Ajker Patrika

ঝুঁকিতে সুলতানা কামাল সেতু, দুর্ঘটনার আশঙ্কা

  • সেতুটির গুরুত্বপূর্ণ অংশের কয়েকটি এক্সপানশন জয়েন্টের রাবার পুরোপুরি উঠে গেছে।
  • সেতুতে থাকা বাতি না জ্বলার কারণে প্রায়ই ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটে।
  • ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুটির বিভিন্ন অংশ দুলে ওঠে।
  • দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করার দাবি।
জহিরুল আলম পিলু, কদমতলী (ঢাকা) 
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৭: ৪৬
সুলতানা কামাল সেতুর কয়েক স্থানে উঠে গেছে এক্সপানশন জয়েন্টের রাবার। এতে যানবাহনের চাকা পিছলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
সুলতানা কামাল সেতুর কয়েক স্থানে উঠে গেছে এক্সপানশন জয়েন্টের রাবার। এতে যানবাহনের চাকা পিছলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঢাকার ডেমরা ও নারায়ণগঞ্জের তারাবর সংযোগকারী সুলতানা কামাল সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সেতুর গুরুত্বপূর্ণ অংশের কয়েকটি এক্সপানশন জয়েন্টের রাবার পুরোপুরি উঠে গেছে। এ ছাড়া জয়েন্ট ধরে রাখার চাপযুক্ত কংক্রিট ঢালাই নষ্ট হয়ে ইট-পাথর-বালু বের হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভারী যানবাহন চলাচলের সময় সেতুর বিভিন্ন অংশ দুলে ওঠে। রেলিং ও ফুটপাতের কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে বহু আগেই।

সেতুটির বেশির ভাগ বাতি অকেজো হওয়ায় রাতে চলাচলে বিপাকে পড়তে হয় পথচারীদের। সবকিছু মিলিয়ে সেতুর যে অবস্থা, তাতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

জানা গেছে, ২০০৬ সালে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) তত্ত্বাবধানে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১০ সালের মাঝামাঝি। প্রায় ১ হাজার ৭২ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ মিটার প্রস্থের সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয় ৭৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। ২০১০ সালের জুন মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে সেতুর উদ্বোধন করেন। সেতুটি নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজধানী ঢাকার ডেমরা এলাকার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ জেলার তারাবর মধ্যে দ্রুত সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত করা। তবে দেড় দশক না যেতেই সেতুটি এখন রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এই সেতু দিয়ে চলাচল করছে ছোট-বড় কয়েক হাজার যানবাহন। হেঁটে চলাচল করছেন পথচারীরা। যানবাহন চলাচলের সময় সেতুর ভাঙা অংশটি কেঁপে উঠতে দেখা যায়। সেতুর অনেক স্থানে ফাটলও দেখা গেছে।

ওই সেতু দিয়ে চলাচলরত ট্রাকচালক জামাল বলেন, ‘প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই সেতু পার হই। এক্সপানশন জয়েন্টের রাবার উঠে যাওয়ায় ট্রাকের টায়ার পিছলে যায়, ব্রেক ঠিকমতো কাজ করে না। সেতুটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।’

সেতু দিয়ে নিয়মিত চলাচলকারী পোশাককর্মী শিউলীসহ কয়েকজন জানান, ফুটপাতের অনেক অংশ ভেঙে গেছে। যখন ভারী যানবাহন চলাচল করে, তখন ভাঙা অংশগুলো প্রচণ্ড কেঁপে ওঠে। সেতুতে থাকা বাতির বেশির ভাগই অকেজো। রাতের অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে হাঁটতে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সেতুর ওপরের বেশির ভাগ সোডিয়াম বাতি না জ্বলার কারণে প্রায়ই ছিনতাই ও ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটে। কয়েক দিন আগেও এক নারীর ব্যাগ ছিনতাই করে দুই মোটরসাইকেল আরোহী পালিয়ে যায়।

স্থানীয় আরেক বাসিন্দা শাজাহান বলেন, রাতে সেতুর সোডিয়াম বাতি জ্বলে না। অন্ধকারে ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ও যানবাহন চলাচল করে। সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলের সময় এমনভাবে কম্পন হয় যেন, সেতুটি এখনই ভেঙে পড়বে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ সেতুটির এই দশা। এটি দ্রুত সংস্কার করা জরুরি, তা না হলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

এ বিষয়ে কথা হলে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেটা সার্কেল) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. খালেদ শাহেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সেতুটির ব্যাপারে কয়েক দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিং করব।

এরপর সেতুর ত্রুটিপূর্ণ অংশগুলো দ্রুত সংস্কার করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত