Ajker Patrika

পাহাড় কেটে পুকুর ভরাট

  • ইউপি ভবন সম্প্রসারণে চলছে পুকুর ভরাট।
  • পুকুর ভরাটের মাটি আসছে পাহাড় কেটে।
  • পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম ও ফটিকছড়ি প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭: ৫৯
বিশাল পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে একটি চক্র। সেই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়াছড়ি ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
বিশাল পাহাড় কেটে সাবাড় করেছে একটি চক্র। সেই মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে পুকুর। সম্প্রতি চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার হারুয়াছড়ি ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজারসংলগ্ন এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাহাড়-টিলা কাটা নিষিদ্ধ। পানির উৎস জলাধার-পুকুর ভরাটও নিষিদ্ধ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ইকবাল হোসেন চৌধুরী দুই নিষেধাজ্ঞাই অমান্য করছেন। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন সম্প্রসারণের জন্য পুকুর ভরাট করছেন তিনি। আর সে কাজ করতে মাটির জোগান আসছে পাহাড় কেটে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট অপেক্ষাকৃত উঁচু পাহাড়-টিলার জায়গা কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পানির উৎস ভরাটও নিষিদ্ধ। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এবং প্রশাসনের কোনো অনুমোদন ছাড়াই ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়িতে প্রকাশ্যে পাহাড় কাটা এবং পুকুর ভরাট করলেও গতকাল রোববার শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের শান্তিরহাট বাজার থেকে রাঙ্গাপানি চা-বাগানে যাওয়ার পথে হাতের ডানে ৩০০ ফুট গেলেই বিশাল এক পাহাড়। সেখানে একাধিক এক্সকাভেটর ব্যবহার করে শ্রমিক দিয়ে চলছে পাহাড় কাটা। চেয়ারম্যানের নির্দেশে স্থানীয় বাসিন্দা বদি সওদাগরের নেতৃত্বে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে পাহাড়ের অনেকটা কেটে সাবাড় করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বদি সওদাগর কোনো ধরনের সদুত্তর না দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। পরে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি কল বারবার কেটে দেন। একপর্যায়ে বিরক্তি প্রকাশ করে এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল চৌধুরী এলাকায় ক্ষমতাধর হয়ে ওঠেন। তিনি জামায়াত সমর্থিত হিসেবে পরিচিত। তবে দলীয় কোনো পদে নেই তিনি। ইউপি ভবন সম্প্রসারণ করতে তিনি পরিষদেরই বড় একটি পুকুর ভরাট করছেন। এ জন্য কাটছেন পাহাড়।

উপজেলা পরিবেশ সাংবাদিক সমিতির সভাপতি এম এস আকাশ বলেন, ‘ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পুকুর পানি নিষ্কাশন ও অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুকুর ভরাটের কারণে জলাধার নষ্ট হওয়ায় এই এলাকায় অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলাও দুঃসাধ্য হবে।’

জানতে চাইলে চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতিকর কোনো কাজ আমি করছি না। ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব পাহাড় কাটছি সম্প্রসারিত ইউপি ভবন নির্মাণের জন্য। এলাকার উন্নয়ন কাজের জন্য পাহাড় কাটা তো অপরাধ নয়। বিষয়টি ইউএনওর নলেজে দিয়েছি।’

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না। পাহাড় কাটা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পুকুর ভরাটও নিষিদ্ধ। বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকেই শুনেছি। ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড় কাটা এবং পুকুর ভরাটের বিষয়টি জানি না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য অধিদপ্তরের কোনো অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বিষয়টি দ্রুত সরেজমিন দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত