Ajker Patrika

ধেয়ে আসছে ‘মোখা’, পিরোজপুরে অরক্ষিত ১৪৪ কিমি বেড়িবাঁধ

পিরোজপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মে ২০২৩, ২২: ২৩
ধেয়ে আসছে ‘মোখা’, পিরোজপুরে অরক্ষিত ১৪৪ কিমি বেড়িবাঁধ

ধেয়ে আসছে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’। তবে পিরোজপুরের ৭টি উপজেলার উপকূল এলাকায় নেই বেড়িবাঁধ। ফলে আতঙ্কে রয়েছেন উপকূলের কয়েক লাখ মানুষ। তাঁদের দাবি, এসব এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের।  

পিরোজপুর জেলার ৭টি উপজেলায় কঁচা, বলেশ্বর, সন্ধ্যা, কালীগঙ্গাসহ ছোট-বড় প্রায় ডজন খানেক নদী রয়েছে। আর এসব নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে লোকালয়, হাটবাজার ও শিল্পকারখানা। 

জেলার মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, সাপলেজা, টিকিকাটা, মাঝেরচড় এলাকার বেড়িবাঁধ অরক্ষিত রয়েছে। এ ছাড়া ইন্দুরকানি উপজেলার টগড়া ফেরিঘাট, কালাইয়া, সাঈদখালী ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলীখালী, চরখালী ফেরিঘাটসহ আশপাশের এলাকার বেড়িবাঁধও অরক্ষিত। 

নাজিরপুরের শ্রীরামকাঠী এবং সদর উপজেলার বেকুটিয়া ফেরিঘাট, মরিচালসহ বিভিন্ন এলাকায় টেকসই বেড়িবাঁধ নেই। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৩৪৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ থাকলেও তার মধ্যে ১৪৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এসব নদী-তীরবর্তী এলাকার তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ মানুষের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ মোকাবিলায়। 

স্থানীয়রা জানান, ২০০৭ সালের সিডরে জেলার উপকূলীয় এলাকা, মঠবাড়িয়া, ভান্ডারিয়া, কাউখালী, নাজিরপুর, সদর উপজেলার অধিকাংশ এলাকার বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। কিছু বেড়িবাঁধ মেরামত করা আবার কিছু নতুন বাঁধ করলেও উপকূলীয় অধিকাংশ এলাকাতেই নেই টেকসই বেড়িবাঁধ। যেখানে সামান্য জোয়ারেই পানি ঢুকে প্লাবিত হয় এলাকা, সেখানে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতে কেমন হবে তা নিয়ে শঙ্কিত নদীপাড়ের মানুষ। এসব এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, মাছের ঘেরসহ সকল ক্ষেত্রেই ক্ষতির আশঙ্কা এখানকার মানুষের। 

পিরোজপুরে অরক্ষিত বেড়িবাঁধউপকূলবর্তী সাধারণ মানুষ জানান, ঘূর্ণিঝড় মানে তাঁদের জন্য অভিশাপ। বছরের একবার-দুইবার এমন অভিশাপ তাঁদের জনজীবনকে আতঙ্কিত করে তোলে, জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে। বোরো ধান এখনো প্রায় ২৫ শতাংশ মাঠে। কিষানের অভাবে ধান কাটতে দেরি হয়েছে। এ ছাড়া রবিশস্য মুগ, কলই, খেসারি, কলাসহ বিভিন্ন ফসল টেকসই বেড়িবাঁধ না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

চরখালী এলাকার আবুল কালাম হাওলাদার জানান, সিডরে চরখালী এলাকার বেড়িবাঁধটি পুরোপুরি ভেঙে গেলেও এখনো তা মেরামত করা হয়নি। ফলে নদীপাড়ের বিশাল এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানলে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এ এলাকার মানুষ। এখান থেকে আশ্রয়কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। ঘর ছেড়ে সবাই যেতেও চাইবে না সেখানে। 

মাঝেরচর এলাকার আবদুল জলিল জানান, মঠবাড়িয়ার টিকিকাটা এলাকার একটি বড় চর হলো মাঝেরচর। এখানকার বেড়িবাঁধটি সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ নেই বললেই চলে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ আঘাত হানলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে মাঝেরচর এলাকা। 

৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ৫ কিলোমিটার প্রস্থ এ চরটিতে প্রায় ত্রিশ হাজার লোকের বসবাস। অনেকেরই ফসলি জমি, ঘেরের মাছ, ঘরবাড়ি ক্ষতি হবে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র আঘাতে। সময়ের পর সময় চলে গেলেও এখানে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেনি কেউ। 

নাজিপুরের শ্রীরামকাঠী এলাকার মহেন্দ্র মাঝি বলেন, ‘শ্রীরামকাঠী এলাকায় বড় একটি বেড়িবাঁধ নেই। ফলে ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে আমরা অনেকটাই টেনশনে আছি। সামান্য জোয়ারে পানি ঢুকে যায়। সেখানে এত বড় ঘূর্ণিঝড়ে কেমন হবে বুঝতে পারছি না।’ 

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মওলা মো. মেহেদী হাসান বলেন, মানুষের জীবন-মাল রক্ষায় বেশ কিছু নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যেসব এলাকায় বেড়িবাঁধ নেই এমন ৫টি ফোল্ডার করে আমরা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলোও মেরামত করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কয়েকটি ভাঙন এলাকায় জিওব্যাগ রাখা আছে। এসব জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন এলাকা রক্ষার কাজ চলমান আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত