Ajker Patrika

আটক ছিনতাইকারীকে অটোরিকশাচালকের হাতে ছেড়ে দিল পুলিশ, পরে মৃত্যু

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) সংবাদদাতা
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অটোরিকশা ছিনতাইকারী যুবককে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দিয়েছিলেন এলাকাবাসী। পরে চিকিৎসার নামে অটোরিকশা ও বাড়ির মালিকদের হাতেই আবার ওই যুবককে তুলে দেয় পুলিশ। পরদিন গতকাল শনিবার বাড়িওয়ালার ঘরের ভেতর থেকে ওই যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়।

নিহত ব্যক্তি গাইবান্ধা সদর উপজেলার মধ্যপাড়া এলাকার আব্দুল রাজ্জাকের ছেলে নূর ইসলাম (৩৫)। তিনি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই মিলগেট এলাকায় বাসাভাড়া নিয়ে থাকতেন।

এলাকাবাসী, পুলিশ, অটোরিকশা ও বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নূর ইসলামসহ চারজন যাত্রীবেশে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকা থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া নেন। অটোরিকশাচালক রনিকে পাশের টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই ক্যাডেট কলেজ এলাকায় মেলায় যেতে বলেন তাঁরা। সেখানে যাওয়ার পর আবার চন্দ্রার দিকে যাওয়ার কথা বলে কিছু সময় অপেক্ষা করতে বলেন ওই ছিনতাইকারীরা। কিছুক্ষণ পর তাঁরা যাত্রীবেশে আবারও ওই অটোরিকশায় ওঠেন।

কিছু দূর আসার পর ছিনতাইকারীরা কৌশলে সহজ রাস্তার কথা বলে দেওয়াবাজার-মহরাবহ-চন্দ্রা সড়ক দিয়ে দ্রুত যেতে বলেন। সেই পথ ধরে আসার সময় মহরাবহ বাজারের আগে একটি নির্জন স্থানে অটোরিকশাচালককে দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেন ছিনতাইকারীরা। এ সময় স্কচটেপ পেঁচিয়ে তাঁর মুখমণ্ডল ও হাত-পা আটকে তাঁকে সড়কের পাশে ডোবায় ফেলে দেন। পরে ওই ডোবার কাদায় তাঁকে গেড়ে তাঁর অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যান ছিনতাইকারীরা।

পরে চালক হামাগুড়ি দিয়ে ওই সড়কে আড়াআড়ি শুয়ে একটি সিএনজির গতিরোধ করেন এবং বিস্তারিত ঘটনার বিবরণ দেন। তখন ওই সিএনজিচালক ও অটোরিকশাচালক ধাওয়া দিয়ে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ছিনতাইকারী সন্দেহে এক যুবককে আটক করেন। তবে অন্য ছিনতাইকারীরা পালিয়ে যান। পরে আটক নূর ইসলামকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে খবর দেন এলাকাবাসী। খবর পেয়ে পুলিশ ও অটোরিকশার মালিক তাঁর বাড়িওয়ালাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং অটোরিকশাটি উদ্ধার করেন।

পরে আহত ছিনতাইকারীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান এলাকাবাসী। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে যান অটোরিকশামালিক কবির সিকদার ও তাঁর বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের। কিন্তু থানা–পুলিশ উল্টো ভয়ভীতি দেখিয়ে আহত যুবককে চিকিৎসা দিতে বলেন তাঁদের। পরে পুলিশের কথামতো তাঁকে আবার ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু গভীর রাত হওয়ায় অটোরিকশাচালক ও বাড়িওয়ালা ওই যুবককে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাঁরা তাঁকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন।

পরদিন শনিবার সকালে বাড়িওয়ালার ঘরে টয়লেটে যেতে দেওয়া হয় নূর ইসলামকে। তখন তিনি ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে ওই দিন দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।

অটোরিকশার মালিক কবির হোসেন বলেন, ‘ওই ছিনতাইকারীকে থানায় নিয়ে গেলে তাকে না রেখে তার চিকিৎসা করাতে বলে পুলিশ। পুলিশের কথায় তাকে নিয়ে আবার হাসপাতালে নিলে চিকিৎসার একপর্যায়ে রাত ৩টার দিকে অন্য হাসপাতালে রেফার্ড করে। পরে আমরা তাকে নিয়ে আসি। আর পরের দিন সকালে ওই ছিনতাইকারী বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে আমার ভাড়াকক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।’

বাড়িওয়ালা আব্দুল কাদের বলেন, ‘বাধ্য হয়ে ওই ছিনতাইকারীকে এলাকায় নিয়ে এলে সে আমাদের বাড়িতে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করে।’

কালিয়াকৈর থানার এসআই হাবিবুর রহমান বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর তাঁর মৃত্যুর সঠিক তথ্য জানা যাবে। পুলিশের গাফিলতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এর উত্তর ওসি স্যার দেবেন।

এ ব্যাপারে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ বলেন, একটু পর এসপি স্যার থানা পরিদর্শনে আসবেন। তিনি সাংবাদিকদের পরে থানায় যেতে বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত