Ajker Patrika

২১ বছর বয়সেই ব্যবসায় বাজিমাত, দুই বছরে বিক্রি আড়াই কোটির বেশি

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৫, ১৬: ২৪
তাবাসসুম মোস্তফা রাফা। ছবি: সংগৃহীত
তাবাসসুম মোস্তফা রাফা। ছবি: সংগৃহীত

‘তখন তোমার একুশ বছর বোধ হয়...’ আরতি মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে সেই কালজয়ী গানটা মনে আছে নিশ্চয়। তাবাসসুম মোস্তফা রাফার গল্পটা শুনে সেই গানের কথা মনে পড়ে। বয়স মাত্র ২১। এ বয়সেই প্রেম ও ব্যবসা—দুটোতেই সফল। ১২ সদস্যের দল নিয়ে পরিচালনা করেন ‘শপিং স্টল’ নামে একটি অনলাইন শপ। লিখেছেন মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

পরিবার

নরসিংদীর মেয়ে রাফার পরিবারে আছেন বাবা, মা, ছোট ভাই ও স্বামী। নরসিংদী সরকারি কলেজের মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পণ্য বিক্রির কাজ শুরু করেন। মা-বাবা কখনো এসব করতে নিষেধ করেননি; বরং দিয়েছেন সাহস, ভালোবাসা ও সমর্থন। আর্থিক হোক বা মানসিক— প্রতিটি প্রয়োজনে পুরো পরিবার ছিল রাফার পাশে।

শপিং স্টল

২০২৩ সালে শপিং স্টল নামে অনলাইন ব্যবসা শুরু করেন রাফা। একেবারে ছোট পরিসরে। ধীরে ধীরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন আরও ১২ জন। তৈরি হয় পরিবারের বাইরে আরেকটি পরিবার। এই পুরো দলের বেতন ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে ব্যয় হয় লাখ টাকার বেশি।

শপিং স্টল নামে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে পণ্য বিক্রি করেন রাফা। আছে নিজের ওয়েবসাইট। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই অনলাইন স্টল থেকে বিক্রি হয়েছে আড়াই কোটি টাকার বেশি পণ্য!

৫ হাজার দিয়ে শুরু

রাফা নতুন কিছু শিখতে পছন্দ করেন। শেখার আনন্দে তিনি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স করেন। টুকটাক যা আয় করতেন, সবই জমিয়ে রাখতেন। এই জমানো টাকা ৫ হাজার হলে নিজেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে পা বাড়ান। শুরুতে পাশে পেলেন ভালোবাসার মানুষ স্বামীকে। শুধু টাকাপয়সা দিয়েই নয়, সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন তাঁর স্বামী। রাফা বলছিলেন, ‘কঠিন সময়ে তিনি ছিলেন আমার সবচেয়ে বড় সহায় ও সাহসের উৎস।’ রাফার স্বামী নিজেও একজন ব্যবসায়ী। ২৬ বছর বয়সে তিনিও একজন সফল মানুষ।

স্বামীর সাহসেই স্বপ্ন ছুঁয়েছেন

মাত্র ২১ বছর বয়সে লাখোপতি উদ্যোক্তা হবেন, মাস শেষে লাখ টাকা কর্মচারীদের বেতন দেবেন—এসব রাফার কল্পনায়ও ছিল না। ২০২৪ সালে রাফার বিয়ে হলেও তাঁর ব্যবসায় স্বামীর বিনিয়োগ ও সহযোগিতা শুরু হয়েছিল আরও আগে। প্রেমে যেমন ছিল গভীরতা, ঠিক তেমনি ছিল পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও স্বপ্ন দেখার সাহস। রাফা আজ যে জায়গায় দাঁড়িয়ে, তার পেছনে স্বামীর বিশ্বাস ও অবিচল সমর্থন অন্যতম ভিত্তি বলেই মনে করেন তিনি।

পন্য-(1)

চীন টু ঢাকা

চীন থেকে ঢাকায় পণ্য আমদানি করা একজন শিক্ষার্থীর জন্য কঠিন হলেও রাফার ক্ষেত্রে তেমনটা হয়নি। চীনে তাঁর পরিবারের তিন সদস্য এ বিষয়ে তাঁকে সহায়তা করেছেন। চীন থেকে রাফা মূলত মেয়েদের ব্যবহৃত পণ্য; যেমন বিভিন্ন গয়না, ব্যাগ, মেকআপ, জুতা আর সাজসজ্জার উপকরণ আমদানি করেন। তরুণেরা তাঁর প্রধান ক্রেতা।

অদম্য রাফা

দুই লাখ টাকার কাচের বোতল। এর মধ্যে লক্ষাধিক টাকা কাস্টমারের কাছ থেকে অগ্রিম নেওয়া ছিল। বোতল একদিন হাতে এল ঠিকই; তবে হাতে গোনা দু-একটি ভালো। আর সব ভাঙা। হাল ছাড়লেন না রাফা। পুরো বিষয়টি মিটিয়ে ফেললেন দ্রুত। রাফা জানান, উদ্যোক্তা হতে গেলে বাধা আসবে। হাল ছেড়ে দিলে চলবে না।

ডিজিটাল মার্কেটিং

রাফার পেজের অনুসারী এখন প্রায় সোয়া লাখ। বিক্রি কোটি টাকা। সবকিছুর পেছনে যে অনলাইন মার্কেটিং সাপোর্ট, তা রাফা দিয়েছেন। অভিজ্ঞতা থেকেই তাঁর উপলব্ধি, অনলাইনে ব্যবসা শুরু করার আগে একজন দক্ষ ডিজিটাল মার্কেটার হওয়া জরুরি। এইচএসসি পাসের পর বন্ধুরা যখন কোচিং নিয়ে ব্যস্ত, তখন রাফা লাখ টাকা ব্যয় করে ১৩টি বিভিন্ন কোর্স শেষ করেন। কোর্সগুলো রাফার ব্যবসার গতি বাড়িয়েছে অনেক।

পন্য-(4)

সাফল্যের নেপথ্যে

নিজের কাজের প্রতি খুব আন্তরিক রাফা। প্রতিদিন তিনি অফিস করেন। গত কয়েক বছরে এক দিনও অফিস বাদ দেননি তিনি। ব্যবসা ভালো-মন্দ যা-ই হোক, লেগে থাকতে হবে। রাফা মনে করেন, এত অল্প সময়ে সাফল্যের অন্যতম কারণ এটাই।

যেতে চান অনেক দূর

রাফার স্বপ্ন, ঢাকার বড় বড় শপিং মলে নিজের শোরুম চালু করবেন একদিন। এতে ব্যবসা তো হবেই, হবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। শুধু নিজের জন্য নয়, সমাজের অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনাই তাঁর লক্ষ্য।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় জীবনের গল্প

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

মাহমুদা পারভীন। নামটি এখনো খুব পরিচিত নয়। সরকারি বাঙলা কলেজ থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। তবে তাঁর আরেকটি পরিচয় আরও উজ্জ্বল; তিনি একজন মুহূর্ত-শিকারি, ফটোগ্রাফার। কোনো প্রশিক্ষণ নেই, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছে গ্রুমিংও নয়; নিজের ভালোবাসা আর অনুভূতির টানে তিনি ধরে রাখতে শুরু করেছিলেন প্রিয় মুহূর্তগুলো।

মা, বাবা, ভাই, ভাবি এবং তাঁদের সন্তানদের নিয়ে মাহমুদার পরিবার। সেখানে আর কেউ ছবি তোলে না; তাই ফটোগ্রাফি নিয়ে তাঁর যে জগৎ, সেটি পুরোপুরি নিজের হাতে গড়া। একাকী এই পথচলাই যেন তাঁকে আরও বিশেষ মনোযোগী করে তুলেছে, আরও অনুপ্রাণিত করেছে।

শুরুটা খুব সাধারণ, তারপরও বিশেষ

‘সুন্দর মুহূর্ত ধরে রাখতে ভালো লাগে’—এমনই এক সাধারণ অনুভূতি থেকে মাহমুদা ছবি তুলতে শুরু করেন। সময়কে কেউ থামাতে পারে না। কিন্তু ছবি সেই সময়ের ছাপকে ধরে রাখতে পারে। এই টান থেকে তাঁর ফটোগ্রাফির যাত্রা।

প্রথম ক্যামেরা? ক্যামেরা বলা যাবে না। কারণ, এখন পর্যন্ত তিনি মোবাইল ফোন দিয়েই ছবি তোলেন। এই মোবাইল যেন তাঁর হাতে এক জাদুর বাক্স।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

স্বীকৃতির প্রথম ধাপ

মোবাইল ফোন দিয়ে তোলা তাঁর ছবি প্রথমবার জায়গা করে নেয় ‘তরুণেরাই পরিবর্তনের প্রভাবক’ আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে। জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত হয়েছিল প্রদর্শনী। সেখান থেকে তিনি পেয়েছেন একটি সার্টিফিকেট। এটি তাঁর কাছে শুধু একটি কাগজ নয়, নিজেকে আরও একধাপ এগিয়ে নেওয়ার সাহস।

অনলাইন প্রতিযোগিতায় তাঁর সাফল্য রয়েছে। ‘প্রাণোচ্ছ্বাস আত্মসেবা নয়, মানবসেবা’-এর ১৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ফটোগ্রাফি কনটেস্টে তিনি দ্বিতীয় হয়েছেন।

মাহমুদা পারভীন।
মাহমুদা পারভীন।

যেসব ছবি ছুঁয়ে যায়

প্রিয় ছবির কথা উঠলে তিনি স্মরণ করেন এই নভেম্বরের এক ভোরের স্মৃতি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়াশাঘেরা পথে হাঁটতে হাঁটতে দেখেছিলেন, একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে কুয়াশা, ভোরের ঠান্ডা, নিস্তব্ধতা আর দুই বন্ধুর পথচলার মিষ্টি স্মৃতি। তিনি মোবাইল ফোনে মুহূর্তটাকে বন্দী করেছিলেন।

ভয়ের দিক

যে কাজ মানুষকে আনন্দ দেয়, সেটির পেছনেও ভয় থাকে। মাহমুদার ভয় খুব সাধারণ, কিন্তু বাস্তব। তা হলো, সব সময় অনুমতি নিয়ে ছবি তোলা যায় না। কেউ যদি বিরক্ত হয়! কেউ রাগ করলে? এসব মাঝে মাঝে তাঁকে থামিয়ে দেয়।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

নারী ফটোগ্রাফার হওয়ার বাড়তি চ্যালেঞ্জ

বাইরের মানুষ বাজে কথা না বললেও অনেক জায়গায় শুনতে হয়, মেয়ে হয়ে ছবি তুলছেন? বিষয়টি সবাই ভালো চোখে দেখে না। তার ওপর বিশেষ চ্যালেঞ্জ হলো, বাড়ির লোকজন এখনো জানেই না, তিনি ছবি তোলেন! তাই নিজের ভালোবাসার কাজটুকু তাঁকে চুপিচুপি, নিজের মতো করে করতে হয়।

পাখির ছবি, প্রকৃতির ছবি

মাহমুদার ভালো লাগে ল্যান্ডস্কেপ, স্ট্রিট ফটোগ্রাফি ও পোর্ট্রেট। বারান্দায় এসে ডেকে ওঠা শালিক পাখিগুলো তাঁর ছবি তোলার নিয়মিত বিষয়। খেলা করতে করতে শালিকদের যে স্বচ্ছন্দ ভঙ্গি, সেগুলো তিনি ক্যামেরায় ধরে রাখার চেষ্টা করেন।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

অভাববোধ করেন একজন গাইডের

মাহমুদার বড় আফসোস, কেউ নেই যিনি বলে দেবেন, কোন ছবি ভালো, কোনটা নয়, কোথায় ভুল, কীভাবে আরও ভালো হওয়া যায়। একজন অভিজ্ঞ মানুষের কাছ থেকে পথনির্দেশনা পেলে তিনি বিশ্বাস করেন, গল্প আরও গভীরভাবে বলতে পারবেন।

স্বপ্ন এখনো চলমান

একদিন চাকরি হবে, ব্যস্ততা তখন নিশ্চয় বাড়বে। কিন্তু ছবি তোলার নেশা কখনো হারিয়ে যাবে না। সুযোগ পেলে নিজের একটি ক্যামেরা কিনবেন; তখন আরও দক্ষভাবে, আরও গল্পময় ছবি তুলবেন। নতুন নতুন গল্পের সন্ধানে পথচলা অব্যাহত থাকবে— মাহমুদার স্বপ্ন আপাতত এতটুকুই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যৌতুক দাবি ও গ্রহণ করা এবং যৌতুকের জন্য চাপ দেওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ

ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন: বিয়ের পর থেকে আমি নানা জুলুমের শিকার। বলতে গেলে, সব ধরনের জুলুম হয়েছে ১৪ বছর ধরে। আমাদের ৮ বছরের একটি সন্তান আছে। ইশারা-ইঙ্গিতে সাহায্য চায়। অর্থাৎ যৌতুক। সেটা পায় না বলে নানা কারণে রাগ প্রকাশ করে এবং চাপ দেয়। এর থেকে রক্ষা পেতে আমি কী করতে পারি?

নুসরাত জিনিয়া, মুন্সিগঞ্জ

উত্তর: দীর্ঘ ১৪ বছরের মানসিক-শারীরিক নির্যাতন, অর্থনৈতিক চাপ এবং ইঙ্গিতে যৌতুক দাবি করা—এ সবই আইনের চোখে অপরাধ।

যৌতুক নিরোধ আইন, ২০১৮ অনুযায়ী

  • যৌতুক দাবি করা, গ্রহণ করা কিংবা সে জন্য চাপ দেওয়া—সবই দণ্ডনীয় অপরাধ।
  • এর শাস্তি সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা।
  • ইঙ্গিতে বা আচরণে চাপ দেওয়া—এটিও অপরাধের মধ্যে গণ্য হয়।

এ ক্ষেত্রে যা করতে পারেন, তা হলো:

  • নথি বা প্রমাণ সংগ্রহ করুন
  • আপনার নিরাপত্তা সবার আগে। প্রমাণ বলতে—হুমকি বা দাবি-সম্পর্কিত অডিও বা ভিডিও
  • মেসেজ, কল রেকর্ড
  • প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের সাক্ষ্য
  • চিকিৎসার রিপোর্ট (যদি শারীরিক নির্যাতন থাকে)
  • ১৪ বছরের নির্যাতনের যেকোনো প্রমাণ
  • কোনো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে প্রমাণ সংগ্রহের চেষ্টা করবেন না।
  • স্থানীয় থানায় জিডি করুন। জিডি করলে—
  • আপনার নিরাপত্তার রেকর্ড তৈরি হবে
  • ভবিষ্যতে মামলা করলে আপনার বক্তব্য শক্তিশালী হবে

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করার সুযোগ যদি শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন থাকে—

নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এ শাস্তির বিধান আছে।

যৌতুক মামলা করতে চাইলে কী হয়

যৌতুক মামলায় অভিযোগ করলে পুলিশ তদন্ত করবে এবং প্রমাণ পেলে মামলাটি আদালতে যাবে।

সে ক্ষেত্রে আপনার জন্য সুবিধা

  • স্বামীর পক্ষ থেকে যৌতুকের চাপ বা নির্যাতন আইনি অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
  • তিনি দোষী প্রমাণিত হলে জরিমানা ও কারাদণ্ড হতে পারে।
  • এটি আপনাকে ভবিষ্যতের নির্যাতন থেকে আইনগত সুরক্ষা দেবে।
  • পরবর্তী সময়ে ভরণপোষণ বা হেফাজত বা ডিভোর্সের মামলা করলে আপনার আইনি অবস্থান শক্তিশালী হতে পারে।
  • আপনার সন্তানের নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যতের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

ভরণপোষণ ও সন্তানের হেফাজতের অধিকার

আপনি পারিবারিক আদালতে ভরণপোষণ মামলা এবং সন্তানের হেফাজত মামলা করতে পারবেন। ৮ বছর বয়সী সন্তানের হেফাজত সাধারণত মায়ের পক্ষেই যায়, যদিও পরিস্থিতি অনুযায়ী বিচারক সিদ্ধান্ত নেন।

মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয়, নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত প্রমাণ আছে কি না? তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

নিরাপদ আশ্রয় বা জরুরি সহায়তা যদি আপনি বিপদের মুখে থাকেন—

  • ৯৯৯-এ কল করুন
  • জাতীয় মহিলা সহায়তা কেন্দ্রের ১০৯ নম্বরে কল করতে পারেন।
  • স্থানীয় নারী সহায়তা কেন্দ্র বা আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করতে পারেন।

তবে মামলা করা একটি বড় সিদ্ধান্ত। আপনার ভাববার বিষয় নিজের ও সন্তানের নিরাপত্তা, স্বামীর সঙ্গে থাকা কি বাস্তবে সম্ভব, নাকি ক্ষতির ঝুঁকি বাড়ছে? আপনার কাছে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আছে কি না?

তবে সম্পূর্ণ প্রমাণ না থাকলেও প্রাথমিক তথ্য দিয়ে মামলা করা যায়।

পরিস্থিতি অনুযায়ী মামলা করা আপনার প্রতি চলমান নির্যাতন এবং যৌতুকের চাপ থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে। তবে এ ধরনের সমস্যার সমাধানের জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবীর পরামর্শ নিন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কেনিয়ার ‘ইঙ্কড সিস্টারহুড’

মোটরবাইকপ্রেমী নারীদের যাত্রা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

পূর্ব আফ্রিকার প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র কেনিয়া। মালভূমি ও পাহাড়ে ঘেরা এ দেশে বহু জাতির মানুষের বসবাস। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি। এই শহরের রাস্তায় এখন দেখা যাচ্ছে দলে দলে বাইকার জ্যাকেট, বিভিন্ন ধরনের গিয়ার এবং হেলমেট পরা নারী মোটরবাইকচালকদের। না, এটি দৃশ্যত কোনো আন্দোলন নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বললেন, পরিবর্তনের ডাক দেওয়া একটি নীরব আন্দোলন এই বাইক যাত্রা। এই মোটরসাইকেল আরোহীদের মধ্যে আছেন বিজ্ঞানী, আইনজীবী ও সরকারি কর্মকর্তারা। এই দলের নাম ইঙ্কড সিস্টারহুড। দলটি পরিণত হয়েছে সংহতি ও নিরাপত্তার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা গভীর সৌহার্দ্যের প্রতীকে।

২০১৭ সালে নাইরোবির একটি রাইডিং স্কুল থেকে তাদের যাত্রা শুরু। এর সদস্যরা একটি বিশেষ ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। শুধু পুরুষেরাই মোটরসাইকেল চালানো উপভোগ করেন, এমন ধারণা তাঁরা ভেঙে দিতে চান। এই দলের সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন কেনিয়া হাইকোর্টের আইনজীবী লুসি মোনিয়েন্যে। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমরা শতাধিক সদস্যে উন্নীত হয়েছি। এই সংখ্যা বাড়ছে আবার কমছেও। কারণ, জীবনে নানা ঘটনা ঘটে।’ প্রাতিষ্ঠানিক স্মৃতি ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে ইঙ্কড সিস্টারহুড নামের এই ক্লাব কেনিয়ার প্রচলিত আইনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধিত। এই ক্লাবের মাধ্যমে নারীরা মোটরসাইকেল চালানোকে স্বাধীনতার প্রতীক এবং করপোরেট চাকরি থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে গ্রহণ করছেন।

ইঙ্কড সিস্টারহুড শখের ক্লাব নয়, এটি কেনিয়ার নারীদের সামাজিক ও মানসিক সমর্থনেরও উৎস।

এর সদস্যরা সড়কের নিরাপত্তা প্রচার এবং দাতব্য রাইড, বৃক্ষরোপণ, স্মৃতি রাইড এবং লিঙ্গ-নিরপেক্ষ প্রচারণার মতো অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বৃহত্তর কমিউনিটিকে সহায়তা করছেন। তাঁদের মার্কেটিং পরামর্শক ও রাইডার আমান্ডা খামাতি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের মধ্যে কারও সন্তান হলে বা কেউ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গেলে, আমরা তাঁর পরিবারে যাই। শুধু বাইকিং নয়, আমরা একসঙ্গে সামাজিকতা করি এবং সময় কাটাই।’

কেউ কেউ এই শখকে ব্যক্তিগত ক্ষমতায়নের মাধ্যম হিসেবে দেখেন। সমাজবিজ্ঞানী কিসিয়ানান কেনানা বলেন, ‘মোটরসাইকেলে বসলে নিজেকে শক্তিশালী মনে হয়। সবাই ভাবে, রাইডিং শুধু পুরুষদের জন্য। আর আমি সেই নারীদের একজন, যারা দেখাতে এসেছে, এটা সবাই করতে পারে।’

পুরুষতান্ত্রিক ধারণার পরিবর্তন

কেনিয়ার নারীরা শিক্ষা, রাজনীতি ও খেলাধুলায় এগিয়ে এলেও লৈঙ্গিকভিত্তিক সহিংসতা ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এখনো। কেনিয়া এমন একটি দেশ, যেখানে এখনো এমন গ্রাম আছে, যেগুলোর তিন মিটার গভীর কংক্রিটের ট্যাংক থেকে পানি নিতে হয়। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে সেই পানি সংগ্রহ করে নারীরা। উত্তর কেনিয়ার পরিবারগুলো জীবনধারণের সংস্থান করছে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে। এমন সামাজিক অবস্থায় এই নারী বাইকারদের যাত্রাকে উল্টো ধারারই বলতে হবে। এই বাইকারদের বড় বাধা কেনিয়ার সামাজিক পুরোনো স্টেরিওটাইপ ধারণা।

এ বিষয়ে কেনানা বলেন, ‘বেশির ভাগ মানুষ মনে করে, একজন নারী বাইকার পুরুষদের চেয়ে ধীরে চালাবে, তারা লম্বা দূরত্বে যেতে পারবে না, তারা দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়বে। এ ছাড়া তারা টমবয়, জেদি এবং শুধু অ্যাড্রেনালিন পছন্দ করে। হ্যাঁ, শেষ অংশটি হয়তো সত্যি হতে পারে, কিন্তু বাকিটা...।’

গত কয়েক বছরে ইঙ্কড সিস্টারহুডের সদস্যদের সম্পর্কে পুরুষতান্ত্রিক ধারণায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। ট্যাক্স পরামর্শক এবং মোটরবাইকপ্রেমী মাইকেল ওথিয়েনো বলেন, ‘নারীদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হলো, নারীরা আরও বেশি করে প্রশিক্ষণের সন্ধান করেন এবং এতে তাঁরা আরও দক্ষ হয়ে উঠেছেন। তাঁরা হেলমেট খুললে তার নিচে ড্রেডলকস বা বিনুনি দেখা যাবে। এতে আপনি বুঝতে পারবেন, তাঁরা বাইকিং মন থেকে গ্রহণ করেছেন। তাঁরা পুরুষের মতোই দক্ষ। কেউ কেউ তো আরও ভালো।’

সূত্র: আফ্রিকা নিউজ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কবি বাবার উদ্ভাবক কন্যা

ফিচার ডেস্ক
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাবা কবি। তাই সন্তানেরাও কবিতা লিখবেন—এমন কোনো কথা নেই। বিখ্যাত রোমান্টিক কবি লর্ড বায়রনের কন্যার বেলায়ও তেমন ঘটেনি। বায়রনের কন্যার নাম অ্যাডা লাভলেস। বাবার মতো রোমান্টিক কবি না হয়ে অ্যাডা বেছে নিয়েছিলেন প্রযুক্তির পথ। আর তার সূত্রপাত হয়েছিল অনুবাদ করা থেকে।

চার্লস ব্যাবেজের অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিন-সম্পর্কিত একটি ফরাসি নিবন্ধ অনুবাদ করেছিলেন অ্যাডা লাভলেস। শুধু তা-ই নয়, এর সঙ্গে তিনি নিজস্ব নোটসও যুক্ত করেছিলেন। এর মধ্যে তিনি বার্নোলি সংখ্যা গণনার জন্য একটি ধাপে ধাপে নির্দেশনা বা অ্যালগরিদম তৈরি করেন। তাঁর এই অ্যালগরিদম যেন মেশিন দিয়ে সম্পাদনা করা যায়, সেভাবে ডিজাইন হয়েছিল। এই অ্যালগরিদমকে বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রাম হিসেবে গণ্য করা হয়। অ্যাডা লাভলেসই প্রথম উপলব্ধি করেন, অ্যানালিটিক্যাল ইঞ্জিনটি শুধু গাণিতিক হিসাব-নিকাশের বাইরেও বর্ণ, প্রতীক বা সাংকেতিক তথ্য নিয়ে কাজ করতে পারে। যেমন সংগীত। এই ধারণা ভিত্তি স্থাপন করে আধুনিক কম্পিউটিংয়ের।

অ্যাডার এই দূরদর্শী কাজের জন্য চার্লস ব্যাবেজ তাঁকে ‘দ্য এনসেনট্রেস অব নম্বরস’ বা সংখ্যার জাদুকর নামে আখ্যায়িত করেন।

তাঁর সম্মানে একটি প্রোগ্রামিং ভাষার নামকরণ করা হয় অ্যাডা বা আদা। এটি ১৯৮০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে তৈরি করা আধুনিক কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ভাষার নাম। অ্যাডার জন্ম ১৮১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর। তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৮৫২ সালের ২৭ নভেম্বর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত