Ajker Patrika

নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ—পরিণাম কী হবে

অনলাইন ডেস্ক
চীনা ম্যাগাজিনে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত
চীনা ম্যাগাজিনে ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক যুদ্ধের শুরুটা করেছেন আমদানি কর বাড়িয়ে। তবে এই যুদ্ধ এখন ক্রমশ আরও বড় আকার ধারণ করছে এবং প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপে রূপ নিচ্ছে।

সিএনএন বলেছে, কানাডার পণ্যের ওপর ট্রাম্পের আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক দেশটির নেতাদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় অন্টারিও প্রদেশ আমেরিকান মদ বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি অন্টারিওর প্রধানমন্ত্রী ডগ ফোর্ড তিনটি মার্কিন রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধের হুমকি দিয়েছেন। এ ধরনের পদক্ষেপ মার্কিন ওই রাজ্যগুলোতে বিদ্যুৎ বিল বাড়ানোর পাশাপাশি ব্ল্যাকআউটের সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে।

এদিকে ডগ ফোর্ডের প্রতিক্রিয়া ট্রাম্পকে এতটাই ক্ষুব্ধ করে যে, তিনি কানাডার স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। যদিও পরে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয় এবং কানাডার ওই পণ্যগুলোর ওপর নতুন আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্কই বহাল থাকে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন—এই বাণিজ্য যুদ্ধ সহজেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। বিশ্বনেতারা যদি সতর্ক না হন, তবে তাঁরা এমন একটি প্রতিশোধমূলক চক্রে আটকে পড়তে পারেন, যেখান থেকে বের হওয়া কঠিন হবে।

প্রতিশোধের প্রতিশোধ

শুধু যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা নয়, ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ আরও অনেক দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্পের ১০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে চীনও। পাশাপাশি দেশটি নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চালু করেছে এবং মার্কিন ব্র্যান্ড ক্যালভিন ক্লেইনের মালিক প্রতিষ্ঠান পিভিএই গ্রুপকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ট্রাম্পের স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির জবাবে গতকাল বুধবার (১২ মার্চ) আমেরিকান জিন্স, নৌকা ও হুইস্কির ওপর শুল্ক বসিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের মদ উৎপাদনকারীরা ক্ষতির আশঙ্কায় পড়েছেন।

ইইউ-এর এমন প্রতিশোধের বিষয়ে ট্রাম্প বলেছেন, ‘অবশ্যই আমি এর জবাব দেব।’ অর্থাৎ ট্রাম্প ইইউ-এর প্রতিশোধের জবাবে আবারও শুল্ক আরোপ করতে চান। কিন্তু এরপর যদি সেই প্রতিশোধেরও প্রতিশোধ নেয় ইউরোপ, তাহলে প্রতিশোধের এই চক্রটি কোথায় গিয়ে থামবে?

শুল্ক হচ্ছে ট্রাম্পের ‘সর্বসমাধান’

বাণিজ্য যুদ্ধের এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারী, সিইও এবং অর্থনীতিবিদেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন নিয়ে এখন সবাই ভাবছেন। প্রশ্নটি হলো—এই সংঘাত কি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে?

এই প্রশ্নের উত্তরে পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কেন্ট স্মেটার্স বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মন্দা এখন অর্ধেক-অর্ধেক সম্ভাবনার দিকে চলে গেছে।’

ট্রাম্প শুধু বাণিজ্য নয়, অভিবাসন, মাদক চোরাচালান এবং এমনকি রাশিয়াকে চাপে রাখার ক্ষেত্রেও শুল্ক ব্যবহার করার চিন্তা করছেন। অর্থনীতিবিদ মেরি লাভলি বলেন, ‘ট্রাম্পের কাছে শুল্ক হলো একধরনের উইনডেক্স, যা তিনি সব সমস্যার সমাধানে ব্যবহার করতে চান।’

বাণিজ্য যুদ্ধ আরও বাড়তে পারে

ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা তাঁর নেই। ওয়াল স্ট্রিট থেকে ক্রমবর্ধমান চাপের মুখেও তিনি এপ্রিলের ২ তারিখে নতুন শুল্ক কার্যকর করতে চান। এই বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ক্রিস্টিন ম্যাকড্যানিয়েল বলেছেন, ‘দেশগুলোর আত্মসম্মানবোধ আছে এবং তারা বিষয়গুলোকে ব্যক্তিগতভাবে নিচ্ছে। ফলে প্রতিশোধের মাত্রা আরও বেড়ে যেতে পারে।’

কানাডার ডগ ফোর্ডের কথা এই নিবন্ধের শুরুতেই বলা হয়েছে। তিনি ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির একজন বড় সমালোচক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। মার্কিন তিন রাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দেওয়ার আগেই এই বিদ্যুতের ওপর তিনি ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন।

অন্যদিকে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউদিয়া শেইনবাউম অপেক্ষা করছেন এবং বলেছেন, তাঁরা এপ্রিলের ২ তারিখে ট্রাম্পের শুল্ক নীতির প্রতিক্রিয়া দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন।

করপোরেট জগতে আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের করপোরেট সেক্টরেও এই বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। বিজনেস রাউন্ডটেবিল জানিয়েছে, সিইওদের আস্থা কমছে এবং তাঁরা বিনিয়োগ ও নিয়োগ কমানোর পরিকল্পনা করছেন।

ইয়েল চিফ এক্সিকিউটিভ লিডারশিপ ইনস্টিটিউটের এক জরিপ অনুযায়ী, ৮৫ শতাংশ মার্কিন সিইও ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরোধিতা করছেন। আর ৯৪ শতাংশ সিইও মনে করেন, এই শুল্ক মুদ্রাস্ফীতি বাড়াবে।

ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা জেফ্রি সনেনফেল্ড বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যাপক এই শুল্ক আরোপ সিইওদের ক্ষুব্ধ ও বিব্রত করছে।’

এখন কী হতে পারে?

বাণিজ্য যুদ্ধ কোথায় গিয়ে শেষ হবে, তা এখনো অনিশ্চিত। নিজ দেশের অর্থনীতির কথা ভেবে বৈশ্বিক নেতারা চাইলে প্রতিশোধের এই পথ এড়িয়ে যেতে চাইতে পারেন। আবার যদি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়ে বা ওয়াল স্ট্রিট আরও বড় প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ট্রাম্প শুল্ক কমাতে বাধ্য হতে পারেন।

এমআইটি-এর অর্থনীতিবিদ সাইমন জনসন বলেন, ‘প্রতিটি নতুন শুল্ক ট্রাম্পের অবস্থানকে আরও কঠিন করে তুলছে। যদি তিনি এই পথে এগিয়ে যান, তাহলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং অর্থনীতি আরও মন্থর হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত