Ajker Patrika

বিদ্যালয়ের সীমানা দেয়ালে রাস্তা বন্ধের শঙ্কা

রাজু আজম, লক্ষ্মীছড়ি (খাগড়াছড়ি) 
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১১: ২৩
Thumbnail image

খাগড়াছড়ির লক্ষ্মীছড়িতে জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা দেয়াল নির্মাণ করছে উপজেলা স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। স্কুলের দুই ভবনের মধ্য দিয়ে ৭০টির অধিক পরিবারের চলাচলের পথ। এই রাস্তা বন্ধ করে দেয়াল নির্মাণ হচ্ছে বলে এতে বাধা দেয় পাড়াবাসী।

অভিযোগ উঠেছে, প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বার্থে বিদ্যালয়ের নিজস্ব জায়গা বাদ দিয়ে সীমানা ছোট ও স্থানান্তর করা হচ্ছে। পাড়াবাসীর দাবি, বিকল্প রাস্তা দিয়ে স্কুল উন্নয়নে সীমানা দেয়াল নির্মাণ করতে হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, জারুলছড়ি, জুর্গাছড়ি, মহিষকাটা—তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা দেয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। অ্যানুয়াল প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানের অধীনে ২০২০-২১ অর্থবছরে ইজিপি টেন্ডারে এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এর ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যয় বাদ দিয়ে ৫৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকায় কাজের ঠিকাদারি পায় মেসার্স সুবল বিন্দু চাকমা।

বিদ্যালয়টি উপজেলার দূল্যাতলী ইউনিয়নের মগাইছড়ি এলাকায় অবস্থিত। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চলাচলের রাস্তার দাবিতে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত আবেদনও জানিয়েছেন পাড়াবাসী।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শুভাশীষ বড়ুয়া এ বিষয়ে জানান, ‘আমাদের অফিসে জারুলছড়ি বিদ্যালয়ের ভূমিসংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্ট নাই। আমি দায়িত্বে থাকাকালীন সীমানার প্রস্তাবনা দিইনি।’ এ বিষয়ে ইউএনওর শরণাপন্ন হতে হবে বলে জানান তিনি।

উপজেলা এলজিইডির সহকারী ইঞ্জিনিয়ার মো. মেহেদী হাসান বলেন, ‘আমরা দুই বছর আগে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করে সীমানার প্রস্তাবনা পাঠাই। জায়গার পরিমাণের ব্যাপারে আমি জানি না, এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।’

জারুলছড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বৈশিষ্ট্য মোহন ত্রিপুরার বলেন, ‘স্কুলের জায়গার বিষয়ে কোনো ডকুমেন্ট আমি পাইনি। আমি দায়িত্বে থাকার পূর্বে ছিল কি না বলতে পারব না।’

এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, সাবেক ইউএনও মো. রোকন-উদ-দৌলা দায়িত্বের সময়ে সার্ভেয়ার, হেডম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে বিদ্যালয়ের মোট জায়গার পরিমাণ এক একর নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর বন্দোবস্তের জন্য আবেদনও করা হয়েছিল। বিদ্যালয়ের বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া কী অবস্থায় আছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ঠিকাদারের পক্ষে মো. আবুল কালাম বলেন, প্রাক্কলিত টাকা দিয়ে ডিজাইন অনুযায়ী বিদ্যালয়ের চারপাশে ২০৪ ফুট দৈর্ঘ্যের সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হবে। চলাচলের জন্য দুই পাশে দুটি গেট দেওয়া হবে, যাতে জনসাধারণের চলাচলে কোনো বাধা না হয়।

তবে একাধিক এলাকাবাসী বলেন, ২৪ ঘণ্টা গেট খোলা রাখার ব্যবস্থা না থাকলে তাঁদের জরুরি সময়ে ভোগান্তিতে পড়তে হবে, যার দায় কেউ নেবে না।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাজিম এ ব্যাপারে বলেন, ‘দুই বছর আগে দুটি গেট রাখার প্রস্তাবে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের কাজ বাতিল হয়ে যায়। দুটি গেট রাখার ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় কোনো প্রস্তাব দেয়নি। তবে উপজেলা এলজিইডি কার্যালয় দুটি গেটের ড্রয়িং ডিজাইন কীভাবে করল সেই দায়ভার আমাদের কার্যালয় নেবে না।’

ইউএনও মো. ইয়াছিন বলেন, `চলাচলের রাস্তার দাবিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতিমধ্যে আমি চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তার দাবিতে গণস্বাক্ষরের আবেদন পেয়েছি। উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে বিকল্প রাস্তা করে দেয়াল তোলার জন্য জারুলছড়ি এলাকায় যাই। চলাচলের জন্য বিকল্প রাস্তা দিতে গেলে বিদ্যালয়ের ভবন ঘেঁষে অবস্থিত দোকান ও বসতঘর উচ্ছেদ করতে হবে এবং নতুন করে একটি রাস্তা নির্মাণের জন্য স্টিমেট ও বরাদ্দ অনুমোদন করাতে হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত