Ajker Patrika

টাকা দিয়েও ভিজিডি কার্ড মিলছে না অনেকের, তালিকায় সচ্ছলরা

প্রতিনিধি
টাকা দিয়েও ভিজিডি কার্ড মিলছে না অনেকের, তালিকায় সচ্ছলরা

পুঠিয়া (রাজশাহী): গরিব ও দুস্থ মহিলাদের নামের পরিবর্তে ভিজিডি খাদ্যতালিকায় সচ্ছলরা স্থান পেয়েছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অর্থের বিনিময় তাদের পছন্দমতো মহিলাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার জিউপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায়।

জিউপাড়া ইউপি সচিব সাইদুল ইসলাম বলেন, চলতি ভিজিডির চূড়ান্ত তালিকা করা হয় গত বছর ডিসেম্বরে। তালিকায় পুরো ইউপিতে মোট ৩১৯ জন সুবিধা ভোগী মহিলা রয়েছেন। এদের সকলকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা (চাল-গম) দেওয়া হচ্ছে। যা আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এর মেয়াদ বলবৎ থাকবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে ইউনিয়নের কানাইপাড়া গ্রামের আতাহার আলীর স্ত্রী মরিয়ম বেগম নিজেকে দুস্থ নারী হিসাবে দেখিয়ে ভিজিডির আওতায় রয়েছেন। অথচ তাদের নিজস্ব কয়েক বিঘা ফসলি জমি রয়েছে। সেই সঙ্গে আধুনিক মানের একটি ফ্ল্যাট বাড়িও রয়েছে। একই গ্রামের এনামূল হকের স্ত্রী রুমা বেগমও সম্পদশালী। তাঁর ছেলে থাকেন প্রবাসে। সে সুবাদে জমিজমাসহ রয়েছে ভালো মানের বাড়ি। হলহলিয়া গ্রামের সুজিত কুমার সরকারের স্ত্রী অর্পনা রানীদের বাড়িসহ রয়েছে কয়েক বিঘা জমি। সম্প্রতি প্রায় ১০ লাখ টাকায় আরও এক বিঘা জমি কিনেছেন। পুরো ইউপি এলাকায় মোট ৩১৯ জন সুবিধা ভোগীদের মধ্যে অধিকাংশরাই এ রকম সচ্ছল পরিবারের সদস্য।

ভিজিডির সুবিধা ভোগী হলহলিয়া গ্রামের জতিন সরকারের স্ত্রী মানিতা রানী বলেন, এই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য হেলেনা বেগম কার্ড করার কথা বলে আমার কাছে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে অনেক আকুতি-মিনতি করার পর দুই হাজার টাকা নিয়ে তিনি এই কার্ড করে দেন। একই এলাকার আরও এক নারী কার্ডের বিনিময় দুই হাজার টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

পশ্চিম কানাইপাড়া-পালপাড়া গ্রামের শেফালী রানী বলেন, আমাদের পরিবার অনেক অসচ্ছল। একটা ভিজিডির কার্ডের জন্য পরিষদের অনেক ঘুরেছি। কিন্তু কোনো ভাবেই সে কার্ড পাইনি। অবশেষে মহিলা মেম্বার হেলেনা বেগম কার্ড দেওয়ার নামে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু তিনি কার্ডতো দেননি এখন ওই টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।

নাম পরিচয় প্রকাশ না করা শর্তে একজন ইউপি সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান তিনজন মহিলা মেম্বারকে ভিজিডি কার্ডের তালিকা তৈরি করতে দেন। ওই তালিকায় অনেক প্রভাবশালীদের নামও রয়েছে। তবে অর্থের বিনিময় ওই তালিকা তৈরিতে মহিলা মেম্বার হেলেনা বেগম ও চেয়ারম্যানের একজন খাস লোক জড়িত আছেন। ওই সময় টাকা নেওয়ায় এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হয়ে ছিল। তবে এ বিষয়টি চেয়ারম্যান অবহিত আছেন। কিন্তু তিনি কোনো প্রকার প্রতিবাদ করেননি।

অর্থের বিনিময় সচ্ছলদের ভিজিডির তালিকায় নাম দেওয়ার বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের ৭, ৮, ৯ নং সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য হেলেনা বেগমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কাউকে টাকার বিনিময় কার্ড দেয়নি। মানুষ আমার নামে মিথ্যা কথা বলছেন। আমি গরিব মানুষের নামেই তালিকা দিয়েছি।

এ বিষয়ে জিউপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা বেগম বলেন, অর্থের বিনিময় ভিজিডির কার্ড দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তালিকা তৈরি করা ওই মহিলা সদস্যদের বলা হয়েছিল সচ্ছলরা নয়, দুস্থদের নাম দেওয়ার জন্য। তবে বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ডালিয়া পারভীন বলেন, আমি একার পুরো উপজেলার সকল তালিকা অনুযায়ী মাঠ পর্যায়ে দেখা সম্ভব নয়। যার কারণে ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া তথ্য মতে ভিজিডির চূড়ান্ত তালিকা তৈরির হয়েছে। তবে জিউপাড়া ইউপিতে কয়েকজনের নামের বিষয়ে অভিযোগ থাকায় তাদের বাদ দেওয়া হয়। আর নিয়ম অনুসারে কর্মসূচির ৬ মাস হলে নাম বাদ দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবর্তে আরেক জন সুবিধা ভোগীকে তালিকাভুক্ত করা যায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি কর্মচারীদের পদ-পদবি-বেতন কাঠামো নিয়ে পাল্টা অবস্থানে দুই পক্ষ

বাংলাদেশ এড়িয়ে সমুদ্রপথে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

নাম প্রস্তাবে আটকে আছে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’

মোহাম্মদপুরে আলোকচিত্রী ও জিগাতলায় শিক্ষার্থী খুন

ফেসবুকে লাইক-কমেন্ট, পাঁচ কর্মকর্তাকে নোটিশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত