Ajker Patrika

প্রাকৃতিকভাবেই হ্রদটি গোলাকার

ইশতিয়াক হাসান
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৩, ১১: ৪২
Thumbnail image

নানা আকার ও আকৃতির হ্রদের দেখা মেলে পৃথিবীতে। তাই গোলাকার হ্রদের কথা শুনলে আকাশ থেকে পড়বেন এটা আশা করাটা বাড়াবাড়ি। স্বাভাবিকভাবেই আপনি ধরে নেবেন এ রকম গোলাকার হ্রদগুলো মানুষের তৈরি। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কিংসলের কথা যদি বলেন, এটা প্রাকৃতিক একটি গোলাকার হ্রদ।

ওপর থেকে দেখতে রুপার ডলারের মতো মনে হওয়ায় সিলভার ডলার লেক নামে একে চেনেন উড়োজাহাজের পাইলটেরা। বিশেষ করে গ্রীষ্মে পর্যটকদের ও আশপাশের এলাকার মানুষের প্রিয় গন্তব্যে পরিণত হয় এটি। এর পাশাপাশি মাছ শিকারিদেরও জায়গাটি ভারি পছন্দ। তবে একে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলেছে অস্বাভাবিক গোলাকার আকৃতিই।

মাছ শিকারিদের খুব প্রিয় জায়গা হ্রদটিতবে হ্রদটির এই গোল আকার পরিষ্কারভাবে ঠাহর করতে হলে আাপনাকে একে দেখতে হবে ওপর থেকে। আর আকাশ দিয়ে উড়োজাহাজ নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় পাইলটদেরই এই আকারটি নজর কাড়ে বেশি। তাঁরা তাই একে আদর করে ডাকতে শুরু করেন সিলভার ডলার লেক নামে।

কিন্তু মানুষের হাতে তৈরি না হলে এটা এমন আকৃতি পেল কীভাবে? ধারণা করা হয়, একটি সিংক হোল হিসেবে হ্রদটির জন্ম। কোনো একটি স্থানের মাটি হঠাৎ অথবা ধাপে ধাপে ধসে গিয়ে জন্ম হয় এই সিংক হোলের। হ্রদটির মাঝখানে সিংক হোল বা গর্তটির অবস্থান।

গরমের সময় পানি শীতল থাকায় পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে কিংসলে হ্রদেউত্তর মধ্য ফ্লোরিডার শহর স্টার্ক থেকে ছয় মাইল উত্তরে হ্রদটি। এক পাশ থেকে আরেক পাশ পর্যন্ত এটি দুই মাইল। মোটের ওপর এর আয়তন ২০০০ একরের মতো। কিংসলে হ্রদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্য এলাকার হ্রদগুলোর তুলনায় বেশ অগভীর হলেও ফ্লোরিডার বিবেচনায় হিসাবটা আলাদা। মাঝখানে প্রায় ৯০ ফুট গভীরতা একে ফ্লোরিডার অন্যতম গভীর হ্রদে পরিণত করেছে।

এবার বরং হ্রদটির নাম কিংসলে হলো কেন তা একটু জানার চেষ্টা করি। বিখ্যাত আলাচুয়া ট্রেইলের এক মাইল পূর্বে হ্রদটির অবস্থান। ১৮৩০–৪০ সালের দিকে রেড ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে বেশ কিছু সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এই আলাচুয়া ট্রেইলে। কিংবদন্তি অনুসারে হ্রদের দক্ষিণে তরুণ ক্যাভালারি অফিসার ক্যাপ্টেন কিংসলেকে ঘিরে ফেলে রেড ইন্ডিয়ানরা। একটাই উপায় ছিল বাঁচার, তা হলো ঘোড়া নিয়ে পশ্চিম তীরের দিকে যাওয়া। কিন্তু হ্রদ পেরোবার সময় ঘোড়াটার মৃত্যু হয় প্রচণ্ড ক্লান্তিতে। আর হ্রদটির নাম হয়ে যায় কিংসলের নামে।

সিলভার ডলার লেক নামে এটি পরিচিত বৈমানিকদের কাছেসুন্দর হ্রদটি এর পরিষ্কার পানির পাশাপাশি মাছ শিকার ও ওয়াটার স্কিইংয়ের জন্য বিখ্যাত। হ্রদের উত্তর ও পশ্চিম পাশে শ দুয়েক ডক বা ঘাট আছে। পূর্ব ও দক্ষিণ অংশে অবস্থান ক্যাম্প ব্ল্যান্ডিংয়ের। ফ্লোরিডা ন্যাশনাল গার্ডের সামরিক ইউনিটগুলো ও স্পেশাল ফোর্সের প্রশিক্ষণের জায়গা হলো এই ক্যাম্প ব্ল্যান্ডিং। কোনো কোনো সূত্রের দাবি, এটি ফ্লোরিডার সবচেয়ে পুরোনো ও উচ্চতম হ্রদ।

হ্রদের তলদেশ বালুময়। বৃষ্টির পানি ও তলদেশ চুঁইয়ে আসা পানি এর প্রধান উৎস। ফ্লোরিডার গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উষ্ণ মাসগুলোতেও হ্রদটির পানি বেশ শীতল থাকে। এর কারণ হ্রদটির তীরের আশপাশের মাটির তলার ঝরনাগুলো।

কচুরিপানাসহ ক্ষতিকর জলজ প্রায় সব উদ্ভিদ থেকেই মোটামুটি মুক্ত বলতে পারেন হ্রদটিকে। ঝড়ের সময় জলের সঙ্গে চলে আসা কিছু ময়লা এবং আশপাশের অনুন্নত কোনো সেপটিক ট্যাংক কখনো কখনো এর পানির জন্য কিছুটা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

লেকটিতে পর্যটকদের জন্য আছে নানা ধরনের বিনোদনের ব্যবস্থামাছ শিকার, স্কিইং—সব মিলিয়ে এটি ক্যাম্পিংয়ের আদর্শ জায়গা। এর ক্যাম্প গ্রাউন্ডে পাবেন কেবিন, পিকনিকের প্যাভিলিয়নসহ আরও অনেক কিছু। সব মিলিয়ে চমৎকার, গোলাকার হ্রদটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য ভ্রমণে গেলে আপনার কিছুটা সময় দাবি করতেই পারে!

সূত্র: অডিটি সেন্ট্রাল, ক্যারিশমাটিক প্ল্যানেট ডট কম, অনলি ইন ইউর স্টেট কম, কিংসলে লেক ডট ওরগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত