
জরিপের তথ্য বলছে, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনে শিক্ষকেরা বছরে অন্তত ৬০ দিন ব্যয় করেন। অর্থাৎ ওসব কাজের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকেরা এসব দিনে পাঠদান করাতে পারেন না। বদলি শিক্ষকের ব্যবস্থা করা না গেলে ওই শিক্ষকের ক্লাসগুলো হয় না। এতে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) বিভিন্ন নথিপত্র ও বিভিন্ন সময়ে জারি করা অফিস আদেশ ঘেঁটে সরকারি কাজে নির্বাচিত শিক্ষকদের ৬০ দিন পাঠদানবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত থাকার তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
একাধিক অফিস আদেশের তথ্য বলছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে ১৫ থেকে ৩০ দিন, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে ১৮ দিন, টিসিবির চাল বিতরণ কার্যক্রমে ৭ দিন, মৌসুমি প্রতিযোগিতায় ২ দিন, অন্যান্য কার্যক্রমে অন্তত ৩ দিন সময় দিতে হয়।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট কর্মদিবস ছিল ১৮৬ দিন। চলতি শিক্ষাবর্ষেও কর্মদিবসের সংখ্যা প্রায় একই।
প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটিও প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাজের চাপ কমানোর সুপারিশ করেছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের শিক্ষণ-শিখনবহির্ভূত কাজের চাপ যুক্তিসংগতভাবে কমিয়ে আনতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মানী নেই, ইচ্ছার বাইরে বাড়তি কাজ
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, পাঠদানবহির্ভূত সরকারি বিভিন্ন কাজ করলেও বেশির ভাগ শিক্ষক এ জন্য কোনো সম্মানী পান না। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক পাঠদানবহির্ভূত সরকারি কাজের জন্য সম্মানী না পাওয়ার কথা জানান। ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, কিছু কাজের জন্য সম্মানী দেওয়া হলেও তা পরিশ্রমের তুলনায় অপ্রতুল। বাকি ৮ শতাংশ সম্মানী পান বলে জানিয়েছেন।
জরিপের তথ্য বলছে, বেশির ভাগ শিক্ষক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কাজে অংশ নেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, তাঁরা ইচ্ছার বাইরে বাধ্য হয়ে এসব কাজে অংশ নেন। বাকি ১৬ শতাংশ জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকেরা জানান, এসব দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় ভোগেন তাঁরা।
শিক্ষকেরা মনে করেন, পাঠের অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁদের মানসিক ও পেশাগত স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলছে। এ থেকে পরিত্রাণের পদক্ষেপ নিয়ে তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
কারা দেন অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পাঠদানবহির্ভূত কার্যক্রমের বেশির ভাগই শিক্ষকেরা করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায়।
শিক্ষকেরা জানান, ৫৩ শতাংশ সরকারি কাজ করার সরাসরি নির্দেশ আসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। ২৫ শতাংশ কাজের নির্দেশনা দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বাকি কাজগুলো বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকেরা করেন।
যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ জুলাইয়ের একটি অফিস আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের কৃমি সংক্রমণের মাত্রা নির্ণয়ের লক্ষ্যে ১৬ জেলার শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করতে শিক্ষকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তত্ত্বাবধানে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বছরে দুবার কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করানো হয়। এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য নির্ধারিত জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হবে।
আদেশে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরিপ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, মূলত অন্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে শিক্ষক-কর্মকর্তারা এসব কাজে (পাঠদানবহির্ভূত) অংশ নেন।
কারা করতে পারেন এসব কাজ
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, ঢালাওভাবে শিক্ষকদের দিয়ে সব কাজ না করিয়ে যে মন্ত্রণালয়ের কাজ সেই মন্ত্রণালয়ের জনবল দিয়েই করানো উচিত। বেকার তরুণ-তরুণীদের দিয়ে এসব কাজ করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ১৫ শতাংশ শিক্ষক। এ ছাড়া অফিস সহকারী নিয়োগ করে এসব কাজ করানোর পরামর্শ ১৯ শতাংশ শিক্ষকদের। বাকি ২০ শতাংশ শিক্ষক জানান, এনজিও, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়ে এসব কাজ করানো উচিত।
জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষকেরা পাঠদানবহির্ভূত বহু কাজের সঙ্গে জড়িত। এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা-ই বাস্তব চিত্র। এসব কাজের জন্য পঠন-পাঠনে তাঁদের মন দেওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সারাক্ষণই শিক্ষা প্রশাসনেই ব্যস্ত সময় পার করেন।’
ভূমি জরিপ কি শিক্ষার কাজ?—এমন প্রশ্ন করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এটা তো ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ। টিকার কাজ কি শিক্ষার কাজ? দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে বণ্টন করা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের প্রচুর জনবল আছে। তাদের নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো যায়। শিক্ষকদের কোনোভাবেই শ্রেণিকক্ষের বাইরে অতি জরুরি প্রয়োজন বা জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগের সময় ছাড়া আর কোনো কাজে যুক্ত করা যাবে না। পঠন-পাঠনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
বাইরের অতিরিক্ত কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষায়
জরিপে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পাঠদানবহির্ভূত অতিরিক্ত কাজের ফলে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বিকল্প শিক্ষকের অভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলে। এতে শিখন ঘাটতি হয়, যা শিক্ষার্থীদের ফলাফলসহ সার্বিক পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ শিক্ষক জানান, বাইরের কাজের চাপে ওই সময় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। ৩৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, মাঝে মাঝে অন্য শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। ১৫ শতাংশ শিক্ষক জানান, অন্য শিক্ষক ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের শিখনে কাজে লাগে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষকেরা প্রায়ই ক্লাস নিতে পারেন না। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অনেক সরকারি কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, যা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। একজন শিক্ষক অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে মুক্ত থাকলে পাঠদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এতে শিশুরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে।
বেতনভাতা, মর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট অধিকাংশ শিক্ষক
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষক অসন্তুষ্ট। ৮৭ শতাংশ শিক্ষক জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে বেতনভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর বাইরে তাঁরা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, মিড ডে মিল চালু, মনিটরিং কার্যক্রম চালু, বিদ্যালয় সময়সূচি পুনর্বিবেচনা, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বেতন গ্রেড উন্নতির দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা বলছেন, এই গ্রেড তাঁদের পেশার মর্যাদার জন্য সংগতিপূর্ণ নয়।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার রাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
যা বললেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
জরিপের সার্বিক ফলাফলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ১৩ জুলাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা অবগত। কীভাবে শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ কমিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। আমরাও মনে করি, শিক্ষকদের শিক্ষকতার কাজেই থাকা দরকার। আমাদের দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্যই এটি (পাঠদানবহির্ভূত কাজ) থেকে সরে আসা প্রয়োজন।’
বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিধান রঞ্জন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত। এ বিষয়ে পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে। বিষয়টির বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস।
শিক্ষকেরা বলছেন, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে পাঠদানের বাইরে এসব কাজ তাঁরা করছেন। এসব কাজের চাপে সিলেবাস শেষ করা যায় না। এতে শিখন ঘাটতি থেকে যায় শিক্ষার্থীদের। এর প্রভাব পড়ছে পরবর্তী শিক্ষাজীবনে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানবহির্ভূত এই ব্যস্ততার চিত্র উঠে এসেছে একটি জরিপে। ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পাঠদানের পাশাপাশি অতিরিক্ত সরকারি দায়িত্ব পালন’ শীর্ষক এই জরিপ পরিচালনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন একটি দপ্তরের পরিসংখ্যানবিদেরা।
জরিপে বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষকের অসন্তুষ্টিও উঠে এসেছে। জরিপের ফলাফল দেখে শিক্ষাবিদেরা সরকারি এসব কাজ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে অথবা বেসরকারি সংস্থাকে (এনজিও) দিয়ে করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
পাঠদানের বাইরে বারোয়ারি কাজ করানোর কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অপেশাদার আচরণ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ। জরিপের ফলাফলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বহুমুখী কাজ করানোর কারণে সার্বিকভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষায় সংকট তৈরি হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা শিখন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে শিখন ঘাটতি, যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হচ্ছে। এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুগল ফরমে ১ থেকে ১০ জুলাই পর্যন্ত এই জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এতে অংশ নেন দেশের আট বিভাগের ৪৭ জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৬৯৬ শিক্ষক। এর মধ্যে ৫৩৫ জন সহকারী শিক্ষক ও ১৬১ জন প্রধান শিক্ষক। তাঁদের মধ্যে ৩৪ শতাংশের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১ থেকে ৫ বছর, ২৪ শতাংশের ৫ থেকে ১০ বছর, ১৬ শতাংশের ১০ থেকে ১৫ বছর, ১৫ শতাংশের ১৫ থেকে ২০ বছর এবং ১১ শতাংশের অভিজ্ঞতা ২০ বছরের বেশি। জরিপের তথ্য বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে মাইক্রোসফট এক্সেল ও এনভিভো সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক (২০২২-২৩) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী রয়েছে ১ কোটি ৭১ লাখ ৬২ হাজার ৩৬৫ জন। শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন ও মহিলা শিক্ষক ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন।
শিক্ষকেরা ব্যস্ত বারোয়ারি সরকারি কাজে
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষকেরা অন্তত ২০ ধরনের সরকারি কাজে অংশ নেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে-নির্বাচনসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, ভোটারের ছবি তোলার কাজে সহযোগিতা, কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো, ভিটামিন এ প্লাস ক্যাম্পেইন, শিক্ষার্থীদের ওজন ও চোখ পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের এইচপিভি ভাইরাস প্রতিরোধে টিকাদানের রেজিস্ট্রেশন, শিক্ষার্থীদের জরায়ু ক্যানসারের ভ্যাকসিন, ফাইলেরিয়া নির্মূল ও খুদে ডাক্তার কার্যক্রম, ডেঙ্গু সচেতনতা কার্যক্রম, টিসিবির চাল বিতরণ, আদমশুমারি, ভূমি জরিপ, খানা জরিপ, ক্যাচমেন্ট ম্যাপ তৈরি, স্যানিটেশন জরিপ ও মৌসুমি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন, বিদ্যালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি।
এগুলোর বাইরে শিক্ষকদের নিজ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বও পালন করতে হয়। প্রশাসনিক কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে উপবৃত্তি, বিভিন্ন সমাবেশ আয়োজন (মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ), রেজিস্ট্রার হালনাগাদ, উপবৃত্তি রেজিস্ট্রেশন, উপজেলা-জেলা অফিসে বিভিন্ন সভায় অংশগ্রহণ। এসব কার্যক্রমে অংশগ্রহণের কারণেও শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বাধাগ্রস্ত হয় বলে জানিয়েছেন জরিপে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা। তাঁরা বলেছেন, দেশের বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদ শূন্য রয়েছে। বাধ্য হয়ে এসব পদের কাজও শিক্ষকদের করতে হয়। তাঁরা জরুরি ভিত্তিতে অফিস সহায়ক ও দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ঢাকাসহ বিভিন্ন মহানগর এলাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তা প্রহরী এবং অফিস সহায়ক পদে কোনো জনবল নেই। তাই বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্বও শিক্ষকদেরই পালন করতে হয়।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মো. সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, মামলাসংক্রান্ত জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নিরাপত্তা প্রহরী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পাঠদানের বাইরের কাজে যায় ৬০ কর্মদিবস
জরিপের তথ্য বলছে, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি কাজে দায়িত্ব পালনে শিক্ষকেরা বছরে অন্তত ৬০ দিন ব্যয় করেন। অর্থাৎ ওসব কাজের দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকেরা এসব দিনে পাঠদান করাতে পারেন না। বদলি শিক্ষকের ব্যবস্থা করা না গেলে ওই শিক্ষকের ক্লাসগুলো হয় না। এতে বঞ্চিত হয় শিক্ষার্থীরা।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) বিভিন্ন নথিপত্র ও বিভিন্ন সময়ে জারি করা অফিস আদেশ ঘেঁটে সরকারি কাজে নির্বাচিত শিক্ষকদের ৬০ দিন পাঠদানবহির্ভূত কাজে ব্যস্ত থাকার তথ্যের সত্যতা মিলেছে।
একাধিক অফিস আদেশের তথ্য বলছে, প্রাথমিকের শিক্ষকদের নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে ১৫ থেকে ৩০ দিন, স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রমে ১৮ দিন, টিসিবির চাল বিতরণ কার্যক্রমে ৭ দিন, মৌসুমি প্রতিযোগিতায় ২ দিন, অন্যান্য কার্যক্রমে অন্তত ৩ দিন সময় দিতে হয়।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট কর্মদিবস ছিল ১৮৬ দিন। চলতি শিক্ষাবর্ষেও কর্মদিবসের সংখ্যা প্রায় একই।
প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত পরামর্শক কমিটিও প্রাথমিকের শিক্ষকদের কাজের চাপ কমানোর সুপারিশ করেছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদের নেতৃত্বাধীন এই কমিটি গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষকদের শিক্ষণ-শিখনবহির্ভূত কাজের চাপ যুক্তিসংগতভাবে কমিয়ে আনতে হবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সম্মানী নেই, ইচ্ছার বাইরে বাড়তি কাজ
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা জানান, পাঠদানবহির্ভূত সরকারি বিভিন্ন কাজ করলেও বেশির ভাগ শিক্ষক এ জন্য কোনো সম্মানী পান না। জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক পাঠদানবহির্ভূত সরকারি কাজের জন্য সম্মানী না পাওয়ার কথা জানান। ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, কিছু কাজের জন্য সম্মানী দেওয়া হলেও তা পরিশ্রমের তুলনায় অপ্রতুল। বাকি ৮ শতাংশ সম্মানী পান বলে জানিয়েছেন।
জরিপের তথ্য বলছে, বেশির ভাগ শিক্ষক ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সরকারি কাজে অংশ নেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, তাঁরা ইচ্ছার বাইরে বাধ্য হয়ে এসব কাজে অংশ নেন। বাকি ১৬ শতাংশ জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব দায়িত্ব পালন করেন। শিক্ষকেরা জানান, এসব দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখালে নানা ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার সম্মুখীন হওয়ার শঙ্কায় ভোগেন তাঁরা।
শিক্ষকেরা মনে করেন, পাঠের অতিরিক্ত কাজের চাপ তাঁদের মানসিক ও পেশাগত স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলছে। এ থেকে পরিত্রাণের পদক্ষেপ নিয়ে তাঁরা সরকারের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন।
কারা দেন অতিরিক্ত কাজের নির্দেশ
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, পাঠদানবহির্ভূত কার্যক্রমের বেশির ভাগই শিক্ষকেরা করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার নির্দেশনায়।
শিক্ষকেরা জানান, ৫৩ শতাংশ সরকারি কাজ করার সরাসরি নির্দেশ আসে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে। ২৫ শতাংশ কাজের নির্দেশনা দেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। বাকি কাজগুলো বিভাগীয় প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষকেরা করেন।
যেমন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৫ জুলাইয়ের একটি অফিস আদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের কৃমি সংক্রমণের মাত্রা নির্ণয়ের লক্ষ্যে ১৬ জেলার শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করতে শিক্ষকদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার তত্ত্বাবধানে ৫ থেকে ১৬ বছর বয়সী সব প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের বছরে দুবার কৃমিনাশক ওষুধ সেবন করানো হয়। এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য শিশুদের মধ্যে কৃমি সংক্রমণের প্রকৃত অবস্থা জানার প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য নির্ধারিত জেলাগুলোর শিক্ষার্থীদের মল পরীক্ষা করে একটি জরিপ পরিচালনা করা হবে।
আদেশে আরও বলা হয়, সংশ্লিষ্ট এলাকায় জরিপ কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে উপজেলা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল আজিজ বলেন, মূলত অন্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে শিক্ষক-কর্মকর্তারা এসব কাজে (পাঠদানবহির্ভূত) অংশ নেন।
কারা করতে পারেন এসব কাজ
জরিপে অংশ নেওয়া ৪৬ শতাংশ শিক্ষক জানান, ঢালাওভাবে শিক্ষকদের দিয়ে সব কাজ না করিয়ে যে মন্ত্রণালয়ের কাজ সেই মন্ত্রণালয়ের জনবল দিয়েই করানো উচিত। বেকার তরুণ-তরুণীদের দিয়ে এসব কাজ করানোর পক্ষে মত দিয়েছেন ১৫ শতাংশ শিক্ষক। এ ছাড়া অফিস সহকারী নিয়োগ করে এসব কাজ করানোর পরামর্শ ১৯ শতাংশ শিক্ষকদের। বাকি ২০ শতাংশ শিক্ষক জানান, এনজিও, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়ে এসব কাজ করানো উচিত।
জানতে চাইলে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, ‘প্রাথমিকের শিক্ষকেরা পাঠদানবহির্ভূত বহু কাজের সঙ্গে জড়িত। এই জরিপে যা উঠে এসেছে তা-ই বাস্তব চিত্র। এসব কাজের জন্য পঠন-পাঠনে তাঁদের মন দেওয়া মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রধান শিক্ষক সারাক্ষণই শিক্ষা প্রশাসনেই ব্যস্ত সময় পার করেন।’
ভূমি জরিপ কি শিক্ষার কাজ?—এমন প্রশ্ন করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এটা তো ভূমি মন্ত্রণালয়ের কাজ। টিকার কাজ কি শিক্ষার কাজ? দায়িত্বগুলো ঠিকভাবে বণ্টন করা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে স্থানীয় সরকারের প্রচুর জনবল আছে। তাদের নেটওয়ার্ক কাজে লাগানো যায়। শিক্ষকদের কোনোভাবেই শ্রেণিকক্ষের বাইরে অতি জরুরি প্রয়োজন বা জরুরি অবস্থা ও দুর্যোগের সময় ছাড়া আর কোনো কাজে যুক্ত করা যাবে না। পঠন-পাঠনসংক্রান্ত বিষয় ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিক্ষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না।
বাইরের অতিরিক্ত কাজের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিক্ষায়
জরিপে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পাঠদানবহির্ভূত অতিরিক্ত কাজের ফলে শিক্ষায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বিকল্প শিক্ষকের অভাবে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকলে। এতে শিখন ঘাটতি হয়, যা শিক্ষার্থীদের ফলাফলসহ সার্বিক পড়াশোনায় প্রভাব ফেলে।
জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ শিক্ষক জানান, বাইরের কাজের চাপে ওই সময় ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না। ৩৪ শতাংশ শিক্ষক জানান, মাঝে মাঝে অন্য শিক্ষক দিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালানো হয়। ১৫ শতাংশ শিক্ষক জানান, অন্য শিক্ষক ক্লাস নিলেও শিক্ষার্থীদের শিখনে কাজে লাগে না।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, পাঠদানের বাইরে বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনের কারণে শিক্ষকেরা প্রায়ই ক্লাস নিতে পারেন না। এতে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি অনেক সরকারি কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়, যা পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি করে। একজন শিক্ষক অতিরিক্ত কাজের চাপ থেকে মুক্ত থাকলে পাঠদানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। এতে শিশুরাও অনেক কিছু শেখার সুযোগ পাবে।
বেতনভাতা, মর্যাদা নিয়ে অসন্তুষ্ট অধিকাংশ শিক্ষক
জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, বেতনভাতা ও মর্যাদা নিয়ে অধিকাংশ শিক্ষক অসন্তুষ্ট। ৮৭ শতাংশ শিক্ষক জানান, শিক্ষার মান উন্নয়নে বেতনভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর বাইরে তাঁরা শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করা, মিড ডে মিল চালু, মনিটরিং কার্যক্রম চালু, বিদ্যালয় সময়সূচি পুনর্বিবেচনা, শিক্ষাক্রম উন্নয়ন, পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানান।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা বেতন গ্রেড উন্নতির দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা বলছেন, এই গ্রেড তাঁদের পেশার মর্যাদার জন্য সংগতিপূর্ণ নয়।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার রাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
যা বললেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা
জরিপের সার্বিক ফলাফলের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার ১৩ জুলাই আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমরা অবগত। কীভাবে শিক্ষাবহির্ভূত কাজে শিক্ষকদের নিয়োগ কমিয়ে আনা যায় সে জন্য আমরা কাজ করছি। আমরাও মনে করি, শিক্ষকদের শিক্ষকতার কাজেই থাকা দরকার। আমাদের দেশের সার্বিক কল্যাণের জন্যই এটি (পাঠদানবহির্ভূত কাজ) থেকে সরে আসা প্রয়োজন।’
বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকদের অসন্তোষ প্রসঙ্গে বিধান রঞ্জন বলেন, বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত। এ বিষয়ে পরামর্শক কমিটি এ বিষয়ে সুপারিশ দিয়েছে। বিষয়টির বাস্তবায়ন কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৬ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।
ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।
গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’
কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।
গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’
গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।
এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’
সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। বৃহস্পতিবারের পর ঐকমত্য কমিশন গতকালও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করলেও কোনো সমাধান মেলেনি। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার কমিশন আবার নিজেরা বৈঠক করবে এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আবার বসবে।
ঐকমত্য কমিশনের জাতীয় সংসদ ভবনের কার্যালয়ে গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠকটি বেলা দেড়টার পর শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৬টার পরে শেষ হয়। প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকেও সংবিধান নিয়ে সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করার উপায় বের হয়নি।
সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সিদ্ধান্ত হলো, গণ-অভ্যুত্থানকে ভিত্তি ধরে প্রথমে ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করা হবে। তার অধীনে জারি হবে গণভোট-বিষয়ক একটি অধ্যাদেশ। এর ভিত্তিতেই হবে গণভোট। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত (২৭০ দিন বা প্রথম ৯ মাস) আগামী সংসদ কাজ করবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে। এ সময়ের মধ্যেই সংবিধান-সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবগুলো সংসদে অনুমোদন করা হবে। প্রসঙ্গত, একই সময় এ পরিষদ নিয়মিত সংসদ হিসেবেও কাজ করবে। সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায়ই সংবিধান সংস্কার হবে।
গতকালের আলোচনা বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘সংসদ সদস্যরা ২৭০ দিনের মধ্যে বাস্তবায়ন না করলে সনদে থাকা বিষয়গুলো কী হবে—সেখানেই আটকে যাচ্ছে আলোচনা। কারণ আমরা তেমন সমাধান দিতে পারছি না। দেশে অতীতে এ-সংক্রান্ত কোনো উদাহরণ নেই। দেশের বাইরেও এ ধরনের উদাহরণ পাইনি।’
কোনো দল আগামী নির্বাচনে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলে সংবিধান সংস্কার কীভাবে হবে, এ প্রশ্নও আছে। বিষয়টি তখন মূলত নির্ভর করবে বেশি আসন পাওয়া কয়েকটি দলের সদিচ্ছার ওপর। কিন্তু কমিশন চাইছে এ অনিশ্চয়তার অবকাশ না রেখে এমন কোনো বিধান করা, যা সনদ বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দেবে।
গতকালের বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা একাধিক মত দিয়ে বলেছেন, সেগুলো আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন না তাঁ। একটি মত হলো,নির্ধারিত সময়ে সংস্কার বাস্তবায়ন করা না হলে সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এটি আইনগতভাবে ঠিক হলেও রাজনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। সংসদ এভাবে বিলুপ্ত হলে নতুন সংকট তৈরি হতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা।
আরও যে কয়েকটি মত গতকাল এসেছে তার মধ্যে রয়েছে, প্রথমত, পরিষদে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সনদের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন না হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে যুক্ত হয়ে যাওয়া এবং দ্বিতীয়ত, আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বৈঠকে বসে সনদের সংযুক্তি বাস্তবায়ন করবে এবং তারপর সংসদ বসবে। কিন্তু এগুলোও কার্যকর বা বাস্তবসম্মত মনে করেননি বিশেষজ্ঞদের সবাই।
একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, সময়সীমার মধ্যে না সম্পন্ন করলে আপনা থেকেই সংবিধানে বিষয়গুলো যুক্ত হওয়ার ধারণা বাস্তবসম্মত না। কারণ বিলগুলোর খসড়া তৈরি করা নেই। এটা করা বিশেষজ্ঞদের কাজ না। সংসদে আলোচনা করে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই এ সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরও বলেন, সনদের একটি বিধান হচ্ছে, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ করা হবে। কিন্তু কোন মৌলিক অধিকারটি সম্প্রসারণ করা হবে, তা বলা নেই। সংসদ সদস্যদের আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত দিতে পারিনি। কমিশন জানিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বৈঠক করবেন, প্রয়োজনে আমাদের সহযোগিতা নেবেন।’
গতকালের বৈঠকে আগে সংবিধান সংস্কার পরিষদ বসে বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করার যে প্রস্তাব আসে তার পক্ষে বলা হয়, এতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা দ্রুত সনদ বাস্তবায়নে কাজ করবেন। কারণ তাঁরা বিলম্ব না করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে চাইবেন। একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হলেও বেশির ভাগের মত, এটিও বাস্তবসম্মত নয়। কারণ জনপ্রতিনিধিদের শপথের মাধ্যমে সংসদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্বে থেকে যেতে হবে। এটা প্রধান উপদেষ্টাই মানবেন না।
এ অবস্থায় সমাধান কী হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমরা আদৌ কোনো বাধ্যবাধকতা তৈরি করে দিতে পারব কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ এমন আইনি ও রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য সমাধান পাইনি। তাই বিষয়টি আমাদের সুপারিশে না-ও থাকতে পারে।’
সনদ-বিষয়ক আদেশের খুঁটিনাটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণভোটের দিনক্ষণ সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
কমিশন সূত্র জানায়, আজ সকালে নিজেরা বৈঠক করার পর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও আবার বৈঠক করা হবে। ৩১ অক্টোবরের মেয়াদের মধ্যেই সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সুপারিশ চূড়ান্ত করতে চায় কমিশন।
এনসিপির সঙ্গে বৈঠক
গতকাল বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসার আগে কমিশনের সদস্যরা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠক করেন। ১৭ অক্টোবর জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হলেও দলটি সই করেনি। এনসিপি বলেছিল, বাস্তবায়নের আদেশের চূড়ান্ত খসড়া না দেখে তারা স্বাক্ষর করবে না।
কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, গতকালের বৈঠকে এনসিপির প্রতিনিধিরা ‘স্পষ্টভাবে’ জানিয়েছেন যে তাঁরা স্বাক্ষর করতে চান। তাঁরা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন, যা কমিশন আইনি বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়েছে। এনসিপির প্রস্তাবে ইতিবাচক ও নেতিবাচক দুই দিকই আছে। সেই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কমিশন এগোচ্ছে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে, যেন সবাই স্বাক্ষরের দিকে আসে।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরিফ ভূইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক ও ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।
আলোচনায় কমিশনের পক্ষে অংশ নেন সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে...
২৯ জুলাই ২০২৫
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৬ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিধান, আবার কিছু কিছু বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
সংশোধিত আরপিওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে না ভোট বেশি হলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একক প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
আগে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারত। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না।
প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারবেন।
প্রার্থীর জামানত বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন, তাঁর ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিয়েছিল। সংশোধিত আরপিওতে শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীর হলফনামায় আগে শুধু দেশের সম্পদের হিসাব দেওয়া হতো। সংশোধিত আরপিওতে শুধু দেশের নয়, বিদেশের আয়ের উৎস, সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংক্রান্ত বিধানটি সংশোধিত আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে বেশ কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে নতুন বিধান, আবার কিছু কিছু বিধান আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
সেগুলোর মধ্যে রয়েছে—ইভিএম ব্যবহার বাতিল, ‘না ভোট’ পুনর্বহাল, প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশের বাধ্যবাধকতা এবং পলাতক আসামিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা।
সংশোধিত আরপিওর গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:
আদালত কর্তৃক ফেরারি বা পলাতক আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
কোনো আসনে একক প্রার্থী থাকলে তাঁকে না ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। নির্বাচনে না ভোট বেশি হলে সেখানে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন হবে। তবে দ্বিতীয়বারও একক প্রার্থী হলে সেই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে তাঁকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।
ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে। তবে ভোট গণনার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সেখানে থাকতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জেলাভিত্তিক নির্বাচন অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করবেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থীদের দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে আয় ও সম্পত্তির বিবরণ হলফনামায় দিতে হবে, যা নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে উন্মুক্তভাবে প্রকাশ করা হবে।
আগে দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারত। সেটি সংশোধন করা হয়েছে। জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ভোটের সময় অনেকে জোটভুক্ত হলে জনপ্রিয় বা বড় দলের মার্কায় ভোট করতেন। এখন আর সে সুযোগ থাকছে না।
প্রবাসী বাংলাদেশি, নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধানটি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং চালু করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের পাশাপাশি আইনি হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারা ভোট দিতে পারবেন।
প্রার্থীর জামানত বাড়ানো হয়েছে। আগে ২০ হাজার টাকা ছিল, তা বাড়িয়ে ৫০ হাজার করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলকে ৫০ হাজার টাকার বেশি অনুদান দিতে চাইলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে। যিনি অনুদান দেবেন, তাঁর ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।
কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন পুরো আসনের ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা কমিয়েছিল। সংশোধিত আরপিওতে শুধু ভোটকেন্দ্র নয়, অনিয়ম হলে ইসি পুরো আসনের ভোট বন্ধ করতে পারবে, সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীর হলফনামায় আগে শুধু দেশের সম্পদের হিসাব দেওয়া হতো। সংশোধিত আরপিওতে শুধু দেশের নয়, বিদেশের আয়ের উৎস, সম্পত্তির বিবরণ দিতে হবে।
এ ছাড়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-সংক্রান্ত বিধানটি সংশোধিত আরপিও থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে...
২৯ জুলাই ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৩ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
৯ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১০ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘Ensuring Justice: The Role of the Judiciary in Addressing Enforced Disappearances’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রায় লেখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকেরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাঁদের শিল্পকর্মই তাঁদের রায়।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। কমিশন এরই মধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার-বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, গুম হত্যার চেয়েও নিকৃষ্টতম অপরাধ। গুম প্রতিরোধে শুধু আইনগত সংস্কার নয়, প্রয়োজন প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারও।
আজ শনিবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে অনুষ্ঠিত ‘Ensuring Justice: The Role of the Judiciary in Addressing Enforced Disappearances’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গুম-সংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির উদ্যোগে এবং ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক প্রাণ ও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা আজ একটি পরিবর্তিত পরিবেশে অবস্থান করছি। এই পরিবর্তন স্থায়ী করতে হলে গুমের বিচার নিশ্চিত করা অপরিহার্য।’
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, রায় লেখা একটি সৃজনশীল শিল্প। তাই বিচারকেরা হলেন সৃজনশীল শিল্পী। তাঁদের শিল্পকর্মই তাঁদের রায়।
তিনি বলেন, গুম প্রতিরোধে বিচার বিভাগ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মানবাধিকার কাঠামোর মধ্যে সমন্বিত সহযোগিতা অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ ও আধুনিক প্রযুক্তির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিচার বিভাগ ও তদন্ত সংস্থার সক্ষমতা বৃদ্ধি গুমের বিচার নিশ্চিতের মূল চাবিকাঠি।
কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী বলেন, গুম-সংক্রান্ত মামলাগুলোর কার্যকর তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করতে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এখন সময়ের দাবি। কমিশন এরই মধ্যে বিদ্যমান আইনি কাঠামো পর্যালোচনা করে গুম-সংক্রান্ত মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি, সাক্ষী সুরক্ষা ও ভুক্তভোগী পরিবারের আইনি সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের প্রস্তাব প্রস্তুত করছে।
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা এবং ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার-বিষয়ক উপদেষ্টা হুমা খান।

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে...
২৯ জুলাই ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৬ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর
১০ ঘণ্টা আগেসিনেটে শুনানিতে ট্রাম্প–মনোনীত রাষ্ট্রদূত
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে প্রশ্নোত্তর পর্বে একথা বলেন ক্রিস্টেনসেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মমোনীত এই কূটনীতিক বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে সামরিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক কর্মকাণ্ড এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সম্পৃক্ততাসহ চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবনে। পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্ব ঘনিষ্ঠ করার জন্য কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেন ক্রিস্টেনসেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেন। সিনেট কমিটির অনুমোদনের পরই তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। এই মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে চার রাষ্ট্রদূত প্রার্থী লিখিত বিবৃতি তুলে ধরেন। পরে তাঁরা সিনেট সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরে নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর জন পিটার রিকেটস শুনানিতে বলেন, ‘আমরা এখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখে। বাংলাদেশ ও চীনের সামরিক সহযোগিতা দ্রুত বাড়ছে। যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রাখার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি কৌশলগত সাবমেরিন ঘাঁটি আধুনিকায়ন করেছে চীন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি নতুন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ও দূরপাল্লার রাডার কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেলে চীনা সামরিক সরঞ্জামের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ক্রিস্টেনসেন কীভাবে কাজ করবেন, তা জানতে চান সিনেটর রিকেটস।

জবাবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে আপনাদের মতো উদ্বেগ আমারও। রাষ্ট্রদূত নিয়োগ আমি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে চীনের কার্যক্রমের ঝুঁকি ব্যাখ্যা করব। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা তুলে ধরব, যা দুই দেশের সামরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।’
এ সময় সিনেটর রিকেটস বলেন, ‘এই শুনানির আগের দিনই সিনেট পররাষ্ট্র কমিটি সর্বসম্মতভাবে ‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’ পাস করেছে। এই আইন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণাঙ্গ কৌশল নিতে বাধ্য করবে, যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে চীনা অস্ত্র কেনা থেকে বিরত রাখা যায়। আমরা আশা করি, আপনিও এই আইনের সহায়তা নিয়ে কাজ করবেন। তাহলে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব হবে।’
তাঁর এই মন্তব্যের সূত্র ধরে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘সামরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমূল্যের সামরিক সরঞ্জামের বিকল্প হিসেবে মিত্রদেশগুলোর তৈরি সাশ্রয়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা বাংলাদেশকে জানাতে পারি। পাশাপাশি যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্মগুলোকে অন্যান্য মিত্র বাহিনীর সঙ্গে আরও সমন্বিত ও কার্যকর করতে পারি।’
শুনানির শুরুতে লিখিত বিবৃতিতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন হয়েছিল, তা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে পতন ঘটায়। আগামী বছর বাংলাদেশের জনগণ ভোটে যাবে, যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যাত্রায় পাশে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনেক সময় তাঁর প্রাপ্য মনোযোগ পায় না, বড় প্রতিবেশীদের আড়ালে গুরুত্ব হারিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রসেবায় আমার দুই দশকের অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে ঢাকার কর্মকালও রয়েছে। তাই, আমি বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান বাংলাদেশকে উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তুলেছে।’

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেছেন, নিয়োগ পেলে চীনা কর্মকাণ্ড থেকে উদ্ভূত ঝুঁকিগুলো স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবেন। গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটিতে তাঁর মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে প্রশ্নোত্তর পর্বে একথা বলেন ক্রিস্টেনসেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মমোনীত এই কূটনীতিক বলেন, রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেলে তিনি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর কাছে সামরিক সহযোগিতা, সামুদ্রিক কর্মকাণ্ড এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে সম্পৃক্ততাসহ চীনা কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবনে। পাশাপাশি সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অংশীদারত্ব ঘনিষ্ঠ করার জন্য কাজ করারও প্রতিশ্রুতি দেন ক্রিস্টেনসেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনয়ন দেন। সিনেট কমিটির অনুমোদনের পরই তাঁর নিয়োগ চূড়ান্ত হবে। এই মনোনয়ন নিয়ে শুনানিতে চার রাষ্ট্রদূত প্রার্থী লিখিত বিবৃতি তুলে ধরেন। পরে তাঁরা সিনেট সদস্যদের প্রশ্নের জবাব দেন।
বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ তুলে ধরে নেব্রাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর জন পিটার রিকেটস শুনানিতে বলেন, ‘আমরা এখন চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মুখে। বাংলাদেশ ও চীনের সামরিক সহযোগিতা দ্রুত বাড়ছে। যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন রাখার জন্য সম্প্রতি বাংলাদেশের একটি কৌশলগত সাবমেরিন ঘাঁটি আধুনিকায়ন করেছে চীন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার চীনের তৈরি ২০টি জে-১০ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাশাপাশি নতুন সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল ও দূরপাল্লার রাডার কেনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ পেলে চীনা সামরিক সরঞ্জামের ওপর বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে ক্রিস্টেনসেন কীভাবে কাজ করবেন, তা জানতে চান সিনেটর রিকেটস।

জবাবে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রভাব নিয়ে আপনাদের মতো উদ্বেগ আমারও। রাষ্ট্রদূত নিয়োগ আমি বাংলাদেশ সরকার ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত থেকে চীনের কার্যক্রমের ঝুঁকি ব্যাখ্যা করব। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গভীর অংশীদারিত্বের সম্ভাবনা তুলে ধরব, যা দুই দেশের সামরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।’
এ সময় সিনেটর রিকেটস বলেন, ‘এই শুনানির আগের দিনই সিনেট পররাষ্ট্র কমিটি সর্বসম্মতভাবে ‘থিংক টোয়াইস অ্যাক্ট’ পাস করেছে। এই আইন যুক্তরাষ্ট্রকে পূর্ণাঙ্গ কৌশল নিতে বাধ্য করবে, যাতে বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশকে চীনা অস্ত্র কেনা থেকে বিরত রাখা যায়। আমরা আশা করি, আপনিও এই আইনের সহায়তা নিয়ে কাজ করবেন। তাহলে অস্ত্র বিক্রির মাধ্যমে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার প্রতিরোধ সম্ভব হবে।’
তাঁর এই মন্তব্যের সূত্র ধরে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘সামরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চমূল্যের সামরিক সরঞ্জামের বিকল্প হিসেবে মিত্রদেশগুলোর তৈরি সাশ্রয়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে আমরা বাংলাদেশকে জানাতে পারি। পাশাপাশি যৌথ সামরিক মহড়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্ল্যাটফর্মগুলোকে অন্যান্য মিত্র বাহিনীর সঙ্গে আরও সমন্বিত ও কার্যকর করতে পারি।’
শুনানির শুরুতে লিখিত বিবৃতিতে ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেন বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। ২০২৪ সালের আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে যে গণআন্দোলন হয়েছিল, তা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা সরকারকে পতন ঘটায়। আগামী বছর বাংলাদেশের জনগণ ভোটে যাবে, যা দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের যাত্রায় পাশে থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের অষ্টম জনবহুল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অনেক সময় তাঁর প্রাপ্য মনোযোগ পায় না, বড় প্রতিবেশীদের আড়ালে গুরুত্ব হারিয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রসেবায় আমার দুই দশকের অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে ঢাকার কর্মকালও রয়েছে। তাই, আমি বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সম্পর্কে গভীরভাবে অবগত। ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থান বাংলাদেশকে উন্মুক্ত, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার করে তুলেছে।’

শুধু পাঠদান নয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা যেন অনেক কাজের কাজি। ভোট গ্রহণ, ভোটার তালিকা, শুমারি, জরিপ, টিকাদান, কৃমিনাশক ওষুধ ও ভিটামিন ক্যাপসুল খাওয়ানো, টিসিবির চাল বিতরণ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানসহ বারোয়ারি অন্তত ২০ ধরনের কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। সরকারি এসব কাজে বছরে ব্যস্ত থাকছেন কমপক্ষে...
২৯ জুলাই ২০২৫
আগামী জাতীয় সংসদ নিয়মিত সংসদের পাশাপাশি সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের (৯ মাস) মধ্যে জুলাই সনদের সংবিধানসংক্রান্ত বিষয়গুলো সংবিধানে যুক্ত করবে বলে মতৈক্য হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সম্পন্ন করার বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত হবে, গতকাল শনিবার পর্যন্ত তার কিনারা করতে পারেনি...
৩ ঘণ্টা আগে
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন, ২০২৫-এর খসড়া নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার সংশোধিত আরপিও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে পরিষদে অনুমোদন দেওয়া হয়।
৬ ঘণ্টা আগে
বিচারকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, গুমের বিচার বাস্তবায়নে বিচারকদের সাহসী ও ন্যায্য ভূমিকা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা ও দৃঢ় অবস্থানই একদিন বাংলাদেশ থেকে গুমের সংস্কৃতি নির্মূল করবে।
৯ ঘণ্টা আগে