আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের আরাকানে তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমার পক্ষ ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেখিয়েছে। এই তালিকার রোহিঙ্গারা দেশে ফেরার যোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে তারা। বাকিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
তবে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
ফলে আরাকান আর্মি (এএ) এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কও এখন বেশ জটিল এবং বহুমুখী। এই সম্পর্ক নির্ধারিত হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে।
আরাকান আর্মি হলো একটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও)। ২০০৯ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাখাইন বৌদ্ধরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এই অঞ্চলের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’ চায়। চীন, মিয়ানমারের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং অর্থনৈতিক অংশীদার। এই এলাকায় চীনের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে, বিশেষ করে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য আরাকান বেইজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাথমিক সম্পর্ক
আরাকান আর্মি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কাচিন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) তাদের প্রথম দিকের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। চীনের এই ভৌগোলিক নৈকট্য আরাকান আর্মিকে এমন একটি অঞ্চলে সম্পদ এবং নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল, যেখানে চীন দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরাকান আর্মি ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির (ইউডব্লিউএসএ) দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি আরেকটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠন আবার চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখে। আরাকান আর্মি পরে ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটিতে (এফপিএনসিসি) যোগ দেয়, যেটির নেতৃত্বে রয়েছে ইউডব্লিউএসএ। এই পরিবর্তন আরাকান আর্মিকে এমন একটি জোটের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে, যা চীনের সমর্থন পায়। যদিও বেইজিংয়ের সরাসরি জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুব সীমিত।
রাখাইনে চীনের কৌশলগত স্বার্থ
চীনের রাখাইন রাজ্যে আগ্রহ মূলত চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরের (সিএমইসি) ওপর কেন্দ্রীভূত। এটি বেইজিংয়ে বিআরআইয়ের মূল অংশ। এর মধ্যে রয়েছে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর এবং রাখাইন থেকে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের দ্বৈত পাইপলাইন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে মালাক্কা প্রণালিকে এড়াতে পারবে চীন। চীনের জ্বালানি আমদানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা এই মালাক্কা প্রণালি।
রাখাইনের স্থিতিশীলতা এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এসব প্রকল্প চীনের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। চলতি বছর আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা, বিশেষ করে কিয়াউকফিউয়ের কাছাকাছি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের চীনের স্বার্থগুলো সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে চীনের মিয়ানমার কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে।
সমর্থন এবং অস্ত্রের প্রবাহ
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণে জানা যায়, চীন পরোক্ষভাবে আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। প্রধানত অস্ত্র সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা দেয় বেইজিং। যদিও সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। আরাকান আর্মি চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে; যেমন ২০১৯ সালে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ওপর হামলায় ১০৭ মিমি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য রকেট এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক মিত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে জব্দ করা এফএন-৬ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট বন্দুক।
এই অস্ত্রগুলো ইউডব্লিউএসএর কাছ থেকে তারা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যারা চীনা নকশার অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা পরিচালনা করে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। ২০২০ সালে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, তারা আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য মূলত ভারতের কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পকে অস্থিতিশীল করা। যদিও বেইজিংয়ের সঙ্গে এমন অস্ত্র সরবরাহে সরাসরি সংযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বিরল।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করেন, আরাকান আর্মি তাদের তহবিলের ৯০ শতাংশই চীনা উৎস থেকে পায়। সম্ভবত ইউডব্লিউএসএর মতো প্রক্সির মাধ্যমে আসে এসব অর্থ ও অস্ত্র।
ভারসাম্য রক্ষার কৌশল: চীনের দ্বৈত পদ্ধতি
চীন মিয়ানমারে একটি দ্বৈত কৌশল অনুসরণ করে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক জান্তা (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল, এসএসি) এবং কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যার মধ্যে আরাকান আর্মিও রয়েছে, উভয়কেই সমর্থন করে চীন। যদিও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসএসিকে সমর্থন করে। যেমন ২০২৪ সালের নভেম্বরে জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর কুনমিং সফরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বেইজিং স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থান এই ভারসাম্যকে জটিল করে তুলেছে। উত্তরাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মতো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিকে (এমএনডিএএ) চীন ২০২৪ সালে অপারেশন ১০২৭-এর পর যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য করেছিল। বেইজিং তাদের তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আরাকান আর্মি এর বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও রাখাইনে তারা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এই অবাধ্যতা আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান স্বায়ত্তশাসন এবং স্থানীয় সমর্থনেরই নিদর্শন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর এই বিজয় আরাকান আর্মিকে সীমান্ত-সংলগ্ন গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় চীনা প্রভাবের কাছে কম নমনীয় করে তুলেছে।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ডের আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতের কালাদান প্রকল্পকে লক্ষ্যবস্তু করে আরাকান আর্মি। কিন্তু সেখানে তারা চীনা প্রকল্পগুলোতে হাত দেয়নি। ফলে এখানে ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে চীনের সমর্থনের একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে আরাকান আর্মি রাখাইনে চীনা প্রকল্প এবং কর্মীদের সুরক্ষার আশ্বাস দেয়। তারা কিয়াউকফিউ আক্রমণ না করার অঙ্গীকার করে। এটি নিঃসন্দেহে চীন ও আরাকান আর্মির মধ্যে বাস্তববাদী সম্পর্কের পরিচয় দেয়। অর্থাৎ এটি নিছক আনুগত্যের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন, আরাকান আর্মি চীনের সমর্থনকে এসএসির বিরুদ্ধে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করে। স্পষ্টত এখানে চীন আরাকান আর্মির অগ্রগতিতে ততক্ষণ পর্যন্ত সহ্য করে, যতক্ষণ তার বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। চলতি বছর আরাকান আর্মির আধিপত্য বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। বেইজিংয়ে এমন একটি গোষ্ঠীর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ধারণা তৈরি হয়েছে, বেইজিং এই গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
সম্পর্কের উত্তেজনা এবং সীমাবদ্ধতা
এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থানপতন ও উত্তেজনাও রয়েছে। আরাকান আর্মির রয়েছে জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা। তারা রাখাইন স্বায়ত্তশাসন চায়। তাদের এই অবস্থান চীনের এসএসি নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পছন্দের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এখানে চীনা স্বার্থ রক্ষার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালে এমএনডিএএর কমান্ডারকে আটক করার জন্য অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীকে চাপ দেয় বেইজিং। কিন্তু আরাকান আর্মির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নরম। এর কারণ হতে পারে, চীনের সীমান্ত থেকে রাখাইনের দূরত্ব এবং চীনা সম্পদের প্রতি আরাকান আর্মির কৌশলগত সংযম। অপরদিকে, বেইজিং জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে—এমন ধারণার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জন্য মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এমনকি বিদেশেও প্রবাসীরা চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ফলে মিয়ানমারে বেইজিংয়ের ভাবমূর্তি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
সংক্ষেপে বললে, আরাকান আর্মি-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধা দ্বারা নির্ধারিত। তাদের মধ্যে আছে কৌশলগত সতর্কতা এবং সংযম। চীন সম্ভবত তাদের পরোক্ষ সমর্থন দেয়। ইউডব্লিউএসএর মতো মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা অস্ত্র ও টাকা পায়। মূলত রাখাইনে প্রভাব বজায় রাখতে এবং ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করতে চীন এটি করছে। আর সেই সুবাদে আরাকান আর্মি এসএসির বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করার রসদ পাচ্ছে।
তবে এটিও সত্য যে আরাকান আর্মির স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সক্ষমতা এবং স্থানীয় সমর্থন, নিজেদের শর্ত নির্ধারণে চীনের ক্ষমতাকে সীমিত করছে। এই আরাকান আর্মি মিয়ানমারের অন্যান্য অনুগত জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি যা, তাতে বলা যায়, সামগ্রিক অবস্থা এখনো ব্যাপক পরিবর্তনশীল। যুদ্ধক্ষেত্রে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনকে মিয়ানমারের অস্থির পশ্চিমে তার অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের আরাকানে তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমার পক্ষ ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেখিয়েছে। এই তালিকার রোহিঙ্গারা দেশে ফেরার যোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে তারা। বাকিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
তবে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
ফলে আরাকান আর্মি (এএ) এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কও এখন বেশ জটিল এবং বহুমুখী। এই সম্পর্ক নির্ধারিত হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে।
আরাকান আর্মি হলো একটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও)। ২০০৯ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাখাইন বৌদ্ধরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এই অঞ্চলের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’ চায়। চীন, মিয়ানমারের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং অর্থনৈতিক অংশীদার। এই এলাকায় চীনের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে, বিশেষ করে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য আরাকান বেইজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাথমিক সম্পর্ক
আরাকান আর্মি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কাচিন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) তাদের প্রথম দিকের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। চীনের এই ভৌগোলিক নৈকট্য আরাকান আর্মিকে এমন একটি অঞ্চলে সম্পদ এবং নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল, যেখানে চীন দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরাকান আর্মি ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির (ইউডব্লিউএসএ) দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি আরেকটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠন আবার চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখে। আরাকান আর্মি পরে ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটিতে (এফপিএনসিসি) যোগ দেয়, যেটির নেতৃত্বে রয়েছে ইউডব্লিউএসএ। এই পরিবর্তন আরাকান আর্মিকে এমন একটি জোটের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে, যা চীনের সমর্থন পায়। যদিও বেইজিংয়ের সরাসরি জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুব সীমিত।
রাখাইনে চীনের কৌশলগত স্বার্থ
চীনের রাখাইন রাজ্যে আগ্রহ মূলত চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরের (সিএমইসি) ওপর কেন্দ্রীভূত। এটি বেইজিংয়ে বিআরআইয়ের মূল অংশ। এর মধ্যে রয়েছে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর এবং রাখাইন থেকে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের দ্বৈত পাইপলাইন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে মালাক্কা প্রণালিকে এড়াতে পারবে চীন। চীনের জ্বালানি আমদানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা এই মালাক্কা প্রণালি।
রাখাইনের স্থিতিশীলতা এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এসব প্রকল্প চীনের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। চলতি বছর আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা, বিশেষ করে কিয়াউকফিউয়ের কাছাকাছি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের চীনের স্বার্থগুলো সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে চীনের মিয়ানমার কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে।
সমর্থন এবং অস্ত্রের প্রবাহ
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণে জানা যায়, চীন পরোক্ষভাবে আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। প্রধানত অস্ত্র সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা দেয় বেইজিং। যদিও সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। আরাকান আর্মি চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে; যেমন ২০১৯ সালে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ওপর হামলায় ১০৭ মিমি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য রকেট এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক মিত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে জব্দ করা এফএন-৬ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট বন্দুক।
এই অস্ত্রগুলো ইউডব্লিউএসএর কাছ থেকে তারা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যারা চীনা নকশার অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা পরিচালনা করে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। ২০২০ সালে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, তারা আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য মূলত ভারতের কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পকে অস্থিতিশীল করা। যদিও বেইজিংয়ের সঙ্গে এমন অস্ত্র সরবরাহে সরাসরি সংযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বিরল।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করেন, আরাকান আর্মি তাদের তহবিলের ৯০ শতাংশই চীনা উৎস থেকে পায়। সম্ভবত ইউডব্লিউএসএর মতো প্রক্সির মাধ্যমে আসে এসব অর্থ ও অস্ত্র।
ভারসাম্য রক্ষার কৌশল: চীনের দ্বৈত পদ্ধতি
চীন মিয়ানমারে একটি দ্বৈত কৌশল অনুসরণ করে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক জান্তা (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল, এসএসি) এবং কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যার মধ্যে আরাকান আর্মিও রয়েছে, উভয়কেই সমর্থন করে চীন। যদিও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসএসিকে সমর্থন করে। যেমন ২০২৪ সালের নভেম্বরে জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর কুনমিং সফরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বেইজিং স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থান এই ভারসাম্যকে জটিল করে তুলেছে। উত্তরাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মতো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিকে (এমএনডিএএ) চীন ২০২৪ সালে অপারেশন ১০২৭-এর পর যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য করেছিল। বেইজিং তাদের তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আরাকান আর্মি এর বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও রাখাইনে তারা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এই অবাধ্যতা আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান স্বায়ত্তশাসন এবং স্থানীয় সমর্থনেরই নিদর্শন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর এই বিজয় আরাকান আর্মিকে সীমান্ত-সংলগ্ন গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় চীনা প্রভাবের কাছে কম নমনীয় করে তুলেছে।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ডের আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতের কালাদান প্রকল্পকে লক্ষ্যবস্তু করে আরাকান আর্মি। কিন্তু সেখানে তারা চীনা প্রকল্পগুলোতে হাত দেয়নি। ফলে এখানে ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে চীনের সমর্থনের একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে আরাকান আর্মি রাখাইনে চীনা প্রকল্প এবং কর্মীদের সুরক্ষার আশ্বাস দেয়। তারা কিয়াউকফিউ আক্রমণ না করার অঙ্গীকার করে। এটি নিঃসন্দেহে চীন ও আরাকান আর্মির মধ্যে বাস্তববাদী সম্পর্কের পরিচয় দেয়। অর্থাৎ এটি নিছক আনুগত্যের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন, আরাকান আর্মি চীনের সমর্থনকে এসএসির বিরুদ্ধে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করে। স্পষ্টত এখানে চীন আরাকান আর্মির অগ্রগতিতে ততক্ষণ পর্যন্ত সহ্য করে, যতক্ষণ তার বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। চলতি বছর আরাকান আর্মির আধিপত্য বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। বেইজিংয়ে এমন একটি গোষ্ঠীর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ধারণা তৈরি হয়েছে, বেইজিং এই গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
সম্পর্কের উত্তেজনা এবং সীমাবদ্ধতা
এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থানপতন ও উত্তেজনাও রয়েছে। আরাকান আর্মির রয়েছে জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা। তারা রাখাইন স্বায়ত্তশাসন চায়। তাদের এই অবস্থান চীনের এসএসি নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পছন্দের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এখানে চীনা স্বার্থ রক্ষার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালে এমএনডিএএর কমান্ডারকে আটক করার জন্য অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীকে চাপ দেয় বেইজিং। কিন্তু আরাকান আর্মির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নরম। এর কারণ হতে পারে, চীনের সীমান্ত থেকে রাখাইনের দূরত্ব এবং চীনা সম্পদের প্রতি আরাকান আর্মির কৌশলগত সংযম। অপরদিকে, বেইজিং জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে—এমন ধারণার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জন্য মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এমনকি বিদেশেও প্রবাসীরা চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ফলে মিয়ানমারে বেইজিংয়ের ভাবমূর্তি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
সংক্ষেপে বললে, আরাকান আর্মি-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধা দ্বারা নির্ধারিত। তাদের মধ্যে আছে কৌশলগত সতর্কতা এবং সংযম। চীন সম্ভবত তাদের পরোক্ষ সমর্থন দেয়। ইউডব্লিউএসএর মতো মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা অস্ত্র ও টাকা পায়। মূলত রাখাইনে প্রভাব বজায় রাখতে এবং ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করতে চীন এটি করছে। আর সেই সুবাদে আরাকান আর্মি এসএসির বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করার রসদ পাচ্ছে।
তবে এটিও সত্য যে আরাকান আর্মির স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সক্ষমতা এবং স্থানীয় সমর্থন, নিজেদের শর্ত নির্ধারণে চীনের ক্ষমতাকে সীমিত করছে। এই আরাকান আর্মি মিয়ানমারের অন্যান্য অনুগত জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি যা, তাতে বলা যায়, সামগ্রিক অবস্থা এখনো ব্যাপক পরিবর্তনশীল। যুদ্ধক্ষেত্রে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনকে মিয়ানমারের অস্থির পশ্চিমে তার অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের আরাকানে তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমার পক্ষ ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেখিয়েছে। এই তালিকার রোহিঙ্গারা দেশে ফেরার যোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে তারা। বাকিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
তবে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
ফলে আরাকান আর্মি (এএ) এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কও এখন বেশ জটিল এবং বহুমুখী। এই সম্পর্ক নির্ধারিত হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে।
আরাকান আর্মি হলো একটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও)। ২০০৯ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাখাইন বৌদ্ধরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এই অঞ্চলের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’ চায়। চীন, মিয়ানমারের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং অর্থনৈতিক অংশীদার। এই এলাকায় চীনের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে, বিশেষ করে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য আরাকান বেইজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাথমিক সম্পর্ক
আরাকান আর্মি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কাচিন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) তাদের প্রথম দিকের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। চীনের এই ভৌগোলিক নৈকট্য আরাকান আর্মিকে এমন একটি অঞ্চলে সম্পদ এবং নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল, যেখানে চীন দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরাকান আর্মি ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির (ইউডব্লিউএসএ) দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি আরেকটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠন আবার চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখে। আরাকান আর্মি পরে ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটিতে (এফপিএনসিসি) যোগ দেয়, যেটির নেতৃত্বে রয়েছে ইউডব্লিউএসএ। এই পরিবর্তন আরাকান আর্মিকে এমন একটি জোটের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে, যা চীনের সমর্থন পায়। যদিও বেইজিংয়ের সরাসরি জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুব সীমিত।
রাখাইনে চীনের কৌশলগত স্বার্থ
চীনের রাখাইন রাজ্যে আগ্রহ মূলত চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরের (সিএমইসি) ওপর কেন্দ্রীভূত। এটি বেইজিংয়ে বিআরআইয়ের মূল অংশ। এর মধ্যে রয়েছে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর এবং রাখাইন থেকে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের দ্বৈত পাইপলাইন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে মালাক্কা প্রণালিকে এড়াতে পারবে চীন। চীনের জ্বালানি আমদানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা এই মালাক্কা প্রণালি।
রাখাইনের স্থিতিশীলতা এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এসব প্রকল্প চীনের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। চলতি বছর আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা, বিশেষ করে কিয়াউকফিউয়ের কাছাকাছি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের চীনের স্বার্থগুলো সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে চীনের মিয়ানমার কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে।
সমর্থন এবং অস্ত্রের প্রবাহ
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণে জানা যায়, চীন পরোক্ষভাবে আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। প্রধানত অস্ত্র সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা দেয় বেইজিং। যদিও সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। আরাকান আর্মি চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে; যেমন ২০১৯ সালে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ওপর হামলায় ১০৭ মিমি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য রকেট এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক মিত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে জব্দ করা এফএন-৬ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট বন্দুক।
এই অস্ত্রগুলো ইউডব্লিউএসএর কাছ থেকে তারা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যারা চীনা নকশার অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা পরিচালনা করে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। ২০২০ সালে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, তারা আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য মূলত ভারতের কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পকে অস্থিতিশীল করা। যদিও বেইজিংয়ের সঙ্গে এমন অস্ত্র সরবরাহে সরাসরি সংযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বিরল।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করেন, আরাকান আর্মি তাদের তহবিলের ৯০ শতাংশই চীনা উৎস থেকে পায়। সম্ভবত ইউডব্লিউএসএর মতো প্রক্সির মাধ্যমে আসে এসব অর্থ ও অস্ত্র।
ভারসাম্য রক্ষার কৌশল: চীনের দ্বৈত পদ্ধতি
চীন মিয়ানমারে একটি দ্বৈত কৌশল অনুসরণ করে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক জান্তা (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল, এসএসি) এবং কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যার মধ্যে আরাকান আর্মিও রয়েছে, উভয়কেই সমর্থন করে চীন। যদিও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসএসিকে সমর্থন করে। যেমন ২০২৪ সালের নভেম্বরে জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর কুনমিং সফরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বেইজিং স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থান এই ভারসাম্যকে জটিল করে তুলেছে। উত্তরাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মতো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিকে (এমএনডিএএ) চীন ২০২৪ সালে অপারেশন ১০২৭-এর পর যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য করেছিল। বেইজিং তাদের তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আরাকান আর্মি এর বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও রাখাইনে তারা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এই অবাধ্যতা আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান স্বায়ত্তশাসন এবং স্থানীয় সমর্থনেরই নিদর্শন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর এই বিজয় আরাকান আর্মিকে সীমান্ত-সংলগ্ন গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় চীনা প্রভাবের কাছে কম নমনীয় করে তুলেছে।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ডের আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতের কালাদান প্রকল্পকে লক্ষ্যবস্তু করে আরাকান আর্মি। কিন্তু সেখানে তারা চীনা প্রকল্পগুলোতে হাত দেয়নি। ফলে এখানে ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে চীনের সমর্থনের একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে আরাকান আর্মি রাখাইনে চীনা প্রকল্প এবং কর্মীদের সুরক্ষার আশ্বাস দেয়। তারা কিয়াউকফিউ আক্রমণ না করার অঙ্গীকার করে। এটি নিঃসন্দেহে চীন ও আরাকান আর্মির মধ্যে বাস্তববাদী সম্পর্কের পরিচয় দেয়। অর্থাৎ এটি নিছক আনুগত্যের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন, আরাকান আর্মি চীনের সমর্থনকে এসএসির বিরুদ্ধে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করে। স্পষ্টত এখানে চীন আরাকান আর্মির অগ্রগতিতে ততক্ষণ পর্যন্ত সহ্য করে, যতক্ষণ তার বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। চলতি বছর আরাকান আর্মির আধিপত্য বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। বেইজিংয়ে এমন একটি গোষ্ঠীর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ধারণা তৈরি হয়েছে, বেইজিং এই গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
সম্পর্কের উত্তেজনা এবং সীমাবদ্ধতা
এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থানপতন ও উত্তেজনাও রয়েছে। আরাকান আর্মির রয়েছে জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা। তারা রাখাইন স্বায়ত্তশাসন চায়। তাদের এই অবস্থান চীনের এসএসি নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পছন্দের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এখানে চীনা স্বার্থ রক্ষার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালে এমএনডিএএর কমান্ডারকে আটক করার জন্য অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীকে চাপ দেয় বেইজিং। কিন্তু আরাকান আর্মির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নরম। এর কারণ হতে পারে, চীনের সীমান্ত থেকে রাখাইনের দূরত্ব এবং চীনা সম্পদের প্রতি আরাকান আর্মির কৌশলগত সংযম। অপরদিকে, বেইজিং জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে—এমন ধারণার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জন্য মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এমনকি বিদেশেও প্রবাসীরা চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ফলে মিয়ানমারে বেইজিংয়ের ভাবমূর্তি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
সংক্ষেপে বললে, আরাকান আর্মি-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধা দ্বারা নির্ধারিত। তাদের মধ্যে আছে কৌশলগত সতর্কতা এবং সংযম। চীন সম্ভবত তাদের পরোক্ষ সমর্থন দেয়। ইউডব্লিউএসএর মতো মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা অস্ত্র ও টাকা পায়। মূলত রাখাইনে প্রভাব বজায় রাখতে এবং ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করতে চীন এটি করছে। আর সেই সুবাদে আরাকান আর্মি এসএসির বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করার রসদ পাচ্ছে।
তবে এটিও সত্য যে আরাকান আর্মির স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সক্ষমতা এবং স্থানীয় সমর্থন, নিজেদের শর্ত নির্ধারণে চীনের ক্ষমতাকে সীমিত করছে। এই আরাকান আর্মি মিয়ানমারের অন্যান্য অনুগত জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি যা, তাতে বলা যায়, সামগ্রিক অবস্থা এখনো ব্যাপক পরিবর্তনশীল। যুদ্ধক্ষেত্রে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনকে মিয়ানমারের অস্থির পশ্চিমে তার অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বাংলাদেশে আশ্রিত ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারের আরাকানে তাদের নিজ ভূমে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় আশানুরূপ কোনো অগ্রগতি হয়নি। সর্বশেষ ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের রোহিঙ্গা সমস্যাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেনটেটিভ খলিলুর রহমানের সঙ্গে মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে মিয়ানমার পক্ষ ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার একটি তালিকা দেখিয়েছে। এই তালিকার রোহিঙ্গারা দেশে ফেরার যোগ্য বলে চিহ্নিত করেছে তারা। বাকিদের বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে।
তবে মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই জটিলতার কথা স্বীকার করছেন।
আরাকান এলাকায় এখন পক্ষগুলোর মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি, মিয়ানমার সরকার এবং চীন। সেখানে বিশেষ করে খনিজ সম্পদে চীনের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রয়েছে।
ফলে আরাকান আর্মি (এএ) এবং চীনের মধ্যে সম্পর্কও এখন বেশ জটিল এবং বহুমুখী। এই সম্পর্ক নির্ধারিত হচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, অর্থনৈতিক বিনিয়োগ এবং মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে গতিপ্রকৃতির মাধ্যমে।
আরাকান আর্মি হলো একটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন (ইএও)। ২০০৯ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রাখাইন বৌদ্ধরা এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। তারা এই অঞ্চলের জন্য বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন বা ‘কনফেডারেট স্ট্যাটাস’ চায়। চীন, মিয়ানমারের বৃহত্তম প্রতিবেশী এবং অর্থনৈতিক অংশীদার। এই এলাকায় চীনের উল্লেখযোগ্য স্বার্থ রয়েছে, বিশেষ করে তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্পের জন্য আরাকান বেইজিংয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাথমিক সম্পর্ক
আরাকান আর্মি মিয়ানমার-চীন সীমান্তে কাচিন রাজ্যে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কাচিন ইনডিপেনডেন্ট আর্মি (কেআইএ) তাদের প্রথম দিকের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়। চীনের এই ভৌগোলিক নৈকট্য আরাকান আর্মিকে এমন একটি অঞ্চলে সম্পদ এবং নেটওয়ার্কে প্রবেশাধিকার দিয়েছিল, যেখানে চীন দীর্ঘদিন ধরে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর প্রভাব বিস্তার করে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরাকান আর্মি ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মির (ইউডব্লিউএসএ) দিকে ঝুঁকে পড়ে। এটি আরেকটি জাতিগত সশস্ত্র সংগঠন। এই সংগঠন আবার চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক রাখে। আরাকান আর্মি পরে ফেডারেল পলিটিক্যাল নেগোসিয়েশন অ্যান্ড কনসালটেটিভ কমিটিতে (এফপিএনসিসি) যোগ দেয়, যেটির নেতৃত্বে রয়েছে ইউডব্লিউএসএ। এই পরিবর্তন আরাকান আর্মিকে এমন একটি জোটের মধ্যে স্থান করে দিয়েছে, যা চীনের সমর্থন পায়। যদিও বেইজিংয়ের সরাসরি জড়িত থাকার প্রত্যক্ষ প্রমাণ খুব সীমিত।
রাখাইনে চীনের কৌশলগত স্বার্থ
চীনের রাখাইন রাজ্যে আগ্রহ মূলত চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডরের (সিএমইসি) ওপর কেন্দ্রীভূত। এটি বেইজিংয়ে বিআরআইয়ের মূল অংশ। এর মধ্যে রয়েছে কিয়াউকফিউ গভীর সমুদ্রবন্দর এবং রাখাইন থেকে ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত তেল ও গ্যাসের দ্বৈত পাইপলাইন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে মালাক্কা প্রণালিকে এড়াতে পারবে চীন। চীনের জ্বালানি আমদানির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বাধা এই মালাক্কা প্রণালি।
রাখাইনের স্থিতিশীলতা এই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পগুলোর জন্য অত্যাবশ্যক। এসব প্রকল্প চীনের বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াতে সহায়তা করবে। চলতি বছর আরাকান আর্মি রাখাইনের বেশির ভাগ এলাকা, বিশেষ করে কিয়াউকফিউয়ের কাছাকাছি অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ফলে এই অঞ্চলের চীনের স্বার্থগুলো সরাসরি প্রভাবিত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মিকে চীনের মিয়ানমার কৌশলে একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় করে তুলেছে।
সমর্থন এবং অস্ত্রের প্রবাহ
বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং বিশ্লেষণে জানা যায়, চীন পরোক্ষভাবে আরাকান আর্মিকে সমর্থন করে। প্রধানত অস্ত্র সরবরাহ এবং আর্থিক সহায়তা দেয় বেইজিং। যদিও সরাসরি জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। আরাকান আর্মি চীনের তৈরি অস্ত্র ব্যবহার করে; যেমন ২০১৯ সালে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ওপর হামলায় ১০৭ মিমি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য রকেট এবং মিয়ানমার সামরিক বাহিনী কর্তৃক মিত্র গোষ্ঠীগুলোর কাছ থেকে জব্দ করা এফএন-৬ অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট বন্দুক।
এই অস্ত্রগুলো ইউডব্লিউএসএর কাছ থেকে তারা পেয়েছে বলে ধারণা করা হয়। যারা চীনা নকশার অস্ত্র উৎপাদনের কারখানা পরিচালনা করে এবং চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখে। ২০২০ সালে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিল, তারা আরাকান আর্মি এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে অস্ত্র সরবরাহ করছে। বেইজিংয়ের উদ্দেশ্য মূলত ভারতের কালাদান মাল্টি-মোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পকে অস্থিতিশীল করা। যদিও বেইজিংয়ের সঙ্গে এমন অস্ত্র সরবরাহে সরাসরি সংযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ বিরল।
বিশ্লেষকেরা অনুমান করেন, আরাকান আর্মি তাদের তহবিলের ৯০ শতাংশই চীনা উৎস থেকে পায়। সম্ভবত ইউডব্লিউএসএর মতো প্রক্সির মাধ্যমে আসে এসব অর্থ ও অস্ত্র।
ভারসাম্য রক্ষার কৌশল: চীনের দ্বৈত পদ্ধতি
চীন মিয়ানমারে একটি দ্বৈত কৌশল অনুসরণ করে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় সামরিক জান্তা (স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল, এসএসি) এবং কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠী, যার মধ্যে আরাকান আর্মিও রয়েছে, উভয়কেই সমর্থন করে চীন। যদিও বেইজিং আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এসএসিকে সমর্থন করে। যেমন ২০২৪ সালের নভেম্বরে জেনারেল মিন অং হ্লাইং-এর কুনমিং সফরে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, বেইজিং স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে জাতিগত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে।
তবে সাম্প্রতিক সময়ে রাখাইনে আরাকান আর্মির উত্থান এই ভারসাম্যকে জটিল করে তুলেছে। উত্তরাঞ্চলের জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মতো মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মিকে (এমএনডিএএ) চীন ২০২৪ সালে অপারেশন ১০২৭-এর পর যুদ্ধবিরতি মেনে চলতে বাধ্য করেছিল। বেইজিং তাদের তৎপরতা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু আরাকান আর্মি এর বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে শান রাজ্যে যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও রাখাইনে তারা আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। এই অবাধ্যতা আরাকান আর্মির ক্রমবর্ধমান স্বায়ত্তশাসন এবং স্থানীয় সমর্থনেরই নিদর্শন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ওপর এই বিজয় আরাকান আর্মিকে সীমান্ত-সংলগ্ন গোষ্ঠীগুলোর তুলনায় চীনা প্রভাবের কাছে কম নমনীয় করে তুলেছে।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
আরাকান আর্মির কর্মকাণ্ডের আঞ্চলিক প্রভাবও রয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ এবং ভারতের কালাদান প্রকল্পকে লক্ষ্যবস্তু করে আরাকান আর্মি। কিন্তু সেখানে তারা চীনা প্রকল্পগুলোতে হাত দেয়নি। ফলে এখানে ভারতীয় প্রভাবের বিরুদ্ধে চীনের সমর্থনের একটা জল্পনা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালে আরাকান আর্মি রাখাইনে চীনা প্রকল্প এবং কর্মীদের সুরক্ষার আশ্বাস দেয়। তারা কিয়াউকফিউ আক্রমণ না করার অঙ্গীকার করে। এটি নিঃসন্দেহে চীন ও আরাকান আর্মির মধ্যে বাস্তববাদী সম্পর্কের পরিচয় দেয়। অর্থাৎ এটি নিছক আনুগত্যের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই।
বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন, আরাকান আর্মি চীনের সমর্থনকে এসএসির বিরুদ্ধে তার অবস্থান শক্তিশালী করতে ব্যবহার করে। স্পষ্টত এখানে চীন আরাকান আর্মির অগ্রগতিতে ততক্ষণ পর্যন্ত সহ্য করে, যতক্ষণ তার বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। চলতি বছর আরাকান আর্মির আধিপত্য বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কের এই গতিপ্রকৃতি পরিবর্তিত হয়েছে। বেইজিংয়ে এমন একটি গোষ্ঠীর ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ধারণা তৈরি হয়েছে, বেইজিং এই গোষ্ঠীকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
সম্পর্কের উত্তেজনা এবং সীমাবদ্ধতা
এই সম্পর্কের মধ্যে উত্থানপতন ও উত্তেজনাও রয়েছে। আরাকান আর্মির রয়েছে জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা। তারা রাখাইন স্বায়ত্তশাসন চায়। তাদের এই অবস্থান চীনের এসএসি নিয়ন্ত্রিত মিয়ানমারের জান্তা সরকারের পছন্দের সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে এখানে চীনা স্বার্থ রক্ষার প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। ২০২৪ সালে এমএনডিএএর কমান্ডারকে আটক করার জন্য অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীকে চাপ দেয় বেইজিং। কিন্তু আরাকান আর্মির প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি নরম। এর কারণ হতে পারে, চীনের সীমান্ত থেকে রাখাইনের দূরত্ব এবং চীনা সম্পদের প্রতি আরাকান আর্মির কৌশলগত সংযম। অপরদিকে, বেইজিং জান্তা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে—এমন ধারণার প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জন্য মিয়ানমারে চীনবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এমনকি বিদেশেও প্রবাসীরা চীনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। ফলে মিয়ানমারে বেইজিংয়ের ভাবমূর্তি বেশ জটিল হয়ে উঠেছে।
সংক্ষেপে বললে, আরাকান আর্মি-চীন সম্পর্ক পারস্পরিক সুবিধা দ্বারা নির্ধারিত। তাদের মধ্যে আছে কৌশলগত সতর্কতা এবং সংযম। চীন সম্ভবত তাদের পরোক্ষ সমর্থন দেয়। ইউডব্লিউএসএর মতো মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে তারা অস্ত্র ও টাকা পায়। মূলত রাখাইনে প্রভাব বজায় রাখতে এবং ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের মোকাবিলা করতে চীন এটি করছে। আর সেই সুবাদে আরাকান আর্মি এসএসির বিরুদ্ধে লড়াই আরও শক্তিশালী করার রসদ পাচ্ছে।
তবে এটিও সত্য যে আরাকান আর্মির স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারার সক্ষমতা এবং স্থানীয় সমর্থন, নিজেদের শর্ত নির্ধারণে চীনের ক্ষমতাকে সীমিত করছে। এই আরাকান আর্মি মিয়ানমারের অন্যান্য অনুগত জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর চেয়ে আলাদা।
সর্বশেষ পরিস্থিতি যা, তাতে বলা যায়, সামগ্রিক অবস্থা এখনো ব্যাপক পরিবর্তনশীল। যুদ্ধক্ষেত্রে আরাকান আর্মির অগ্রগতি চীনকে মিয়ানমারের অস্থির পশ্চিমে তার অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে।
লিখেছেন: জাহাঙ্গীর আলম, জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
৩ ঘণ্টা আগেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
৬ ঘণ্টা আগেবেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৮ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ দুই নেতার আসন্ন বৈঠক নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবরগুলো এখন বেশ অতিরঞ্জিত বলেই মনে হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে ‘দুই সপ্তাহের মধ্যেই’ বৈঠক করবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের প্রাথমিক আলোচনাও বাতিল হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি কোনো অর্থহীন বৈঠক করতে চাই না। সময় নষ্ট করতে চাই না, দেখি কী হয়।’ বৈঠক হবে কি হবে না—এই দোলাচলই যেন ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে ট্রাম্পের চেষ্টার সর্বশেষ অধ্যায়। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি করানোর পর থেকে বিষয়টি তাঁর বিশেষ নজরে এসেছে।
গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে এই যুদ্ধ।
উইটকফের মতে, গাজা চুক্তি সম্ভব হয়েছিল মূলত ইসরায়েলের এক অপ্রত্যাশিত ভুল পদক্ষেপের কারণে। আর সেটি ছিল কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর হামলা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে এই হামলা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের পথ খুলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে আগায়।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকেই ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেছেন, পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও বদলে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সমর্থন জানিয়ে আবারও সেই ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন।
ইসরায়েলিদের মধ্যে ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর চেয়েও জনপ্রিয়। ফলে ইসরায়েলি নেতার ওপর তাঁর প্রভাবও অনন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরব বিশ্বের কয়েকটি প্রধান দেশের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর কূটনৈতিক প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সে ধরনের প্রভাববলয় নেই। গত ৯ মাসে তিনি পুতিন ও জেলেনস্কি—দুজনকেই কখনো চাপ, কখনো সমঝোতার মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ফল হয়নি বললেই চলে। তিনি রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন, এই পদক্ষেপগুলো নিলে বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে এবং যুদ্ধ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও দেশটিতে অস্ত্র পাঠানোও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগের মুখে তিনি আবার পিছু হটেন। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো সতর্ক করে বলেছিল, ইউক্রেনের পতন পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। মূলত সেই আশঙ্কা থেকেই ট্রাম্প পিছু হটেন।
ট্রাম্প প্রায়ই নিজের ‘চুক্তি করার দক্ষতা’ নিয়ে গর্ব করেন। দাবি করেন, সামনাসামনি বৈঠকেই তিনি সমাধান বের করে ফেলতে পারেন। কিন্তু পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠকগুলোর কোনোটি যুদ্ধের সমাধান এগিয়ে নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন হয়তো ট্রাম্পের এই ‘চুক্তির নেশা’ ও মুখোমুখি আলোচনার প্রতি বিশ্বাসকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করছেন।
গত জুলাইয়ে পুতিন আলাস্কায় এক সম্মেলনের প্রস্তাবে রাজি হন। সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সিনেটরদের সমর্থিত রাশিয়ার একটি নিষেধাজ্ঞা বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে সেই বিল স্থগিত করা হয়। গত সপ্তাহে খবর ছড়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ও প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-এয়ার মিসাইল পাঠানোর কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আর ঠিক তখনই পুতিন ফোন করেন ট্রাম্পকে। আর ট্রাম্প ঘোষণা দেন সম্ভাব্য এক সম্মেলনের, যা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।
পরদিন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক ছিল টান টান, জেলেনস্কি ফিরে যান খালি হাতে। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন, তাঁকে পুতিন প্রভাবিত করতে পারেননি। তাঁর ভাষায়, ‘জীবনে অনেকবার আমি সেরা চালবাজদের সঙ্গে খেলেছি, কিন্তু প্রতিবারই ভালোভাবে বেরিয়ে এসেছি।’
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পরে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে আমাদের জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেল, রাশিয়া প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কূটনীতিতে আগ্রহ হারাল।’
অল্প ক’দিনের মধ্যেই ট্রাম্প একের পর এক দোদুল্যমান অবস্থান প্রকাশ করেছেন। একদিকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ভাবনা, অন্যদিকে পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে বৈঠকের পরিকল্পনা, আর ব্যক্তিগতভাবে জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছেন পুরো দনবাস অঞ্চল ছাড়তে। শেষ পর্যন্ত তিনি অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আহ্বানে। তাঁর প্রস্তাবিত বর্তমান যুদ্ধরেখা ধরে অস্ত্রবিরতি রাশিয়া স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করতে পারবেন। এখন তিনি সে দাবি থেকে সরে এসে স্বীকার করছেন, যুদ্ধ থামানো তাঁর কল্পনার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ। এটা এক বিরল স্বীকারোক্তি। বিশেষ করে, নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এবং এক এমন শান্তির কাঠামো গড়ার জটিলতা, যেখানে কোনো পক্ষই লড়াই ছাড়তে চায় না, বা ছাড়তে পারে না—এমন অবস্থানে যুদ্ধ থামানো আসলেই কঠিন।
যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার শীর্ষ দুই নেতার আসন্ন বৈঠক নিয়ে ছড়িয়ে পড়া খবরগুলো এখন বেশ অতিরঞ্জিত বলেই মনে হচ্ছে। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে ‘দুই সপ্তাহের মধ্যেই’ বৈঠক করবেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই বৈঠক অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের প্রাথমিক আলোচনাও বাতিল হয়েছে।
হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি কোনো অর্থহীন বৈঠক করতে চাই না। সময় নষ্ট করতে চাই না, দেখি কী হয়।’ বৈঠক হবে কি হবে না—এই দোলাচলই যেন ইউক্রেন যুদ্ধের ইতি টানতে ট্রাম্পের চেষ্টার সর্বশেষ অধ্যায়। গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তি করানোর পর থেকে বিষয়টি তাঁর বিশেষ নজরে এসেছে।
গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে এই যুদ্ধ।
উইটকফের মতে, গাজা চুক্তি সম্ভব হয়েছিল মূলত ইসরায়েলের এক অপ্রত্যাশিত ভুল পদক্ষেপের কারণে। আর সেটি ছিল কাতারে হামাসের আলোচকদের ওপর হামলা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররা ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে এই হামলা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর ট্রাম্পের চাপ প্রয়োগের পথ খুলে দেয়, যা শেষ পর্যন্ত একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তির পথে আগায়।
ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে তাঁর প্রথম মেয়াদ থেকেই ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেছেন, পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিও বদলে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে সমর্থন জানিয়ে আবারও সেই ঘনিষ্ঠতা দেখিয়েছেন।
ইসরায়েলিদের মধ্যে ট্রাম্প এখন নেতানিয়াহুর চেয়েও জনপ্রিয়। ফলে ইসরায়েলি নেতার ওপর তাঁর প্রভাবও অনন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরব বিশ্বের কয়েকটি প্রধান দেশের সঙ্গে তাঁর ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক। ফলে মধ্যপ্রাচ্যে তাঁর কূটনৈতিক প্রভাব ছিল যথেষ্ট শক্তিশালী।
কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের সে ধরনের প্রভাববলয় নেই। গত ৯ মাসে তিনি পুতিন ও জেলেনস্কি—দুজনকেই কখনো চাপ, কখনো সমঝোতার মাধ্যমে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ফল হয়নি বললেই চলে। তিনি রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানিতে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ইউক্রেনকে দূরপাল্লার অস্ত্র দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বুঝতে পেরেছেন, এই পদক্ষেপগুলো নিলে বৈশ্বিক অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়তে পারে এবং যুদ্ধ আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রকাশ্যে ভলোদিমির জেলেনস্কির তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইউক্রেনের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় ও দেশটিতে অস্ত্র পাঠানোও সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবে ইউরোপীয় মিত্রদের উদ্বেগের মুখে তিনি আবার পিছু হটেন। ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলো সতর্ক করে বলেছিল, ইউক্রেনের পতন পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। মূলত সেই আশঙ্কা থেকেই ট্রাম্প পিছু হটেন।
ট্রাম্প প্রায়ই নিজের ‘চুক্তি করার দক্ষতা’ নিয়ে গর্ব করেন। দাবি করেন, সামনাসামনি বৈঠকেই তিনি সমাধান বের করে ফেলতে পারেন। কিন্তু পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বৈঠকগুলোর কোনোটি যুদ্ধের সমাধান এগিয়ে নেয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, পুতিন হয়তো ট্রাম্পের এই ‘চুক্তির নেশা’ ও মুখোমুখি আলোচনার প্রতি বিশ্বাসকে নিজের পক্ষে ব্যবহার করছেন।
গত জুলাইয়ে পুতিন আলাস্কায় এক সম্মেলনের প্রস্তাবে রাজি হন। সে সময় মার্কিন কংগ্রেসের রিপাবলিকান সিনেটরদের সমর্থিত রাশিয়ার একটি নিষেধাজ্ঞা বিলে ট্রাম্পের স্বাক্ষরের সম্ভাবনা তৈরি হয়। পরে সেই বিল স্থগিত করা হয়। গত সপ্তাহে খবর ছড়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে টমাহক ক্রুজ মিসাইল ও প্যাট্রিয়ট অ্যান্টি-এয়ার মিসাইল পাঠানোর কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আর ঠিক তখনই পুতিন ফোন করেন ট্রাম্পকে। আর ট্রাম্প ঘোষণা দেন সম্ভাব্য এক সম্মেলনের, যা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।
পরদিন ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক ছিল টান টান, জেলেনস্কি ফিরে যান খালি হাতে। ট্রাম্প অবশ্য দাবি করেন, তাঁকে পুতিন প্রভাবিত করতে পারেননি। তাঁর ভাষায়, ‘জীবনে অনেকবার আমি সেরা চালবাজদের সঙ্গে খেলেছি, কিন্তু প্রতিবারই ভালোভাবে বেরিয়ে এসেছি।’
তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পরে ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে আমাদের জন্য দূরপাল্লার অস্ত্র পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে গেল, রাশিয়া প্রায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে কূটনীতিতে আগ্রহ হারাল।’
অল্প ক’দিনের মধ্যেই ট্রাম্প একের পর এক দোদুল্যমান অবস্থান প্রকাশ করেছেন। একদিকে ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র পাঠানোর ভাবনা, অন্যদিকে পুতিনের সঙ্গে বুদাপেস্টে বৈঠকের পরিকল্পনা, আর ব্যক্তিগতভাবে জেলেনস্কিকে চাপ দিয়েছেন পুরো দনবাস অঞ্চল ছাড়তে। শেষ পর্যন্ত তিনি অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরতির আহ্বানে। তাঁর প্রস্তাবিত বর্তমান যুদ্ধরেখা ধরে অস্ত্রবিরতি রাশিয়া স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
গত বছর নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করতে পারবেন। এখন তিনি সে দাবি থেকে সরে এসে স্বীকার করছেন, যুদ্ধ থামানো তাঁর কল্পনার চেয়ে অনেক কঠিন কাজ। এটা এক বিরল স্বীকারোক্তি। বিশেষ করে, নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা এবং এক এমন শান্তির কাঠামো গড়ার জটিলতা, যেখানে কোনো পক্ষই লড়াই ছাড়তে চায় না, বা ছাড়তে পারে না—এমন অবস্থানে যুদ্ধ থামানো আসলেই কঠিন।
মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
৬ ঘণ্টা আগেবেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৮ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
গোল্ডম্যান স্যাকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ডেটা সেন্টারের শক্তি চাহিদা ১৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কিছু ডেটা সেন্টার নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, আবার কিছু সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে সাইটের নিজস্ব নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন সুবিধাসহ। তবে সোলার বা উইন্ড ফার্মের মতো ক্লিন এনার্জির উৎসগুলোর জন্যও যথেষ্ট জমি প্রয়োজন।
আর তাই এখন কিছু প্রতিষ্ঠান ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে স্থাপনের কথা ভাবছে, যাতে ব্যবহারের জন্য জমি খুঁজে পাওয়ার সমস্যা এড়ানো যায়। মহাকাশ আরও ভালো সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া সেখানে মেঘের কোনো আনাগোনা নেই, রাতের অন্ধকার নেই, নেই ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে সৃষ্ট বিড়ম্বনা।
ইউরোপে এএসসিইএনডি (ASCEND) প্রকল্প মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। গত বছর ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস, যা ইউরোপীয় কমিশনের তহবিলে ASCEND-এর সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল—দেখিয়েছে যে ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে পাঠিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সৌরশক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হলে ‘তথ্য হোস্টিং ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য আরও পরিবেশবান্ধব এবং সার্বভৌম সমাধান’ হতে পারে। এই বিষয়ে থ্যালিস অ্যালেনিয়া মহাকাশের হাভিয়ের রোশে বলেন, ‘তবে এটি বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে।’
যদিও রকেট উৎক্ষেপণের সময় মোট নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড বর্তমানে বিমান শিল্পের তুলনায় খুব কম, কিন্তু রকেট বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে দূষক পদার্থ ছাড়ে। কারণ, এই রকেটগুলো দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থানে থাকে। ASCEND-এর গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারগুলো যদি কার্যকরভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে চায়, তবে এমন একটি লঞ্চারের বিকাশ প্রয়োজন হবে, যা বর্তমান লঞ্চারের তুলনায় তার জীবদ্দশায় ১০ গুণ কম কার্বন নির্গমন করে। কখন এমন রকেট তৈরি হবে, তা এখন স্পষ্ট নয়। স্পেসএক্স, যা ফ্যালকন লঞ্চ ভেহিকেলের ফ্লিটের মাধ্যমে রকেটের ব্যয় কমানো হয়েছে, কিন্তু এখনো পরিবেশবান্ধব নতুন রকেট ডিজাইন প্রকাশের কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
আবুধাবিভিত্তিক স্টার্টআপ মাদারি স্পেস থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস পরিচালিত একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্সিলারেটর প্রোগ্রামে সহযোগিতা করেছে। মাদারি এমন কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে একটি, যারা প্রযুক্তিগত প্রদর্শনের জন্য ছোট কম্পিউটিং উপাদান মহাকাশে পাঠাচ্ছে।
মাদারির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শারিফ আল রোমাইসি, যিনি ইতিহাদ এয়ারওয়েজের পাইলটও, বলেছেন যে মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার বিভিন্ন গ্রাহকের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। তিনি বলেছেন, ‘তাদের অপ্রক্রিয়াজাত পর্যবেক্ষণ তথ্য মহাকাশে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করলে বিশ্লেষণে বিলম্ব কমবে এবং তারা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে একগাদা ডেটা স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। যদিও সেই লক্ষ্য এখনো দূরে, তবে মাদারির প্রথম মিশন ২০২৬ সালের জন্য নির্ধারিত। তারা একটি টোস্টার ওভেনের মতো আকারের পেলোড—ডেটা স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াকরণ উপাদান নিয়ে একটি স্যাটেলাইট পাঠাবে। এটি জাতিসংঘের আউটার স্পেস অফিসের ‘UNOOSA— Access to Space for All Initiative’-এর অংশ।
অন্যরা এরই মধ্যে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে। গত মে মাসে চীন মহাকাশভিত্তিক কম্পিউটিং কনস্টেলেশনের জন্য ১২টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। দেশটি অন্তত ২ হাজার ৮০০টি স্যাটেলাইট পাঠাতে চায়। সেটারই প্রথম ধাপ ছিল এটি। রোমাইসি বলেন, এটি মহাকাশকে ডেটা সেন্টারের সম্ভাব্য অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করার জন্য একটি জাগরণের ডাক। তিনি বলেন, ‘এটি এমন এক বাস্তবতা, যা ইতিমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে।’
ফ্লোরিডাভিত্তিক কোম্পানি লোনস্টার ডেটা হোল্ডিংস মার্চে জানিয়েছিল, তারা সফলভাবে চাঁদে একটি ছোট ডেটা সেন্টারের পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে সিস্টেমটি চাঁদের আলোকিত পার্শ্বে ল্যান্ড করার পর অল্প সময়ের জন্য চালু ছিল। নভেম্বরে ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টারক্লাউড একটি স্যাটেলাইট চালু করবে, যা এনভিডিয়ার এইচ–১০০ গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) দ্বারা সজ্জিত থাকবে। কোম্পানিটি সিএনএন-কে জানিয়েছে, এই স্যাটেলাইট কক্ষপথে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতার রেকর্ড গড়বে।
স্টারক্লাউডের সিইও ফিলিপ জনস্টন বলেন, ‘আমার ধারণা, ১০ বছরের মধ্যে প্রায় সব নতুন ডেটা সেন্টার মহাকাশে তৈরি করা হবে। কারণ, স্থলভিত্তিক নতুন এনার্জি প্রজেক্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছি।’ তিনি যোগ করেন, এর প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো শূন্যে বিশাল পরিমাণ তাপ বিতরণ করা এবং উচ্চ বিকিরণ পরিবেশে চিপগুলোকে সচল রাখা।
তবু এই খাতের জন্য এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায় এবং এমন ডেটা সেন্টার চালু করা যা পৃথিবীতে থাকা ডেটা সেন্টারগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে খরচও একটি বড় বিষয়। কারণ, পাঠানোর খরচ নির্ভর করে পেলোডের ওজনের ওপর।
লোনস্টার স্যাটেলাইট নির্মাতা সিডাসের সঙ্গে ১২০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে, যাতে তারা ছয়টি ডেটা স্টোরেজ স্যাটেলাইট তৈরি ও কক্ষপথে স্থাপন এবং এর পরবর্তী সেবা দেয়। তারা পরিকল্পনা করছে, প্রথমটি ২০২৭ সালে লঞ্চ করবে। এটি হবে একটি ১৫-পেটাবাইটের সিস্টেম। চাঁদ থেকে প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকবে এটি। পরের পাঁচটি স্যাটেলাইটের প্রতিটি স্টোরেজ ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে, একই ওজন ও শক্তি চাহিদা বজায় রাখা হবে। প্রতি লঞ্চে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে, যা অনেক স্থলভিত্তিক ডেটা সেন্টারের স্টোরেজের সামগ্রিক ব্যয়ের তুলনায় খুব কম।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মহাশূন্যে ডেটা সেন্টারের অর্থনৈতিক দিক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি ফর স্পেস রিসার্চের পরিচালক কুয়েন্টিন এ পার্কার বলেন, ‘কার্যকরভাবে ব্যয় বিশ্লেষণ করলে সত্যিই ঠিক বলা যায় না যে এই ধরনের প্রকল্প দাঁড়াবে। পৃথিবীকেন্দ্রিক এখনো অনেক সমাধান আছে এবং এগুলো সম্ভবত মহাকাশে কিছু রাখার তুলনায় অনেক সস্তা। মহাকাশে রাখার সঙ্গে অনেক সমস্যা জড়িত।’
বিপরীতে মহাকাশে ডেটা সেন্টার স্থাপনের সমর্থকেরা দাবি করেন, মহাকাশে ডেটা রাখা ডেটা সেন্টার আক্রমণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পাবে। তবে পার্কার বলেছেন, মহাকাশের নিজস্ব কিছু ঝুঁকি আছে—রেডিয়েশন, ভ্রাম্যমাণ মহাকাশীয় আবর্জনা এবং মানবসৃষ্ট বস্তু মহাকাশে পাঠানোর পর সেগুলো পরিষ্কার করার কোনো সমাধান না থাকা অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মহাকাশে মানুষের তৈরি আবর্জনার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, কোনো সংঘর্ষ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তি নষ্ট করতে পারে। আরও কিছু মানুষ বলছে, মহাকাশে ডেটা সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং সোলার ফ্লেয়ারের মতো স্পেস ওয়েদার সার্ভিসকে ব্যাহত করতে পারে। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ ‘কাউন্টারস্পেস প্রযুক্তি’ যেমন স্যাটেলাইট জ্যামিং সিস্টেম তৈরি করছে।
পার্কারের মতে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারের সমর্থকেরা হয়তো ‘সুবিধাগুলো অতিরঞ্জিত করে বলছেন এবং বড় অসুবিধাগুলো উল্লেখ করছেন না।’ তবে আল রোমাইসির মতে, আমাদের পৃথিবীর বাইরে তাকানো অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর বিপরীত বিষয় হলো প্রযুক্তিগত স্থবিরতা। আমরা এমন একপর্যায়ে পৌঁছাব, যেখানে শুধু ডেটা সেন্টার চালানোর জন্য আমাদের সম্পদ শেষ হয়ে যাবে।’
সিএনএন থেকে অনূদিত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
গোল্ডম্যান স্যাকসের তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ডেটা সেন্টারের শক্তি চাহিদা ১৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। কিছু ডেটা সেন্টার নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার করে, আবার কিছু সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে সাইটের নিজস্ব নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদন সুবিধাসহ। তবে সোলার বা উইন্ড ফার্মের মতো ক্লিন এনার্জির উৎসগুলোর জন্যও যথেষ্ট জমি প্রয়োজন।
আর তাই এখন কিছু প্রতিষ্ঠান ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে স্থাপনের কথা ভাবছে, যাতে ব্যবহারের জন্য জমি খুঁজে পাওয়ার সমস্যা এড়ানো যায়। মহাকাশ আরও ভালো সূর্যালোক পাওয়ার সুযোগ দেয়। এ ছাড়া সেখানে মেঘের কোনো আনাগোনা নেই, রাতের অন্ধকার নেই, নেই ঋতুবৈচিত্র্যের কারণে সৃষ্ট বিড়ম্বনা।
ইউরোপে এএসসিইএনডি (ASCEND) প্রকল্প মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমানোর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। গত বছর ফ্রান্সের থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস, যা ইউরোপীয় কমিশনের তহবিলে ASCEND-এর সম্ভাব্যতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছিল—দেখিয়েছে যে ডেটা সেন্টারকে মহাকাশে পাঠিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সৌরশক্তি ব্যবহার করা সম্ভব হলে ‘তথ্য হোস্টিং ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য আরও পরিবেশবান্ধব এবং সার্বভৌম সমাধান’ হতে পারে। এই বিষয়ে থ্যালিস অ্যালেনিয়া মহাকাশের হাভিয়ের রোশে বলেন, ‘তবে এটি বেশ কয়েকটি প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভর করবে।’
যদিও রকেট উৎক্ষেপণের সময় মোট নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড বর্তমানে বিমান শিল্পের তুলনায় খুব কম, কিন্তু রকেট বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে দূষক পদার্থ ছাড়ে। কারণ, এই রকেটগুলো দীর্ঘ সময় সেখানে অবস্থানে থাকে। ASCEND-এর গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারগুলো যদি কার্যকরভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে চায়, তবে এমন একটি লঞ্চারের বিকাশ প্রয়োজন হবে, যা বর্তমান লঞ্চারের তুলনায় তার জীবদ্দশায় ১০ গুণ কম কার্বন নির্গমন করে। কখন এমন রকেট তৈরি হবে, তা এখন স্পষ্ট নয়। স্পেসএক্স, যা ফ্যালকন লঞ্চ ভেহিকেলের ফ্লিটের মাধ্যমে রকেটের ব্যয় কমানো হয়েছে, কিন্তু এখনো পরিবেশবান্ধব নতুন রকেট ডিজাইন প্রকাশের কোনো পরিকল্পনা ঘোষণা করেনি।
আবুধাবিভিত্তিক স্টার্টআপ মাদারি স্পেস থ্যালিস অ্যালেনিয়া স্পেস পরিচালিত একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাক্সিলারেটর প্রোগ্রামে সহযোগিতা করেছে। মাদারি এমন কয়েকটি কোম্পানির মধ্যে একটি, যারা প্রযুক্তিগত প্রদর্শনের জন্য ছোট কম্পিউটিং উপাদান মহাকাশে পাঠাচ্ছে।
মাদারির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও শারিফ আল রোমাইসি, যিনি ইতিহাদ এয়ারওয়েজের পাইলটও, বলেছেন যে মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টার বিভিন্ন গ্রাহকের জন্য উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যারা পৃথিবী পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। তিনি বলেছেন, ‘তাদের অপ্রক্রিয়াজাত পর্যবেক্ষণ তথ্য মহাকাশে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াকরণ করলে বিশ্লেষণে বিলম্ব কমবে এবং তারা সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
তিনি আশা করছেন, ভবিষ্যতে একগাদা ডেটা স্যাটেলাইট কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। যদিও সেই লক্ষ্য এখনো দূরে, তবে মাদারির প্রথম মিশন ২০২৬ সালের জন্য নির্ধারিত। তারা একটি টোস্টার ওভেনের মতো আকারের পেলোড—ডেটা স্টোরেজ ও প্রক্রিয়াকরণ উপাদান নিয়ে একটি স্যাটেলাইট পাঠাবে। এটি জাতিসংঘের আউটার স্পেস অফিসের ‘UNOOSA— Access to Space for All Initiative’-এর অংশ।
অন্যরা এরই মধ্যে উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে। গত মে মাসে চীন মহাকাশভিত্তিক কম্পিউটিং কনস্টেলেশনের জন্য ১২টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। দেশটি অন্তত ২ হাজার ৮০০টি স্যাটেলাইট পাঠাতে চায়। সেটারই প্রথম ধাপ ছিল এটি। রোমাইসি বলেন, এটি মহাকাশকে ডেটা সেন্টারের সম্ভাব্য অবস্থান হিসেবে বিবেচনা করার জন্য একটি জাগরণের ডাক। তিনি বলেন, ‘এটি এমন এক বাস্তবতা, যা ইতিমধ্যে ঘটতে শুরু করেছে।’
ফ্লোরিডাভিত্তিক কোম্পানি লোনস্টার ডেটা হোল্ডিংস মার্চে জানিয়েছিল, তারা সফলভাবে চাঁদে একটি ছোট ডেটা সেন্টারের পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে সিস্টেমটি চাঁদের আলোকিত পার্শ্বে ল্যান্ড করার পর অল্প সময়ের জন্য চালু ছিল। নভেম্বরে ওয়াশিংটনভিত্তিক স্টারক্লাউড একটি স্যাটেলাইট চালু করবে, যা এনভিডিয়ার এইচ–১০০ গ্রাফিকস প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) দ্বারা সজ্জিত থাকবে। কোম্পানিটি সিএনএন-কে জানিয়েছে, এই স্যাটেলাইট কক্ষপথে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতার রেকর্ড গড়বে।
স্টারক্লাউডের সিইও ফিলিপ জনস্টন বলেন, ‘আমার ধারণা, ১০ বছরের মধ্যে প্রায় সব নতুন ডেটা সেন্টার মহাকাশে তৈরি করা হবে। কারণ, স্থলভিত্তিক নতুন এনার্জি প্রজেক্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে আমরা সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হচ্ছি।’ তিনি যোগ করেন, এর প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো শূন্যে বিশাল পরিমাণ তাপ বিতরণ করা এবং উচ্চ বিকিরণ পরিবেশে চিপগুলোকে সচল রাখা।
তবু এই খাতের জন্য এখনো খুব প্রাথমিক পর্যায় এবং এমন ডেটা সেন্টার চালু করা যা পৃথিবীতে থাকা ডেটা সেন্টারগুলোর বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। এ ক্ষেত্রে খরচও একটি বড় বিষয়। কারণ, পাঠানোর খরচ নির্ভর করে পেলোডের ওজনের ওপর।
লোনস্টার স্যাটেলাইট নির্মাতা সিডাসের সঙ্গে ১২০ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে, যাতে তারা ছয়টি ডেটা স্টোরেজ স্যাটেলাইট তৈরি ও কক্ষপথে স্থাপন এবং এর পরবর্তী সেবা দেয়। তারা পরিকল্পনা করছে, প্রথমটি ২০২৭ সালে লঞ্চ করবে। এটি হবে একটি ১৫-পেটাবাইটের সিস্টেম। চাঁদ থেকে প্রায় ৬০ হাজার কিলোমিটার দূরে থাকবে এটি। পরের পাঁচটি স্যাটেলাইটের প্রতিটি স্টোরেজ ক্ষমতা দ্বিগুণ হবে, একই ওজন ও শক্তি চাহিদা বজায় রাখা হবে। প্রতি লঞ্চে প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হতে পারে, যা অনেক স্থলভিত্তিক ডেটা সেন্টারের স্টোরেজের সামগ্রিক ব্যয়ের তুলনায় খুব কম।
তবে কিছু বিশেষজ্ঞ মহাশূন্যে ডেটা সেন্টারের অর্থনৈতিক দিক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি ফর স্পেস রিসার্চের পরিচালক কুয়েন্টিন এ পার্কার বলেন, ‘কার্যকরভাবে ব্যয় বিশ্লেষণ করলে সত্যিই ঠিক বলা যায় না যে এই ধরনের প্রকল্প দাঁড়াবে। পৃথিবীকেন্দ্রিক এখনো অনেক সমাধান আছে এবং এগুলো সম্ভবত মহাকাশে কিছু রাখার তুলনায় অনেক সস্তা। মহাকাশে রাখার সঙ্গে অনেক সমস্যা জড়িত।’
বিপরীতে মহাকাশে ডেটা সেন্টার স্থাপনের সমর্থকেরা দাবি করেন, মহাকাশে ডেটা রাখা ডেটা সেন্টার আক্রমণ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পাবে। তবে পার্কার বলেছেন, মহাকাশের নিজস্ব কিছু ঝুঁকি আছে—রেডিয়েশন, ভ্রাম্যমাণ মহাকাশীয় আবর্জনা এবং মানবসৃষ্ট বস্তু মহাকাশে পাঠানোর পর সেগুলো পরিষ্কার করার কোনো সমাধান না থাকা অন্যতম।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, মহাকাশে মানুষের তৈরি আবর্জনার পরিমাণ বেড়ে চলেছে। তাঁরা আশঙ্কা করছেন, কোনো সংঘর্ষ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রযুক্তি নষ্ট করতে পারে। আরও কিছু মানুষ বলছে, মহাকাশে ডেটা সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে এবং সোলার ফ্লেয়ারের মতো স্পেস ওয়েদার সার্ভিসকে ব্যাহত করতে পারে। এ ছাড়া বেশ কিছু দেশ ‘কাউন্টারস্পেস প্রযুক্তি’ যেমন স্যাটেলাইট জ্যামিং সিস্টেম তৈরি করছে।
পার্কারের মতে, মহাকাশভিত্তিক ডেটা সেন্টারের সমর্থকেরা হয়তো ‘সুবিধাগুলো অতিরঞ্জিত করে বলছেন এবং বড় অসুবিধাগুলো উল্লেখ করছেন না।’ তবে আল রোমাইসির মতে, আমাদের পৃথিবীর বাইরে তাকানো অপরিহার্য। তিনি বলেন, ‘এই চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর বিপরীত বিষয় হলো প্রযুক্তিগত স্থবিরতা। আমরা এমন একপর্যায়ে পৌঁছাব, যেখানে শুধু ডেটা সেন্টার চালানোর জন্য আমাদের সম্পদ শেষ হয়ে যাবে।’
সিএনএন থেকে অনূদিত
মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
৩ ঘণ্টা আগেবেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৮ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগেদ্য নিউইয়র্ক টাইমসের নিবন্ধ
আজকের পত্রিকা ডেস্ক
বেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, অথচ কেউ উচ্চারণ করতেও সাহস পাচ্ছে না। প্রশ্নটি হলো, সি চিন পিং আর কত দিন ক্ষমতায় থাকবেন? আর তিনি না থাকলে চীনকে নেতৃত্ব দেবেন কে?
টানা ১৩ বছর ধরে চীনের ক্ষমতা সি চিন পিংয়ের হাতে। এই সময়ে তিনি এমন এক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মাও সে-তুংয়ের পর আর কেউ পারেননি। এখনো তাঁর পদত্যাগের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে তাঁর এই ক্ষমতা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে তা রাজনৈতিক অস্থিরতার বীজ বপন করতে পারে। কারণ, সির হাতে এখনো কোনো উত্তরসূরি নেই, এমনকি নেই কাউকে মনোনীত করার স্পষ্ট সময়সূচিও।
প্রতিটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সির অনুপস্থিতিতে চীনের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হচ্ছে। যদি তাঁর শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দেয়, তবে নতুন নেতা কি সির কঠোর নীতিতেই অবিচল থাকবেন, নাকি কিছুটা নমনীয় পথে হাঁটবেন; এই প্রশ্ন এখনই ভাবাচ্ছে চীনের নীতিনির্ধারকদের।
সি চিন পিং আসলে সেই পরিচিত দোটানার মুখে; যা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা অনেক কর্তৃত্ববাদী নেতার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। উত্তরসূরি মনোনয়ন মানে এক প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করা, যা নিজের প্রভাব দুর্বল করতে পারে। আবার উত্তরসূরি নির্ধারণে বিলম্ব করলে তার উত্তরাধিকার ও দলীয় ঐক্য দুটিই বিপদের মুখে পড়তে পারে। সির বয়স এখন ৭২, অর্থাৎ সম্ভাব্য উত্তরসূরি খুঁজতে হলে তাকাতে হবে আরও তরুণ প্রজন্মের দিকে; যাদের এখনো নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এবং সির আস্থা অর্জন করতে হবে।
যদি শেষ পর্যন্ত সি কোনো উত্তরসূরি বেছে নেন, তবে একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত। আর তা হলো তাঁর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। কারণ, সি একাধিকবার বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মূল কারণ ছিল ‘ভুল উত্তরসূরি বাছাই’। তাঁর মতে, সংস্কারপন্থী মিখাইল গর্বাচেভকে মনোনয়ন দিয়েই সোভিয়েত নেতৃত্ব নিজের অস্তিত্ব ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
গত শুক্রবারও সেই বার্তাই যেন নতুন করে উচ্চারণ করলেন সি, যখন চীনের সেনাবাহিনী ৯ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। স্পষ্টত এটি ছিল আনুগত্যহীনতার প্রতি সির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চায়না অ্যানালাইসিস সেন্টারের ফেলো নিল থমাস বলেন, ‘সি নিশ্চয়ই উত্তরাধিকার নির্ধারণের গুরুত্ব জানেন, কিন্তু তিনিও বোঝেন যে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ইঙ্গিত দিলেই নিজের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁকে ঘিরে এখনকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটগুলো হয়তো এতটাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে যে উত্তরসূরি নির্ধারণের মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে।’
চীনে সি চিন পিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা খুবই স্পর্শকাতর এবং সেন্সরশিপের আওতাভুক্ত। শুধু হাতে গোনা কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা হয়তো জানেন, তিনি নিজে এই বিষয়ে কী ভাবছেন।
কিন্তু বিদেশি কূটনীতিক, বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা এখন চেয়ে আছেন বেইজিংয়ের চলমান চার দিনের এই বৈঠকের দিকে। উল্লেখ্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এই অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার থেকে, যেখানে শত শত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন।
বৈঠকটি সাধারণত বেইজিংয়ে জিংসি হোটেলে গোপনে অনুষ্ঠিত হয়। এবারও সেখানে আগামী পাঁচ বছরের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের আশা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নত উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব অর্জনকে সি চিন পিং তাঁর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতিকে পরাস্ত করার বিষয়ে সি ও তাঁর সহযোগীরা এখনো দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী।
গত মাসে প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটির ওপর পার্লামেন্ট সদস্যদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘পরাশক্তিগুলোর মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূল বিষয় হলো সামগ্রিক সক্ষমতার প্রতিযোগিতা। শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও সামগ্রিক জাতীয় শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি করেই আমরা কৌশলগত সুবিধা অর্জন করতে পারি।’
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, এই সপ্তাহের বৈঠকটি হতে পারত চীনের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের ইঙ্গিত পাওয়ার একটি সুযোগ; যদি সি তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কাউকে আরও দৃশ্যমান ভূমিকায় আনতে চাইতেন। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, তিনি এখনই কোনো বড় পদক্ষেপ নেবেন না। অন্তত ২০২৭ সালে তাঁর সম্ভাব্য চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী মেয়াদ শুরু হওয়ার আগে তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।
সি চিন পিং ভালোভাবেই জানেন, নেতৃত্বের উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব কীভাবে কমিউনিস্ট পার্টিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, এই অভিজ্ঞতা তাঁর পারিবারিক ইতিহাসেই আছে। তাঁর বাবা, একসময়কার জ্যেষ্ঠ নেতা, মাও সে-তুংয়ের হাতে অপসারিত হয়েছিলেন। আর ১৯৮৯ সালের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সময় স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে সি প্রত্যক্ষ করেছেন, কীভাবে শীর্ষ পর্যায়ের মতবিরোধ দেশকে অস্থিরতার দিকে টেনে নিয়েছিল। সেই সময় দেং সিয়াওপিং দল থেকে সাধারণ সম্পাদক ঝাও জিয়াংকে সরিয়ে দিয়ে নতুন উত্তরসূরি হিসেবে জিয়াং জেমিনকে বেছে নেন।
চায়না স্ট্র্যাটেজিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার কে. জনসন বলেন, ‘চীনের রাজবংশীয় ইতিহাস আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান-পতনের পাঠে যিনি এতটা নিমগ্ন, তাঁর কাছে উত্তরাধিকার প্রশ্নটা নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি জানেন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা নিয়ে ভাবা তাঁর জন্য অপরিহার্য।’
তবে আপাতত সি চিন পিং নিজেই বিশ্বাস করেন, চীনের উত্থান অব্যাহত রাখতে হলে নেতৃত্ব তাঁর হাতে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি। তিনি আগের নেতা হু জিনতাওয়ের স্বেচ্ছা অবসরের নজির ভেঙে দিয়েছেন। বরং ২০১৮ সালে তিনি সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদে দুই মেয়াদের সীমা বাতিল করেছেন। ফলে এখন তিনি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত রাষ্ট্র, দল ও সেনাবাহিনীর শীর্ষে থাকতে পারেন।
কিন্তু সি যত বছর ক্ষমতায় থাকবেন, ততই এমন একজন উত্তরাধিকারী খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে, যিনি একই সঙ্গে কয়েক দশক ধরে শাসন করার মতো যথেষ্ট তরুণ হবেন এবং সির ছায়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মতো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ।
সি তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়োগ দিয়েছেন পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র; সাত সদস্যবিশিষ্ট পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁদের সবার বয়স এখন ৬০-এর ওপরে, ফলে তাঁরা নিজেরাই উত্তরসূরি হওয়ার পথে বার্ধক্যে পড়েছেন। সি নিজে ২০০৭ সালে ৫৪ বছর বয়সে এই কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন, যা তাঁকে পরবর্তী নেতা হওয়ার অন্যতম প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি সান ডিয়েগোর অধ্যাপক ও চীনের অভিজাত রাজনীতি-বিশেষজ্ঞ ভিক্টর সি বলেন, ‘এমনকি ২০২৭ সালের পরবর্তী কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারাও সির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য বয়সে অনেকটাই এগিয়ে। অর্থাৎ, সির পরবর্তী উত্তরসূরি হওয়ার মতো তরুণ নন।’
ভিক্টর সির মতে, যদি সি আরও একটি মেয়াদ বা তারও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকেন, তবে পরবর্তী নেতা হতে পারেন ১৯৭০-এর দশকে জন্ম নেওয়া কেউ; যিনি এখন প্রাদেশিক প্রশাসনে বা কোনো কেন্দ্রীয় দপ্তরে কাজ করছেন। তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেংচি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও কমিউনিস্ট পার্টি-বিশ্লেষক ওয়াং হসিন-হসিয়েন বলেন, ‘পার্টি ইতিমধ্যে এমন কিছু তরুণ কর্মকর্তাকে উন্নীত করছে, যাদের সঙ্গে এই প্রোফাইল মেলে।’
তবে সি তরুণ কর্মকর্তাদের নিয়েও সতর্ক। তিনি বারবার বলেছেন, কর্মকর্তাদের সামান্য দুর্বলতাও সংকটের মুহূর্তে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘একটি বাঁধে ছোট ফাটলই শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ ধস নামাতে পারে।’
অধ্যাপক ওয়াং বলেন, ‘সি অন্যদের প্রতি অত্যন্ত অবিশ্বাসী, বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। বয়স যত বাড়ছে, সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের প্রজন্মের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ততই কমে আসছে। আর বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরগুলোতে পার্টির শীর্ষ পর্যায় আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। কারণ সি সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের পরীক্ষা করবেন, আবার অনেককে বাদও দেবেন। আর এর ফাঁকে তাঁর আশপাশের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাব ও টিকে থাকার জন্য আরও তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন।
অধ্যাপক ভিক্টর সি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি উত্তরসূরি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে আরও খণ্ডিত করে তুলবে। কারণ সি একক কাউকে মনোনীত করতে পারবেন না। বরং একদল সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে বেছে নিতে হবে, আর সেটি মানেই তাঁদের মধ্যে নিচু মানের ক্ষমতার লড়াই অনিবার্য।’
বেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, অথচ কেউ উচ্চারণ করতেও সাহস পাচ্ছে না। প্রশ্নটি হলো, সি চিন পিং আর কত দিন ক্ষমতায় থাকবেন? আর তিনি না থাকলে চীনকে নেতৃত্ব দেবেন কে?
টানা ১৩ বছর ধরে চীনের ক্ষমতা সি চিন পিংয়ের হাতে। এই সময়ে তিনি এমন এক প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছেন, যা মাও সে-তুংয়ের পর আর কেউ পারেননি। এখনো তাঁর পদত্যাগের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তবে তাঁর এই ক্ষমতা যদি সঠিকভাবে পরিচালিত না হয়, তবে তা রাজনৈতিক অস্থিরতার বীজ বপন করতে পারে। কারণ, সির হাতে এখনো কোনো উত্তরসূরি নেই, এমনকি নেই কাউকে মনোনীত করার স্পষ্ট সময়সূচিও।
প্রতিটি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সির অনুপস্থিতিতে চীনের ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হচ্ছে। যদি তাঁর শারীরিক অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে নেতৃত্বে শূন্যতা দেখা দেয়, তবে নতুন নেতা কি সির কঠোর নীতিতেই অবিচল থাকবেন, নাকি কিছুটা নমনীয় পথে হাঁটবেন; এই প্রশ্ন এখনই ভাবাচ্ছে চীনের নীতিনির্ধারকদের।
সি চিন পিং আসলে সেই পরিচিত দোটানার মুখে; যা দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা অনেক কর্তৃত্ববাদী নেতার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। উত্তরসূরি মনোনয়ন মানে এক প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাকেন্দ্র তৈরি করা, যা নিজের প্রভাব দুর্বল করতে পারে। আবার উত্তরসূরি নির্ধারণে বিলম্ব করলে তার উত্তরাধিকার ও দলীয় ঐক্য দুটিই বিপদের মুখে পড়তে পারে। সির বয়স এখন ৭২, অর্থাৎ সম্ভাব্য উত্তরসূরি খুঁজতে হলে তাকাতে হবে আরও তরুণ প্রজন্মের দিকে; যাদের এখনো নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে এবং সির আস্থা অর্জন করতে হবে।
যদি শেষ পর্যন্ত সি কোনো উত্তরসূরি বেছে নেন, তবে একটি বিষয় প্রায় নিশ্চিত। আর তা হলো তাঁর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য। কারণ, সি একাধিকবার বলেছেন, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মূল কারণ ছিল ‘ভুল উত্তরসূরি বাছাই’। তাঁর মতে, সংস্কারপন্থী মিখাইল গর্বাচেভকে মনোনয়ন দিয়েই সোভিয়েত নেতৃত্ব নিজের অস্তিত্ব ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
গত শুক্রবারও সেই বার্তাই যেন নতুন করে উচ্চারণ করলেন সি, যখন চীনের সেনাবাহিনী ৯ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বহিষ্কারের ঘোষণা দেয়। স্পষ্টত এটি ছিল আনুগত্যহীনতার প্রতি সির ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের চায়না অ্যানালাইসিস সেন্টারের ফেলো নিল থমাস বলেন, ‘সি নিশ্চয়ই উত্তরাধিকার নির্ধারণের গুরুত্ব জানেন, কিন্তু তিনিও বোঝেন যে এটি এমন একটি প্রক্রিয়া, যা ইঙ্গিত দিলেই নিজের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে। তাঁকে ঘিরে এখনকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটগুলো হয়তো এতটাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে যে উত্তরসূরি নির্ধারণের মতো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ক্রমেই পিছিয়ে যাচ্ছে।’
চীনে সি চিন পিংয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা খুবই স্পর্শকাতর এবং সেন্সরশিপের আওতাভুক্ত। শুধু হাতে গোনা কিছু শীর্ষ কর্মকর্তা হয়তো জানেন, তিনি নিজে এই বিষয়ে কী ভাবছেন।
কিন্তু বিদেশি কূটনীতিক, বিশ্লেষক ও বিনিয়োগকারীরা এখন চেয়ে আছেন বেইজিংয়ের চলমান চার দিনের এই বৈঠকের দিকে। উল্লেখ্য, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির এই অধিবেশন শুরু হয়েছে সোমবার থেকে, যেখানে শত শত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নিচ্ছেন।
বৈঠকটি সাধারণত বেইজিংয়ে জিংসি হোটেলে গোপনে অনুষ্ঠিত হয়। এবারও সেখানে আগামী পাঁচ বছরের জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা অনুমোদনের আশা করা হচ্ছে। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও উন্নত উৎপাদনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব অর্জনকে সি চিন পিং তাঁর প্রধান লক্ষ্য হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক ও রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নীতিকে পরাস্ত করার বিষয়ে সি ও তাঁর সহযোগীরা এখনো দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী।
গত মাসে প্রস্তাবিত পরিকল্পনাটির ওপর পার্লামেন্ট সদস্যদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ‘পরাশক্তিগুলোর মধ্যে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতার মূল বিষয় হলো সামগ্রিক সক্ষমতার প্রতিযোগিতা। শুধু নিজেদের অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও সামগ্রিক জাতীয় শক্তি দ্রুত বৃদ্ধি করেই আমরা কৌশলগত সুবিধা অর্জন করতে পারি।’
তাত্ত্বিকভাবে বলতে গেলে, এই সপ্তাহের বৈঠকটি হতে পারত চীনের পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের ইঙ্গিত পাওয়ার একটি সুযোগ; যদি সি তরুণ কর্মকর্তাদের মধ্যে কাউকে আরও দৃশ্যমান ভূমিকায় আনতে চাইতেন। তবে বেশির ভাগ বিশ্লেষকের ধারণা, তিনি এখনই কোনো বড় পদক্ষেপ নেবেন না। অন্তত ২০২৭ সালে তাঁর সম্ভাব্য চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী মেয়াদ শুরু হওয়ার আগে তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম।
সি চিন পিং ভালোভাবেই জানেন, নেতৃত্বের উত্তরাধিকারের দ্বন্দ্ব কীভাবে কমিউনিস্ট পার্টিকে নাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ, এই অভিজ্ঞতা তাঁর পারিবারিক ইতিহাসেই আছে। তাঁর বাবা, একসময়কার জ্যেষ্ঠ নেতা, মাও সে-তুংয়ের হাতে অপসারিত হয়েছিলেন। আর ১৯৮৯ সালের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনের সময় স্থানীয় কর্মকর্তা হিসেবে সি প্রত্যক্ষ করেছেন, কীভাবে শীর্ষ পর্যায়ের মতবিরোধ দেশকে অস্থিরতার দিকে টেনে নিয়েছিল। সেই সময় দেং সিয়াওপিং দল থেকে সাধারণ সম্পাদক ঝাও জিয়াংকে সরিয়ে দিয়ে নতুন উত্তরসূরি হিসেবে জিয়াং জেমিনকে বেছে নেন।
চায়না স্ট্র্যাটেজিস গ্রুপের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার কে. জনসন বলেন, ‘চীনের রাজবংশীয় ইতিহাস আর সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান-পতনের পাঠে যিনি এতটা নিমগ্ন, তাঁর কাছে উত্তরাধিকার প্রশ্নটা নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সি জানেন, নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা নিয়ে ভাবা তাঁর জন্য অপরিহার্য।’
তবে আপাতত সি চিন পিং নিজেই বিশ্বাস করেন, চীনের উত্থান অব্যাহত রাখতে হলে নেতৃত্ব তাঁর হাতে থাকাটাই সবচেয়ে জরুরি। তিনি আগের নেতা হু জিনতাওয়ের স্বেচ্ছা অবসরের নজির ভেঙে দিয়েছেন। বরং ২০১৮ সালে তিনি সংবিধান পরিবর্তন করে প্রেসিডেন্ট পদে দুই মেয়াদের সীমা বাতিল করেছেন। ফলে এখন তিনি অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত রাষ্ট্র, দল ও সেনাবাহিনীর শীর্ষে থাকতে পারেন।
কিন্তু সি যত বছর ক্ষমতায় থাকবেন, ততই এমন একজন উত্তরাধিকারী খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে, যিনি একই সঙ্গে কয়েক দশক ধরে শাসন করার মতো যথেষ্ট তরুণ হবেন এবং সির ছায়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার মতো পর্যাপ্ত অভিজ্ঞ।
সি তাঁর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের নিয়োগ দিয়েছেন পার্টির সর্বোচ্চ ক্ষমতাকেন্দ্র; সাত সদস্যবিশিষ্ট পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁদের সবার বয়স এখন ৬০-এর ওপরে, ফলে তাঁরা নিজেরাই উত্তরসূরি হওয়ার পথে বার্ধক্যে পড়েছেন। সি নিজে ২০০৭ সালে ৫৪ বছর বয়সে এই কমিটিতে যোগ দিয়েছিলেন, যা তাঁকে পরবর্তী নেতা হওয়ার অন্যতম প্রধান ইঙ্গিত দিয়েছিল।
ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি সান ডিয়েগোর অধ্যাপক ও চীনের অভিজাত রাজনীতি-বিশেষজ্ঞ ভিক্টর সি বলেন, ‘এমনকি ২০২৭ সালের পরবর্তী কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে উন্নীত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা কর্মকর্তারাও সির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য বয়সে অনেকটাই এগিয়ে। অর্থাৎ, সির পরবর্তী উত্তরসূরি হওয়ার মতো তরুণ নন।’
ভিক্টর সির মতে, যদি সি আরও একটি মেয়াদ বা তারও বেশি সময় ক্ষমতায় থাকেন, তবে পরবর্তী নেতা হতে পারেন ১৯৭০-এর দশকে জন্ম নেওয়া কেউ; যিনি এখন প্রাদেশিক প্রশাসনে বা কোনো কেন্দ্রীয় দপ্তরে কাজ করছেন। তাইওয়ানের ন্যাশনাল চেংচি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ও কমিউনিস্ট পার্টি-বিশ্লেষক ওয়াং হসিন-হসিয়েন বলেন, ‘পার্টি ইতিমধ্যে এমন কিছু তরুণ কর্মকর্তাকে উন্নীত করছে, যাদের সঙ্গে এই প্রোফাইল মেলে।’
তবে সি তরুণ কর্মকর্তাদের নিয়েও সতর্ক। তিনি বারবার বলেছেন, কর্মকর্তাদের সামান্য দুর্বলতাও সংকটের মুহূর্তে ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। তাঁর ভাষায়, ‘একটি বাঁধে ছোট ফাটলই শেষ পর্যন্ত ভয়াবহ ধস নামাতে পারে।’
অধ্যাপক ওয়াং বলেন, ‘সি অন্যদের প্রতি অত্যন্ত অবিশ্বাসী, বিশেষ করে যেসব কর্মকর্তার সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। বয়স যত বাড়ছে, সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের প্রজন্মের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ততই কমে আসছে। আর বিষয়টি ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী বছরগুলোতে পার্টির শীর্ষ পর্যায় আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। কারণ সি সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের পরীক্ষা করবেন, আবার অনেককে বাদও দেবেন। আর এর ফাঁকে তাঁর আশপাশের কর্মকর্তারা নিজেদের প্রভাব ও টিকে থাকার জন্য আরও তীব্র প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন।
অধ্যাপক ভিক্টর সি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি উত্তরসূরি নির্ধারণ প্রক্রিয়াকে আরও খণ্ডিত করে তুলবে। কারণ সি একক কাউকে মনোনীত করতে পারবেন না। বরং একদল সম্ভাব্য উত্তরসূরিকে বেছে নিতে হবে, আর সেটি মানেই তাঁদের মধ্যে নিচু মানের ক্ষমতার লড়াই অনিবার্য।’
মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
৩ ঘণ্টা আগেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
৬ ঘণ্টা আগেবিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে।
২ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
বিশ্বের তিন মহাদেশে এখন এক জটিল ভূরাজনৈতিক খেলা চলছে। এ খেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হাতে রেখেছেন সবচেয়ে শক্তিশালী কার্ড। তুলনামূলক দুর্বল অবস্থানে থেকেও খেলার মধ্যে টিকে আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চাইছেন পুরো বাজি জিততে। আর রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক দৃষ্টিতে দেখছেন সবার চালচলন।
এ খেলার মূল বাজি রুশ অপরিশোধিত তেল। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও এ তেল যাচ্ছে ভারত ও চীনে। ট্রাম্প এখন সেটা বন্ধ করতে চান এবং বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে ওয়াশিংটনের প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চান।
ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের পরে থেকে তেলের বাজারে ভারত মস্কোর অন্যতম বড় ক্রেতায় পরিণত হয়েছে। পশ্চিমা দেশগুলো এড়িয়ে গেলেও ভারত সস্তা দামে রুশ তেল কিনছে—যা ঘরোয়া জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন এ নিয়ে মাঝেমধ্যে সমালোচনা করলেও বৈশ্বিক জ্বালানি স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিষয়টি মেনে নিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে বেশ নড়েচড়ে বসেছে। রুশ তেল কেনার অপরাধে তারা ভারতের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বেশ উত্তেজনাও চলছে। অনেকে বলছেন, এতে ট্রাম্প-মোদির বন্ধুত্ব হয়তো শেষ হয়ে গেছে।
অবশ্য ট্রাম্প দাবি করেছেন, ভারত আর রুশ তেল কিনবে না। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—ট্রাম্প কি ‘ব্লাফ’ দিচ্ছেন, না সত্যিই মোদির কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন যে, ভারত রুশ তেল কেনা বন্ধ করবে? ট্রাম্প দাবি করেছেন, ‘ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে, এটার জন্য আমি অসন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু মোদি আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, তাঁরা আর রুশ তেল কিনবেন না। এটা বড় পদক্ষেপ। এখন আমরা চীনকেও একই কাজ করাতে যাচ্ছি।’
তবে প্রশ্ন দুটি থেকেই যায়—প্রথমত, মোদি কি সত্যিই এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন? দ্বিতীয়ত, বিশ্বের সবচেয়ে বড় রুশ তেল আমদানিকারক চীন কি যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলবে?
চীন প্রতিদিন প্রায় ১ কোটি ব্যারেল তেল আমদানি করে, যার বড় অংশই আসে রাশিয়া থেকে। ২০২৩ সালে রাশিয়া সৌদি আরবকে ছাড়িয়ে চীনের সবচেয়ে বড় জ্বালানি সরবরাহকারী হয়। এটিই প্রমাণ করে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা মস্কো-বেইজিং সম্পর্ককে আরও শক্ত করেছে। চীন ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘একতরফা ও অর্থনৈতিক জবরদস্তি’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপে পাল্টাব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
ভারতের প্রতিক্রিয়া ছিল অনেকটা সতর্ক। দিল্লি জানিয়েছে, রুশ তেল আমদানি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও দামের ভারসাম্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ট্রাম্প ও মোদির মধ্যে সত্যিই ফোনালাপ হয়েছিল কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখা ও সরবরাহ নিশ্চিত করাই আমাদের নীতির মূল লক্ষ্য। এ জন্য আমরা উৎস বৈচিত্র্য বজায় রেখে বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী তেল আমদানি করি।’
এই অস্পষ্ট মন্তব্যের পর অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—ফোনালাপ আদৌ হয়েছিল কি না এবং হয়ে থাকলে মোদি সত্যিই কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কি না।
মস্কো অবশ্য স্পষ্ট জানিয়েছে, ভারত তাদের জ্বালানি নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। রুশ সরকার বলেছে, ‘ভারতের অর্থনীতির জন্য রুশ তেল অপরিহার্য। আমরা ভারত সরকারের নীতিকে সম্মান করি এবং তেল ও গ্যাস খাতে সহযোগিতা চালিয়ে যাব।’
উল্লেখ্য, একসময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ নিজেরাই চেয়েছিল ভারত রুশ তেল কিনুক, যাতে বৈশ্বিক তেলের দাম বেড়ে না যায়। ভারতে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমরা রুশ তেল কেনা নিষিদ্ধ করিনি, বরং মূল্যসীমা নির্ধারণে ভারতকে সহায়তা করতে বলেছিলাম। ভারত ঠিক তা-ই করেছে। এখন এই প্রশাসন বলছে, ভারত নাকি রাশিয়ার যুদ্ধ যন্ত্রে অর্থ জোগাচ্ছে। এটা একধরনের নীতিগত দ্বিচারিতা।’
পশ্চিমা বাজার হারানোর ক্ষতি পোষাতে রাশিয়া ইতিমধ্যে এশীয় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করেছে। ভারত ও চীন এখন রাশিয়ার জন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রার উৎস। একই সঙ্গে ইউরোপও রাশিয়া থেকে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কিনছে।
ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক বহু পুরোনো। সেই স্নায়ুযুদ্ধের সময় থেকে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় মস্কো ছিল ভারতের কূটনৈতিক ও সামরিক মিত্র। এখনো প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, পারমাণবিক প্রকল্প, জ্বালানি বিনিয়োগ ও যৌথ উদ্যোগ—সব ক্ষেত্রে এ সম্পর্ক অটুট।
এ দীর্ঘ সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও ভারত সহজে রুশ তেল থেকে সরে আসবে না। তবে দিল্লির জন্য ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত বাণিজ্য ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে। অনেকের মতে, ওয়াশিংটন হয়তো কৃষিপণ্য ও শুল্কে ছাড় দিয়ে ভারতকে রুশ তেল আমদানি কমানোর প্রস্তাব দেবে।
তবে বর্তমানে ভারতের রুশ তেল আমদানি কমার কোনো ইঙ্গিত নেই। সেপ্টেম্বর মাসে ভারত দৈনিক ১৬ লাখ ব্যারেল তেল কিনেছে, যা অক্টোবরে বেড়ে ১৮ লাখ ব্যারেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব তেল পরিবহন হচ্ছে পশ্চিমাদের নজরদারির বাইরে থাকা ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা তেলবাহী গোপন জাহাজের মাধ্যমে।
বিশ্লেষকেরা সতর্ক করছেন, ভারত হঠাৎ রুশ তেল কেনা কমালে বিশ্ববাজারে সরবরাহ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে, দাম পড়ে যেতে পারে এবং রাশিয়া আরও বেশি চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।
২০২২ সালে যখন রাশিয়ার কারণে বিশ্বে তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন বাইডেন প্রশাসন ভারতকে ছাড় দিয়েছিল, যেন বিশ্বে ঘাটতি না হয়। সে সময় ক্রুড অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৮০–৯০ ডলার। এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৬১ ডলারে, যা মার্কিন শেল তেল উৎপাদকদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, ভারত ও চীনকে রুশ তেল কেনা কমাতে বাধ্য করলে সরবরাহ কমে যাবে, ফলে দাম কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তাঁকে খেয়াল রাখতে হবে, এতে যেন তাঁর নিজ দেশের ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হন।
তবে এই ‘গেম’ অত্যন্ত সূক্ষ্ম। কারণ, বেশি চাপ দিলে দাম উল্টো বেড়ে যেতে পারে আর কম চাপ দিলে রাশিয়া বিপুল অর্থ উপার্জন চালিয়ে যাবে। যেকোনো ভুল হিসাব মার্কিন কৌশলকে দুর্বল করতে পারে বা মস্কোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে। তাই এ মুহূর্তে ট্রাম্পের বাজি সফল হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। আর মোদির জন্য এটি নিঃসন্দেহে সূক্ষ্ম ভারসাম্যের খেলা। তবে ভারসাম্য রক্ষা করা এত সহজ নয়। রাশিয়া থেকে সরে আসা মানে পুরোনো জোট দুর্বল করা; আবার যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করা মানে নতুন বাণিজ্য সম্পর্ককে ঝুঁকিতে ফেলা। তাই অর্থনৈতিক বাস্তবতা, ঐতিহাসিক বন্ধুত্ব ও অনিশ্চিত মার্কিন রাজনীতির দাবার বোর্ডে মোদিকে একসঙ্গে চাল দিতে হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে।
টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়া থেকে অনূদিত
মিয়ানমারের আরাকান (রাখাইন) রাজ্যের অধিকাংশ এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে। বলতে গেলে মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকাই এখন বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। জান্তা সরকার অনেকখানিই দুর্বল। ফলে রোহিঙ্গাদের ফেরানোর বিষয়টি এখন আর শুধু দ্বিপক্ষীয় আলোচনার বিষয় নয়। খোদ সরকারি কর্মকর্তারাও এই...
০৫ এপ্রিল ২০২৫গত সপ্তাহে মিসরে গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তি উদ্যাপনকালে ট্রাম্প তাঁর প্রধান কূটনৈতিক আলোচক স্টিভ উইটকফের দিকে ফিরে বলেন, ‘এবার আমাদের রাশিয়ার বিষয়টা মীমাংসা করতে হবে।’ তবে গাজা ইস্যুতে উইটকফ ও তাঁর দল যে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েছিলেন, তা ইউক্রেন যুদ্ধে পুনরায় সৃষ্টি করা কঠিন। চার বছর ছুঁইছুঁই সময় ধরে চলছে
৩ ঘণ্টা আগেকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অগ্রগতি ডেটা সেন্টারের চাহিদা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। কিন্তু তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণের জন্য কম্পিউটার থাকা এই গুদামের মতো জায়গাগুলোর জন্য প্রচুর জমি প্রয়োজন এবং এরা বিপুল পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করে, যার ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ হয়।
৬ ঘণ্টা আগেবেইজিংয়ে এ সপ্তাহে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেছেন চীনের শীর্ষ নেতারা। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে উত্তাল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশটির ক্ষমতা ধরে রাখা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু এই বৈঠকের আনুষ্ঠানিক আলোচ্যসূচির বাইরে রয়েছে এমন দুটি প্রশ্ন, যা চীনের ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা তৈরি করছে...
১৮ ঘণ্টা আগে