Ajker Patrika

শুভ জন্মদিন ফুটবলের ‘জাদুকর’

কঙ্কন সরকার
আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৮: ৫২
শুভ জন্মদিন ফুটবলের ‘জাদুকর’

কাতারের সর্বাধুনিক ফুটবল মাঠগুলোতে যখন মেসি, নেইমার, এমবাপ্পে, রোনালদোর মতো খেলোয়াড়েরা নৈপুণ্যের ঝড় তুলছেন, তখন খুব নীরবে আমাদের ফুটবল জাদুকরের জন্মদিন এসে চলে যাচ্ছে।

এতক্ষণে নিশ্চয়ই মনে পড়েছে, আমাদেরও একজন ফুটবল জাদুকর ছিলেন। তাঁর নাম সৈয়দ আবদুস সামাদ। অবিভক্ত ভারতের বিহারের পুর্ণিয়ায় জন্মেছিলেন তিনি, সালটা ১৮৯৫ সালের ৬ ডিসেম্বর। অবশ্য কোথাও কোথাও পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের ভুরী গ্রামের নামও বলা হয় তাঁর জন্মস্থান হিসেবে! 

 ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হলে সামাদ চলে আসেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্যতম রেলওয়ে শহর পার্বতীপুরে। এরপর পুরো জীবন তিনি কাটিয়েছেন ছোট্ট এ শহরে। 

ছোটবেলা থেকে ফুটবলের প্রতি এক দারুণ আকর্ষণ ছিল সামাদের। মনোযোগ দিতে না পারায় অষ্টম শ্রেণির পর পড়াশোনায় ইতি টানেন। এরপর ফুটবলেই পুরোপুরি মনোনিবেশ করেন; মাঠের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্য। তাঁর গতি ছিল চিতার সমতুল্য, ড্রিবলিং ছিল মনোমুগ্ধকর! 

পার্বতীপুর শহরে পরিত্যক্ত সামাদ ইনস্টিটিউট। মিলনায়তনটি ফুটবল জাদুকরের বিবর্ণ স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটিপূর্ণিয়ার জুনিয়র একাদশে খেলা শুরু করে প্রথমেই মাত করে দেন সবাইকে। খুব অল্প বয়সে নজর কাড়েন সবার। মাত্র ১৭ বছর বয়সে সামাদ ফুটবল খেলতে পাড়ি জমান কলকাতায়। এরপরের গল্পটা কেবল জাদু দেখানোর। 

সামাদ ১৯১২ সালে যোগ দেন কলিকাতা মেইন টাউন ক্লাবে। ১৯১৬ সালে ইংলিশ ক্লাব সমারসেটের হয়ে মাঠে নেমে নৈপুণ্য দেখিয়ে মুগ্ধ করেন জাত্যাভিমানী ব্রিটিশদের। ১৯২১ থেকে ১৯৩০ পর্যন্ত তিনি খেলেছেন বিখ্যাত ইস্ট বেঙ্গল ক্লাবের হয়ে। ১৯২৭ সালে তাঁর দারুণ এক গোলে ইংল্যান্ডের ম্যাশউড ফরেস্ট দলের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। ১৯৩৩ সালে মোহামেডানে যোগ দেন সামাদ এবং পরপর পাঁচবার আইএফএ শিল্ড ও লিগ জয় করেন। 

 ১৯২৪ সালে সামাদ ভারতের জাতীয় ফুটবল দলে নির্বাচিত হন এবং ১৯২৬ সালে দলটির অধিনায়ক হন। তিনি ভারতের হয়ে সে সময়কার মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা), সিলোন বা শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, চীন এবং ইংল্যান্ড সফর করেন। 

এর পরের প্রায় পুরো খেলোয়াড়ি জীবনে সামাদ জন্ম দিয়েছেন অনেক ঘটনার। সেসব ঘটনা উড়তে উড়তে কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। এর একটি হলো—ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে পরপর দুটি বল গোলবারে লেগে ফেরত এলে সামাদ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন—গোলবারের উচ্চতা কম আছে। পরে মেপে দেখা যায়, সামাদের কথা সত্য। এমন আরও অনেক ঘটনা আছে তাঁর ২৩ বছরের খেলোয়াড়ি জীবনে। এমনও শোনা যায় যে, সামাদকে হাঁটতে দেখে সে সময়কার বাংলার গভর্নর আর তাঁর মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে এসেছিলেন! 

পার্বতীপুর শহরে পরিত্যক্ত সামাদ ইনস্টিটিউট। মিলনায়তনটি ফুটবল জাদুকরের বিবর্ণ স্মৃতিগুলোর মধ্যে একটি১৯৩৬ সালে একটি ম্যাচে গুরুতর আহত হয়ে খেলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন আব্দুস সামাদ। ফলে ১৯৪৭ সালের পর যুক্ত হন সংগঠক হিসেবে। ১৯৫৭ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের বেতনভুক্ত ফুটবল কোচ হিসেবে চাকরি শুরু করেন। ১৯৬২ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে সম্মানিত করে রাষ্ট্রপতি পদক দিয়ে। 

ফুটবলে অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যের জন্য ‘জাদুকর’ আখ্যা পেলেও শেষ জীবনে দারিদ্র্যের কশাঘাতে প্রায় বিনা চিকিৎসায় ১৯৬৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মারা যান সৈয়দ আব্দুস সামাদ। 

পার্বতীপুর শহরের ইসলামপুর কবরস্থানে সমাহিত আছেন তিনি। সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে তাঁর স্মরণে স্মৃতিসৌধ। তাঁর নামে একটি স্মারক ডাকটিকিটও প্রকাশ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। পার্বতীপুরে ‘সামাদ ইনস্টিটিউট’ নামে একটি মিলনায়তন আছে, সেটি এখন পরিত্যক্ত। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্ত্রীকে প্রেমিকের হাতে তুলে দিলেন স্বামী, বিনিময়ে নিলেন গরু ও টাকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯: ৪৪
ছবিটি এআই নির্মিত
ছবিটি এআই নির্মিত

ইন্দোনেশিয়ায় এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীকে পরকীয়ায় ধরার পর অনন্য এক উপায়ে সম্পর্কের ইতি টানলেন। স্ত্রীকে তিনি প্রেমিকের হাতে তুলে দিয়ে বিনিময়ে নিলেন একটি গরু, ঐতিহ্যবাহী কিছু পণ্য এবং নগদ অর্থ। ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ-পূর্ব সুলাওয়েসি প্রদেশে, যেখানে তোলাকি নামের আদিবাসী জনগোষ্ঠী প্রাচীন সামাজিক রীতিনীতিতে বিশ্বাসী।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, পাঁচ বছরের দাম্পত্য জীবনের পর ওই ব্যক্তি গত সেপ্টেম্বরে একটি বোর্ডিং হাউসে স্ত্রীকে অন্য এক পুরুষের সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় ধরেন। এরপর তিনি পুলিশে অভিযোগ করলেও পরে বিষয়টি সামাজিকভাবে মীমাংসার জন্য গ্রামের প্রবীণদের কাছে যান। প্রবীণেরা ‘মোওয়া সারাপু’ নামে একটি ঐতিহ্যবাহী মিলন-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই বিরোধ মেটানোর সিদ্ধান্ত নেন।

‘মোওয়া সারাপু’ রীতিটি তোলাকি সম্প্রদায়ের শতাব্দীপ্রাচীন প্রথা, যার অর্থ ‘ছাড় দেওয়া ও শান্তি স্থাপন করা’। এই রীতির লক্ষ্য প্রতিশোধ নয়, বরং সামাজিক ভারসাম্য ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গ্রামের প্রবীণ, উভয় পরিবারের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দারা। সবার সামনেই ওই নারীর প্রেমিক তাঁর স্বামীকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটি গরু, ঐতিহ্যবাহী কাপড়, একটি তামার পাত্র এবং ৫০ লাখ রুপিয়া (প্রায় ৩৬ হাজার টাকা) দেন।

গ্রামপ্রধান সফরুদ্দিন জানান, অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই দম্পতির বিবাহ আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয়। পরে নারীটির স্বামী ও প্রেমিক পরস্পরের সঙ্গে করমর্দন করেন। এভাবে স্ত্রীকে তাঁর প্রেমিকের হাতে সমর্পণ করেন স্বামীটি।

তোলাকি প্রবীণদের মতে, এই রীতি কোনো সম্পর্ককে ছোট করার জন্য নয়, বরং নৈতিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতেই এমন প্রথা পালন করা হয়। তবে তাঁরা সতর্ক করে বলেন—কোনো নারী যদি এমন রীতি মেনে আবারও অন্য পুরুষকে বেছে নেয়, তবে তা তাঁর ও পরিবারের জন্য লজ্জার কারণ হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

২২৫৩ শব্দের নাম তাঁর, গিনেস বুকে স্থান পেতে বদলাতে হয়েছে দেশের আইন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৩৮
সবচেয়ে বড় নামের রেকর্ড এখন লরেন্সের। ছবি: সংগৃহীত
সবচেয়ে বড় নামের রেকর্ড এখন লরেন্সের। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতিতে মানুষের দীর্ঘ নামের একটি আলাদা গুরুত্ব আছে। এই দীর্ঘ নামের মধ্য দিয়ে প্রায় সময় ঐতিহ্য ও সামাজিক কাঠামো প্রতিফলিত হয়। দক্ষিণ ভারতে সাধারণত নামের সঙ্গে গ্রামের নাম, বাবার নাম এবং প্রদত্ত নাম যুক্ত থাকে। অন্যদিকে আরব বিশ্বে বংশগতি ও ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিয়ে একজনের নাম তার বাবা, দাদা এবং কখনো কখনো গোত্রের নাম পর্যন্ত অনুসরণ করে। পশ্চিমা দেশগুলোতেও এমন দীর্ঘ নামের ঐতিহ্য রয়েছে।

যেমন প্রখ্যাত শিল্পীর পুরো নাম পাবলো দিয়েগো হোসে ফ্রান্সিসকো দে পাওলা হুয়ান নেপোমুসেনো মারিয়া দে লোস রেমেদিওস সিপ্রিয়ানো দে লা সান্তিসিমা ত্রিনিদাদ রুইজ ওয়াই পিকাসো! তবে পিকাসোর নামের এই আশ্চর্য দৈর্ঘ্যও নিউজিল্যান্ডের লরেন্স ওয়াটকিন্সের নামের কাছে নস্যি। লরেন্স ওয়াটকিন্স বর্তমানে বিশ্বের দীর্ঘতম নামের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ধারণ করে আছেন।

২,২৫৩ শব্দের নাম

১৯৯০ সালের মার্চে, নিউজিল্যান্ডে জন্মগ্রহণকারী লরেন্স তাঁর নামের সঙ্গে ২ হাজারটির বেশি মধ্যনাম যুক্ত করার জন্য আইনগতভাবে নিজের নাম পরিবর্তন করেন। তাঁর পুরো নামে বর্তমানে মোট ২ হাজার ২৫৩টি অনন্য শব্দ রয়েছে। এই নাম তাঁকে দীর্ঘতম ব্যক্তিগত নামের জন্য গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস খেতাব এনে দিয়েছে।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি তাঁর এই অস্বাভাবিক ইচ্ছার কারণ ব্যাখ্যা করেন: ‘আমি সব সময় অদ্ভুত এবং অস্বাভাবিক রেকর্ডগুলোর প্রতি মুগ্ধ ছিলাম। আমি সত্যিই সেই দৃশ্যের অংশ হতে চেয়েছিলাম। আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বইটি আগাগোড়া পড়ি এবং দেখি এমন কোনো রেকর্ড আছে কি না যা ভাঙতে পারি। আমার মনে হয়েছিল, বর্তমান রেকর্ডধারীর চেয়ে বেশি নাম যোগ করার রেকর্ডটিই কেবল আমার পক্ষে ভাঙা সম্ভব।’

লরেন্সের নাম পরিবর্তনের এ প্রক্রিয়াটি ছিল দীর্ঘ এবং কঠিন। সেই সময়ে কম্পিউটারের সীমিত ব্যবহারের কারণে পুরো নামের তালিকা টাইপ করতে তাঁকে কয়েক শ ডলার খরচ করতে হয়েছিল। প্রথমে জেলা আদালত তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলেও রেজিস্ট্রার জেনারেল তা বাতিল করে দেন। কিন্তু তিনি দমে যাননি। নিউজিল্যান্ডের হাইকোর্টে আপিল করেন এবং আদালত তাঁর পক্ষে রায় দেয়।

তবে এই ঘটনার পরপরই আইন প্রণেতারা দ্রুত দুটি আইন পরিবর্তন করেন, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এত সংখ্যক মধ্যনাম যোগ করতে না পারে। শুরুতে এই রেকর্ড ২ হাজার ৩১০টি নাম হিসেবে তালিকাভুক্ত হলেও গিনেসের হালনাগাদকৃত নির্দেশিকা অনুসারে তা পরে ২ হাজার ২৫৩টি নামে সংশোধন করা হয়।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস অনুসারে, লরেন্স সেই সময় সিটি লাইব্রেরিতে কাজ করতেন এবং লাইব্রেরির বই থেকে নাম সংগ্রহ করতেন বা সহকর্মীদের কাছ থেকে সুপারিশ নিতেন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয় নাম হলো— AZ 2000, যার অর্থ হলো আমার নামের আদ্যক্ষর A থেকে Z পর্যন্ত আছে এবং আমার মোট ২ হাজারটি নাম আছে।’

তবে এর জন্য মাঝেমধ্যে লরেন্সকে বেশ ভোগান্তিও পোহাতে হয়। মানুষ সহজে বিশ্বাস করতে চায় না। প্রধান সমস্যা হয় সরকারি দপ্তরগুলোতে গেলে। কারণ, সরকারি কোনো পরিচয়পত্রে তাঁর পুরো নাম ধরানো সম্ভব হয় না!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নার্সিং হোমে বয়স্ক পুরুষদের ওষুধ খেতে উৎসাহিত করতে মিনি স্কার্ট পরে তরুণীর নাচ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২: ৪২
প্রবীণদের ওষুধ খেতে উৎসাহিত করতে তাদের সামনে নেচেছেন এক তরুণী। ছবি: সংগৃহীত
প্রবীণদের ওষুধ খেতে উৎসাহিত করতে তাদের সামনে নেচেছেন এক তরুণী। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর চীনের হেনান প্রদেশের আনইয়াং শহরের একটি নার্সিং হোম সম্প্রতি তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। মূলত তাদের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর এই সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, নার্সিং হোমটির এক নারী কর্মকর্তা মিনি স্কার্ট ও স্কুল ইউনিফর্মের মতো পোশাক পরে বয়স্ক রোগীদের সামনে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে নাচছেন।

ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা ছিল, ‘আমাদের পরিচালক বয়স্কদের ওষুধ খাওয়াতে যা যা করা দরকার, সবই করছেন।’ ভিডিওতে ওই নারীকে প্রাণবন্তভাবে নাচতে দেখা যায়। হাঁটু পর্যন্ত কালো মোজা পরিহিত অবস্থায় কোমর দোলাতে দেখা যায় তাঁকে। এরপর নীল ইউনিফর্ম পরা অন্য এক কর্মী এক প্রবীণ পুরুষের কাছে গিয়ে তাঁকে ওষুধ খাওয়ান।

নার্সিং হোমটির অনলাইন প্রোফাইল অনুযায়ী, এটি নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া এক পরিচালকের উদ্যোগে পরিচালিত আনন্দমুখর অবসর নিবাস, যারা প্রবীণদের সুখী রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রোফাইলে আরও লেখা আছে, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, বার্ধক্যের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।’

ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়। এক নেটিজেন মন্তব্য করেন, ‘এখন কি প্রবীণ যত্ন খাতে ইঙ্গিতপূর্ণ নাচও ঢুকে পড়েছে?’ জবাবে নার্সিং হোমের অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট লিখেছে, ‘সবকিছুই ইঙ্গিতপূর্ণ নাচের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।’

গত ২৫ সেপ্টেম্বর নানগুও মেট্রোপলিস ডেইলিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নার্সিং হোমের পরিচালক জানান, ভিডিওতে থাকা নারী আসলে প্রবীণ যত্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী। তিনি স্বীকার করেন যে ভিডিওটি ‘অনুপযুক্ত’ ছিল, তবে ভবিষ্যতে ওই সিনিয়র কর্মীকে আরও সতর্ক হতে বলা হবে। পরিচালক আরও বলেন, ‘যদিও ওই নারী মাঝেমধ্যে প্রচারণামূলক ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি কোনো পেশাদার নৃত্যশিল্পী নন। সাধারণত এই হোমে বিনোদনের জন্য তাস খেলা ও গান গাওয়ার মতো প্রচলিত আয়োজন করা হয়।’

অন্য এক কর্মী পরে জানান, ওই নাচের ভিডিওগুলোর উদ্দেশ্য ছিল চীনের নার্সিং হোমগুলোকে নিয়ে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখাতে চেয়েছিলাম যে নার্সিং হোম কোনো নিস্তেজ জায়গা নয়। এখানেও প্রাণবন্ততা আছে, প্রবীণেরাও প্রাণবন্ত হতে পারেন। তবে এখন বুঝতে পারছি, এই পদ্ধতির ভালো-মন্দ দুটোই আছে।’

জনরোষ বাড়তে থাকায় নার্সিং হোমটির সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে পরে শতাধিক এই সম্পর্কিত ভিডিও মুছে ফেলা হয়। আনইয়াং সিভিল অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর প্রবীণ সেবা বিভাগ জানিয়েছে, ঘটনাটির বিস্তারিত তদন্ত করা হবে এবং ফলাফল জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে।

চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশটির প্রবীণ জনগোষ্ঠী দ্রুত বাড়ছে। ২০২৪ সালের শেষে ৬০ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১ কোটি, যা মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ।

তথ্যসূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

থাইল্যান্ডে মহিষের সৌন্দর্য ও দৌড় প্রতিযোগিতার কারণটি ভিন্ন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মহিষ উৎসবে দৌড় প্রতিযোগিতার একটি মুহূর্ত। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট
মহিষ উৎসবে দৌড় প্রতিযোগিতার একটি মুহূর্ত। ছবি: দ্য ইনডিপেনডেন্ট

থাইল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় চনবুরি প্রদেশে গত সোমবার (৬ অক্টোবর) শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী জল-মহিষ উৎসব। শতাধিক বছরের পুরোনো এই উৎসবের লক্ষ্য হলো—মহিষদের সম্মান জানানো ও কৃষিক্ষেত্রে তাঁদের বিলুপ্তি রোধ করা। যন্ত্রচালিত কৃষিকাজে ট্রাক্টরের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দেশটিতে বর্তমানে মহিষের অবদান অনেকটাই কমে গেছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, চনবুরির এই জল-মহিষ দৌড় উৎসবের ইতিহাস দেড় শ বছরের পুরোনো। নির্ধারিত স্থানে ফুলের মালা ও সাজসজ্জায় সজ্জিত মহিষদের সঙ্গে অংশ নেয় অসংখ্য স্থানীয় মানুষ। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত মহিষ-আরোহীদের দেখতেও ভিড় জমে পর্যটকদের।

রাজধানী ব্যাংকক থেকে ঘণ্টাখানেক দূরের এই উৎসব এখন শুধু বিনোদন নয়, বরং থাই সংস্কৃতির একটি জীবন্ত ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ‘কোয়াই’ নামে পরিচিত থাই জল-মহিষ অতীতে ছিল কৃষকের শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। কিন্তু যান্ত্রিক চাষাবাদের ফলে এদের সংখ্যা দ্রুত কমে যাচ্ছে। তাই সরকার ও স্থানীয় কৃষকেরা এখন সংরক্ষণ ও প্রজনন কর্মসূচির মাধ্যমে মহিষ রক্ষায় সচেষ্ট হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক থাওয়াচাই ডেং-এনগামের পরিবার ৩০টি মহিষ পালন করে। তিনি বলেন, ‘মহিষ মাঠে কাজ করতে পারলেও তারা যন্ত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারে না। তারপরও মহিষ আমাদের পরিবারের মতো। মানুষ মহিষ লালন করে, আর মহিষ মানুষকে বাঁচায়।’

ডেং-এনগামের পাঁচ বছর বয়সী কালো মহিষ ‘টড’ এই বছর প্রথমবারের মতো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে এবং সবার মন জয় করেছে। মূলত মহিষের শিং, খুর ও দেহের গঠন দেখেই বিচারকেরা তার সৌন্দর্য বিচার করেন।

এখন মহিষ শুধু কৃষিকাজে নয়, উৎসব ও প্রদর্শনীর প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবে থাকে ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, ফুলে সাজানো মহিষের শোভাযাত্রা এবং ১০০ মিটারের দৌড় প্রতিযোগিতা। চনবুরির পশুপালন কেন্দ্রের সহকারী কর্মকর্তা পাপাদা স্রিসোফন বলেন, ‘প্রতি বছর উৎসব বড় হচ্ছে। এই আয়োজন না থাকলে কৃষকেরা মহিষ পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’

উল্লেখ্য, থাই সরকার ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ‘১৪ মে’ দিনটিকে ‘থাই মহিষ সংরক্ষণ দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত