Ajker Patrika

ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র কি রাশিয়ার ড্রোন ঠেকাতে পারবে

অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: এএফপি
যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র। ছবি: এএফপি

রাতের আকাশে যখন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট সক্রিয় হয়, তখন সারা শহর কেঁপে ওঠে গর্জনে। সেই শব্দ অনেকটা দ্রুতগতির হিপ-হপ মিউজিকের মতো। আকাশে বিস্ফোরণের আলোর ঝলকানি, তারপর মুহূর্তের মধ্যে ভয়ংকর বিস্ফোরণ। বিষয়টি ভাবতে ভালো লাগে। ব্যয়বহুল এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রুশ যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সফলতা দেখালেও কমদামি ড্রোন ঠেকাতে আসলে কতটা কার্যকর—সেটাই বিশাল প্রশ্ন।

কিয়েভের ১৭ বছর বয়সী তরুণ ইহোর লিসেঙ্কো মার্কিন এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রতি বেশ আস্থাশীল। তিনি বলেন, ‘এই ধরনের বিস্ফোরণ আমাকে নিরাপদ বোধ করায়। প্রযুক্তিটা যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য।’

এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আসল নাম এমআইএম-১০৪ প্যাট্রিয়ট। তৈরি হয়েছিল ১৯৭০-এর দশকে সোভিয়েত ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে এর বেশ কয়েকটি ইউনিট পায় ইউক্রেন। এরপর থেকে এটি রাশিয়ার ভয়ংকর সব অস্ত্র ঠেকাতে ভূমিকা রাখছে।

প্রতিটি প্যাট্রিয়ট লঞ্চার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ৩২টি মিসাইল ছুড়তে পারে। এগুলো শব্দের গতির চেয়েও দ্রুত ছুটে গিয়ে শত্রুপক্ষের ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল, ড্রোন, হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে সক্ষম।

প্রথম দিকে এই প্যাট্রিয়ট সিস্টেম দিয়ে ইউক্রেন সফলভাবে রাশিয়ার কিনঝাল (ড্যাগার) আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। এই ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া হয় এবং ১২ কিলোমিটার উচ্চতায় শব্দের গতির ১০ গুণ গতিতে উড়ে যায়। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একসময় দাবি করেছিলেন, এই ধরনের অস্ত্র ঠেকাতে কোনো পশ্চিমা প্রযুক্তি কার্যকর নয়।

কিন্তু বাস্তবে ইউক্রেনে মোতায়েনকৃত প্রায় ১০টি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম গত দুই বছরে ডজনের বেশি কিনঝাল মিসাইল ভূপাতিত করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের রুশ ক্ষেপণাস্ত্র, উত্তর কোরীয় ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ধ্বংস করা গেছে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে।

তবে একে একে রাশিয়ার আকাশ হামলার কৌশল পাল্টেছে। এখন তারা সবচেয়ে বেশি নির্ভর করছে কম খরচের ড্রোনের ওপর, যেগুলোকে একসঙ্গে কয়েক শ আকাশে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এসব ড্রোন ৫ কিলোমিটার উচ্চতায় উড়ে বেড়ায় এবং ইউক্রেনের সাধারণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে এগুলো ঠেকানো কঠিন।

আবার প্যাট্রিয়ট মিসাইলের প্রতিটি ইউনিটের দাম কয়েক মিলিয়ন ডলার, আর রুশ ড্রোনের দাম তার চেয়ে ১০০ গুণ কম। এক বিশ্লেষক একে তুলনা করেছেন ‘ইলেকট্রনিক মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পেরেক ঠোকার’ সঙ্গে।

এপ্রিলে কিয়েভে এক রুশ হামলায় একটি দুইতলা ভবন ধ্বংস হয়, নিহত হন ১২ জন, আহত হন ৮৭ জন। স্পষ্ট হয়ে যায়—প্যাট্রিয়ট থাকা সত্ত্বেও শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষাপটে রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দেন, ইউক্রেনকে আরও প্যাট্রিয়ট দেওয়া হবে। তবে সরাসরি নয়—যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাটো মিত্রদের কাছে বিক্রি করে সেগুলো ইউক্রেনে পাঠানো হবে।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা ওদের (ইউক্রেন) প্যাট্রিয়ট দেব, যা ওদের খুবই দরকার। (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির) পুতিন সবাইকে চমকে দিয়েছে। সে সকালে ভালো ভালো কথা বলে, তারপর সন্ধ্যায় গিয়ে বোমা ফেলে আসে।’ পরদিন ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকে ট্রাম্প জানান, ইউক্রেনের জন্য ১৭টি প্যাট্রিয়ট সিস্টেম প্রস্তুত রয়েছে।

সমর বিশ্লেষক ভলোদিমির ফেসেঙ্কো বলেন, ‘রাশিয়া মাঝেমধ্যে রেড লাইনের কথা বললেও, প্যাট্রিয়ট নিয়ে তেমন কোনো আপত্তি করছে না।’ তবে তিনি সতর্ক করেন, ‘সমস্যাটা শুধু প্যাট্রিয়ট না। এখন রাশিয়ার প্রধান হামলার অস্ত্র হলো ড্রোন। সেগুলো থেকেই (ইউক্রেনের) সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে।’

ড্রোন ঠেকাতে আরও কার্যকর ব্যবস্থা দরকার বলে জানান ইউক্রেন সেনাবাহিনীর সাবেক উপপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইহোর রোমানেনকো। তিনি বলেন, ‘ওরা যদি ৭০০ ড্রোন ছোড়ে এবং সেই সংখ্যা যদি ১ হাজারে পৌঁছায় তাহলে আমাদের দরকার শত শত ইন্টারসেপ্টর।’

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া খুব কৌশলে ড্রোনের গতিপথ পাল্টায়, যাতে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তা শনাক্ত করতে না পারে। ফলে ইউক্রেনের দরকার হালকা বিমান, ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্রযুক্তি, হেলিকপ্টার ও এমন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা গতিশীল টার্গেট ধ্বংসে সক্ষম।

এমনই একটি ব্যবস্থা হলো জার্মানির তৈরি স্কাইনেক্স। শনিবার ইউক্রেন জানায়, এই সিস্টেম ছয়টি রাশিয়ান জেরান ড্রোন ভূপাতিত করেছে। স্কাইনেক্স-এ রয়েছে ৩৫ মিমি স্বয়ংক্রিয় কামান, যা প্রতি মিনিটে ১ হাজার রাউন্ড গুলি ছুড়তে পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে ইউক্রেনে মাত্র দুটি স্কাইনেক্স রয়েছে।

ড্রোন ইন্টারসেপ্টর তৈরিতে ইউক্রেন সরকারের ধীর গতিতে হতাশ ড্রোন বিশেষজ্ঞ আন্দ্রে প্রোনিন। তিনি বলেন, ‘সবকিছু এখনো অপেশাদার পর্যায়ে চলছে।’ তিনি জানান, তাঁর দল একটি ইন্টারসেপ্টর ড্রোন তৈরি করেছে, যা রুশ ড্রোনের গতিতে উড়তে পারে। এটি যুদ্ধক্ষেত্রেও পরীক্ষিত। তবু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আগ্রহ দেখায়নি। তিনি বলেন, ইউক্রেনে প্রতিরক্ষা ‘মন্ত্রণালয়টা এক বিশাল গর্তের মতো। এখানে কিছুই এগোয় না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বদলির আদেশ ছিঁড়ে বরখাস্ত হলেন এনবিআরের ১৪ কর্মকর্তা

বাংলাদেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা

প্রেক্ষাপটবিহীন প্রতিবেদন কি সাংবাদিকতা হতে পারে?

বিমানবন্দর থেকেই ৯৬ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাল মালয়েশিয়া

বিধি লঙ্ঘন করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হলেন এনসিপি নেতা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত