বিভুরঞ্জন সরকার
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গত ২৪ মার্চ ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুরে যান। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ যান। দেবীগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে সারজিস আলম জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন। সারজিস আলমের বাড়ি আটোয়ারী উপজেলায়।
নতুন রাজনৈতিক দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার পর প্রথমবার বাড়ি যাওয়ার পথে সারজিস আলমের এই ‘শোডাউন’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। জারা আশা করেছেন, সারজিস আলম জনগণের সামনে এর একটি গ্রহণযোগ্য ও পরিষ্কার ব্যাখ্যা তুলে ধরবেন। এতে জনগণের কাছে এনসিপির ভাবমূর্তি আরও শক্তিশালী হবে। সারজিস আলম জারার প্রশ্নের জবাব দিতে দেরি করেননি। তাঁদের দুজনের পুরো বক্তব্যই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে।
এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামের নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের দুজন প্রথম সারির সংগঠক তাসনিম জারা ও সারজিস আলমের মধ্যে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে কোনোভাবেই কেবল ব্যক্তি দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জারা যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির আহ্বান জানাচ্ছেন, সেখানে সারজিস মূলধারার বাস্তবতাকে অস্বীকার না করেই পরিবর্তনের পথে সময় ও কৌশলের গুরুত্ব তুলে ধরছেন।
এই বিতর্ক শুধু এনসিপির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতবিরোধই নয়, বরং বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি চিত্রও বটে। এটি বুঝতে হলে আমাদের তিনটি দিক থেকে বিচার করতে হবে— (১) বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক বাস্তবতা, (২) নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের চ্যালেঞ্জ এবং (৩) জারা ও সারজিসের বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য।
সারজিস আলমের বক্তব্যের মূল সুর হলো, শুধু নৈতিকতার কথা বলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শক্তির ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক শক্তি শুধু ভোটের মাধ্যমে আসে না, বরং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, মাঠের দখল, প্রতিপক্ষকে মোকাবিলার সক্ষমতা এবং জনমানসে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতার সঙ্গেও তা গভীরভাবে যুক্ত।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতার রাজনীতির এই বাস্তবতা স্পষ্ট। স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই মূলত জনসংযোগের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভর করেছে। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসন, ১৯৯০–এর গণ–আন্দোলন, ২০০৮–এর নির্বাচনী রাজনীতি—সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, রাজনৈতিক শক্তির প্রমাণ না থাকলে মাঠের রাজনীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সারজিস যখন বলেন, ‘ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়’, তখন এটি নিছক আত্মপক্ষ সমর্থন নয়, বরং বাস্তব এক সতর্কবার্তা। নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ সামাজিক মাধ্যমে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু মাঠের বাস্তবতায় তারা মুখ থুবড়ে পড়ে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনেক ছোট রাজনৈতিক দলের উত্থান ও বিলুপ্তি দেখলেই বোঝা যায়, শুধু ‘নৈতিক উচ্চতা’ ধরে রেখে টিকে থাকা যায় না।
তাসনিম জারা যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, তা হলো নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন—‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে এত বড় গাড়িবহর কীভাবে এল?’ এই প্রশ্ন শুধু সারজিসের ব্যক্তি–আর্থিক অবস্থা নিয়ে নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক দল কীভাবে অর্থায়ন করে, কীভাবে জনসংযোগ তৈরি করে এবং কীভাবে প্রচলিত রাজনৈতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়েও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে—তা নিয়ে।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কীভাবে তারা জনগণের সমর্থন পাবে এবং একই সঙ্গে প্রচলিত রাজনীতির কৌশল এড়িয়ে চলতে পারবে। সারজিসের বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন সংস্কৃতি গড়তে হলে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনতে হবে—একবারে সবকিছু বদলানো সম্ভব নয়।
এর বাস্তব উদাহরণ আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশের রাজনীতিতেও দেখতে পাই। ভারতীয় রাজনীতিতে আম আদমি পার্টি (এএপি) যখন নতুন ধরনের রাজনীতি শুরু করেছিল, তখন তারা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো প্রচারণার জন্য বিশাল ফান্ড জোগাড় করতে পারেনি। তাই তারা স্বচ্ছতার নামে সীমিত ফান্ড সংগ্রহের দিকে গিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তারাও অনেক পুরোনো কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, যা তাদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সারজিস যখন বলেন, ‘আমরা নতুন বন্দোবস্ত চাই, কিন্তু সেটি একদিনে সম্ভব নয়’, তখন এটি কৌশলগত বাস্তবতা। প্রশ্ন হলো, এই নতুন বন্দোবস্ত তৈরির জন্য কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? নতুন রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে অর্থায়ন করবে, কৌশল নেবে এবং পরিবর্তন আনবে—তা স্পষ্ট না হলে, তাদের ওপর আস্থা তৈরি করা কঠিন।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে দুটি পথ খোলা—
(ক) যেখানে দলটি কোনো ধরনের রাজনৈতিক চাতুর্য বা পুরোনো কৌশল গ্রহণ না করে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক একটি পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
(খ) যেখানে কিছু পুরোনো পদ্ধতি গ্রহণ করে, জনগণের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে।
সারজিস ও জারার বিতর্ক এই দুটি পথের দ্বন্দ্বকেই উন্মোচিত করছে। জারা মনে করেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হলে শুরু থেকেই নৈতিক অবস্থান নিতে হবে, অন্যথায় জনগণের আস্থা হারাবে। অন্যদিকে, সারজিস মনে করেন, বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে পরিবর্তনের দিকে এগোতে হবে, নয়তো রাজনীতি করার সুযোগই থাকবে না।
সারজিস ও জারার বিতর্ক প্রমাণ করে যে, নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হলে দুটি জিনিস জরুরি—
১. নৈতিক অবস্থান বজায় রাখা: যাতে দলটি আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হয় এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকে।
২. বাস্তব রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা: যাতে দলটি মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারে এবং ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রবেশ করতে পারে।
এনসিপি যদি কেবল ফেসবুক ও নৈতিকতার রাজনীতি করে, তাহলে তারা রাজনৈতিক বাস্তবতায় টিকে থাকতে পারবে না। আবার যদি তারা প্রচলিত রাজনীতির পুরোনো কৌশল গ্রহণ করে, তাহলে তারা জনগণের আস্থা হারাবে।
বাংলাদেশে সত্যিকারের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকটি জারা ও সারজিসের বিতর্কে সামান্য হলেও সামনে এসেছে। রাজনীতির মাঠের বাস্তবতা ও নৈতিক অবস্থানের মধ্যে সুষম সমাধান না খুঁজে দোষারোপের ধারা অনুসরণ করে যে সুফল পাওয়া যাবে না—এটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম গত ২৪ মার্চ ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুরে যান। সেখান থেকে তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ যান। দেবীগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে সারজিস আলম জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন। সারজিস আলমের বাড়ি আটোয়ারী উপজেলায়।
নতুন রাজনৈতিক দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার পর প্রথমবার বাড়ি যাওয়ার পথে সারজিস আলমের এই ‘শোডাউন’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা–সমালোচনা চলছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা। জারা আশা করেছেন, সারজিস আলম জনগণের সামনে এর একটি গ্রহণযোগ্য ও পরিষ্কার ব্যাখ্যা তুলে ধরবেন। এতে জনগণের কাছে এনসিপির ভাবমূর্তি আরও শক্তিশালী হবে। সারজিস আলম জারার প্রশ্নের জবাব দিতে দেরি করেননি। তাঁদের দুজনের পুরো বক্তব্যই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে।
এনসিপি (জাতীয় নাগরিক পার্টি) নামের নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের দুজন প্রথম সারির সংগঠক তাসনিম জারা ও সারজিস আলমের মধ্যে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে যে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, সেটিকে কোনোভাবেই কেবল ব্যক্তি দ্বন্দ্ব হিসেবে দেখা ঠিক হবে না। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা সম্পর্কেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জারা যেখানে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির আহ্বান জানাচ্ছেন, সেখানে সারজিস মূলধারার বাস্তবতাকে অস্বীকার না করেই পরিবর্তনের পথে সময় ও কৌশলের গুরুত্ব তুলে ধরছেন।
এই বিতর্ক শুধু এনসিপির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক মতবিরোধই নয়, বরং বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি চিত্রও বটে। এটি বুঝতে হলে আমাদের তিনটি দিক থেকে বিচার করতে হবে— (১) বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক বাস্তবতা, (২) নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠনের চ্যালেঞ্জ এবং (৩) জারা ও সারজিসের বক্তব্যের রাজনৈতিক তাৎপর্য।
সারজিস আলমের বক্তব্যের মূল সুর হলো, শুধু নৈতিকতার কথা বলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা, প্রতিপত্তি ও শক্তির ওপর নির্ভরশীল। রাজনৈতিক শক্তি শুধু ভোটের মাধ্যমে আসে না, বরং সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা, মাঠের দখল, প্রতিপক্ষকে মোকাবিলার সক্ষমতা এবং জনমানসে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতার সঙ্গেও তা গভীরভাবে যুক্ত।
বাংলাদেশের ইতিহাসে ক্ষমতার রাজনীতির এই বাস্তবতা স্পষ্ট। স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষমতা ধরে রাখার লড়াই মূলত জনসংযোগের পাশাপাশি পৃষ্ঠপোষকতার ওপর নির্ভর করেছে। ১৯৭৫ পরবর্তী সামরিক শাসন, ১৯৯০–এর গণ–আন্দোলন, ২০০৮–এর নির্বাচনী রাজনীতি—সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে, রাজনৈতিক শক্তির প্রমাণ না থাকলে মাঠের রাজনীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
সারজিস যখন বলেন, ‘ফেসবুকের রাজনীতি আর মাঠের রাজনীতি এক নয়’, তখন এটি নিছক আত্মপক্ষ সমর্থন নয়, বরং বাস্তব এক সতর্কবার্তা। নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বড় অংশ সামাজিক মাধ্যমে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখে, কিন্তু মাঠের বাস্তবতায় তারা মুখ থুবড়ে পড়ে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনেক ছোট রাজনৈতিক দলের উত্থান ও বিলুপ্তি দেখলেই বোঝা যায়, শুধু ‘নৈতিক উচ্চতা’ ধরে রেখে টিকে থাকা যায় না।
তাসনিম জারা যে বিষয়টি তুলে ধরেছেন, তা হলো নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি কতটা বাস্তবসম্মত। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন—‘স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির জায়গা থেকে এত বড় গাড়িবহর কীভাবে এল?’ এই প্রশ্ন শুধু সারজিসের ব্যক্তি–আর্থিক অবস্থা নিয়ে নয়, বরং নতুন রাজনৈতিক দল কীভাবে অর্থায়ন করে, কীভাবে জনসংযোগ তৈরি করে এবং কীভাবে প্রচলিত রাজনৈতিক পদ্ধতির বাইরে গিয়েও জনপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে—তা নিয়ে।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, কীভাবে তারা জনগণের সমর্থন পাবে এবং একই সঙ্গে প্রচলিত রাজনীতির কৌশল এড়িয়ে চলতে পারবে। সারজিসের বক্তব্য অনুযায়ী, নতুন সংস্কৃতি গড়তে হলে ধাপে ধাপে পরিবর্তন আনতে হবে—একবারে সবকিছু বদলানো সম্ভব নয়।
এর বাস্তব উদাহরণ আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশের রাজনীতিতেও দেখতে পাই। ভারতীয় রাজনীতিতে আম আদমি পার্টি (এএপি) যখন নতুন ধরনের রাজনীতি শুরু করেছিল, তখন তারা ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর মতো প্রচারণার জন্য বিশাল ফান্ড জোগাড় করতে পারেনি। তাই তারা স্বচ্ছতার নামে সীমিত ফান্ড সংগ্রহের দিকে গিয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর তারাও অনেক পুরোনো কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, যা তাদের নৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
সারজিস যখন বলেন, ‘আমরা নতুন বন্দোবস্ত চাই, কিন্তু সেটি একদিনে সম্ভব নয়’, তখন এটি কৌশলগত বাস্তবতা। প্রশ্ন হলো, এই নতুন বন্দোবস্ত তৈরির জন্য কত দিন অপেক্ষা করতে হবে? নতুন রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে অর্থায়ন করবে, কৌশল নেবে এবং পরিবর্তন আনবে—তা স্পষ্ট না হলে, তাদের ওপর আস্থা তৈরি করা কঠিন।
নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে দুটি পথ খোলা—
(ক) যেখানে দলটি কোনো ধরনের রাজনৈতিক চাতুর্য বা পুরোনো কৌশল গ্রহণ না করে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক একটি পদ্ধতি অনুসরণ করবে।
(খ) যেখানে কিছু পুরোনো পদ্ধতি গ্রহণ করে, জনগণের চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশ করার চেষ্টা করবে।
সারজিস ও জারার বিতর্ক এই দুটি পথের দ্বন্দ্বকেই উন্মোচিত করছে। জারা মনে করেন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হলে শুরু থেকেই নৈতিক অবস্থান নিতে হবে, অন্যথায় জনগণের আস্থা হারাবে। অন্যদিকে, সারজিস মনে করেন, বাস্তবতার মাটিতে দাঁড়িয়ে পরিবর্তনের দিকে এগোতে হবে, নয়তো রাজনীতি করার সুযোগই থাকবে না।
সারজিস ও জারার বিতর্ক প্রমাণ করে যে, নতুন রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হলে দুটি জিনিস জরুরি—
১. নৈতিক অবস্থান বজায় রাখা: যাতে দলটি আদর্শ থেকে বিচ্যুত না হয় এবং জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য থাকে।
২. বাস্তব রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করা: যাতে দলটি মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারে এবং ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রবেশ করতে পারে।
এনসিপি যদি কেবল ফেসবুক ও নৈতিকতার রাজনীতি করে, তাহলে তারা রাজনৈতিক বাস্তবতায় টিকে থাকতে পারবে না। আবার যদি তারা প্রচলিত রাজনীতির পুরোনো কৌশল গ্রহণ করে, তাহলে তারা জনগণের আস্থা হারাবে।
বাংলাদেশে সত্যিকারের নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়তে সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকটি জারা ও সারজিসের বিতর্কে সামান্য হলেও সামনে এসেছে। রাজনীতির মাঠের বাস্তবতা ও নৈতিক অবস্থানের মধ্যে সুষম সমাধান না খুঁজে দোষারোপের ধারা অনুসরণ করে যে সুফল পাওয়া যাবে না—এটা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের যুগেও পাঠক সংবাদপত্রে চিঠি লেখেন—এটাই প্রমাণ করে, মুদ্রিত শব্দের আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। দ্রুত বদলে যাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমের ভিড়েও কিছু কথা থাকে, যা কাগজে ছাপা হয়ে আলো ছড়ায়।
১৭ মিনিট আগেঅপারেশন সার্চলাইটের নৃশংসতায় তখন আকাশে উড়ছে শকুন। রাজপথে চিৎকার করছে কুকুর। আকাশে ‘কা কা’ করে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে কাকেরা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সোনার বাংলাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে পাকিস্তানি হানাদারেরা।
৩ ঘণ্টা আগেসংগীত যাঁর ধ্যান, সাহিত্য যাঁর প্রাণ, আর দেশপ্রেম যাঁর জীবনদর্শন—তিনি সন্জীদা খাতুন। তাঁর নাম উচ্চারণ করলেই একধরনের আলো ছড়িয়ে পড়ে, যেটি জাতিসত্তা, চেতনাবোধ আর মননের প্রসারের আলো। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত সুর, তাঁর জীবনচর্চা, তাঁর মনন ও প্রজ্ঞা—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক অনন্য সাংস্কৃতিক চরিত্র।
৩ ঘণ্টা আগেএক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। এটি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান এ দিন আনন্দে মেতে ওঠে। বিভেদ ভুলে একে অপরকে আপন করে নেয়। ধনী-গরিব সবাই মিলে ঈদগাহে যায়, এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করে।
৩ ঘণ্টা আগে