Ajker Patrika

ভেঙে ফেলা হচ্ছে নকলার একমাত্র প্রেক্ষাগৃহ ‘কল্পনা সিনেমা হল’

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ২৩
Thumbnail image

শেরপুরের নকলায় একমাত্র প্রেক্ষাগৃহ ‘কল্পনা সিনেমা হল’ ভেঙে ফেলা হচ্ছে। চলচ্চিত্র ব্যবসায় ধস নামায় পৌর শহরের জালালপুর মহল্লায় অবস্থিত হলটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে বলে জানিয়েছে মালিকপক্ষ। 

উপজেলার গণপদ্দী ইউনিয়নের গণপদ্দী এলাকার আব্দুল মোমেন বাবু মিয়া (৭০) ২০০৪ সালে এই সিনেমা হলটি নির্মাণ করেন। সম্প্রতি ব্যবসায় লোকসান গুনতে গুনতে শেষ পর্যন্ত হলটি বন্ধ করে দেন তিনি। সম্প্রতি জমিসহ হলটি জহিরুল ইসলাম জুয়েল নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেন। জুয়েল হলটি ভেঙে সেখানে একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করবেন বলে জানা গেছে। 

হলমালিক বাবু মিয়া বলেন, ‘সিনেমা হলটি নির্মাণের পর প্রথম দিকে ব্যবসা ভালো হলেও পরবর্তী সময়ে ব্যবসা মন্দার দিকে যেতে থাকে। অনেক চেষ্টা করেও দর্শকদের হলমুখী করা যাচ্ছিল না। আমরা ভালো মানের সামাজিক ও ঐতিহাসিক সিনেমা দর্শকদের দেখানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভালো ফল আসেনি। ক্রমেই ব্যবসা নিম্নমুখী থেকে আরও নিম্নমুখী হতে থাকে। লোকসানের ঘানি টানতে টানতে একসময় পথে বসার উপক্রম হলে হলটি বন্ধ করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই।’ 

স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর লালন মিয়া বলেন, পুরো নকলাবাসীর মনোরঞ্জনের জন্য একমাত্র সিনেমা হলটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এরপরও কিছু করার নেই। দর্শক না থাকলে এটি বাঁচিয়ে রেখে মালিকপক্ষ কী করবে। 

সিনেমাপাগল ষাটোর্ধ্ব নবীউর রহমান বলেন, ‘আগে ভালো মানের সিনেমা তৈরি হতো। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে সিনেমা দেখতাম। কিন্তু বর্তমানে দর্শক আকৃষ্ট করার জন্য যেভাবে নোংরা সিনেমা তৈরির প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, তাতে দর্শক আকৃষ্ট হওয়া তো দূরের কথা আরও দূরে সরে যাচ্ছে। তা ছাড়া সিনেমা হলে দর্শক না যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো ভিডিও পাইরেসি। যে ছবি ঘরে বসে দেখা যায় সে ছবি দর্শক কেন টাকা দিয়ে টিকিট কেটে হলে দেখতে যাবে। এ ছাড়া সিনেমা হল ভেঙে বহুতল ভবন, বিপণিকেন্দ্র ও গুদামঘর করে কোনো প্রকার ঝুঁকি ছাড়াই প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে।’ 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘সিনেমা হল নিয়ে আমার ভেতরেও অনেক আবেগ আছে। আমার নিজ উপজেলাতেও তিনটি সিনেমা হল ছিল। যেখানে একসময় আমরা পাঁচ টাকার টিকিট কেটে সিনেমা দেখতাম। ব্যবসা না থাকায় একে একে তিনটি হল বন্ধ করে দেয় মালিকপক্ষ। এরপর ঘরগুলোও বিক্রি হয়ে যাওয়ায় এখন শুধু খালি জায়গা পড়ে রয়েছে। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে লোকসান দিতে দিতে সিনেমা হল মালিকেরা একসময় সেগুলো বেঁচে দিচ্ছেন।’ ভবন ভেঙে সে জায়গায় হাইরাইজড ভবন নির্মাণ করে আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করছে বলেও জানান ইউএনও মোস্তাফিজুর রহমান। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত