Ajker Patrika

যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্য থেকে তাড়াতে চায় চীন, পাশে ইরান-মিসর

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮: ১৯
মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কষছে চীন। ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা কষছে চীন। ছবি: সংগৃহীত

চীনের অনেক থিংকট্যাংক এবং রাজনৈতিক, গোয়েন্দা, নিরাপত্তা ও সামরিক মহল মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে গবেষণা করছে। তারা এমন একটি জরুরি সামরিক পরিকল্পনা তৈরির সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে, যার মাধ্যমে ওই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো চিরতরে সরানো যায়। কারণ, এসব ঘাঁটি অঞ্চলটিতে চীনা স্বার্থ ও অংশীদারত্বে বাধা সৃষ্টি করছে। বিশেষ করে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের’ আওতায় চীনের মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে নেওয়া উচ্চাভিলাষী প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে বাধা।

এমন সম্ভাবনা বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কারণ, সম্প্রতি এই অঞ্চলের একাধিক মার্কিন সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করে ইরান ও চীনের অন্য মিত্রদেশগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র কাতারে অবস্থিত আল-উদেইদ বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়। বিষয়টি বেইজিংকে ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত করেছে।

এই প্রেক্ষাপটে, চীন ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানের সহায়তায় উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মাধ্যমে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে মার্কিন বাহিনীকে এই অঞ্চল থেকে তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। চীনের দৃষ্টিতে, এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের পথে প্রধান প্রতিবন্ধক।

চীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সামরিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা এই অঞ্চল এবং উপসাগরীয় এলাকায় থাকা সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মূল করতে চায়। এর জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টির কৌশল নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে, ইরানি সামরিক বাহিনী কয়েক বছর ধরে চীন ও রাশিয়ার পরোক্ষ সহায়তায় এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো লক্ষ্যবস্তু করে আসছে। এর একটি বাস্তব উদাহরণ হলো ‘ইমাম আলী ইরানি সামরিক ঘাঁটি’। এটি সিরিয়ার দেইর আল-জোর প্রদেশের আলবুকামাল শহরে ইরাক সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত।

চীন আত্মবিশ্বাসী যে, মধ্যপ্রাচ্য, উপসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকায় থাকা সব মার্কিন ঘাঁটি নির্মূলে বেইজিংয়ের উচ্চাভিলাষী সামরিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মিসরীয় সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে। মিসরই একমাত্র আরব দেশ, যেখানে কোনো মার্কিন সেনাঘাঁটি নেই। আবার আফ্রিকা মহাদেশে প্রবেশের প্রধান দরজাও মিসর।

অদূর ভবিষ্যতে চীন আফ্রিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কমান্ড বা ইউএস অ্যাফ্রিকম নির্মূলেও কাজ করতে পারে। ইউএস অ্যাফ্রিকম হলো একটি সমন্বিত বাহিনী। এটি আফ্রিকার ৫৩টি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কার্যক্রম ও সামরিক সম্পর্ক তত্ত্বাবধান করে। তবে ব্যতিক্রম মিসর, দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর সেন্ট্রাল কমান্ডের আওতায়।

এই প্রেক্ষাপটে চীন, ইরান ও মিসরের সামরিক বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সব গতিবিধি এবং ইসরায়েলের ভেতরে অবস্থিত একমাত্র মার্কিন ঘাঁটির কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর গোয়েন্দা নজরদারির জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই ঘাঁটি ব্যবহার করে থাকে। বিশেষ করে মিসর এবং দেশটিতে থাকা চীনা ও রুশ মিত্রদের ওপর নজরদারি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র।

২০২৫ সালের এপ্রিলে মিসর-চীনের যৌথ সামরিক মহড়া ‘সিভিলাইজেশন ঈগলের’ ওপরও তীক্ষ্ণ নজর রাখে যুক্তরাষ্ট্র। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের এই সামরিক ঘাঁটি ব্যবহার করেছিল। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা মহল এই মহড়াকে সন্দেহ ও সতর্কতার দৃষ্টিতে দেখে। তাদের ধারণা, এই মহড়ার মাধ্যমে চীন ইঙ্গিত দিতে চেয়েছে যে, মিসর কিংবা এই অঞ্চলের অন্য যেসব দেশ চীনের মিত্র, তারা যদি যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের সরাসরি বা পরোক্ষ সামরিক হুমকির মুখে পড়ে, তবে চীন তাদের পাশে দাঁড়াবে।

এ ছাড়া মিসর ও চীন ‘সিভিলাইজেশন ঈগল’ মহড়ার মাধ্যমে ওয়াশিংটন ও তেল আবিবকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের জোর করে মিসরের সিনাই অঞ্চলে বা মিসরীয় সীমান্তে ঠেলে দেওয়ার যেকোনো চেষ্টার বিরোধিতা করবে চীন। মিসর, তার সরকার, জনগণ ও সেনাবাহিনীর পাশে থাকার বার্তাও দিয়েছে বেইজিং।

এ কারণে ইসরায়েলের কারেন পর্বতের কাছাকাছি অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র সামরিক ঘাঁটি থেকে চীন ও মিসরের সব সামরিক তৎপরতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বর্তমানে ইসরায়েলের মাটিতে কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোই সক্রিয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, কারেন পর্বতে অবস্থিত এএন/টিপিওয়াই-২ ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কীকরণ রাডার স্টেশন।

গাজার বাসিন্দাদের মিসরীয় সীমান্ত ও সিনাই এলাকায় জোর করে স্থানান্তরে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের চাপের মুখে মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও মিসরীয় সেনাবাহিনীকে সামরিকভাবে সমর্থন দিচ্ছে চীন। গাজা সংকট ঘিরে মিসর-ইসরায়েল সীমান্তে যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, তা চীনের সামরিক ও গোয়েন্দা মহল গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশেষ করে, সিনাই অঞ্চলে মিসরের সেনা মোতায়েন নজিরবিহীনভাবে বাড়ানোর বিষয়টি তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

এই সময়ে চীন ও মিসরের যৌথ আকাশ মহড়াও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে তেল আবিবের উদ্বেগ বেড়েছে। ইসরায়েলের মতে, চীনের সঙ্গে মিসরের এই সামরিক সহযোগিতা ‘ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির’ লঙ্ঘন। গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মিসর ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে, ঠিক এই প্রেক্ষাপটেই এসব ঘটনা ঘটছে।

আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক মিত্রদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতার জবাবে চীনও মূল ভূখণ্ডের বাইরে সামরিক উপস্থিতি ও সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠাকে বৈশ্বিক সামরিক কৌশলের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ করে তুলেছে। চীনের বৈশ্বিক স্বার্থের নেটওয়ার্ক ও উচ্চাভিলাষী ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই)’ রক্ষা করাই বেইজিংয়ের এই কৌশলের লক্ষ্য।

চীন বর্তমানে ভূমধ্যসাগর, লোহিতসাগর ও আরব সাগর এলাকায় একাধিক সামরিক ও নৌঘাঁটি গড়ে তোলার উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে দেশটি বিআরআইয়ের অধীনে তৈরি হওয়া বিস্তৃত স্বার্থের নেটওয়ার্ক রক্ষা করতে চায়। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ আরব ও উপসাগরীয় দেশই ইতিমধ্যে চীনের বিআরআই প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে। এই এলাকাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রভাবের সঙ্গেও পাল্লা দিতে চায় চীন। এ জন্য চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) ও নৌবাহিনীকে আরব উপসাগর ও মধ্যপ্রাচ্যের নির্দিষ্ট এলাকায় একাধিক সামরিক ঘাঁটি ও সামরিক প্রবেশাধিকার গড়ে তুলতে হবে।

চীন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও সামরিক ঘাঁটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে। চীনা সামরিক বাহিনীর এসব ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার পেছনে আক্রমণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক—উভয় ধরনের উদ্দেশ্যই রয়েছে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কৌশলগত প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে যদি চীন এসব সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়, তাহলে তারা সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে স্থায়ী সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে পারবে এবং এই অঞ্চলের বাস্তবতা সম্পর্কে আরও ভালোভাবে অবগত হতে পারবে। এতে চীন মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট সংকট মোকাবিলায় আগের চেয়ে আরও দ্রুত ও ব্যাপকভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। চীনের এই বিদেশি সামরিক ঘাঁটিগুলো নিজ ভূখণ্ডের বহু দূরে থেকেও বড় পরিসরে সামরিক অভিযান পরিচালনার সক্ষমতা দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চীন এখনো মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি সরানোর কোনো পরিকল্পনার প্রকাশ করেনি। তবে দেশটি মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে নানা সামরিক কার্যক্রমের মাধ্যমে একটি অবস্থান গড়ে তুলতে চাচ্ছে। এই অঞ্চলে চীনের সামরিক উপস্থিতি আপাতত সরল, অন্তর্বর্তী বা সাময়িক ধাঁচের হলেও, এগুলো খুব হিসাব করে নেওয়া পদক্ষেপ। যেমন চীনা সামরিক উড়োজাহাজকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি, যৌথ সামরিক মহড়া, অস্ত্র বিক্রি বৃদ্ধি, যুদ্ধজাহাজ পুনরায় সরবরাহ এবং ছোট সামরিক স্থাপনার মাধ্যমে কার্যক্রম চালানো। এসবের মাধ্যমে চীন ধীরে ধীরে একটি বড় পরিসরের সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি করছে।

বিভিন্ন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, চীন এই অঞ্চলে সামরিক প্রভাব বাড়াতে চায়। এমনকি ইরানের সহায়তায় এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি কমিয়ে আনতেও আগ্রহী। এটি চীনের ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রভাব বাড়ানোর দীর্ঘমেয়াদি কৌশলের অংশ।

চীন মূলত কয়েকটি কৌশলে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার করছে, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থনৈতিক বিনিয়োগ। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের মাধ্যমে চীন এই অঞ্চলে অবকাঠামো ও জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। ফলে একটি অর্থনৈতিক পারস্পরিক নির্ভরশীলতা তৈরি হচ্ছে। সামরিক সহযোগিতার দিক থেকেও চীন মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ, বিশেষ করে উপসাগরীয় অঞ্চল, আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রি, যৌথ সামরিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ার মাধ্যমে সম্পর্ক জোরদার করছে। এর পাশাপাশি কূটনৈতিক ক্ষেত্রেও চীনের উপস্থিতি বাড়ছে। দেশটি এখন মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত নিরসনে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে এবং নিজেকে একটি নির্ভরযোগ্য কৌশলগত অংশীদার হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে।

ইতিমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চীন। ওই সব এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে যাওয়ার ফলে যে কৌশলগত শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা চীন সফলভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলের জোটের রাজনৈতিক মানচিত্রে পরিবর্তন আনতে চায়। কারণ, ওই অঞ্চলের কয়েকটি দেশ এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন অংশীদার খুঁজছে।

এই প্রেক্ষাপটে চীন ঘনিষ্ঠ মিত্র ইরানকে সহায়তা করতে একটি জরুরি সামরিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, বিশেষ করে ইসরায়েল ও পরে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হানার পর। এ প্রসঙ্গে ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, চীনের পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে তাদের পক্ষে। বিবৃতিতে বেইজিং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ‘ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো আগ্রাসন এই অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতির পতনের দিকে নিয়ে যাবে। এই যুদ্ধপিপাসু শাসনের প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে তাদের সামরিক ঘাঁটিগুলো।’

গত ২৩ জুন ইরান কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালায়, যার মধ্যে কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি এবং ইরাকের বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি অন্যতম। এই হামলা ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের অংশ এবং ইরানে মার্কিন হামলার পাল্টা জবাব। কাতার জানায়, তারা ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রতিহত করেছে।

ইরানের ‘বাশায়ের আল-ফাতাহ অভিযান’ ছিল মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে মার্কিন ঘাঁটিকে লক্ষ্য করে ইরানের দ্বিতীয় হামলা। এর আগে চালানো হয়েছিল ‘শহীদ সোলেইমানি অভিযান’। হামলার এক সপ্তাহ আগে ইরাকের ইরবিলে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের কনস্যুলেটেও হামলা হয়, এর পেছনে ইরান ছিল বলে অভিযোগ ওয়াশিংটনের।

ইসরায়েলের সামরিক হামলা শুরু হওয়ার আগে, বেশ কয়েকজন ইরানি সামরিক কর্মকর্তা চীনের পরোক্ষ সামরিক সহায়তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানকে আক্রমণ করে, তাহলে ইরান ভারত মহাসাগরে অবস্থিত দিয়েগো গার্সিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে পাল্টা হামলা চালাতে প্রস্তুত।’ তেহরান আরও জানায়, বেইজিংয়ের সমর্থনে তারা ঘোষণা দিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ চালালে তারা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের যৌথ নৌঘাঁটি দিয়েগো গার্সিয়ায় হামলা করবে।’

এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়; বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাকের পাশাপাশি কুয়েত ও বাহরাইন দূতাবাস থেকে কূটনীতিকদের সরিয়ে নেয়, তখন সেটি স্পষ্ট হয়। মূলত ইরানের হুমকি—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে তারা মধ্যপ্রাচ্য ও উপসাগরীয় অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে—এর পরিপ্রেক্ষিতেই পদক্ষেপ নেয় ওয়াশিংটন। এই হুমকিতে চীনও পরোক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছে বলে জানা যায়।

বেইজিং এখন একটি বৃহৎ, পরিকল্পিত সামরিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিচ্ছে। যার লক্ষ্য হলো উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আমেরিকান ঘাঁটিগুলো সরিয়ে দেওয়া। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য হচ্ছে—উপসাগরীয় দেশগুলো ও পুরো অঞ্চলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমানো, যা চীনের স্বার্থ ও প্রভাব বিস্তারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

বুলগেরিয়া থেকে প্রকাশিত মডার্ন ডিপ্লোমেসি থেকে অনূদিত। লিখেছেন, মিসরের বেনি সুয়েফ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইকোনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের লেকচারার ড. নাদিরা হেলমি।

অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত