Ajker Patrika

সবুজ ঘাস-খড়ে পালিত পাহাড়ি গরু, তবু দুশ্চিন্তা...

আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) 
উপজেলার একসত্যাপাড়ায় মো. আনোয়ার হোসেনের খামারে সবুজ ঘাস-খড়ে মোটাতাজা হচ্ছে লাল ষাঁড় ও বলদ। গত শুক্রবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার একসত্যাপাড়ায় মো. আনোয়ার হোসেনের খামারে সবুজ ঘাস-খড়ে মোটাতাজা হচ্ছে লাল ষাঁড় ও বলদ। গত শুক্রবার সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সবুজ ঘাস ও খড় খাইয়ে খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে কোরবানির উপযোগী লাল ষাঁড় ও বলদ মোটাতাজা করছেন খামারিরা। এসব গরুর মাংসে চর্বি কম, স্বাদ বেশি হওয়ায় সমতলের কোরবানিদাতাদের কাছে পাহাড়ি পশুর কদর বেশি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং সড়কপথে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় এবার বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারিরা।

উপজেলার ১৫-১৬টি বড়, ৩০-৩২টি মাঝারি ও ছোট খামার এবং ১৫০-১৭০টি পরিবারে গড়ে ২৮০০-৩০০০ গরু-ছাগল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশুর খাদ্যতালিকায় ৭০ শতাংশ সবুজ ঘাস ও খড় এবং ৩০ শতাংশ খৈল, ভুসি। এতে গরুর শরীর হয় তেলতেলে, মাংস হয় সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর।

সরেজমিনে একসত্যাপাড়া, মুসলিমপাড়া, ডাইনছড়ি ও তিনটহরী এলাকায় দেখা গেছে, গৃহস্থ ও খামারিরা পশুদের শেষ পর্যায়ের পরিচর্যায় ব্যস্ত।

একসত্যাপাড়ার খামারি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৭০ শতাংশ প্রাকৃতিক সবুজ ঘাস ও খড়ে আমি দুটি দেশি বলদ ও একটি শাইওয়াল ষাঁড় মোটাতাজা করছি। বিগত কয়েক বছর ধরে ভেজাল খাদ্য পরিহার এবং চিকিৎসকের পরামর্শে সবুজ ঘাস চাষে গরু লালন-পালনে পরিচিত লাভ করেছি। ফলে কোরবানির গরু বাজারে তুলতে হয় না। আগেভাগে বাড়িতে এসে সমতলের কোরবানিদাতারা নিয়ে যান। এবার একটি ষাঁড় (শাইওয়াল), দুটি দেশি লাল বলদ আছে। ওজন গড়ে বলদ (৫৮০ ও ৬৫০ কেজি) এবং ষাঁড় (৬২০) কেজি লাইফওয়েট। সরাসরি বাড়িতে এসে লালন-পালনের দৃশ্য স্বচোখে দেখে গরু কেনার সুযোগ রয়েছে।’

একই গ্রামের মো. কামাল হোসেন ও মো. আবুল কালাম বলেন, ‘কোরবানির গরু লালন-পালনে আমরা বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হওয়ায় যত গরুই মোটাতাজা করি, হাটে নিতে হয় না। এবারও দুই পরিবারে ২০-২২টি দেশি ও শাইওয়াল ষাঁড় ও কয়েকটি দেশি বলদ বিক্রির যোগ্য হয়েছে।’

মুসলিমপাড়ার মো. হুমায়ন কবির দীর্ঘদিন ধরে গরু মোটাতাজা ও গরুর ব্যবসায় জড়িত। তিনি এবার ৯টি শাইওয়াল ষাঁড় প্রস্তুত করেছেন। লাইফওয়েটে প্রায় প্রতিটি ৮০০-৯০০ কেজি।

আনু মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড়ে সবুজ ঘাস, খড়ের সুবিধা থাকায় গরু মোটাতাজায় কিছুটা স্বস্তিদায়ক। বাজার থেকে ৩০ শতাংশ খৈল, ভুসির পাশাপাশি ৭০ শতাংশ সবুজ ঘাস ও খড়ে গরু কোরবানির উপযোগী করা হয়। বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে আমি দেশি গরু লালন-পালন করি বেশি।’

তবে বিক্রি নিয়ে খামারিদের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে। স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী মো. আমির হোসেন বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তন এবং সড়কে হাইজেকারের লুটপাটের ভয়ে শহরের ব্যবসায়ী বা কোরবানদাতারা এবার দূরবর্তী জায়গায় গরু কিনতে আসছে না! ফলে এবার কোরবানির গরু নিয়ে খামারিদের ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে।’

কোরবানির বাজার ইজারাদার সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে উপজেলার তিনটহরী ও মানিকছড়ি গরুর বাজার শুরু হলেও এখনো বাজার জমে ওঠেনি। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ এলাকাছাড়া হওয়ায় বড় গরু নিয়ে এবার খামারিদের ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে! এ ছাড়া শহরের পাইকার বা কোরবানিদাতারা রাস্তাঘাটে ছিনতাইয়ের ভয়ে জনপদে আসতে চান না। শনি, রবি এবং পরবর্তী শনি ও রোববার বেচাকেনার ধুম পড়বে।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তফা কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাহাড়ের নির্ভেজাল সবুজ ঘাস ও খড়ে গরু লালন-পালন অনেকটা সহজ। ৭০ শতাংশ সবুজ ঘাস, খড় ও ৩০ শতাংশ খৈল, ভুসি খাওয়া গরুর শরীর তেলতেলে হয়। মাংসও তুলনামূলক স্বাদ বেশি, চর্বি কম থাকে। এবার উপজেলার অর্ধশত খামারে কোরবানির উপযোগী গরু ১ হাজার ৮০০, ছাগল ৪৬০। এ ছাড়া ১৫০-১৭০ পরিবারে গড়ে দুই-চারটা হারে বিক্রিযোগ্য গরু মোটাতাজা করা হয়েছে । আমরা (প্রাণিসম্পদ দপ্তর) নিয়মিত খামার ও গৃহস্থে নজরদারিসহ অনলাইন, অফলাইনে খামারি ও গৃহস্থকে পরামর্শ দিয়ে থাকি। এ ছাড়া চলমান কোরবানির বাজারে নিয়মিত মেডিকেল টিম উপস্থিত থেকে রোগবালাইমুক্ত গরু-ছাগল বিক্রিতে আমাদের সহায়তা রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত