Ajker Patrika

জেনারেটিভ এআই যেভাবে দক্ষ ডেভেলপারের ঘাটতি তৈরি করবে 

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪: ৩৮
Thumbnail image

শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য বা নতুন টুল তৈরির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই প্রযুক্তি বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সফটওয়্যার ডেভেলপাররা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছেন। জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি প্রবর্তনের ফলে কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত তৈরি হয়েছে।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, জেনারেটিভ এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে ডেভেলপারদের চাহিদা কমে যেতে পারে, তাঁরা চাকরি হারাতে পারেন। এর বিপরীতে আরেক দল বিশ্লেষক বলছেন, এই প্রযুক্তি বিকাশের জন্যই ডেভেলপারদের প্রয়োজন হবে। কারণ, জুনিয়র ডেভেলপারদের বদলে শুধু এআইভিত্তিক মেশিনকে কাজ দেওয়া হলে সফটওয়্যারের উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষিত ডেভেলপার মিলবে না। আর ডেভেলপারদের দক্ষতা না বাড়লে এই প্রযুক্তি থমকে যাবে। তাছাড়া মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তা এখনো এআইয়ের তৈরি হয়নি। সেই পর্যায়ে কবে পৌঁছাবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

এআই প্রযুক্তি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলেও এ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা শুধু ডেভেলপারদেরই আছে। সাধারণত এআই আগের ডেটার ওপর ভিত্তি করে সুনির্দিষ্ট কাজ করতে পারে, কিন্তু জেনারেটিভ এআইয়ের ধারণায় এই সীমাবদ্ধতা নেই। এটি পুরোনো ডেটা বা কনটেন্ট থেকে নতুন কিছু সৃষ্টির চেষ্টা করে। আর এই কনটেন্ট বা ডেটাগুলো মানুষের বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তির আদলে তৈরি করা হয়।

প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট ইনফোওর্য়াল্ড এক প্রতিবেদনে বলছে, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট নিয়ে আমরা যেভাবে চিন্তা করি, তাতে মৌলিক পরিবর্তন এনেছে এআই। এখন বাঁধাধরা যে কাজগুলো জুনিয়র ডেভেলপাররা করেন, তা খুব সহজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সারতে পারে এআই। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোড তৈরি, এ/বি টেস্টিং ও বিভিন্ন ধারণার প্রমাণ দ্রুত দিতে পারে এআই টুল। এভাবে ডেভেলপারদের উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে এআই সাহায্য করে। 

তবে জুনিয়র ডেভেলপারদের একেবারে বাদ দিয়ে শুধু এআইভিত্তিক মেশিনকে কাজ দেওয়া হলে চিন্তাশীল কাজের জন্য ডেভেলপারদের দক্ষ করে তোলা সম্ভব হবে না। ফলে এআই উপকারী হওয়ার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকারক হবে। এ ছাড়া নতুন উদ্ভাবনগুলোও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তৈরি হবে না। 

কোডের অনুলিপি তৈরি ঠেকাতে গত ২০ বছর ধরে ডেভেলপাররা নানা কৌশল নিচ্ছেন। নতুন ডেভেলপারদের এখন শুধু অ্যাপলিকেশন তৈরির জন্য অনন্য বা বিশেষ কিছু তৈরি করতে হবে। এআইয়ের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কোডগুলোর পুনরাবৃত্তি করবে। এরপর কোডটির কাস্টমাইজেশন বা পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না, তা গভীরভাবে চিন্তা করবেন ডেভেলপাররা।

ক্যারিয়ারের নানা পর্যায়ে কাজ করেই এআই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করবেন ডেভেলপার। তাঁরাই পরে এই প্রযুক্তিকে সামনে এগিয়ে নেবেন। এর ফলে ডেভেলপারদের দক্ষতাও বাড়বে। কারণ এআই প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের আগে ডেভেলপারদের কোডকেই নিখুঁত ভাবা হতো। এখন শুধু কোড জানলেই হবে না, সেই সঙ্গে প্রম্পট ইঞ্জিনিয়ারিং, এআই নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও লার্জ ল্যাংগুয়েজ মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দক্ষতাও ডেভেলপারদের থাকতে হবে। এআই প্রযুক্তিতে ডেভেলপারদের দক্ষতার সংকট কাটানোর জন্য এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এই প্রযুক্তিতে শিক্ষাগ্রহণকেও উৎসাহিত করতে হবে।

প্রাথমিক পর্যায়ের কাজের জন্য মেশিন না ব্যবহার করে জুনিয়র ডেভেলপার নিয়োগ করা জরুরি। এআই কীভাবে কাজ করে এবং এটি প্রযুক্তিভিত্তিক সফটওয়্যার তৈরিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে, তা জানার সুযোগ ডেভেলপারদের দিতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, একজন জুনিয়র ডেভেলপারকে প্রাথমিক পর্যায়ের কোড লেখার দায়িত্ব না দিয়ে আগের তৈরি কোড যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা করার সুযোগ দিতে হবে। 
 
কর্মজীবনের প্রথম দিকে একজন ডেভেলপারকে কোড লেখার অভিজ্ঞতা অর্জন করা উচিত। কারণ এর মাধ্যমেই তারা পরে এআই প্রযুক্তির বিকাশে নিজেদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারবে। 

এআই মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেলে এই প্রযুক্তির মাধ্যমে কারা চাকরি হারালেন, সেদিকে তেমন নজর থাকবে না; বরং ডেভেলপারদের দক্ষতা কীভাবে বাড়ালে এআই প্রযুক্তি থেকে বেশি সুবিধা মিলবে, তাতে নজর দিতে হবে। ভবিষ্যতের ডেভেলপাররা আরও সৃজনশীলভাবে জটিল সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত