Ajker Patrika

ভাতা আসা বন্ধ, অফিসে গিয়ে জানলেন তারা মৃত

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ জুন ২০২৪, ২০: ৫০
ভাতা আসা বন্ধ, অফিসে গিয়ে জানলেন তারা মৃত

খাদিজা আক্তারের (৬০) স্বামী নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার উকুয়াকান্দা গ্রামের মামুদ আলীর মারা যান ২০১৬ সালে। ২০১৯ সালে সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করে বিধবা ভাতাভোগী হন। এরপর থেকে নিয়মিত ভাতা পাচ্ছিলেন। কিন্তু গত বছর থেকে তার মোবাইল নম্বরে ভাতা আসা বন্ধ হয়ে যায়। 

কয়েকবার সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেন তিনি। অফিস থেকে তাঁকে আশ্বস্ত করা হয়। সম্প্রতি খাদিজা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তিনি মারা গেছেন। তাই তার জায়গায় অন্যজনকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। 

এ ঘটনায় গত ১৩ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী। একই অবস্থা উপজেলার খলিশাউড় ইউনিয়নের গড়ুয়াকান্দা গ্রামের মো. হযরত আলী (৭১) ও হোগলা ইউনিয়নের জামিরাকান্দা গ্রামের জহুরা খাতুনের (৬৭)। 

পূর্বধলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. খবিরুল আহসান অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

স্থানীয়রা জানান, খোঁজ নিলে এমন আরও অসংখ্য ঘটনা পাওয়া যাবে। ভাতাভোগীরা গ্রামের সাধারণ মানুষ, তারা এতটা সচেতন নয়, তাই তারা এত খোঁজ খবর রাখে না। নিজেদের সুবিধার জন্য জনপ্রতিনিধিরা সাধারণ মানুষদের যখন খুশি জীবিত-মৃত বানাচ্ছেন। আর্থিক সুবিধার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বররা মৃত্যুর সনদ দিয়ে পুরোনো ভাতাভোগীদের নাম কেটে তাদের জায়গায় অন্যর নাম দেন। লাভের জন্য তারা জীবিত মানুষদের মৃত্যু সনদ দিয়ে দিচ্ছেন কত অনায়াসে। এসব বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান তারা। 

হযরত আলী জানান, দীর্ঘদিন খরে বয়স্কভাতা পেয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। গত ৭-৮ মাস ধরে মোবাইল অ্যাকাউন্টে টাকা না আসায় বিষয়টি সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নেন। সমাজসেবা অফিসার জানান, খলিশাউড় ইউপি চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রত্যয়ন মোতাবেক তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। পরবর্তীতে তার নামে বরাদ্দকৃত বয়স্কভাতা অন্য উপকারভোগীর নামে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই ঘটনায় দোষীদের বিচার চেয়ে তিনি ইউএনওর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

অপর ভুক্তভোগী জহুরা খাতুনের অভিযোগ, তিনিও দীর্ঘদিন ধরে বয়স্কভাতা ভোগী ছিলেন। ৯-১০ মাস ধরে তাঁর ভাতা বন্ধ হয়ে যায়। বয়সেরভারে চলাফেরা করতে না পারায় ছেলে বাবুল ফকিরকে এ বিষয়ে সমাজসেবা অফিসে খবর নিতে পাঠান। সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয়, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দেওয়া মৃত্যু সনদ অনুযায়ী জহুরা খাতুনের ভাতা বাতিল করা হয়েছে। তার ভাতার কার্ড প্রতিস্থাপন করে অন্যজনকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় জহুরার ছেলে বাবুল ফকির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

ভুক্তভোগী খাদিজা আক্তার বলেন, ‘আমি জীবিত থাকা অবস্থায় যারা মৃত্যু সনদ দিয়ে ভাতার কার্ড বাতিল করেছে তাদের বিচার চাই।’ 

এ বিষয়ে খলিশাউড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান কমল কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘একই গ্রামে হযরত আলী নামে দুই ব্যক্তির এক ব্যক্তি মারা গেলে ভুলবশত জীবিত ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। এই ভুল সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে সমাজসেবা অফিসে কাগজ পাঠানো হয়েছে।’ 

হোগলা ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম আকন্দ খোকন বলেন, ‘আমার অজান্তে ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ভুলবশত এমনটি করেছে। তবে ভুল সংশোধনের জন্য ইতিমধ্যে আমি কাগজপত্র নিয়ে সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেছি।’ 
 
পূর্বধলা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মৃত্যু সনদ ইউপি চেয়ারম্যানরা দিয়ে থাকেন। এখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের দেওয়া সনদ অনুযায়ীই ভাতা বাতিল করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী অন্য ভাতাভোগীকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এখন যেহেতু অভিযোগ পাওয়া গেছে, তাই তদন্ত করে বিষয়টি সংশোধন করা হবে। ইতিমধ্যে জহুরা খাতুনের ভাতা ফের চালু করা হয়েছে। অন্যদের বিষয়টিও সংশোধন করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়, আছে বাংলাদেশিও

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত