Ajker Patrika

রিশাদই এখন বাংলাদেশের সেরা ‘উইকেট হান্টার’

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৩৭
রিশাদ হোসেন এখন বাংলাদেশের সেরা ‘উইকেট হান্টার’। ছবি: এএফপি
রিশাদ হোসেন এখন বাংলাদেশের সেরা ‘উইকেট হান্টার’। ছবি: এএফপি

বলার মতো নামের লম্বা সারি নেই। এই মুহূর্তে আছেন শুধু রিশাদ হোসেন। লেগ স্পিনের গুরুত্ব বুঝতেও বেশ সময় লেগেছে বাংলাদেশের। সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো-চন্ডিকা হাথুরুসিংহে একরকম মরুভূমিতেই যেন লেগ স্পিনের গাছ ফলাতে চাইলেন। মাঝেমধ্যে আবার কেউ এলেও থিতু হতে পারেননি। পরিচর্যা, সুযোগ আর ঘষা-মাজার পর গাছ হয়ে ফল দিচ্ছেন শুধু রিশাদ। টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতীক হয়েছেন, তবে বাকি এখনো অনেক পথ।

৬ষ্ঠ সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি

আপাতত আস্থা অর্জনের হিসাব-নিকাশটা বলছে, এই মুহূর্তে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা বোলার রিশাদই। টি-টোয়েন্টিতে লেগ স্পিনের কদর অনেক বেশি। রিশাদের অভিষেকও কুড়ি ওভারের ম্যাচ দিয়েই। ২০ ওভারের ম্যাচ যেখানে এরই মধ্যে খেলেছেন ৩৮টি, সেখানে ওয়ানডে খেলেছেন মাত্র ৯ ম্যাচ। ২ বছর ৩ মাসের ক্যারিয়ারে এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি তালিকায় ৬ নম্বরে উঠে এসেছেন রিশাদ। ৩৭ ইনিংসে তাঁর শিকার ৪৭ উইকেট।

লেগ স্পিনাররা সাধারণত আক্রমণাত্মক বোলার। তাঁদের মূল লক্ষ্য রান আটকানোর চেয়েও বিপজ্জনক ব্যাটারকে আউট করা, ব্রেক-থ্রু এনে দেওয়া। তাঁদের বল বেশি টার্ন করে, আর ভ্যারিয়েশন থাকে বেশি—যার ফলে ব্যাটার বিভ্রান্ত হন। আর যাঁরা উইকেটের পাশাপাশি রানটাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন, তাঁরা তো ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’। বর্তমান সময়ে আফগানিস্তানের রশিদ খান, শ্রীলঙ্কার হাসারাঙ্গা ডি সিলভা দারুণ উপমা হতে পারেন। রিশাদের পরিসংখ্যান অবশ্য উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে তাঁদের পেছনে পেছনই ছুটছে। রিশাদ উইকেটশিকারে ফিফটির পথে হাঁটলেও ইকোনমি ৮.০৪।

ওয়ার্ল্ড ক্লাসদের সঙ্গে দৌড়ের তুলনা পরে করা যাক, তার আগে বাংলাদেশ দলে কেমন করছেন রিশাদ? গত মে মাসে পাকিস্তান সফরে দুই টি-টোয়েন্টিতে রান দিয়ে ফিফটি করেছিলেন রিশাদ! তৃতীয় ম্যাচে আর একাদশেই জায়গা হয়নি। নিজেকে শাণিত করে অসাধারণ প্রত্যাবর্তন করেছেন পরবর্তী শ্রীলঙ্কা সফরেই। তিন ম্যাচেই রিশাদের বোলিং ছিল দুর্দান্ত। প্রথম ম্যাচে ১ উইকেট নিয়ে ইকোনমি ৬.০০। দ্বিতীয় ম্যাচে ৫.৪০ ইকোনমিতে ৩ উইকেট—দলকে সিরিজে সমতায় ফেরাতে তাঁর ভূমিকা ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সিরিজ জয়ের ম্যাচে উইকেট না পেলেও ইকোনমি ছিল ৫.০০।

রিশাদ-হোসেন-২

এখন বাংলাদেশ দলে রিশাদই সেরা

রান নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজটাও আয়ত্ত করতে শিখছেন রিশাদ। তবে রানের চেয়েও তাঁর উইকেট নেওয়ার আসল যে কাজটা, সেটা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সেরা। তাঁর বোলিং স্ট্রাইকরেট ১৬.২। অর্থাৎ প্রতি ১৬.২ বল পরপর ১টি উইকেট নিচ্ছেন। তাঁর বোলিং গড়ও দলের অনেকের চেয়ে ভালো। গড়ে প্রতি একটি উইকেট নিতে ২১.৮০ রান খরচ করছেন।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলির সাকিব আল হাসান। ১২৬ ইনিংসে ১৪৯ উইকেট তাঁর। কিন্তু প্রতি ১৮.৪ বলে ১টি উইকেট পান তিনি। অফস্পিনররা সাধারণত লেগ স্পিনারদের চেয়ে কম খরচে হন, সাকিবও তাই ২০.৯১ রান খরচ করেন ১টি উইকেটের জন্য। মোস্তাফিজের বোলিং স্ট্রাইকরেট ১৭.২, বোলিং গড় ২১.৩৩, শিকার করেছেন ১৩৬ উইকেট। তাসকিন আহমেদ প্রতি ১৮.৮ বলে ১টি উইকেট নেন, রান দেন ২৩,৮০। অন্তত ৩০ উইকেট নিয়েছেন এমন বোলারদের মধ্যে রিশাদের চেয়ে কম বলো উইকেট নিয়েছেন শুধু আল আমিন হোসেন প্রতি ১৪.২ বলে ১টি উইকেট এবং ১৬.৯৭ রান দিয়ে একটি উইকেট পান তিনি। যদিও লম্বা সময় দলের বাইরে তিনি।

সাকিব, মোস্তাফিজ, তাসকিন, শরীফুল ইসলাম, মোহাম্মদ সালেহউদ্দিন, শেখ মেহেদী, মেহেদী হাসান মিরাজদের চেয়েও কম বলে উইকেট নেন রিশাদ হোসেন। বোলিং গড়ও তাঁর চেয়ে ভালো শুধু মোস্তাফিজের (অনেকটা কাছাকাছি)।

রিশাদ-হোসেন-৩

মিডল অর্ডার ধ্বংসে দুর্দান্ত

লেগ স্পিন হলো মাঝ ওভারে উইকেট তুলে নেওয়ার অস্ত্র। সেই কাজে মোটামুটি দারুণ সফল রিশাদ। পরিসংখ্যান বলছে—রিশাদ ১ নম্বরে নামা ব্যাটারকে টি-টোয়েন্টিতে আউট করেছেন ৫ বার, দুই নম্বরে নামা ব্যাটারকে ৪ বার (দুই ওপেনার)। ৩ নম্বর ব্যাটারকে ৭,৪ নম্বর ব্যাটারকে ৫ বার, ৫ নম্বর ব্যাটারকে ৮,৬ নম্বর ব্যাটারকে ৭ বার ড্রেসিংরুমে ফিরিয়েছেন। মিডল অর্ডারের জন্য তাঁর বোলিং গড়ও দারুণ সমৃদ্ধ। সবচেয়ে খরচে ওপেনারদের কাছে।

ডানহাতি ব্যাটারদের ৩৩ বার আর বাঁহাতি ব্যাটারদের ১৪ বার ফিরিয়েছেন রিশাদ। বাঁহাতিদের বিপক্ষে তাঁকে আরও কৌশলী ও ধারালো হওয়ার কথাই বলে। তবে বোলিং গড় বেশ কাছাকাছি—ডানহাতির জন্য ১৭.০৬, বাঁহাতি ব্যাটারের বিপক্ষে ২০.২৮। উন্নতির জায়গা তো রয়েছেই।

বিশ্ব তারকাদের সঙ্গে রিশাদ কোথায়

বর্তমান সময়ের সেরা লেগ স্পিনার ও অফ স্পিনারদের সঙ্গেও রিশাদ পাল্লা দিয়ে ছুটছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি রশিদ খান। ৯৬ ইনিংসে ১৬১ উইকেট তাঁর। প্রতি ১৩.৬ বলে একটি উইকেট নেন তিনি। বোলিং গড় বা প্রতি ১৩.৮০ রান প্রতি উইকেটে তাঁর খরচ পড়ে। এ জন্যই তাঁকে বিশ্বসেরা লেগ স্পিনার বলা হয় বর্তমান সময়ের। দুই তালিকায় দুই নম্বরে থাকা সাকিবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে ইতিমধ্যে। নিউজিল্যান্ডের ইশ সোধি ১২০ ইনিংসে ১৪৬ উইকেট নিয়েছেন এই ফরম্যাটে। তবে তিনি রিশাদের চেয়ে বেশ খরচে। স্ট্রাইকরেট ১৭.২, বোলিং গড় ২৩.০৬।

ইংল্যান্ডের আদিল রশিদ ১২২ ইনিংসে শিকার করেছেন ১৩৫ উইকেট। এই তারকা ক্রিকেটারের স্ট্রাইকরেট ১৯.৭ ও বোলিং গড় ২৪.৪৫। ১২০ ইনিংসে ১৩১ উইকেট হাসারাঙ্গার। ১৩.২ বোলিং স্ট্রাইকরেট, বোলিং গড় ১৫.৬১। অ্যাডাম জাম্পার স্ট্রাইকরেট ১৭.০৫ এবং বোলিং গড় ২১.০০। পাকিস্তানের শাদাব খানের বোলিং স্ট্রাইকরেট ১৯.৮ আর বোলিং গড় ২৪.৩৭।

রিশাদ এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজের ঘূর্ণি জাদুর কার্যকারিতা দেখিয়েছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ, পাকিস্তান সুপার লিগ, গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগেও নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছেন, জিতেছেন শিরোপাও। উইকেট যেমনই হোক, বিশ্বের যে প্রান্তেই হোক—সেখানে ঝলক দেখানোই বিশ্বমানের বোলারদের পরিচয়। লেগ ব্রেকে দারুণ কার্যকর রিশাদ, টপ স্পিন, ফ্লিপারও আয়ত্তে রয়েছে তাঁর। তবে লেগ স্পিনে বড় বৈচিত্র্য ‘গুগলি’। অস্ত্রের ঝুলিতে সব একসঙ্গে থাকলে ব্যাটারদের ঘুম হারাম করে দিতে পারেন রিশাদও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত