Ajker Patrika

ভারতে চরম সংকটে কংগ্রেস, বিপাকে বিরোধীরাও

তরুণ চক্রবর্তী, কলকাতা
আপডেট : ২৭ আগস্ট ২০২২, ১০: ৫৯
ভারতে চরম সংকটে কংগ্রেস, বিপাকে বিরোধীরাও

রাহুল গান্ধীর বালখিল্যপনাতেই ডুবছে কংগ্রেস—পদত্যাগী কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ এ কথা চিঠি লিখে জানিয়েছেন। আর সাধারণ কংগ্রেসিদেরও একটা বড় অংশ এমনটা বিশ্বাস করেন। তাঁরা মনে করেন, ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে রাহুলের উত্থানের পর থেকেই গোটা দেশে নেতা-কর্মীদের মধ্যে দল ছাড়ার হিড়িক শুরু হয়েছে। আর এই ধারায় নবতম সংযোজন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর কাছে পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠি লিখে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও পদত্যাগ করেছেন।

২০২০ সালেই গুলাম নবিসহ কংগ্রেসের ২৩ জন শীর্ষস্থানীয় নেতা চিঠি লিখে দলের সংস্কার চেয়েছিলেন।  ওই ২৩ জনের একজন কপিল সিব্বাল আগেই দল ছেড়েছেন, এবার ছাড়লেন গুলাম নবি। সবারই অভিযোগের তির রাহুলের দিকে। তবু গান্ধী পরিবারকে ঘিরে আবর্তিত কংগ্রেস রাজনীতি। সর্বভারতীয় স্তরে গ্রহণযোগ্য কোনো নেতাকেই তাঁরা তুলে আনতে ব্যর্থ। সংকট মোকাবিলায় আজ আর কোনো প্রণব মুখার্জিও নেই দলে। কংগ্রেসের এই চরম সংকট গোটা দেশের বিজেপি-বিরোধী রাজনীতিকেও বিপন্ন করে তুলেছে।

ভারতীয় রাজনীতিতে রাহুল গান্ধীর হাত ধরে কংগ্রেস এখন ডুবতে বসা জাহাজ হলেও পুরো ডুবতে আরও সময় লাগবে। এমনটাই মনে করছেন ভারতের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বড় অংশ। তা ছাড়া গোটা দেশে এখনো বিজেপি-বিরোধী সবচেয়ে বড় শক্তি কংগ্রেস। তাই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কংগ্রেসকে উপেক্ষা করে বিরোধীদের পক্ষে রাষ্ট্রশক্তি দখল করা এখনো অসম্ভব। এই বাস্তব চিত্রটি মাথায় রেখেও রাহুল গান্ধীর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনার কথা অতি বড় কংগ্রেস সমর্থকও ভাবতে পারেন না। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি থাকলেও রাজনীতিতে তাঁর ধারাবাহিকতার অভাব এবং প্রথম থেকেই নির্বাচনী ব্যর্থতা দলেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে রাহুলকে।

২০১৪ সালে বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহদের উত্থানের পর প্রচারের যাবতীয় জৌলুশ তাঁরাই ভোগ করতে থাকেন। গুলাম নবি তাঁর চিঠিতে দলের বিপর্যয়ের কথা বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। তাঁর মতে, ২০১৩ সালে রাহুল গান্ধী দলের সহসভাপতি হওয়ার পর থেকেই কংগ্রেস ডুবছে। দুটি জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেস গোহারা হেরেছে। ৪৯টি বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে ৩৯টিতেই হেরেছে কংগ্রেস। ১০টিতে জিতলেও ক্ষমতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন মাত্র দুটি রাজ্যে টিমটিম করে সরকার চালাচ্ছে কংগ্রেস। আর দুটি রাজ্যে শাসক জোটে রয়েছে কংগ্রেস। গুলাম নবির অভিযোগ, মানুষ কংগ্রেসকে ভোট দিলেও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব।

এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ রাহুল-ব্রিগেড। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের মতে, দেশজুড়ে দলের সব সংগঠন মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রতিবাদে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত। এই সময়ে আজাদের সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। আরেক নেতা অজয় মাকেনও গুলাম নবির দল ছাড়ার সিদ্ধান্তকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেছেন।

রাহুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নতুন কিছু নয়। গতকাল শুক্রবার গুলাম নবি আজাদ দলের লাখ লাখ কর্মীর ক্ষোভের কথাই লিখেছেন সোনিয়া গান্ধীকে। বকলমে রাহুলের মর্জিতে কংগ্রেস চললেও তিনি সভাপতির দায়িত্ব নিতে রাজি নন। কংগ্রেসের অনেক কর্মী মনে করেন, উত্তর প্রদেশে হার নিশ্চিত জেনেও প্রিয়াঙ্কা যে সাহস দেখিয়েছিলেন, এর ছিটেফোঁটাও রাহুলের নেই। আরও অভিযোগ, রাহুল একটি কোটারি দ্বারা পরিবেষ্টিত। এই কোটারিই দলকে সর্বনাশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সর্বভারতীয় স্তরে কোনো নেতাকেই দলের মুখ হিসেবে উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। তাই বারবার ব্যর্থ হলেও নরেন্দ্র মোদির বিপরীতে রাহুলই থাকছেন কংগ্রেসের মুখ।

নিজের দলকে ধরে রাখতে চূড়ান্ত ব্যর্থ রাহুলকে তাই বিরোধী দলগুলোও প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে ভাবতে পারে না। দলীয় রাজনীতির মতোই জোট রাজনীতিতেও ব্যর্থ রাহুল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত