Ajker Patrika

দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি, দুই দিনেও পার হচ্ছে না গাড়ি

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২১, ২১: ২৮
দৌলতদিয়া ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি, দুই দিনেও পার হচ্ছে না গাড়ি

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রবেশদ্বার দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যানবাহনের দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে আসছে। দুই দিন আগে আসা গাড়ি দুই দিন পর পার হচ্ছে। এতে রাস্তাতেই চালক ও সহযোগীদের রাত কেটে যাচ্ছে। ঘাটস্বল্পতা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ থাকায় এই সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছে ঘাট কর্তৃপক্ষ। তবে এ সমস্যার সমাধান দ্রুত শেষ হবে না বলেও জানান তাঁরা। 

আজ সোমবার সকালে ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ৫ কিলোমিটার এলাকায় পারের অপেক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন যাত্রীবাহী বাস ও পণ‍্যবাহী ট্রাক। মাঝেমধ্যে যানবাহনের সারি ৫-৬ কিলোমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হচ্ছে। তবে এর মধ্যে পণ‍্যবাহী ট্রাকের সংখ্যাই বেশি। গণপরিবহনগুলোকে (বাস) ফেরি পেতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগলেও প্রতিটা পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে ১ থেকে ২ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এতে গাড়িতেই নির্ঘুম রাত কেটে যাচ্ছে চালক ও সহযোগীদের। অপরদিকে, মহাসড়কের পাশে খাওয়াদাওয়া ও টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়ছেন তাঁরা। গাড়ি ছেড়ে বাইরে অন্য কোথাও যেতেও পারছেন না। 

যশোর থেকে তুলাভর্তি কাভার্ড ভ্যান (ট্রাক) নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন চালক নবাব আলী। তিনি জানান, গত শনিবার সন্ধ্যার পর দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েন। সেখান থেকে গতকাল রোববার ভোরে ঘাটে এসে আজ বেলা দেড়টার দিকে ঘাট থেকে ১ কিলোমিটার দূরে ছিলেন তিনি। প্রায় ২ দিন সিরিয়ালে থেকেও ফেরির দেখা পাননি। এখনো ফেরি পেতে আরও ৭-৮ ঘণ্টা লাগবে বলে জানান তিনি। 

বেনাপোল থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ট্রাকের চালক হুসাইন খান বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ঘাট এলাকায় এসেছি। ঘাট এলাকার লঞ্চ ঘাট টার্নিং পর্যন্ত পৌঁছতে প্রায় এক দিন সময় লেগেছে।’ 

ট্রাকচালক আরও বলেন, ‘এটা কোনো ব্যবস্থা হলো! এখন আর কুলাতে পারছি না। ফেরিতে উঠতে আর কয় ঘণ্টা সময় লাগবে সেটাই ভাবছি। আমার পেছনে আরও ৫ শতাধিক ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান আটকে আছে। ফেরি অনেক দেরিতে ঘাটে আসতেছে। ৩০-৪০ মিনিট পর গাড়ি কচ্ছপ গতিতে আগাচ্ছে। দ্রুত ঘাট ও ফেরি বৃদ্ধির দাবি জানাচ্ছি।’ 
 
ফেরিঘাট সড়কের পুলিশ বক্সের সামনে যানজটে আটকা চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা পূর্বাশা পরিবহনের চালক জিয়া ইসলাম বলেন, ‘কিছুদিন আগেও ঘাটে এসে কোনো যানজট না পেয়েই ফেরিতে উঠতে পারতাম। ট্রাকের সিরিয়াল এবং গণপরিবহনের সিরিয়াল আলাদা থাকত। কিন্তু কিছুদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি ট্রাকের সিরিয়াল আলাদা থাকলেও দুই লাইন করে বাসের সঙ্গেই ট্রাকের সিরিয়াল করা হচ্ছে। এতে করে যাত্রীরা সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে পারেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আগের ব্যবস্থা করার দাবি জানাচ্ছি।’ 
 
ঝুঁকি নিয়ে ফেরিতে উঠানামা করছেন যাত্রীরাবরিশাল থেকে সাকুরা পরিবহনে আসা আশরাফুল আলম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘মাঝেমধ্যেই ঢাকা যেতে এই রুট ব্যবহার করি। আগে বাসের লাইনে কোনো ট্রাক দেখতাম না। কিন্তু আজ বাসের লাইনে ট্রাক দেখে অবাক হচ্ছি।’ 
 
গোল্ডেন লাইনের দৌলতদিয়া ঘাট তত্ত্বাবধায়ক আবুল কালাম বলেন, আগে বাস এবং ট্রাকের আলাদা সিরিয়াল থাকত। কিন্তু এখন তা আর থাকে না। এতে করে যাত্রীদের আলাদা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। 

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ার ৭টি ঘাটের মধ্যে চালু রয়েছে ৪টি। বাকি ১ ও ২ নম্বর ঘাট দুই বছর আগে নদীভাঙনের কবলে পড়ায় এখনো চালু হয়নি। এর সঙ্গে নতুন করে নাব্যতা সংকটের কারণে ৬ নম্বর ঘাটটি এক মাস থেকে বন্ধ আছে। বাকি ৪টি ঘাট দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। এ ছাড়া আরও একটি ঘাট রো রো ফেরির জন্য প্রস্তুত করা হবে। সেই সঙ্গে বাংলাবাজার-শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে ওই নৌপথের গাড়ি এই নৌপথ দিয়ে পারাপার হচ্ছে। এসব কারণে বাড়তি চাপ থাকছে। 

ব্যবস্থাপক আরও বলেন, একটি বড় পন্টুন বসলে সমস্যা কিছুটা কমবে। দৌলতদিয়া পাটুরিয়া নৌরুটে ছোটবড় মোট ১৫টি ফেরি চলাচল করছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত