অনলাইন ডেস্ক
গত সপ্তাহে, ওয়ার্নার ব্রাদার্স পিকচার্স সুপারম্যান চলচ্চিত্র সিরিজের একটি নতুন রিবুট মুক্তি দিয়েছে। এই সিনেমাটি বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলেছে, আয়ের হিসাবে এখন শীর্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বোধনী সপ্তাহান্তে আনুমানিক ১২২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্প এই প্রাথমিক বক্স অফিস সাফল্য বেশ উদ্যাপন করছে। তবে এক দশক আগের ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রগুলোর আয়ের তুলনায় এটি অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ব্যাটম্যান ভি সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস উদ্বোধনী সপ্তাহান্তে ১৬৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। যা মুদ্রাস্ফীতি ধরলে এখনকার বাজারে ২২৪ মিলিয়ন ডলারের সমতুল্য।
গত কয়েক বছর ধরে, এই ধরনের সিনেমার আয় ক্রমাগত কমছে। নতুন সুপারম্যান চলচ্চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১০-এর দশকে, সুপারহিরো সিনেমাগুলো নিয়মিতভাবে বিশ্বব্যাপী ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বক্স অফিস আয় করত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, খুব কম সিনেমাই এই উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটি মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। গত বছর, হলিউড ট্রেড ম্যাগাজিন ভ্যারাইটি সতর্ক করেছিল, এই ঘরানাটি ‘অভূতপূর্ব বক্স অফিস খরা’র সম্মুখীন হচ্ছে।
সুপারহিরো সিনেমার এমন ধারাবাহিক পতনের কারণ কী? হলিউডের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বলছেন, এর কারণ হলো ‘সুপারহিরো ফ্যাটিগ’ বা দর্শকদের এই ঘরানার প্রতি ক্লান্তি। সুপারম্যানের পরিচালক জেমস গান এমনটিই উল্লেখ করেছেন। ডিজনির সিইও বব ইগার মনে করেন, প্রচুর সুপারহিরো সিনেমা তৈরি হচ্ছে। এই বাড়াবাড়ি দর্শকদের মনোযোগ ও আগ্রহকে আর ধরে রাখতে পারছ না।
দর্শকেরা কেবল এই ঘরানার প্রতি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন—এমন ব্যাখ্যা অতিমাত্রায় সরলীকৃত। সব শৈল্পিক ঘরানার মতো, সুপারহিরো সিনেমার উত্থান বা পতনের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ অত্যন্ত গভীর।
সুপারহিরো কল্পকাহিনী একটি অনন্য আমেরিকান ঘরানা। এর শুরু হয় ১৯৩৪ সালে প্রথম সুপারম্যান কমিক বই প্রকাশের মাধ্যমে। এই ঘরানার প্রথম অ্যাডাপটেশন মুক্তি পায় ১৯৪১ সালে, নাম অ্যাডভেঞ্চারস অব ক্যাপ্টেন মার্ভেল। দশকের পর দশক ধরে আমেরিকানদের মধ্যে এই ঘরানাটি জনপ্রিয় ছিল। তবে ২০০১ সালের ৯ / ১১ হামলার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
৯ / ১১ হামলা আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী শান্ত পরিবেশে বড় ধরনের আঘাত হানে। আমেরিকান প্রোপাগান্ডা মেশিন আবার পূর্ণোদ্যমে তৎপর হয়ে ওঠে। আমেরিকানদের সামনে একটি কার্টুনিশ ‘সুপারভিলেন’ বা খলনায়কের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে থাকে মিডিয়া। এই চিত্রকল্প সুপারহিরো সিনেমার গল্পের সঙ্গে সহজেই মিলে যায়। এই খলনায়কেরা—আমেরিকার কথিত শত্রুদের মতো—বিশ্ব আধিপত্যের জন্য মরিয়া। তাদের উদারনীতি ও আমেরিকান আধিপত্যের বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করা হয়।
পেন্টাগন কিন্তু দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে প্রচারমূলক বর্ণনা তৈরিতে হলিউডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। তারা চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সামরিক সরঞ্জাম ধার দেওয়ার বিনিময়ে চিত্রনাট্য অনুমোদনের অধিকার পেয়েছে। ৯ / ১১-পরবর্তী সময়ে, আয়রন ম্যান এবং ক্যাপ্টেন আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি সুপারহিরো ব্লকবাস্টারের চিত্রনাট্যে তাদের প্রভাব ছিল। এমনকি মার্কিন বিমানবাহিনীর পাইলট নিয়োগের প্রচারণায় ক্যাপ্টেন মার্ভেল সিনেমা ব্যবহৃত হয়েছিল।
ফলে, অনেক সুপারহিরো সিনেমায় মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং সুপারহিরোরা একসঙ্গে খলনায়কদের পরাজিত করতে কাজ করে, যৌথভাবে প্যাক্স আমেরিকানার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে। এমন একটি বিশ্ব দেখানো হয় যেখানে প্রভাবশালী শক্তি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সুপার হিরো সিনেমার নায়কেরা প্রায়ই ‘আমেরিকান আদর্শ’—যেমন গণতন্ত্র, সম্প্রীতি এবং ন্যায়বিচারের রক্ষক হিসেবে চিত্রিত হয়। ক্যাপ্টেন আমেরিকা-এর মতো চরিত্র ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকান সাংস্কৃতিক বিজয়ের প্রতীক হিসেবে উঠে আসে। গত ২০ বছরের অন্যান্য জনপ্রিয় সুপারহিরো, যেমন ব্ল্যাক প্যান্থার, উদার আমেরিকার বহু সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এই নায়কদের ভাবমূর্তি যে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সমর্থন করার কথা, তা ভাঙতে শুরু করেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ আমেরিকান, ‘আমার দেশের নেতার উচিত সম্পূর্ণ, অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা থাকা’, এই বয়ানের সঙ্গে একমত। ২০২৩ সালে, অন্য একটি জরিপে, ৪৫ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, ‘মানুষ সেসব স্থানে বর্ণবৈষম্য দেখছে, যেখানে আসলে তা নেই, এটিই বড় সমস্যা’।
এটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, সুপারহিরো সিনেমায় চিত্রিত উদার, বহুত্ববাদী আমেরিকা অনেক আমেরিকানের জন্য আর সর্বজনীন আকাঙ্ক্ষা নয়। এ ছাড়া, আমেরিকার নৈতিক কর্তৃত্ব এবং বিশ্ব শক্তি হিসেবে তার অবস্থান নিয়ে সংশয় ক্রমশ বাড়ছে। ২০২৪ সালে ফক্স নিউজের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ আমেরিকান ভোটার মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘পতনের পথে’। মাত্র ২৬ শতাংশ মনে করেন, উত্থানের পথে। ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ‘আমেরিকায় জীবনযাপন এখন ৫০ বছর আগের তুলনায় খারাপ’।
৯ / ১১-পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের ধারণা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হলেও, কিছু ঘটনা এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। ২০২০ সালে সুপারহিরো সিনেমার বক্স অফিস আয়ে ব্যাপক পতন শুরু হয়। সে বছরই কেন? এটি ছিল সেই সময় যখন কোভিড-১৯ মহামারি ইতিমধ্যে ক্রমবর্ধমান সামাজিক বিভেদকে আরও তীব্র করে তুলছিল।
এই অভূতপূর্ব জনস্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে একটি সমন্বিত জাতীয় পরিচয়ের ধারণা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। সরকারের সংকট মোকাবিলার সক্ষমতার প্রতি ব্যাপক অবিশ্বাস, সেই সঙ্গে আমেরিকানদের গভীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী মনোভাব, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারণাকে বাধাগ্রস্ত করে—একটি ক্ষুব্ধ ও বিভক্ত আমেরিকান সমাজ গড়ে তোলে।
সুপারহিরো সিনেমায় দেখানো উদার আমেরিকান ন্যায়বিচারের একক দৃষ্টিভঙ্গি এই বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আর আকর্ষণীয় ছিল না।
আমেরিকা বীরে মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সংকট থেকে উদ্ধার করে—এক বছর পরে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এই ধারণাকে ব্যাহত করে। ৯ / ১১-এর পরে এক ধরনের বৈশ্বিক সুপারম্যান হিসেবে আমেরিকাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল। আফগানিস্তানকে দীর্ঘদিন ধরে একটি সম্ভাব্য ‘সাফল্যের গল্প’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পরিণতি সেই ধারণাকে জোরেশোরে আঘাত করে।
বিদেশে সামরিক শক্তির ব্যর্থতা এবং দেশে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, আমেরিকা আর এমন কোনো অবস্থানে আছে বলে মনে হয় না যেখানে ‘সুপারহিরো’তে বিশ্বাস করে। অনিবার্যভাবে, রাজনৈতিক অভিজাতদের দ্বারা উপেক্ষিত অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো এখন সামনে চলে আসছে। প্রকৃত মজুরি ৩০ বছর ধরে কমছে, আয়ের অসমতা বাড়ছে, অবকাঠামো ক্ষয়ে যাচ্ছে।
আমেরিকান সমাজের সবপক্ষই এখন মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, যেটিকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সেরা বলে প্রচার করা হয়েছে। বামপন্থীরা মনে করেন, করপোরেট স্বার্থ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে এতটাই দখল করে নিয়েছে যে তারা আর সম্পদ পুনর্বণ্টন বা সামাজিক কর্মসূচির জন্য লড়াই করে না। অন্যদিকে, ডানপন্থীরা আরও বিদ্বেষপূর্ণ, বর্ণবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে। উদার নৈতিকতা তারা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ‘সোশ্যালিজম’ এবং ‘ওক কালচার’ এখন উদারপন্থীদের বিরুদ্ধে কনজারভেটিভদের সবচেয়ে কঠোর গালিতে পরিণত হয়েছে!
সুপারহিরো সিনেমাগুলো আমেরিকাকে শেষ দৃশ্যে সব সময় একটি শুভশক্তি হিসেবে চিত্রিত করে। কিন্তু এই ঘরানাটি এখনকার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনোটির সঙ্গেই হাঁটছে না। নতুন সুপারম্যান সিনেমার পরিচালক জেমস গান এটিকে আমেরিকান মূল্যবোধের একটি রূপক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সুপারম্যান আমেরিকার গল্প। একজন অভিবাসী যিনি অন্য জায়গা থেকে এসেছেন এবং দেশটিকে জনবহুল করেছেন, কিন্তু আমার জন্য এটি মূলত এমন একটি গল্প যা বলে, মানবিক দয়া হলো একটি মূল্যবোধ। আমরা যেটি হারিয়েছি।’
তাঁর এই বক্তব্য আমেরিকার ডানপন্থী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা কেলিয়ান কনওয়ে ফক্স নিউজে বলেছেন, ‘কেউ আমাদের ওপর তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেবে, সে জন্য তো আমরা সিনেমা হলে যাই না।’
সুপারহিরো সিনেমাগুলো একটি আশাবাদী এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানার শিল্প। এসব সিনেমার প্রাথমিক বার্তা হলো, আমেরিকা এবং সাধারণভাবে উদার ব্যবস্থাকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু আজকাল আমেরিকানরা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী নয়। এই আদর্শিক মূল্যবোধের প্রতি বিশেষভাবে তারা আকৃষ্ট নয়। গণতন্ত্র এবং বহু সংস্কৃতির মতো উদার মূল্যবোধ এখন খুব কম আমেরিকানই বিশ্বাস করে।
আল-জাজিরার নিবন্ধ অবলম্বনে
গত সপ্তাহে, ওয়ার্নার ব্রাদার্স পিকচার্স সুপারম্যান চলচ্চিত্র সিরিজের একটি নতুন রিবুট মুক্তি দিয়েছে। এই সিনেমাটি বক্স অফিসে বেশ সাড়া ফেলেছে, আয়ের হিসাবে এখন শীর্ষে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বোধনী সপ্তাহান্তে আনুমানিক ১২২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে।
মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্প এই প্রাথমিক বক্স অফিস সাফল্য বেশ উদ্যাপন করছে। তবে এক দশক আগের ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্রগুলোর আয়ের তুলনায় এটি অনেক কম। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ সালে ওয়ার্নার ব্রাদার্সের ব্যাটম্যান ভি সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস উদ্বোধনী সপ্তাহান্তে ১৬৬ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল। যা মুদ্রাস্ফীতি ধরলে এখনকার বাজারে ২২৪ মিলিয়ন ডলারের সমতুল্য।
গত কয়েক বছর ধরে, এই ধরনের সিনেমার আয় ক্রমাগত কমছে। নতুন সুপারম্যান চলচ্চিত্রও এর ব্যতিক্রম নয়। ২০১০-এর দশকে, সুপারহিরো সিনেমাগুলো নিয়মিতভাবে বিশ্বব্যাপী ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বক্স অফিস আয় করত। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, খুব কম সিনেমাই এই উচ্চতায় পৌঁছেছে। এটি মার্কিন চলচ্চিত্র শিল্পে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। গত বছর, হলিউড ট্রেড ম্যাগাজিন ভ্যারাইটি সতর্ক করেছিল, এই ঘরানাটি ‘অভূতপূর্ব বক্স অফিস খরা’র সম্মুখীন হচ্ছে।
সুপারহিরো সিনেমার এমন ধারাবাহিক পতনের কারণ কী? হলিউডের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বলছেন, এর কারণ হলো ‘সুপারহিরো ফ্যাটিগ’ বা দর্শকদের এই ঘরানার প্রতি ক্লান্তি। সুপারম্যানের পরিচালক জেমস গান এমনটিই উল্লেখ করেছেন। ডিজনির সিইও বব ইগার মনে করেন, প্রচুর সুপারহিরো সিনেমা তৈরি হচ্ছে। এই বাড়াবাড়ি দর্শকদের মনোযোগ ও আগ্রহকে আর ধরে রাখতে পারছ না।
দর্শকেরা কেবল এই ঘরানার প্রতি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন—এমন ব্যাখ্যা অতিমাত্রায় সরলীকৃত। সব শৈল্পিক ঘরানার মতো, সুপারহিরো সিনেমার উত্থান বা পতনের পেছনে কিছু নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ অত্যন্ত গভীর।
সুপারহিরো কল্পকাহিনী একটি অনন্য আমেরিকান ঘরানা। এর শুরু হয় ১৯৩৪ সালে প্রথম সুপারম্যান কমিক বই প্রকাশের মাধ্যমে। এই ঘরানার প্রথম অ্যাডাপটেশন মুক্তি পায় ১৯৪১ সালে, নাম অ্যাডভেঞ্চারস অব ক্যাপ্টেন মার্ভেল। দশকের পর দশক ধরে আমেরিকানদের মধ্যে এই ঘরানাটি জনপ্রিয় ছিল। তবে ২০০১ সালের ৯ / ১১ হামলার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।
৯ / ১১ হামলা আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ পরবর্তী শান্ত পরিবেশে বড় ধরনের আঘাত হানে। আমেরিকান প্রোপাগান্ডা মেশিন আবার পূর্ণোদ্যমে তৎপর হয়ে ওঠে। আমেরিকানদের সামনে একটি কার্টুনিশ ‘সুপারভিলেন’ বা খলনায়কের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে থাকে মিডিয়া। এই চিত্রকল্প সুপারহিরো সিনেমার গল্পের সঙ্গে সহজেই মিলে যায়। এই খলনায়কেরা—আমেরিকার কথিত শত্রুদের মতো—বিশ্ব আধিপত্যের জন্য মরিয়া। তাদের উদারনীতি ও আমেরিকান আধিপত্যের বিরোধী হিসেবে চিত্রিত করা হয়।
পেন্টাগন কিন্তু দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে প্রচারমূলক বর্ণনা তৈরিতে হলিউডে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে। তারা চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য সামরিক সরঞ্জাম ধার দেওয়ার বিনিময়ে চিত্রনাট্য অনুমোদনের অধিকার পেয়েছে। ৯ / ১১-পরবর্তী সময়ে, আয়রন ম্যান এবং ক্যাপ্টেন আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি সুপারহিরো ব্লকবাস্টারের চিত্রনাট্যে তাদের প্রভাব ছিল। এমনকি মার্কিন বিমানবাহিনীর পাইলট নিয়োগের প্রচারণায় ক্যাপ্টেন মার্ভেল সিনেমা ব্যবহৃত হয়েছিল।
ফলে, অনেক সুপারহিরো সিনেমায় মার্কিন সামরিক বাহিনী এবং সুপারহিরোরা একসঙ্গে খলনায়কদের পরাজিত করতে কাজ করে, যৌথভাবে প্যাক্স আমেরিকানার দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করে। এমন একটি বিশ্ব দেখানো হয় যেখানে প্রভাবশালী শক্তি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সুপার হিরো সিনেমার নায়কেরা প্রায়ই ‘আমেরিকান আদর্শ’—যেমন গণতন্ত্র, সম্প্রীতি এবং ন্যায়বিচারের রক্ষক হিসেবে চিত্রিত হয়। ক্যাপ্টেন আমেরিকা-এর মতো চরিত্র ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমেরিকান সাংস্কৃতিক বিজয়ের প্রতীক হিসেবে উঠে আসে। গত ২০ বছরের অন্যান্য জনপ্রিয় সুপারহিরো, যেমন ব্ল্যাক প্যান্থার, উদার আমেরিকার বহু সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী আদর্শের প্রতিনিধিত্ব করে।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, এই নায়কদের ভাবমূর্তি যে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সমর্থন করার কথা, তা ভাঙতে শুরু করেছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশ আমেরিকান, ‘আমার দেশের নেতার উচিত সম্পূর্ণ, অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা থাকা’, এই বয়ানের সঙ্গে একমত। ২০২৩ সালে, অন্য একটি জরিপে, ৪৫ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, ‘মানুষ সেসব স্থানে বর্ণবৈষম্য দেখছে, যেখানে আসলে তা নেই, এটিই বড় সমস্যা’।
এটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, সুপারহিরো সিনেমায় চিত্রিত উদার, বহুত্ববাদী আমেরিকা অনেক আমেরিকানের জন্য আর সর্বজনীন আকাঙ্ক্ষা নয়। এ ছাড়া, আমেরিকার নৈতিক কর্তৃত্ব এবং বিশ্ব শক্তি হিসেবে তার অবস্থান নিয়ে সংশয় ক্রমশ বাড়ছে। ২০২৪ সালে ফক্স নিউজের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৬২ শতাংশ আমেরিকান ভোটার মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘পতনের পথে’। মাত্র ২৬ শতাংশ মনে করেন, উত্থানের পথে। ২০২৩ সালের পিউ রিসার্চের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, ‘আমেরিকায় জীবনযাপন এখন ৫০ বছর আগের তুলনায় খারাপ’।
৯ / ১১-পরবর্তী সময়ে জনসাধারণের ধারণা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হলেও, কিছু ঘটনা এই পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করেছে। ২০২০ সালে সুপারহিরো সিনেমার বক্স অফিস আয়ে ব্যাপক পতন শুরু হয়। সে বছরই কেন? এটি ছিল সেই সময় যখন কোভিড-১৯ মহামারি ইতিমধ্যে ক্রমবর্ধমান সামাজিক বিভেদকে আরও তীব্র করে তুলছিল।
এই অভূতপূর্ব জনস্বাস্থ্য সংকটের মধ্যে একটি সমন্বিত জাতীয় পরিচয়ের ধারণা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়ে। সরকারের সংকট মোকাবিলার সক্ষমতার প্রতি ব্যাপক অবিশ্বাস, সেই সঙ্গে আমেরিকানদের গভীর ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী মনোভাব, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার ধারণাকে বাধাগ্রস্ত করে—একটি ক্ষুব্ধ ও বিভক্ত আমেরিকান সমাজ গড়ে তোলে।
সুপারহিরো সিনেমায় দেখানো উদার আমেরিকান ন্যায়বিচারের একক দৃষ্টিভঙ্গি এই বিভক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে আর আকর্ষণীয় ছিল না।
আমেরিকা বীরে মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে সংকট থেকে উদ্ধার করে—এক বছর পরে, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এই ধারণাকে ব্যাহত করে। ৯ / ১১-এর পরে এক ধরনের বৈশ্বিক সুপারম্যান হিসেবে আমেরিকাকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়েছিল। আফগানিস্তানকে দীর্ঘদিন ধরে একটি সম্ভাব্য ‘সাফল্যের গল্প’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পরিণতি সেই ধারণাকে জোরেশোরে আঘাত করে।
বিদেশে সামরিক শক্তির ব্যর্থতা এবং দেশে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে, আমেরিকা আর এমন কোনো অবস্থানে আছে বলে মনে হয় না যেখানে ‘সুপারহিরো’তে বিশ্বাস করে। অনিবার্যভাবে, রাজনৈতিক অভিজাতদের দ্বারা উপেক্ষিত অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো এখন সামনে চলে আসছে। প্রকৃত মজুরি ৩০ বছর ধরে কমছে, আয়ের অসমতা বাড়ছে, অবকাঠামো ক্ষয়ে যাচ্ছে।
আমেরিকান সমাজের সবপক্ষই এখন মার্কিন রাজনৈতিক ব্যবস্থার উপযুক্ততা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, যেটিকে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বের সেরা বলে প্রচার করা হয়েছে। বামপন্থীরা মনে করেন, করপোরেট স্বার্থ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে এতটাই দখল করে নিয়েছে যে তারা আর সম্পদ পুনর্বণ্টন বা সামাজিক কর্মসূচির জন্য লড়াই করে না। অন্যদিকে, ডানপন্থীরা আরও বিদ্বেষপূর্ণ, বর্ণবাদী এবং কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠেছে। উদার নৈতিকতা তারা প্রশ্নবিদ্ধ করছে। ‘সোশ্যালিজম’ এবং ‘ওক কালচার’ এখন উদারপন্থীদের বিরুদ্ধে কনজারভেটিভদের সবচেয়ে কঠোর গালিতে পরিণত হয়েছে!
সুপারহিরো সিনেমাগুলো আমেরিকাকে শেষ দৃশ্যে সব সময় একটি শুভশক্তি হিসেবে চিত্রিত করে। কিন্তু এই ঘরানাটি এখনকার রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কোনোটির সঙ্গেই হাঁটছে না। নতুন সুপারম্যান সিনেমার পরিচালক জেমস গান এটিকে আমেরিকান মূল্যবোধের একটি রূপক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘সুপারম্যান আমেরিকার গল্প। একজন অভিবাসী যিনি অন্য জায়গা থেকে এসেছেন এবং দেশটিকে জনবহুল করেছেন, কিন্তু আমার জন্য এটি মূলত এমন একটি গল্প যা বলে, মানবিক দয়া হলো একটি মূল্যবোধ। আমরা যেটি হারিয়েছি।’
তাঁর এই বক্তব্য আমেরিকার ডানপন্থী মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের উপদেষ্টা কেলিয়ান কনওয়ে ফক্স নিউজে বলেছেন, ‘কেউ আমাদের ওপর তাদের মতাদর্শ চাপিয়ে দেবে, সে জন্য তো আমরা সিনেমা হলে যাই না।’
সুপারহিরো সিনেমাগুলো একটি আশাবাদী এবং জাতীয়তাবাদী ঘরানার শিল্প। এসব সিনেমার প্রাথমিক বার্তা হলো, আমেরিকা এবং সাধারণভাবে উদার ব্যবস্থাকে যে কোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে। কিন্তু আজকাল আমেরিকানরা আর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী নয়। এই আদর্শিক মূল্যবোধের প্রতি বিশেষভাবে তারা আকৃষ্ট নয়। গণতন্ত্র এবং বহু সংস্কৃতির মতো উদার মূল্যবোধ এখন খুব কম আমেরিকানই বিশ্বাস করে।
আল-জাজিরার নিবন্ধ অবলম্বনে
রাতের আকাশে যখন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্যাট্রিয়ট সক্রিয় হয়, তখন সারা শহর কেঁপে ওঠে গর্জনে। সেই শব্দ অনেকটা দ্রুতগতির হিপ-হপ মিউজিকের মতো। আকাশে বিস্ফোরণের আলোর ঝলকানি, তারপর মুহূর্তের মধ্যে ভয়ংকর বিস্ফোরণ। বিষয়টি ভাবতে ভালো লাগে। ব্যয়বহুল এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা রুশ
৭ ঘণ্টা আগেচীনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সামরিক পরিকল্পনা অনুযায়ী—তারা এই অঞ্চল এবং উপসাগরীয় এলাকায় থাকা সব মার্কিন সামরিক ঘাঁটি নির্মূল করতে চায়। এর জন্য ক্রমাগত চাপ সৃষ্টির কৌশল নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে, ইরানি সামরিক বাহিনী কয়েক বছর ধরে চীন ও রাশিয়ার পরোক্ষ সহায়তায় এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে আসছে
১ দিন আগেগাজার বেইত হানুন শহরে হামাসের সাম্প্রতিক হামলায় পাঁচ ইসরায়েলি সেনা নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছে। ইসরায়েলের সামরিক নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় হামাসের গেরিলা কৌশলের দক্ষতার প্রমাণ এটি...
৩ দিন আগেজুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়। এই আন্দোলনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া র্যাপ গান, মিম এবং গ্রাফিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। এখন এই মাধ্যমগুলোই হাসিনা-পরবর্তী বাংলাদেশে মূলধারার রা
৪ দিন আগে