Ajker Patrika

রাতের বেলা কুমিরসদৃশ প্রাণীটি ঢুকে পড়েছিল এক দম্পতির বাড়িতে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ জুলাই ২০২৩, ১৩: ১২
Thumbnail image

রাতের বেলা ঘুম ভেঙে যদি দেখেন কুমিরের মতো দেখতে একটি সরীসৃপ আপনার ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবে কেমন লাগবে বলুন তো? নিশ্চয় চমকে উঠবেন, সেই সঙ্গে ভয়ও যে পাবেন, তাতে সন্দেহ নেই। এমনটাই ঘটেছে আমেরিকার লুইজিয়ানার এক দম্পতির বেলায়। তাঁদের বাড়িতে ঢুকেছিল একটি অ্যালিগেটর। বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গরম আবহাওয়ার মধ্যে একটু শীতল পরিবেশের খোঁজে অ্যালিগেটরটি ঘরের ভেতরে ঢুকে থাকতে পারে। 

ডন ও জেন শুলজ দম্পতি সম্প্রতি অ্যারিজোনা থেকে লুইজিয়ানায় নিউ ইবেরিয়া এলাকায় এসেছেন। আর নতুন বাড়িতে আসার কিছুদিনের মধ্যেই আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হলো তাঁদের। গত সপ্তাহের ঘটনা। রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁরা। এ সময়ই বাড়ির সাত বছরের কুকুর পান্ডার চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল তাঁদের। ঘড়ির কাঁটা বলছে তখন বাজে রাত দেড়টা। জেন স্বামীকে বললেন কী ঘটনা দেখতে। চোর ঢুকছে এমন একটা সন্দেহে সতর্ক হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে হলওয়েতে চলে এলেন ডন।

শুরুতে মেঝেতে একটা লম্বাটে কাঠামো দেখলের, আধো অন্ধকারে এর পরিচয় সম্পর্ক নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে যখন এটাকে চিনতে পারলেন, তখন বিস্ময়ের সীমা রইল না তাঁর। পা থেকে কয়েক ইঞ্চি দূরে থাকা জন্তুটা ধারালো দাঁতের এক সরীসৃপ অ্যালিগেটর। 

ডন এবং জেন শুলজ দম্পতি সম্প্রতি অ্যারিজোনা থেকে লুইজিয়ানায় এসেছেনঅ্যালিগেটরটার দৈর্ঘ্য বেশি নয়, মোটে পাঁচ ফুট। কিন্তু ডনের জানা আছে অ্যালিগেটরের চোয়াল কতটা শক্তিশালী। অতএব, সেখানে থাকাটা আর বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করলেন না তিনি। দ্রুত রুমে ফিরে এসে স্থানীয় শেরিফের অফিসে জানালেন বিষয়টি ফোন করে। তারা দ্রুত বিষয়টি জানাল ডিপার্টমেন্ট অব ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড ফিশারিজকে। প্রতিষ্ঠানটি এ ধরনের বন্যপ্রাণী উদ্ধারে দক্ষ কয়েকজনকে পাঠালে তাঁরা এসে তবেই সরিয়ে নিলেন অনাহূত অতিথিকে। 

‘এটা আসলেই আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতা,’  বলেন ডন, ‘আমাদের কুকুর পান্ডা জোরে চিৎকার করছিল। আমার স্ত্রী ঘুম থেকে জেগে কেউ ঘরে ঢুকেছে মনে করে আমাকে বিষয়টি দেখতে বলে। তার পরই সেখানে গিয়ে অ্যালিগেটরের একটা কাঠামো দেখতে পাই।’ 

অ্যালিগেটরটিকে ঘর থেকে বের করা মোটেই সহজ কাজ ছিল নাজানা যায় অ্যালিগেটরটি ভেতরে প্রবেশ করে কুকুর ঘরে ঢোকা ও বের হওয়ার জন্য যে দরজা আছে সেটা দিয়ে। পরে ডিপার্টমেন্ট অব ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড ফিশারিজের বিশেষজ্ঞরা যখন আসেন, তখনো সুবোধ ছেলের মতো অ্যালিগেটরটি বাড়িটা ছাড়েনি। মনে হচ্ছিল ওটা রাগে ফুঁসছে। বিশেষ করে নাক-মুখে একটা ফাঁস গলিয়ে দেওয়ার সময় এটা তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারপর অবশ্য পাগুলো বেঁধে এটাকে ওই দম্পতির বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হয়। 

‘শেরিফ এবং ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফের প্রতি কৃতজ্ঞ আমরা। আমাদের বাড়ি থেকে এটাকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অনুমান করছি, এখন কোনো নদীর শাখায় মহানন্দে সাঁতরে বেড়াচ্ছে এটা।’ বলেন জেন। 

শুলজরা অবশ্য তাঁদের কুকুরের দরজাটায় পরিবর্তন এনেছেন। রাতে আশ্রয় নিতে অন্য কোনো প্রাণী এলেও এটা এখন খুলবে না। 

নাকে একটি ফাঁস পরিয়ে ডন ও জেন শুলজ দম্পতির ঘর থেকে বের করা হয় সরীসৃপটি‘আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। এভাবে কুকুরের দরজাটা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যে, কেবল কুকুরের গলার বন্ধনী দিয়েই এটা খুলবে। ভবিষ্যতে এ ধরনের চমক আর চাই না আমরা।’ বলেন জেন। 

লুইজিয়ানা ডিপার্টমেন্ট অব ওয়াইল্ডলাইফ অ্যান্ড ফিশারিজের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, উত্তর আমেরিকায় পাওয়া যাওয়া সবচেয়ে বড় সরীসৃপদের একটি অ্যালিগেটর। লুইজিয়ানায়ই আনুমানিক ১০ লাখ অ্যালিগেটর আছে। মূলত উপকূলীয় জলাভূমি এদের আবাসস্থল। তবে কখনো মানুষের বসতিতে হানা দেওয়ার জন্য কুখ্যাতি আছে এদের। ৭০ বছর পর্যন্ত বাঁচা এই প্রাণীকে পুকুর, হ্রদ, খাল, নদী ও জলাভূমিতে দেখা যেতে পারে। 

কুমির, অ্যালিগেটর ও ঘড়িয়ালরা সাধারণ দৃষ্টিতে অনেকটা একই রকম দেখতে হলেও এদের পার্থক্যও আছে। জীববিজ্ঞানেও পৃথক বর্গের অন্তর্গত এরা। বাংলাদেশে ঘড়িয়াল ও কুমির থাকলেও অ্যালিগেটর নেই। অ্যালিগেটরের মুখটি অনেকটা ছড়ানো ইংরেজি ইউ আকৃতির এবং কুমিরের মুখটি ইংরেজি ভি আকৃতির। 
 
সূত্র: ডেইলি মেইল, দ্য ইকোনমিক টাইমস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত