অনলাইন ডেস্ক
আফ্রিকার খনিজ-সমৃদ্ধ দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোকে ঘিরে শুরু হয়েছে ভূরাজনৈতিক নতুন মেরুকরণ। রুয়ান্ডার সঙ্গে ৩০ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে শান্তি চুক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পেছনে রয়েছে মার্কিন শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থ। এই শান্তি প্রচেষ্টায় যুক্ত হচ্ছে কাতার, সৌদি আরব ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিও— আর এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কঙ্গোর ভবিষ্যৎ।
ট্রাম্প প্রশাসন বিতর্কিত শান্তি উদ্যোগ এরই মধ্যে প্রতিবেশী রুয়ান্ডাকেও এই সংকটে জড়িয়ে ফেলেছে। এটি আশ্চর্যের কিছু নয়, কারণ আফ্রিকার কেন্দ্রে অবস্থিত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) খনিজ সম্পদে ভরপুর। এসব খনিজ পদার্থ তথ্য প্রযুক্তি ও বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লবে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত প্রয়োজন, যার অনেকটাই এখন চীনের হাতে যাচ্ছে।
শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডিআর কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স চিসেকেদি ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই শান্তি চুক্তি একটি ‘গৌরবময় বিজয়’ হবে বলে আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। এ শান্তি চুক্তির ফাঁকেই যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক অ্যালেক্স ডি ওয়াল বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ‘একটি নতুন ধরনের শান্তি উদ্যোগ’ চালু করছে, যেখানে জনপ্রিয়তা অর্জনের অভিনয় এবং বাণিজ্যিক চুক্তিকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রাম্প ইউক্রেনে এটি করেছেন। তিনি নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং আমেরিকার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সুরক্ষিত করতে এই গৌরব চান। তবে ডিআর কঙ্গোতে চীন এরই মধ্যে বহু খনিজ অধিগ্রহণ করে ফেলেছে, ফলে আমেরিকা এখন পেছন থেকে ধাওয়া করছে।
অ্যালেক্স ডি ওয়াল আরও বলেন, এখন পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানিগুলো নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং বিদ্রোহীদের অর্থায়ন করে তথাকথিত ‘রক্তের খনিজ’ আহরণে নৈতিক উদ্বেগে ডিআর কঙ্গোতে বিনিয়োগে পিছিয়ে আছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন মডেল তা পাল্টে দিতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, এটি সুদানসহ অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ দেশেও হতে পারে, যেখানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরের মতো আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতা শুরু হতে পারে। ট্রাম্প বিভিন্ন পক্ষকে মুখোমুখি বসাতে ও পরিস্থিতি বদলাতে পারেন।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজ আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হেনরি মোস্টার্ট বিবিসিকে বলেন, ডিআর কঙ্গো তার খনিজ সম্পদের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার ঝুঁকিতে রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ডিআর কঙ্গো বহু বছর মেয়াদি এমন সব চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে, যার মাধ্যমে দেশটি লাভের তুলনায় অনেক কিছু হারাবে।
চীন ও রাশিয়া এর আগে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ‘সম্পদ বিনিময় চুক্তি’ করেছে বলেও উল্লেখ করেন হেনরি। যেমন, চীন অ্যাঙ্গোলায় তেল বিনিময়ে অবকাঠামো নির্মাণ করেছিল, তবে তেলের দাম বাড়ার পরও অ্যাঙ্গোলা তার প্রকৃত মূল্য পায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ডিআর কঙ্গোর খনিজ রিজার্ভের আনুমানিক মূল্য ছিল ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রয়েছে কোবাল্ট, কপার, লিথিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ট্যান্টালাম— যেগুলো কম্পিউটার, বৈদ্যুতিক যান, মোবাইল ফোন, উইন্ড টারবাইন ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
‘ডিআর কঙ্গো কত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে কোবাল্ট সরবরাহ করবে? ২০ বছর, না ৫০ বছর? শান্তির বিনিময়ে আসলে কী পাবে দেশটি?’ প্রশ্ন করেন অধ্যাপক মোস্টার্ট।
ডিআর কঙ্গো সরকারের মুখপাত্র প্যাট্রিক মুইয়ায়া মার্চে বিবিসিকে বলেন, নিরাপত্তা চুক্তির বিনিময়ে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ’ সরবরাহ করতে চায়।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহী দল এম২৩ পূর্ব কঙ্গোতে বিস্তৃত অঞ্চল দখল করে সেসব অঞ্চলের খনিজ রুয়ান্ডায় পাচার করছে। পরে রুয়ান্ডার খনিজের সঙ্গে মিশিয়ে সেগুলো রপ্তানি করা হয়।
রুয়ান্ডা এম২৩ কে সমর্থনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের তথ্যমতে দেশটির হাজার হাজার সৈন্য কঙ্গোতে রয়েছে।
এ পাচার ঠেকাতেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে এখনো আলোচনাধীন একটি ‘আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণ কাঠামো’র কথা বলা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, অবৈধ অর্থনৈতিক পথ বন্ধ করা এবং পারস্পরিকভাবে লাভজনক অংশীদারত্ব ও বিনিয়োগ সুযোগ সৃষ্টি করা।
গত ২৭ জুন ওয়াশিংটনে স্বাক্ষরিত চুক্তির আগে ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গো থেকে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ আহরণের অধিকার পাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ব্রাম ভেরেলস্ট জানান, এই শান্তি উদ্যোগটি কাতারের আরেকটি মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমান্তরালে চলছে, যেখানে কাতার মূলত এম২৩ এবং কঙ্গোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মনোযোগ দিচ্ছে।
কানাডাভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক জেসন স্টিয়ার্নস বলেন, কাতার ও অন্যান্য ধনাঢ্য উপসাগরীয় দেশ আফ্রিকায় তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চায়। কাতার রুয়ান্ডার অনুরোধে মধ্যস্থতা করছে, কারণ রুয়ান্ডা মনে করে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোর পক্ষে।
তিনি বলেন, কাতার রুয়ান্ডার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তারা কিগালিতে একটি বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিমানবন্দর তৈরি করছে এবং রুয়ান্ডার জাতীয় বিমান সংস্থার ৪৯ শতাংশ শেয়ার কেনার আলোচনায় রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার একসঙ্গে কাজ করছে, তবুও দুটি পৃথক প্রক্রিয়া সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন; যদি কঙ্গো-রুয়ান্ডার মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়, কিন্তু রুয়ান্ডা বলে তারা এম২৩ কে নিয়ন্ত্রণ করে না, এবং এম২৩ লড়াই চালিয়ে যায়। তখন পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। সুতরাং দুটি প্রক্রিয়াকে একত্রিত করা অত্যন্ত জরুরি।
২৭ জুন স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির আওতায় কঙ্গো ও রুয়ান্ডা ৩০ দিনের মধ্যে একটি ‘নিরাপত্তা সমন্বয় কাঠামো’ চালু করতে সম্মত হয়েছে।
ভেরেলস্ট জানান, মঙ্গলবার একটি অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে, যার পর ১৮ আগস্টের মধ্যে কঙ্গো সরকার ও এম২৩ একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে।
ডিআর কঙ্গো-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক অনেসফোর সেমাতুম্বা বলেন, ট্রাম্প জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার ‘রেকর্ড সময়ে’ চুক্তি করাচ্ছে। যেখানে ২০২২ সাল থেকে আফ্রিকান নেতাদের নেতৃত্বে কোনো একটিও চুক্তি হয়নি। কিগালি ও কিনশাসার ওপর আঞ্চলিক শক্তিগুলোর পর্যাপ্ত প্রভাব নেই।
তবে সেমাতুম্বা সতর্ক করে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর এবং প্রকৃত শান্তির পথটি দীর্ঘ। একটি বড় প্রশ্ন হলো, এম২৩ সরকারকে জমি ফিরিয়ে দেবে কি না। এম২৩ কঙ্গোজুড়ে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব’ মেনে নিলেও তারা বলেছে, এক সেন্টিমিটার জমিও ছাড়বে না।
সেমাতুম্বা বলেন, ‘আমার মতে, শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর ধাপে ধাপে হওয়া উচিত। কিছু এলাকায় সহপরিচালনার মতো ব্যবস্থা হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে মধ্যস্থতাকারীদের কৌশল এবং পক্ষগুলোর সমঝোতার দক্ষতার ওপর।’
কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার সৈন্য প্রত্যাহারের ওপরও চুক্তির সফলতা নির্ভর করে বলে মনে করেন সেমাতুম্বা। রুয়ান্ডা বলে, তারা এফডিএলআর (১৯৯৪ সালের গণহত্যাকারীদের বংশধরদের গঠিত গোষ্ঠী) মুছে ফেলতে চায়। তারা কঙ্গোর সেনাবাহিনীকে এফডিএলআরের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগও করেছে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, এফডিএলআরকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করতে হবে। তবে গত ৩০ বছরে বহুবার এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রুয়ান্ডা বলে, এফডিএলআর নিষ্ক্রিয় হলেই তাঁরা সৈন্য সরাবে, আর কঙ্গো বলে, দুটো একসঙ্গে করতে হবে। এখানেই মধ্যস্থতাকারীদের একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
সেমাতুম্বা বলেন, যেভাবে পক্ষগুলো চুক্তির ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে সামনে কী ধরনের জটিলতা অপেক্ষা করছে।
অধ্যাপক মোস্টার্ট বলেন, ‘শুধুমাত্র কূটনীতি দিয়ে শান্তি আনা সম্ভব নয়। এ জন্য আরও বিস্তৃত উদ্যোগ প্রয়োজন। শান্তি আসে ব্যথাকে রূপান্তরের মাধ্যমে। এটি কেবল কূটনীতির বিষয় নয়। এর জন্য দরকার সংলাপ, স্থানীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ এবং মানুষের অভিজ্ঞতাকে সম্মান জানানো। এই কারণেই আমি বিশ্বাস করি, যারা চুক্তি করছে এবং আইন প্রণয়ন করছে, তাদের অতীতের ইতিহাস, বিশেষ করে খনিজ সম্পদ লুটপাটের ট্রমা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।’
সুতরাং, যদি ট্রাম্প চান এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হোক এবং মার্কিন কোম্পানিগুলো মুনাফা করুক, তাহলে তাকে দীর্ঘ সময় ধরে চাপ প্রয়োগ করে যেতে হতে পারে।
আফ্রিকার খনিজ-সমৃদ্ধ দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোকে ঘিরে শুরু হয়েছে ভূরাজনৈতিক নতুন মেরুকরণ। রুয়ান্ডার সঙ্গে ৩০ বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটাতে শান্তি চুক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পেছনে রয়েছে মার্কিন শিল্প ও প্রযুক্তি খাতে প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ খনিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার স্বার্থ। এই শান্তি প্রচেষ্টায় যুক্ত হচ্ছে কাতার, সৌদি আরব ও অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তিও— আর এর মাঝখানে দাঁড়িয়ে কঙ্গোর ভবিষ্যৎ।
ট্রাম্প প্রশাসন বিতর্কিত শান্তি উদ্যোগ এরই মধ্যে প্রতিবেশী রুয়ান্ডাকেও এই সংকটে জড়িয়ে ফেলেছে। এটি আশ্চর্যের কিছু নয়, কারণ আফ্রিকার কেন্দ্রে অবস্থিত ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো (ডিআর কঙ্গো) খনিজ সম্পদে ভরপুর। এসব খনিজ পদার্থ তথ্য প্রযুক্তি ও বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লবে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত প্রয়োজন, যার অনেকটাই এখন চীনের হাতে যাচ্ছে।
শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ডিআর কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট ফেলিক্স চিসেকেদি ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমন্ত্রণ জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এই শান্তি চুক্তি একটি ‘গৌরবময় বিজয়’ হবে বলে আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। এ শান্তি চুক্তির ফাঁকেই যুক্তরাষ্ট্র ওই অঞ্চলে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়ার্ল্ড পিস ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক অ্যালেক্স ডি ওয়াল বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ‘একটি নতুন ধরনের শান্তি উদ্যোগ’ চালু করছে, যেখানে জনপ্রিয়তা অর্জনের অভিনয় এবং বাণিজ্যিক চুক্তিকে মিলিয়ে ফেলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রাম্প ইউক্রেনে এটি করেছেন। তিনি নিজেকে জনপ্রিয় করে তুলতে এবং আমেরিকার স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সুরক্ষিত করতে এই গৌরব চান। তবে ডিআর কঙ্গোতে চীন এরই মধ্যে বহু খনিজ অধিগ্রহণ করে ফেলেছে, ফলে আমেরিকা এখন পেছন থেকে ধাওয়া করছে।
অ্যালেক্স ডি ওয়াল আরও বলেন, এখন পর্যন্ত মার্কিন কোম্পানিগুলো নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং বিদ্রোহীদের অর্থায়ন করে তথাকথিত ‘রক্তের খনিজ’ আহরণে নৈতিক উদ্বেগে ডিআর কঙ্গোতে বিনিয়োগে পিছিয়ে আছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন মডেল তা পাল্টে দিতে পারে।
তিনি উল্লেখ করেন, এটি সুদানসহ অন্যান্য সংঘাতপূর্ণ দেশেও হতে পারে, যেখানে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিশরের মতো আরব দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতা শুরু হতে পারে। ট্রাম্প বিভিন্ন পক্ষকে মুখোমুখি বসাতে ও পরিস্থিতি বদলাতে পারেন।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজ আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হেনরি মোস্টার্ট বিবিসিকে বলেন, ডিআর কঙ্গো তার খনিজ সম্পদের সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার ঝুঁকিতে রয়েছে। অনির্দিষ্টকালের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে ডিআর কঙ্গো বহু বছর মেয়াদি এমন সব চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে, যার মাধ্যমে দেশটি লাভের তুলনায় অনেক কিছু হারাবে।
চীন ও রাশিয়া এর আগে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এ ধরনের ‘সম্পদ বিনিময় চুক্তি’ করেছে বলেও উল্লেখ করেন হেনরি। যেমন, চীন অ্যাঙ্গোলায় তেল বিনিময়ে অবকাঠামো নির্মাণ করেছিল, তবে তেলের দাম বাড়ার পরও অ্যাঙ্গোলা তার প্রকৃত মূল্য পায়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ডিআর কঙ্গোর খনিজ রিজার্ভের আনুমানিক মূল্য ছিল ২৫ ট্রিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রয়েছে কোবাল্ট, কপার, লিথিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ট্যান্টালাম— যেগুলো কম্পিউটার, বৈদ্যুতিক যান, মোবাইল ফোন, উইন্ড টারবাইন ও সামরিক সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
‘ডিআর কঙ্গো কত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে কোবাল্ট সরবরাহ করবে? ২০ বছর, না ৫০ বছর? শান্তির বিনিময়ে আসলে কী পাবে দেশটি?’ প্রশ্ন করেন অধ্যাপক মোস্টার্ট।
ডিআর কঙ্গো সরকারের মুখপাত্র প্যাট্রিক মুইয়ায়া মার্চে বিবিসিকে বলেন, নিরাপত্তা চুক্তির বিনিময়ে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রকে ‘কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ’ সরবরাহ করতে চায়।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্রোহী দল এম২৩ পূর্ব কঙ্গোতে বিস্তৃত অঞ্চল দখল করে সেসব অঞ্চলের খনিজ রুয়ান্ডায় পাচার করছে। পরে রুয়ান্ডার খনিজের সঙ্গে মিশিয়ে সেগুলো রপ্তানি করা হয়।
রুয়ান্ডা এম২৩ কে সমর্থনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও জাতিসংঘের তথ্যমতে দেশটির হাজার হাজার সৈন্য কঙ্গোতে রয়েছে।
এ পাচার ঠেকাতেই যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তিচুক্তিতে এখনো আলোচনাধীন একটি ‘আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীভূতকরণ কাঠামো’র কথা বলা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, অবৈধ অর্থনৈতিক পথ বন্ধ করা এবং পারস্পরিকভাবে লাভজনক অংশীদারত্ব ও বিনিয়োগ সুযোগ সৃষ্টি করা।
গত ২৭ জুন ওয়াশিংটনে স্বাক্ষরিত চুক্তির আগে ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তির অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গো থেকে বিপুল পরিমাণ খনিজ সম্পদ আহরণের অধিকার পাচ্ছে।
দক্ষিণ আফ্রিকাভিত্তিক ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি স্টাডিজের গবেষক ব্রাম ভেরেলস্ট জানান, এই শান্তি উদ্যোগটি কাতারের আরেকটি মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ার সঙ্গে সমান্তরালে চলছে, যেখানে কাতার মূলত এম২৩ এবং কঙ্গোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে মনোযোগ দিচ্ছে।
কানাডাভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক জেসন স্টিয়ার্নস বলেন, কাতার ও অন্যান্য ধনাঢ্য উপসাগরীয় দেশ আফ্রিকায় তাদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে চায়। কাতার রুয়ান্ডার অনুরোধে মধ্যস্থতা করছে, কারণ রুয়ান্ডা মনে করে যুক্তরাষ্ট্র কঙ্গোর পক্ষে।
তিনি বলেন, কাতার রুয়ান্ডার সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। তারা কিগালিতে একটি বিলিয়ন ডলার মূল্যের বিমানবন্দর তৈরি করছে এবং রুয়ান্ডার জাতীয় বিমান সংস্থার ৪৯ শতাংশ শেয়ার কেনার আলোচনায় রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার একসঙ্গে কাজ করছে, তবুও দুটি পৃথক প্রক্রিয়া সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। যেমন; যদি কঙ্গো-রুয়ান্ডার মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়, কিন্তু রুয়ান্ডা বলে তারা এম২৩ কে নিয়ন্ত্রণ করে না, এবং এম২৩ লড়াই চালিয়ে যায়। তখন পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। সুতরাং দুটি প্রক্রিয়াকে একত্রিত করা অত্যন্ত জরুরি।
২৭ জুন স্বাক্ষরিত শান্তি চুক্তির আওতায় কঙ্গো ও রুয়ান্ডা ৩০ দিনের মধ্যে একটি ‘নিরাপত্তা সমন্বয় কাঠামো’ চালু করতে সম্মত হয়েছে।
ভেরেলস্ট জানান, মঙ্গলবার একটি অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে, যার পর ১৮ আগস্টের মধ্যে কঙ্গো সরকার ও এম২৩ একটি পূর্ণাঙ্গ শান্তি চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারে।
ডিআর কঙ্গো-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশ্লেষক অনেসফোর সেমাতুম্বা বলেন, ট্রাম্প জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার ‘রেকর্ড সময়ে’ চুক্তি করাচ্ছে। যেখানে ২০২২ সাল থেকে আফ্রিকান নেতাদের নেতৃত্বে কোনো একটিও চুক্তি হয়নি। কিগালি ও কিনশাসার ওপর আঞ্চলিক শক্তিগুলোর পর্যাপ্ত প্রভাব নেই।
তবে সেমাতুম্বা সতর্ক করে বলেন, চুক্তি স্বাক্ষর এবং প্রকৃত শান্তির পথটি দীর্ঘ। একটি বড় প্রশ্ন হলো, এম২৩ সরকারকে জমি ফিরিয়ে দেবে কি না। এম২৩ কঙ্গোজুড়ে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব’ মেনে নিলেও তারা বলেছে, এক সেন্টিমিটার জমিও ছাড়বে না।
সেমাতুম্বা বলেন, ‘আমার মতে, শান্তিপূর্ণ হস্তান্তর ধাপে ধাপে হওয়া উচিত। কিছু এলাকায় সহপরিচালনার মতো ব্যবস্থা হতে পারে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে মধ্যস্থতাকারীদের কৌশল এবং পক্ষগুলোর সমঝোতার দক্ষতার ওপর।’
কঙ্গো থেকে রুয়ান্ডার সৈন্য প্রত্যাহারের ওপরও চুক্তির সফলতা নির্ভর করে বলে মনে করেন সেমাতুম্বা। রুয়ান্ডা বলে, তারা এফডিএলআর (১৯৯৪ সালের গণহত্যাকারীদের বংশধরদের গঠিত গোষ্ঠী) মুছে ফেলতে চায়। তারা কঙ্গোর সেনাবাহিনীকে এফডিএলআরের সঙ্গে কাজ করার অভিযোগও করেছে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, এফডিএলআরকে ‘নিষ্ক্রিয়’ করতে হবে। তবে গত ৩০ বছরে বহুবার এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। রুয়ান্ডা বলে, এফডিএলআর নিষ্ক্রিয় হলেই তাঁরা সৈন্য সরাবে, আর কঙ্গো বলে, দুটো একসঙ্গে করতে হবে। এখানেই মধ্যস্থতাকারীদের একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।
সেমাতুম্বা বলেন, যেভাবে পক্ষগুলো চুক্তির ব্যাখ্যা দিচ্ছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে সামনে কী ধরনের জটিলতা অপেক্ষা করছে।
অধ্যাপক মোস্টার্ট বলেন, ‘শুধুমাত্র কূটনীতি দিয়ে শান্তি আনা সম্ভব নয়। এ জন্য আরও বিস্তৃত উদ্যোগ প্রয়োজন। শান্তি আসে ব্যথাকে রূপান্তরের মাধ্যমে। এটি কেবল কূটনীতির বিষয় নয়। এর জন্য দরকার সংলাপ, স্থানীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ এবং মানুষের অভিজ্ঞতাকে সম্মান জানানো। এই কারণেই আমি বিশ্বাস করি, যারা চুক্তি করছে এবং আইন প্রণয়ন করছে, তাদের অতীতের ইতিহাস, বিশেষ করে খনিজ সম্পদ লুটপাটের ট্রমা সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি।’
সুতরাং, যদি ট্রাম্প চান এই শান্তি দীর্ঘস্থায়ী হোক এবং মার্কিন কোম্পানিগুলো মুনাফা করুক, তাহলে তাকে দীর্ঘ সময় ধরে চাপ প্রয়োগ করে যেতে হতে পারে।
১৯১৪ সালের ২৮ জুলাই সকালে ছাদখোলা বিলাসবহুল গাড়িতে করে সস্ত্রীক বসনিয়া প্রবেশ করেন ফার্দিনান্দ। সারায়েভোর সড়কে গাড়ি পৌঁছালে তাঁদের দেখতে সড়কের দুপাশে উপচে পড়ে মানুষের ভিড়। চারদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ।
১০ ঘণ্টা আগেভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার আগামী বছর অনুষ্ঠেয় বিধানসভা নির্বাচনে আসামে ফের ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে। আর সেই নির্বাচনকে সামনে রেখেই সেখানে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। আর গত বছরের আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তথাকথিত ‘অবৈধ...
১৬ ঘণ্টা আগেঅতীত ইতিহাস বলে, বৈশ্বিক যেকোনো নিরাপত্তা চুক্তির আলোচনা ও স্বাক্ষরের টেবিল থাকত ব্রাসেলস অথবা ওয়াশিংটনে। কিন্তু সেই দৃশ্যপট বদলে বৈশ্বিক কোনো নিরাপত্তা চুক্তি যদি বেইজিংয়ে হয়, আর সেই টেবিলে ইরানও থাকে—তাহলে বিষয়টি কেমন হবে? এক সময় এমন ভাবনা একটু বাড়াবাড়ি মনে হলেও এখন এটি আর কল্পনা নয়।
২০ ঘণ্টা আগেথাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যকার শত বছরের পুরোনো সীমান্তবিরোধ আবারও রূপ নিয়েছে সংঘাতে। প্রাচীন হিন্দু মন্দির এলাকা, উপনিবেশ আমলের মানচিত্র এবং দীর্ঘদিনের অস্পষ্ট সীমারেখা—এসব ইস্যু ঘিরে দুই দেশের উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। তবে এবার এই সংঘর্ষের পেছনে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ ও ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার এমন এক
২ দিন আগে