Ajker Patrika

পঞ্চগড় সদর হাসপাতাল

৫৭ কোটির ভবন ফাঁকা, রোগীরা বারান্দায়

  • জনবল, আসবাব ও যন্ত্রপাতির অভাবে চালু হয়নি নতুন ভবন।
  • চিকিৎসককে সামলাতে হচ্ছে ৩ গুণ বেশি রোগী।
  • ফার্মাসিস্টদের বিরুদ্ধে রোগী দেখার অভিযোগ।
ফাহিম হাসান, পঞ্চগড়
নতুন বহুতল ভবন চালু না হওয়ায় পুরোনো ভবনে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে হচ্ছে রোগীদের। সম্প্রতি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা
নতুন বহুতল ভবন চালু না হওয়ায় পুরোনো ভবনে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিচ্ছে হচ্ছে রোগীদের। সম্প্রতি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের স্বাস্থ্য খাতের সংকট যেন কাটছেই না। হস্তান্তরের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় জনবল ও জিনিসপত্রের অভাবে সেবা চালু হয়নি পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যার নতুন বহুতল ভবনে। শূন্য ভবনে জমছে ধুলাবালু।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, জনবল, আসবাব ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে ওই ভবনে চিকিৎসাসেবা চালু করা যাচ্ছে না। এ কারণে পুরোনো ভবনে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি রোগীর সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এখন ১০০ শয্যায় হাসপাতালটিতে চিকিৎসককে সামলাতে হচ্ছে ৩ গুণ বেশি রোগী। সেবা নিতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। বছরের পর বছর চিকিৎসকের দাবিতে আন্দোলন করে এলেও তার সুফল এখনো মেলেনি।

জানা গেছে, ১০০ শয্যার পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৭ জন চিকিৎসক পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র ১৬ জন। জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্স ৭টি পদের বিপরীতে ২ জন ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট ১১টি পদের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৪ জন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের ভেতরে শয্যার তিন গুণ রোগী ভর্তি হয়ে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। জায়গা না পাওয়ায় বারান্দা ও মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে তাঁদের। এক বেডে দুজন রোগীও চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা একরামুল হক বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে জায়গা নেই। আধুনিক নাম থাকলেও আধুনিকতার ছোঁয়া নেই এই হাসপাতালে। আমি ৩ দিন মেঝেতে ছিলাম, এরপর বেড পাইছি।’

বহির্বিভাগে আগে দৈনিক ৫০০-৬০০ রোগী ভর্তি থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়ে ১০০০-১২০০-তে। স্থানীয় কয়েকজন চিকিৎসককে এখানে বিরাট অঙ্কের রোগীর চাপ সামলাতে হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগী থাকায় ফার্মাসিস্টরাও দেখছেন রোগী, দিচ্ছেন চিকিৎসা।

বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা রাজিব হাসান বলেন, ‘আমি কিছুদিন ধরে অসুস্থ, তাই ডাক্তার দেখাতে এসেছি হাসপাতালে। এখানে এসে দেখি ডাক্তার দেখতেছে না রোগী। রোগীকে দেখতেছেন ফার্মাসিস্টরা। কোথাও কোথাও ফার্মাসিস্ট নেই। একটা সরকারি হাসপাতালের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আমরা কোথায় যাব।’

হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পঞ্চগড় ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সাড়ে ৬ বছর পর ২০২৪ সালের জুন মাসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয় নতুন ভবনটি। হস্তান্তরের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও সেবা চালু করা হয়নি ২৫০ শয্যার নতুন বহুতল ভবনে। প্রয়োজনীয় জনবল ও জিনিসপত্রের অভাবে নতুন ভবনে সেবা স্থানান্তর করা যাচ্ছে বলে দাবি স্বাস্থ্য বিভাগের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান বলেন, জনবল ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র না থাকায় এখনো নতুন এই ভবনটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। জনবল ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত