Ajker Patrika

 ‘রাইতে ঢাকায় চলতে সাহস লাগে, ক্ষমতা লাগে’

আশিকুর রিমেল
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২১, ১৯: ৩৯
 ‘রাইতে ঢাকায় চলতে সাহস লাগে, ক্ষমতা লাগে’

‘একটা মেয়ে হনহন করে হাঁটতে হাঁটতে আসি কয়: মামা, ওই ছেলেগুলা আমারে ডিস্টাব করতাছে। আমি কইলাম: আমার পাশে দাঁড়ান। দেখি, ওই বাড্ডা এলাকার কয়ডা ছেলে কাছে আইসলো। আমার কাছ থাকি সিগারেট নিল। জিজ্ঞাসা কইরলাম, মাইয়াডারে ডিস্টাব করতাছো ক্যা? হেরা কইলো: কই, না তো মামা। কইলাম, না হইলেই ভালো! এরপর ছেলেগুলা চইল্যা গেল। কিছুক্ষণ পর মেয়েটাকে সিএনজিতে তুইলা দিল্যাম।’

বছর দুয়েক আগে থেকে রামপুরা ব্রিজে শুধু রাতে পান-সিগারেটের দোকান নিয়ে বসেন সিরাজগঞ্জের সানি হোসেন (৪৫)। আঞ্চলিক টানে বলা কথাগুলো তাঁর। কয়েক মাস আগেই লকডাউনে রাতের রামপুরা ব্রিজে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন তিনি।

সানি বলছিলেন, ‘যেই হোক না ক্যা, রাইতে ঢাকা শহরে চলাফেরা করার জন্যে সাহস লাগে, ক্ষমতা লাগে।’ বললেন, ‘এই যে হাতিরঝিল দেখতেছেন, যান একাই একবার ঘুইরা আসেন। কোত্থেকে পোলাপাইন আইসা আপনার মোবাইল, মানিব্যাগ কাইড়া নিবে, বুজতেই পারবেন না।’

সানির আত্মবিশ্বাসী কথাটা শুনে শ্রোতার সাহস একটু নড়ে গেল। মনে হতে লাগল, সত্যিই রাতের ঢাকায় চলতে সাহস, না-হয় ক্ষমতা অবশ্যই লাগে! কিন্তু কেমন সেটা?

আপনার তো খুব সাহস, ক্ষমতা মনে হচ্ছে—জিজ্ঞাসা করতেই সানি বলেন, ‘না রে ভাই। ২০ বছর ওই যে টিভি সেন্টারের উল্টা দিকে মুক্তির গলিতে থাকি। বাড্ডা থেকে এই এলাকার ছেলেপেলে হইলে চিনি, হেরাও আমাক মোটামুটি চেনে। তবু সব সময় এগুলা চেনা-পরিচয় দিয়া কাম হয় না।’

এরপর শুরু করলেন রাতের ঢাকার আরেক অভিজ্ঞতার গল্প, লকডাউনের সময়েরই। তাঁর জবানিতে, ‘সন্ধ্যার পর ব্রিজের ওপর ৮/১০টা পোলাপাইন বইস্যা গল্প করতাছে। বয়স পনেরো-ষোলো হইবো। কিছু একটা ধান্দায় এরা বইছে বোঝা যাইতাছে। কিন্তু হেগোরে চিনি না। কিছুক্ষণ পর দুইটা ছেলে ব্রিজের ওপর দিয়া সাইকেল নিয়া যাইতাছে। আর এদের মধ্যে থেইকা দুইজন দৌড়াইয়া গিয়া সাইকেল থামাইলো, থামায়া কয়, “তুই ইনফরমার, তুই ইনফরমেশন দিছস”—কইয়া মাইর শুরু করল। ওদের পরপরই বাকি পোলাগুলাও গিয়া মাইর শুরু করল। ওই দুইজন তো খালি কইতাছে, “ভাই আপনারা কারা ভাই? মারতাছেন ক্যা? আমরা কোনো ইনফরমার না।” মাইর খাইয়া একটা পোলা দৌড়ায়া পলাইল। আরেকটারে সাইকেলটাসহ ওই দিকে নিয়া গেল।’

ছেলেগুলো কোনো নেশা করেছিল বলে মনে করেন সানি। ওই অবস্থায় তাঁর নিজেরও সাহস হয়নি প্রতিবাদ করার। তিনি বলতে থাকেন, ‘পোলাডারে চোখের সামনে নিয়া গেল। সেদিন কিচ্ছু কইতে পারি নাই।’ এ সময় তাঁর মুখে যেন ভেসে ওঠে পরাস্ত মানুষের অবয়ব! এতক্ষণ পর্যন্ত ধরে রাখা সাহসী স্বরটা নেমে গিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাসের সঙ্গে মিলে গেল।

২০ বছর আগে ঢাকায় এসেছিলেন সানি হোসেন। চাকরি করতেন বাড্ডা এলাকার একটি গার্মেন্টসে। ২০১৬ সালে লিভারের অসুখ ধরা পড়ে তাঁর, ফলে চাকরিটা আর করতে পারেননি। মাঝখানে দুই বছর চালিয়েছেন শরবতের দোকান। ব্রিজের এক পাশে সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁকে এই শহর যে অভিজ্ঞতা দিয়েছে, তা মোটেই ‘প্রীতিকর’ নয়।

তিন মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে টেনেটুনেই সংসার চলে সানির। গত ঈদে সাড়ে তিন কেজি গরুর মাংস কিনেছিলেন। তার কিছুটা এখনো পাশের বাড়ির ফ্রিজে আছে। সেখান থেকেই মাঝে মাঝে আমিষের চাহিদা মেটে। নিজের শরীরটাও বেগড়বাই করে, অসুখে ভুগছেন বেশ কিছুদিন হলো।

জীবনে অভাব-অনটন, না-পাওয়া নিয়ে দুঃখ আছে তাঁর। তবে এর মাঝেও আরেকটা ভীষণ অসহায়ত্ব বুকে চেপে আছেন তিনি। আর তা হলো, ‘পোলাডারে চোখের সামনে নিয়া গেল। সেদিন কিচ্ছু কইতে পারি নাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ধাক্কায় রাস্তায় ট্রলির নিচে পড়ে যুবকের মৃত্যু

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন পথচারী মহিদুল ইসলাম (৪০)। হঠাৎ মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি তাঁকে ধাক্কা মারলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি দ্রুতগামী ট্রলি তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান মহিদুল। আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মহিদুল উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কৈগাড়িপাড়া গ্রামের পোকার ইসলামের ছেলে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারী পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই মহিদুলকে ধাক্কা দেন অজ্ঞাতপরিচয় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। এ সময় চলন্ত একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ বিষয়ে নিহতের পরিবার কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় রেলসেতুর নিচে নারীর লাশ, ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রেলসেতুর নিচ থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর মাথায় আঘাতের ক্ষত রয়েছে। পুলিশ ও তাঁর স্বজনদের ধারণা, ধর্ষণের পর ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন রেলসেতুর নিচ থেকে ৫২ বছর বয়সী ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। নিহত নারী উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী ও সন্তান রয়েছে।

জানা গেছে, আজ সকাল ৬টার দিকে রেলসেতুর নিচে এক নারীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে খবর পেয়ে ওই নারীর ছেলে এসে তাঁর লাশ শনাক্ত করে। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

নিহত নারীর ছেলে বলেন, ‘মা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। কয়েক দিন আগে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার সকালে গোয়ালন্দ রেলস্টেশনে মাকে দেখা গিয়েছিল বলে জানা গেছে। এরপর সেখানে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে লাশের সন্ধান পেয়ে কুমারখালী এসে মাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ। সে জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করা নারীর মাথায় আঘাতের ক্ষত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে এ বিষয়ে এখনো মামলা হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে মামুন-রিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান রিটন। ছবি: সংগৃহীত
সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান রিটন। ছবি: সংগৃহীত

সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ১৪ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাবেক সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুনকে সভাপতি করা হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে নগর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মাহাফুজুর রহমান রিটনকে।

আজ শনিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটির কথা জানানো হয়।

আংশিক কমিটিতে নজরুল হুদাকে সিনিয়র সহসভাপতি এবং আসলাম সরকার, ওয়ালিউল হক রানা, আলী আশরাফ মাসুম সফিকুল ইসলাম সাফিক, আবুল কালাম আজাদ সুইট, মুক্তার হোসেন ও জয়নাল আবেদিন শিবলীকে সহসভাপতি করা হয়েছে।

এ ছাড়া বজলুল হুদা মন্টুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রবিউল ইসলাম মিলুকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং এরশাদ আলী ঈশা ও মাইনুল আহসান পান্নাকে সদস্য করা হয়েছে। পরবর্তীকালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১০ আগস্ট মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ২ মাস ২২ দিন পর আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আজ বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সালমান শাহর ভক্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সালমান শাহর ভক্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তরুণ প্রজন্মের আইডল চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তাঁর হত্যার রহস্য এখনো উন্মোচন করা হয়নি।

বক্তারা জোর দাবি জানান, এখন সময় এসেছে প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা এবং কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

চুয়াডাঙ্গা সালমান শাহ ভক্তকুলের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন নাফিসা সুরভি। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিরণ উর রশিদ শান্ত প্রধান অতিথি হিসেবে এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। এ সময় সালমান শাহর বিপুলসংখ্যক ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় এই চিত্রনায়ককে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাড়িতে কৌশলে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তাঁর মা নীলা চৌধুরী মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করেন। এই হত্যা মামলায় সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত