Ajker Patrika

ভারতে জাহাজ নির্মাণের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ

বিবিসি
আপডেট : ২৩ মে ২০২৫, ১০: ১৬
প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার বা ১৮০ কোটি ভারতীয় রুপির জাহাজ নির্মাণের অর্ডার বাতিল করেছে বাংলাদেশ। ছবি: জিআরএসইজিআরএসই
প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার বা ১৮০ কোটি ভারতীয় রুপির জাহাজ নির্মাণের অর্ডার বাতিল করেছে বাংলাদেশ। ছবি: জিআরএসইজিআরএসই

শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কিছুদিন আগে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা গার্ডেন রিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে (জিআরএসই) বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি অত্যাধুনিক ‘ওশান-গোয়িং টাগ’ বা বিশেষ ধরনের জাহাজ নির্মাণের অর্ডার দিয়েছিল। প্রায় ২১ মিলিয়ন ডলার বা ১৮০ কোটি ভারতীয় রুপির ওই অর্ডার পাওয়ার জিআরএসই’র শেয়ারও যথারীতি বেড়েছিল প্রায় ১০ শতাংশ। তবে এই অর্ডার পাওয়ার বছরখানেকের মাথায় গতকাল বুধবার (২১ মে) সেটি বাতিল করা হয়েছে বলে জিআরএসই’র পক্ষ থেকে ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ে জানানো হয়েছে।

এই খবর সামনে আসার পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে কোম্পানিটির শেয়ারে বেশ বড়সড় ধাক্কা লাগে। তবে বিকেলের মধ্যে তারা সেই ধাক্কা সামলেও নিয়েছে।

এদিকে, ওই জাহাজের অর্ডার কেন বাতিল করা হলো, তা নিয়ে বাংলাদেশের নৌবাহিনী বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ সরকারের একটি উচ্চপদস্থ সূত্র জানিয়েছে, অর্ডারটি যে বাতিল করা হয়েছে, সেটি তাঁরাও জেনেছেন। তবে এই সিদ্ধান্ত কেন বা কবে নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে তাঁরা কিছু বলতে পারছেন না!

তবে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষকেরা ধারণা করছেন, শেখ হাসিনা সরকারের আমলে নেওয়া বহু সিদ্ধান্ত বা আন্তর্জাতিক অর্ডার যেমন এর আগেও বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বাতিল করেছে, গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্সের এই অর্ডার বাতিল করার সিদ্ধান্তও সেই ধারাবাহিকতায় নেওয়া। বাংলাদেশ কেন অর্ডারটি বাতিল করেছে, সে বিষয়ে ভারতীয় সংস্থাটির পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি।

ওশান-গোয়িং টাগ হলো অত্যন্ত শক্তিশালী বিশেষ এক ধরনের জাহাজ, যা মাঝ সমুদ্রে বা উন্মুক্ত সাগরে বিপন্ন জাহাজকে ‘টোও’ (tow) করে টেনে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসতে পারে। এ ধরনের জাহাজ ‘টাগবোট’ নামেও পরিচিত। যে টাগবোটগুলো সাগর বা মহাসাগরে পাড়ি দিয়ে আটকে পড়া জাহাজকে উদ্ধার করতে পারে কিংবা জাহাজের ধ্বংসস্তূপ টেনে আনতে পারে— সেগুলোকেই বলে ওশান-গোয়িং টাগ।

টাগের আরেকটি বিশেষত্ব হলো, নিজের আকারের তুলনায় অনেক বড় জাহাজকেও এটি টেনে আনার ক্ষমতা রাখে। সামনের দিকেও টেনে আনতে পারে, আবার পেছন থেকেও ধাক্কা দিতে পারে। পৃথিবীর সব বড় বড় বন্দর ও হারবারে টাগবোট একটি অপরিহার্য অংশ, বিশেষ করে বড় বড় জাহাজের ডকিং ও বার্থিংয়ের সময় এ ধরনের ছোট ও শক্তিশালী জাহাজের সাহায্যের দরকার হয়।

বাংলাদেশ ভারতীয় কোম্পানিটিকে যে ওশান-গোয়িং টাগ নির্মাণের অর্ডার দিয়েছিল, সেটির দৈর্ঘ্য ৬১ মিটার এবং প্রস্থ ১৫.৮ মিটার হওয়ার কথা ছিল। এটির ডেপথ বা গভীরতা হওয়ার কথা ছিল প্রায় ৭ মিটার। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘প্রতিরক্ষা কাঠামো’র সামর্থ্য বাড়ানোই ছিল এই জাহাজ কেনার উদ্দেশ্য।

পরিপূর্ণ লোড নিয়ে জাহাজটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩ নটিক্যাল মাইল গতিবেগে যেতে পারবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ করা ছিল।

বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ডিফেন্স পারচেজের সঙ্গে ভারতের এই জাহাজ নির্মাতা সংস্থাটির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২০২৪ সালের ১ জুলাই।

ঠিক তার আগের মাসেই (জুন) তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দুবার ভারত সফরে এসেছিলেন— প্রথমে তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে, তারপর চীন সফরে যাওয়ার ঠিক আগে ভারতে আর একটি দ্বিপাক্ষিক সফরে।

ধারণা করা হচ্ছে, জুনের দ্বিতীয়ার্ধে‍ শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময়ই এই চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বোঝাপড়া হয়ে গিয়েছিল—যদিও তখন প্রকাশ্যে কিছু জানানো হয়নি।

চুক্তি অনুয়ায়ী জাহাজটি তৈরি করে সর্বোচ্চ ২৪ মাসের মধ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ডেলিভারি দেওয়া হবে বলেও একটি শর্ত ছিল— ফলে আগামী বছরের (২০২৬) মাঝামাঝি নাগাদ এটি বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল সংস্থাটি। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর বছর না ঘুরতেই পুরো অর্ডারটি এখন বাতিল করে দেওয়া হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জুলাই অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

নানা গুঞ্জনের মধ্যে ড. ইউনূসের সঙ্গে নাহিদের সাক্ষাৎ

অভ্যুত্থানের পরে সেনানিবাসে প্রাণ রক্ষার্থে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিবর্গ প্রসঙ্গে সেনাবাহিনীর অবস্থান

ভারতে জাহাজ নির্মাণের জন্য ২১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি বাতিল করল বাংলাদেশ

যে কুমির ডেকে আনছেন, তা আপনাদেরকেই খাবে: কাদের ইঙ্গিত করলেন উপদেষ্টা আসিফ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত