Ajker Patrika

ইলিয়াসের বাখোয়াজি

সম্পাদকীয়
আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২২, ১০: ৩০
ইলিয়াসের বাখোয়াজি

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে কলকাতায় গিয়ে উঠেছিলেন বাল্যবন্ধু দিলীপ রায়ের বাড়িতে। সেখান থেকেই ফোন করেছেন মিহির সেনগুপ্তকে। জেনে নিয়েছেন তাঁর অফিসের ঠিকানা। পরদিন সবান্ধব শিশিরমঞ্চে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমার বাখোয়াজি’ কাল নয়, পরশু। তবে সবার সঙ্গে পরিচিত হওয়াটা আমার বাখোয়াজির চেয়ে জরুরি।’

মিহিরের বন্ধু তরুণ, সর্বজিৎ ও একুশ নামের প্রকাশনালয়ের অসিত পরদিন উপস্থিত হলেন শিশিরমঞ্চে। শ্রী অসিতের প্রকাশনালয় থেকেই ইলিয়াসের একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এটা বের হয়েছে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে। জানুয়ারি মাসে বইটি বেরিয়ে গিয়েছিল। ইলিয়াসের তখন খুব টাকার প্রয়োজন। কিন্তু একুশে এ বাবদ তাঁকে কোনো রয়ালটি দেয়নি। যদিও বইটি ভালো বিক্রি হয়েছিল। চেয়ে নেওয়ার স্বভাব ছিল না ইলিয়াসের।

সামনাসামনি তো বলা যায় না, তাই কোনো এক সময় মিহিরকে একা পেয়ে দুঃখ করেছিলেন ইলিয়াস। বলেছিলেন, ‘লেখক, প্রকাশক, প্রিন্টার, বাইন্ডার, বিক্রেতা, নির্মাণের এই পঞ্চায়েতে সবচেয়ে হতভাগ্য হচ্ছে লেখক। বাকি সবারই ভাগেরটা জুটে যায়, লেখককে না দিলেও চলে। বাকি চারজনের ধারণা, এ ব্যাপারে লেখকের কোনো কৃতিত্ব বা পরিশ্রম নেই।’

শিশির মঞ্চে তখন সুনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, আনিসুজ্জামান, বাদল বসুর মতো লোকেরা বসে আছেন। শ্রোতার সংখ্যা অল্প। সেখানে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার আছেন।

তাদের পক্ষ থেকে নৈশভোজ দেওয়া হচ্ছে। ইলিয়াস তাঁকে গিয়েই জিজ্ঞেস করলেন, ‘মিশন অফিসটা ঠিক কোন জায়গায় হইব, কন তো?’

ডেপুটি হাইকমিশনে নৈশভোজে গিয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে ডেকে বলছেন, ‘অভিজিৎ সেনের লেখা পড়েছেন? সাধন চট্টোপাধ্যায়? পড়ে দেখবেন, ভালো লেখে। তবে ঢাকায় এদের বই পাওয়া যায় না। আমার বইও এখানে পাওয়া যায় না। আপনাদের বইয়ের কাটতি ঢাকায় ভালো।’

হোমরাচোমরাদের সঙ্গে এই ভাষায় কি কেউ কথা বলে? ইলিয়াস বলতেন। শ্লেষে-বিদ্রূপে মাতিয়ে রাখতেন আশপাশ। 

সূত্র: মিহির সেনগুপ্ত, অন্তরঙ্গ ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ১৩-১৪ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত