Ajker Patrika

উত্তরণ

স্বামী চার মাসের বেশি ভরণপোষণ না দিলে স্ত্রী তালাক চাইতে পারেন

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

স্বামী ৯ মাস ধরে আমার কোনো খোঁজ নেয় না। ভরণপোষণও দেয় না। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি বলেছেন, তাঁদের ছেলে আমার সঙ্গে সংসার করবে না। কিন্তু স্বামী আমাকে কিছু বলেনি এবং ডিভোর্সও দিচ্ছে না। আমি বলেছি, আমার কোনো দাবি নেই। তবু আমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন চায়, আমি ডিভোর্স পেপার দিই। কিন্তু আমি দিতে চাই না।

এমন অবস্থায় কী করতে পারি?

জান্নাতুল মনিরা, শেরপুর

আপনি যে অবস্থার মধ্যে আছেন, তা অনেক নারীর ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী আপনার করণীয় ও অধিকারগুলো হলো:

১. আপনার স্বামীর অবহেলা ও ভরণপোষণ না দেওয়া আইনি অপরাধ। দেশের মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী, স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য। যদি স্বামী স্ত্রীকে চার মাসের বেশি সময় ভরণপোষণ না দেয়, তাহলে স্ত্রী তালাক চাওয়ার অধিকার রাখেন এবং মেয়েদের কাজি অফিস বা আদালতের মাধ্যমে তালাক চাইতে পারেন।

২. আপনি তালাক না চাইলে আপনার স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজন আপনাকে ডিভোর্স দিতে বাধ্য করতে পারবে না। তালাক সম্পূর্ণ আপনার ব্যক্তিগত ও আইনি অধিকার। মুসলিম আইন অনুযায়ী আপনার সম্মতি ছাড়া কেউ ডিভোর্স কার্যকর করতে পারবে না।

৩. যদি আপনার স্বামী আপনাকে তালাক দেয়, তাহলে মোহর, ইদ্দতকালের ভরণপোষণ এবং সন্তান থাকলে তাদের জীবনধারণের ব্যয় আপনার স্বামীকেই দিতে হবে।

এখন আপনার করণীয় হতে পারে, প্রথমত, থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা। এটি ভবিষ্যতের আইনি পদক্ষেপে সহায়ক হবে। দ্বিতীয়ত ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে পারেন। স্বামী আয় করে এমন প্রমাণ পেলে আদালত তাঁকে বাধ্য করবেন ভরণপোষণ দিতে। তৃতীয়ত, আইনি সহায়তা নেওয়া। আপনি চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে অথবা সরকারি বা এনজিও লিগ্যাল এইড থেকে বিনা মূল্যে আইনজীবী পেতে পারেন।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (১৯৬১ ও ১৯৬৫)

  • স্বামী চাইলে তালাকের নোটিশ পাঠিয়ে নিজে থেকে তালাক দিতে পারেন।
  • স্ত্রী চাইলে পারিবারিক আদালতে মামলা করে ‘তালাক চাইছেন’ মর্মে পদক্ষেপ নিতে পারেন। অথবা নিকাহনামায় ১৮ নম্বর ধারায় স্ত্রীকে অধিকার দেওয়া থাকলে স্ত্রীও কাজির মাধ্যমে তালাকের নোটিশ পাঠাতে পারেন।
  • সিটি করপোরেশন বা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালাক কার্যকর হয় ৯০ দিন পর।
  • কাজেই আপনি ডিভোর্স না দিলে কেউ জোর করতে পারবে না। আপনার স্বামী চাইলে ডিভোর্স দিতে পারেন। তাতে তিনি মোহর, ইদ্দত ও সন্তানের খরচ মেটাতে বাধ্য। আপনি চাইলে আইনি সাহায্য নিতে পারেন, বিশেষ করে ভরণপোষণ বা দেনমোহর ইত্যাদি পাওয়ার জন্য।

সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন,

  • জাতীয় লিগ্যাল এইড অফিসের ১৬৪৩০ নম্বরে।
  • বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বা ব্র্যাক অথবা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিনা মূল্যে আইনি সহায়তা পাবেন।

পরামর্শ দিয়েছেন, ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন, অ্যাডভোকেট বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত