Ajker Patrika

২৩ সমবায় সমিতি উধাও, আমানত ফেরতের আগে বৃদ্ধার মৃত্যু

জামালপুর প্রতিনিধি 
মাদারগঞ্জে আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে সমবায় গ্রাহকদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাদারগঞ্জে আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে সমবায় গ্রাহকদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

আমানতের টাকা ফেরতের দাবিতে জামালপুরের মাদারগঞ্জে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন সমবায় সমিতির গ্রাহকেরা। আজ রোববার মাদারগঞ্জ মডেল থানার সামনের সড়কে এ বিক্ষোভ করেন তাঁরা। সমবায়ে আমানতের টাকা উদ্ধারের জন্য সহায়ক কমিটির ব্যানারে এই বিক্ষোভ হয়।

এদিকে আমানতের টাকা না পেয়ে চিকিৎসার অভাবে ফাতেমা বেগম (৬৫) নামের এক নারী গ্রাহকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই উপজেলার গুনারিতলা ইউনিয়নের ভাংবাড়ী এলাকার আবুল হাশেমের স্ত্রী।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আমানতের টাকা উদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক শিবলুল বারী রাজু বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারেননি।

এ বিষয়ে মাদারগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান আল মামুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই নারী তাঁর বাড়িতে অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন।

এর আগে সকালে বালিজুড়ি বাজার শহীদ মিনার থেকে ঝাড়ু মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদর্শন করে থানা মোড় ও ফায়ার সার্ভিস এলাকায় ঢাকা-মাদারগঞ্জ মহাসড়ক অবোধ করে। এ সময় সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে মহাসড়ক থেকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সরানোর চেষ্টা করেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত সমিতিগুলোর পলাতক কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো আলোচনা হবে না। তাঁদের গ্রেপ্তারের পর আমরা আলোচনায় বসব।’

তাঁরা বলেন, ‘প্রশাসন একজনকে গ্রেপ্তার করে হয়রান হয়ে গেছে, প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত ডিসি–এসপি উপস্থিত হয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে অঙ্গীকারবদ্ধ না হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’

এ সময় উপজেলা কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফি, উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান মোখলেস, টাকা উদ্ধার কমিটির সদস্য সোনা মোল্লা, আমানতকারী আসমা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন নিয়ে মাদারগঞ্জে আল-আকাবা বহুমুখী সমবায় সমিতি, শতদল বহুমুখী সমবায় সমিতি, স্বদেশ বহুমুখী সমবায় সমিতি, নবদ্বীপ বহুমুখী সমবায় সমিতি, জনতা শ্রমজীবী সমবায় সমিতিসহ ২৩টি সমবায় অফিস খোলা হয়।

এসব সমিতিতে বিভিন্ন পেশার প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক তৈরি করা হয় এবং তাঁরা ৩৫ হাজার কোটি টাকার আমানত জমা রাখে। বেশ কিছু দিন ধরে সমিতিগুলোর কর্মকর্তারা গ্রাহকদের টাকা না দিয়ে হঠাৎ করেই আত্মগোপনে চলে যান।

তাঁরা আরও জানান, শুধু ছয়টি সমিতির কাছে জমা রয়েছে ৭০০ কোটি টাকারও বেশি। মাদারগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের একটি হিসাবে দেখা গেছে, প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা সমিতিগুলোয় রয়েছে। এ ছাড়া ইসলামপুর, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ী ও জামালপুর সদরেরও কয়েক হাজার গ্রাহক রয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামালপুর জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. আবদুল হান্নান বলেন, তিনি জেলায় নতুন যোগদান করেছেন। সমবায় কর্মকর্তাদের চেয়ে গ্রাহকদের দায়টা বেশি। কোনো মানুষ সমিতিতে এভাবে টাকা রাখে না। এর আগে গ্রাহকেরা কোনো সমিতির বিরুদ্ধে কখনোই অভিযোগ করেননি।

মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘অনেক সমিতি ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। গ্রাহকদের টাকা উদ্ধারের বিষয়ে সমবায় কর্মকর্তাদের তেমন কিছু করার থাকে না। তবে দুর্নীতির সঙ্গে যেসব সমিতি জড়িত হবে, শুধু সেসব সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হবে।

তবে এই মুহূর্তে সমিতিগুলোর নিবন্ধন বাতিল করলে গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। গ্রাহকদের সঙ্গে আমরা সব সময় যোগাযোগ করি, টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য সমিতির উদ্যোক্তাদের চিঠি দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত