Ajker Patrika

যুদ্ধবিরতির পর ইরানে দমন-পীড়নের নতুন ঢেউ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ জুন ২০২৫, ২০: ৫৪
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতির পর ইরানে দমন-পীড়নের এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। যুদ্ধ সাময়িকভাবে থেমে গেলেও ইসলামিক রিপাবলিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিশ্লেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা সতর্ক করেছেন, সামরিক যুদ্ধের পাশাপাশি এখন ইরান অভ্যন্তরীণ ‘নিরাপত্তা শুদ্ধি অভিযানে’ নেমেছে। এরই অংশ হিসেবে কেরমানশাহ প্রদেশে ১১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রদেশটির প্রধান কৌঁসুলি হামিদরেজা কারিমি জানান, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে এক ইউরোপীয় নাগরিককে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক করা হয়েছে। অল্প কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ আনা হয়েছে, তবে বেশির ভাগের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারের অভিযোগ রয়েছে।

সরকারি সূত্র জানিয়েছে, গত কয়েক দিনে অন্তত তিনজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। বিভিন্ন শহরে আরও ডজনখানেক মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাঁদের অপরাধ হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কার্যক্রম অথবা সন্দেহজনক যোগাযোগকে দায়ী করা হয়েছে।

‌ইউরোপীয় নাগরিকদের ওপর নজরদারি

অন্তত চারজন ইউরোপীয় নাগরিক গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার আইআরজিসি-ঘনিষ্ঠ তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানায়, হরমোজগান প্রদেশে এক ইউরোপীয় নাগরিককে ‘পর্যটকের ছদ্মবেশে’ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার ফার্স নিউজ জানায়, হামেদান প্রদেশে আরেক ইউরোপীয় নাগরিককে ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এর আগে, রোববার কেরমানশাহ প্রদেশ থেকে আরও একজন ইউরোপীয়কে একই অভিযোগে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মেহর নিউজ।

এ ছাড়া ২০ জুন ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, মার্কাজি প্রদেশে এক ‘ইহুদি-জার্মান’ নাগরিককে সেনাবাহিনীর সংবেদনশীল ও পারমাণবিক এলাকাগুলোর তথ্য সংগ্রহের অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও আইনি পরিবর্তন

এর মধ্যেই ইরানের পার্লামেন্ট গোয়েন্দা ও অনুপ্রবেশসংশ্লিষ্ট মামলাগুলোতে দ্রুত বিচার ও কঠোর সাজা নিশ্চিত করতে নতুন আইন পাস করেছে। বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র জানান, ‘আগের আইনে অনেক গ্রেপ্তার ব্যক্তিকে বিচার করা সম্ভব হতো না। এখন আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারব।’

এ ছাড়া, গত কয়েকদিনে অন্তত তিনজনকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

কাদের টার্গেট করা হচ্ছে?

গ্রেপ্তারকৃতদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে কথাবলার অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেককে ‘রাষ্ট্রবিরোধী প্রচারণা’, ‘সামাজিক বিশৃঙ্খলা’ এবং ‘বিদেশি যোগাযোগ’-এর অভিযোগে আটক করা হয়েছে।

‌ভবিষ্যত কী হতে পারে?

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ভেতরে ইসরায়েলি গুপ্তচরদের অনুপ্রবেশ ইরান সরকারকে অস্থির করে তুলেছে। যুদ্ধ সাময়িকভাবে থামলেও সরকারের নজর এখন দেশের ভেতরের ‘প্রতিপক্ষ’দের ওপর।

দোহা ইন্সটিটিউটের সিকিউরিটি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহান্নাদ সেলুম বলেন, এই মুহূর্তে ইরান প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাব নিচ্ছে। তারা চাচ্ছে নিজেদের ভিতরে শক্তি প্রদর্শন করতে।

আন্তর্জাতিক মহলে ইরানের এই দমন-পীড়নের ঘটনাগুলো নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও, ইরান সরকারের বক্তব্য স্পষ্ট—এই সময়ে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বজায় রাখাই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।

সর্বপোরি, তেহরানে নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরে ইসরায়েলি অনুপ্রবেশের খবরে শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। যুদ্ধের মাঠে সাময়িক বিরতি মিললেও ইরানের ভেতরে দমন-পীড়ন যেন নতুন মাত্রা পাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত