Ajker Patrika

নারীর ‘বগলের গন্ধ’ পুরুষের মানসিক চাপ কমায়, তবে কি মানুষেরও আছে ফেরোমোন!

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২৫, ১২: ০৫
প্রতীকী ছবি। ফ্রিপিক
প্রতীকী ছবি। ফ্রিপিক

নারীর বগলের গন্ধ পুরুষের আচরণে প্রভাব ফেলতে পারে। এমনকি তাদের মানসিক চাপও কমাতে পারে। এমনটাই জানা গেছে জাপানে হওয়া এক চমকপ্রদ গবেষণা থেকে। তবে এই প্রভাব সব সময় দেখা যায় না। মাসের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে, যখন নারীর গন্ধ পুরুষের কাছে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়, তখনই এই প্রভাব দেখা যায়। ওই সময় পুরুষ নারীর মুখও বেশি সুন্দর ও আকর্ষণীয় মনে করেন।

জীববিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল সেলে প্রকাশিত এই গবেষণার নিবন্ধ থেকে দেখা গেছে, নারীর শরীরের গন্ধ মাসিক চক্র অনুযায়ী বদলায়। ডিম্বাণু নির্গমনের সময়, অর্থাৎ যখন নারীর গর্ভধারণের সম্ভাবনা বেশি থাকে, তখন তাদের গায়ের গন্ধ পুরুষের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়।

তবে শরীরের ঘামের এই গন্ধে যে রাসায়নিক উপাদানগুলো ভূমিকা রাখে, সেগুলো এত দিন অজানা ছিল। এবার টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন তিনটি রাসায়নিক যৌগ শনাক্ত করেছেন, যেগুলোর মাত্রা মাসিক চক্র অনুযায়ী ওঠানামা করে এবং ডিম্বাণু নির্গমনের সময় বাড়ে।

এই তিন যৌগ নারীর বগলের ঘামে মেশার পর পুরুষ ওই গন্ধকে আরও বেশি পছন্দ করেছেন। পাশাপাশি, তাঁরা একই নারীর মুখকে আগের চেয়ে বেশি আকর্ষণীয় ও নারীত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন। আরও চমকপ্রদ বিষয় হলো, এই গন্ধ পুরুষের মধ্যে চাপ কমানোতে প্রভাব ফেলেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পুরুষ এই গন্ধ পেয়েছেন, তাঁদের লালায় চাপের একটি রাসায়নিক চিহ্ন সাধারণভাবে অন্যদের তুলনায় কম ছিল।

গবেষণার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লায়েড বায়োলজিকাল কেমিস্ট্রির অধ্যাপক কাজুশিগে তোহারা বলেন, ‘এসব ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, নারীর শরীরের গন্ধ পুরুষ-নারীর মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কোনো না কোনো ভূমিকা রাখেই।’

প্রাণিজগতে ‘ফেরোমোন’ নামের গন্ধভিত্তিক জৈবিক বার্তা অনেক পরিচিত। পোকামাকড়, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীরা প্রজনন, সামাজিক বন্ধন বা এলাকা চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করে। হলিউডে এই ‘ভালোবাসার গন্ধ’ নিয়ে যত গল্পই থাক, বাস্তবে বিজ্ঞানীরা এখনো নিশ্চিত নন—মানুষের ক্ষেত্রে ঠিক একইভাবে ফেরোমোন কাজ করে কি না।

অবশ্য, পুরোনো কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, পুরুষের ঘামের ‘অ্যান্ড্রোস্টাডিয়েনোন’ এবং নারীদের প্রস্রাবের ‘এসট্রাটেট্রায়েনল’ যৌগ মানসিক অবস্থা ও আকর্ষণে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এসব গবেষণা অনেক সময়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে গন্ধ শনাক্ত করার প্রক্রিয়া ও অংশগ্রহণকারীদের পরিচ্ছন্নতা ঠিক না থাকায়।

জাপানের এই নতুন গবেষণায় সঠিক রাসায়নিক মিশ্রণ নির্ধারণ করাটাই সবচেয়ে কঠিন ছিল। গবেষণার প্রধান লেখক নোজোমি ওহগি বলেন, ‘২০ জনের বেশি নারীর কাছ থেকে মাসিক চক্রের সুনির্দিষ্ট সময়ে বগলের গন্ধ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যেক নারীর মাসিক চক্র পর্যবেক্ষণ করতে বারবার তাঁদের শরীরের তাপমাত্রা ও অন্যান্য বিষয় জেনে নিতে হয়েছে। পুরো প্রক্রিয়া একজন অংশগ্রহণকারীর ক্ষেত্রে প্রায় এক মাসের মতো সময় নিয়েছে।’

তবে এত কিছুর পরেও অধ্যাপক তোহারা এই তিন যৌগকে এখনই নিশ্চিতভাবে মানব ফেরোমোন বলতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনই নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না, ডিম্বাণু নির্গমনের সময় বাড়ে এমন যৌগগুলো সত্যিকারের মানব-ফেরোমোন কি না।’

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়ে গেছে, এই গন্ধ কি শুধু মানুষের জন্য নির্দিষ্ট, যেভাবে প্রাণিজগতে ফেরোমোন হয়ে থাকে? তোহারা বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি—এই যৌগগুলো ফেরোমোন-সদৃশ হতে পারে।’

গবেষকেরা এখন আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে গবেষণা করতে চান, যাতে জিনগত কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্যের প্রভাব বাদ দেওয়া যায়। তাঁরা আরও খতিয়ে দেখতে চান, এসব যৌগ মানুষের মস্তিষ্কের কোন কোন অঞ্চলে প্রভাব ফেলে—বিশেষ করে আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে যুক্ত এলাকাগুলোতে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজনৈতিক দলের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ, হেফাজতে সেনা কর্মকর্তা

পত্রিকায় নিবন্ধ লেখার পর বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তাকে ফেরত নেওয়ার অনুরোধ কাতারের

পিআর পদ্ধতিতেই হবে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ, ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশ মাতিয়ে যাওয়া জার্মান টিকটকার ভারতে আটক

শেখ হাসিনার ‘ফেরার পরিকল্পনা’ ঘিরে গোপন বৈঠক, গ্রেপ্তার ২২ নেতা-কর্মী কারাগারে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত