আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের যুগেও পাঠক সংবাদপত্রে চিঠি লেখেন—এটাই প্রমাণ করে, মুদ্রিত শব্দের আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। দ্রুত বদলে যাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমের ভিড়েও কিছু কথা থাকে, যা কাগজে ছাপা হয়ে আলো ছড়ায়। এই চিঠিগুলো শুধু ব্যক্তিগত মতামত নয়, বরং সময়ের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা আর আনন্দ-বেদনার এক দলিল। প্রযুক্তির দাপটের মধ্যেও সংবাদপত্রের চিঠির পাতায় পাঠকের সরাসরি অংশগ্রহণ যেন এক নিরবচ্ছিন্ন ঐতিহ্য। ঈদ এলেও পাঠকের সেই কলম থামে না—হাসি-ঠাট্টা, স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার মিশেলে চিঠিগুলো হয়ে ওঠে আমাদের সবার কথা। পাঠকদের তেমন কয়েকটি চিঠি:
গ্রন্থাগারে ‘ঈদ সংখ্যা’ চাই
ঈদ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলো বৃহৎ কলেবরে ‘ঈদ সংখ্যা’ প্রকাশ করে থাকে। দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব কম নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারে ঈদ সংখ্যা থাকা জরুরি বলে মনে করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি সত্যিকারভাবে ঈদ সংখ্যা কেনে, তাহলে বিশাল পাঠকসমাজ গড়ে উঠবে। সমাজে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম ‘ডিভাইস আসক্তি’ থেকে কিছুটা হলেও বিরত থাকবে।
বিষয়ভিত্তিক বইয়ে সাধারণত নির্দিষ্ট ‘টপিক’ থাকে। কিন্তু ঈদ সংখ্যা হলো পাঁচমিশালি উপাদানের সম্ভার। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পেশাজীবী—সবার জন্যই ঈদ সংখ্যা একটি আকর্ষণীয় সাহিত্য উপকরণ। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের এটি অবশ্যই পড়া উচিত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রন্থাগারে ঈদ সংখ্যা কিনে শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ করে দিতে পারে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা
ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ
ঈদুল ফিতর সন্নিকটে। ইতিমধ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে অনেকেই। জীবন-জীবিকার তাগিদে ইটপাথরের শহরে বসবাস করলেও সবার মন পড়ে থাকে নিজ গ্রামে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। ঈদে মানুষ প্রধানত রেল, সড়ক ও নৌপথেই যাত্রা করে। বিশেষ করে সড়কপথ নিরাপদ রাখা জরুরি। প্রতিবছর উৎসব উদ্যাপন করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তির অন্যতম কারণ। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা বা বেপরোয়া গতিতে চালানো এবং অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ফলে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। এ সময় চালক পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে গাড়ি চালানোর ফলেও দুর্ঘটনা ঘটে।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
আল আমীন, মানিকগঞ্জ
গাজায় মৃত্যু আর ক্ষুধার ঈদ
উৎসব আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে পুনর্মিলনে উজ্জীবিত করে। বছর ঘুরে ঈদ আসে, যা শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ঈদ হলো সামাজিক বন্ধনের অন্যতম উৎসব। এর প্রভাব ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও আনন্দ বয়ে আনে।
ঈদ বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ ও সমতার বার্তার শিক্ষা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি, বিশ্ববাসীর প্রতিবাদ—কোনো কিছু আমলে না নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজাবাসীর কাছে ঈদ মানে কান্না, ক্ষুধা, স্বজন হারানোর বেদনা। পুরো বিশ্ব যখন আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে আনন্দ করবে, তখন তারা বোমার শব্দে ছোটাছুটি করবে, ধ্বংসস্তূপের মাঝে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন আর লন্ডভন্ড ভবনের ছায়ায় আতঙ্কে দিন পার করবে। যে শিশুটির ঈদে সালামি আর বেড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, সে হয়তো নতুন পোশাকের পরিবর্তে জড়িয়ে থাকবে স্বজনের রক্তমাখা কাপড়ে।
বন্ধ হোক যুদ্ধ ও অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। প্রতিটি দেশ তার সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিতে বসবাসের অধিকার ফিরে পাক।
রকিবুল হক সায়েম, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম
ঈদের বাজার এবং আমার পকেট
ঈদ এলেই মনে হয়, আমি কি অর্থমন্ত্রী? কেননা, বাজারে ঢুকলেই সবকিছু এত দামি লাগে, যেন আমি দেশের বাজেট নিয়ে গবেষণায় নেমেছি! ছোটবেলায় আব্বু ৫০০ টাকা দিলেই রাজকীয় শপিং হয়ে যেত। আর এখন? ৫ হাজারেও কিছু হয় না!
দোকানে ঢুকে এক পাঞ্জাবির দাম জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার এমনভাবে তাকালেন, যেন আমি ‘ক্রেতা’ নই, ‘তদন্ত কর্মকর্তা’! ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে বুঝলাম, আমাদের পকেট যত ছোট, দোকানদারের হাসি তত বড়!
মুনতাসির, গাজীপুর
ঈদ কার্ডের সোনালি স্মৃতি
ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, ঈদ সালামি আর সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল ঈদকার্ড দেওয়া ও পাওয়া। ডিজিটাল যুগে ঈদ শুভেচ্ছা জানানো হয় মোবাইল বার্তায় বা সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু ঈদকার্ডের সেই ভালোবাসা ও আবেগের গভীরতা সত্যিই ছিল অন্য রকম।
একসময় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ঈদকার্ডের ছোট্ট দোকানের পসরা নিয়ে বসত দোকানিসহ কিশোর-কিশোরীরা। তখন স্কুল বা পাড়ার বন্ধুদের মাঝে কার্ড বিনিময় ছিল ঈদের আনন্দের অন্যতম অংশ। ঈদের আগের দিন বন্ধুর হাতে কার্ড তুলে দেওয়ার মধ্যে ছিল এক অন্য রকম আনন্দের ব্যাপার।
কালের আবর্তে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ঈদ কার্ডের প্রচলন অনেক কমে গেছে। ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর এই চমৎকার ঐতিহ্য যদি আবার ফিরে আসে, তাহলে ঈদের উৎসব আরও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠবে।
আলতাফ হোসেন হৃদয় খান, ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঈদের নামাজের জামাত ও জুতো বদল
ঈদের নামাজের পর আমার সবচেয়ে বড় ভয়—আমার নতুন জুতা খুঁজে পাওয়া যাবে তো?
একবার নামাজ শেষে দেখি, আমার চকচকে নতুন জুতার বদলে পড়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স্ক স্যান্ডেল! মনে হলো, কেউ একজন আমার নতুন জুতা নিয়ে আমাকে তার ‘ঐতিহ্যবাহী’ স্যান্ডেল উপহার দিয়েছে!
বাড়ি ফেরার পথে ভাবলাম, ঈদের দিনে নতুন পোশাক পরলেও জুতা বদল হওয়া যেন এক ‘ঈদীয় সংস্কৃতি’ হয়ে গেছে!
সীমান্ত, কেরানীগঞ্জ
অতিরিক্ত ভাড়া
পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য শহর থেকে গ্রামে পাড়ি জমায় হাজার হাজার মানুষ। কেউ যায় বাসে, ট্রেনে আবার কেউ যায় লঞ্চে। কিন্তু ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা ঝুঁকির সঙ্গে বড় বিপত্তি হলো অতিরিক্ত ভাড়া। যাত্রীদের জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়া থেকে দ্বিগুণ বা তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। প্রতিবছর প্রশাসনের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে ঈদের ১০ দিন আগে ও পরে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় যেন না করতে পারে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর অবস্থান গ্রহণের অনুরোধ করছি।
মোহাম্মদ আল-আমিন, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদের সালামি–ছোটদের বিজয়
ছোট ভাই এবার ঈদের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছে। সে ঠিক করেছে, বড়দের থেকে সালামি তুলতে হলে একটু অভিনয় করতে হবে!
প্রথমে আব্বুর সামনে গিয়ে বলল, ‘আব্বু, তোমার ঈদ মোবারক!’ আব্বু খুশি হয়ে পঞ্চাশ টাকা দিলেন। একটু পর আম্মুর কাছে গিয়ে বলল, ‘আম্মু, তুমি তো আমাকে বেশি ভালোবাসো, তাই না?’ সঙ্গে সঙ্গে আম্মুর কাছ থেকেও টাকা!
এভাবে পুরো বাসার বড়দের কাছ থেকে সালামি তুলে নিয়ে যখন আমি ভাগ চাইতে গেলাম, সে বলল, ‘তুমি তো বড়, তোমার তো উপার্জন আছে!’ বুঝলাম, ঈদে সালামির আসল আনন্দ ছোটদের একচেটিয়া বিজয়!
রিফাত, বোদা, পঞ্চগড়
টিকিট সিন্ডিকেট
ঈদের সময় সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা অনলাইনেও টিকিট কিনতে পারে না। কাউন্টারে নির্দিষ্টসংখ্যক টিকিট বরাদ্দের গল্প শুনিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। অথচ ঠিক সেই সময়ই একশ্রেণির দালালের কাছে পাওয়া যায় সেই ‘নেই’ হয়ে যাওয়া টিকিট, কয়েক গুণ বেশি দামে! এটা কীভাবে সম্ভব? এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে, যারা নিজেদের স্বার্থে পুরো ব্যবস্থাটাকেই জিম্মি করে রেখেছে।
এ সময় বাংলাদেশ বিমানের টিকিটের দুর্নীতি নিয়ে না বললেই নয়। বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে চলেছে, অথচ টিকিটের দাম কমে না, বরং বাড়তেই থাকে। সৌদি আরবগামী ফ্লাইটের টিকিটের দাম একসময় দেড় লাখ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সরকার নিয়ম করল—পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে টিকিট বুকিং করতে হবে। ফলে টিকিটের দাম ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ৭০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে সেই টিকিট, যা আগে ছিল দেড় লাখ! ট্রেনের অবস্থাও একই রকম। টিকিট পেতে চাইলে যুদ্ধ করতে হয়, কিন্তু কোথাও না কোথাও দুর্নীতি চলছেই। প্রশ্ন হলো, যদি ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে রেল খাত কেন লোকসান গোনে?
এই সিন্ডিকেটের শিকড় উপড়ে না ফেললে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোনো দিন কমবে না।
ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন, শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
শৈশবের সেমাই
একটা কথা ভাবলে কষ্ট হয়—আমাদের শৈশবের ঈদ কি বেশি সুন্দর ছিল? নাকি আমরা বড় হয়েছি বলে ঈদের আনন্দ কমে গেছে?
ছোটবেলায় মা যখন ঈদের দিন সকালে সেমাই রান্না করতেন, সে এক স্বর্গীয় স্বাদ! এখনকার ‘ফাস্টফুড টাইপ’ সেমাই খেতে গিয়ে মনে হয়, স্বাদ কম, স্মৃতি বেশি! ঈদের দিন এখন সবাই ব্যস্ত মোবাইল ফোনে উইশ পাঠাতে, অথচ আগে আমরা ছোটখাটো ঈদের উৎসব করতাম আত্মীয়দের সঙ্গে।
তবু ঈদ আসে, মনে করিয়ে দেয়—শৈশবের দিনগুলো যত দূরেই থাক, স্মৃতির সেমাই কখনো বাসি হয় না!
মাহবুব সিয়াম, লক্ষ্মীপুর
ই-মেইল, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রামের যুগেও পাঠক সংবাদপত্রে চিঠি লেখেন—এটাই প্রমাণ করে, মুদ্রিত শব্দের আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি। দ্রুত বদলে যাওয়া যোগাযোগের মাধ্যমের ভিড়েও কিছু কথা থাকে, যা কাগজে ছাপা হয়ে আলো ছড়ায়। এই চিঠিগুলো শুধু ব্যক্তিগত মতামত নয়, বরং সময়ের অনুভূতি, অভিজ্ঞতা আর আনন্দ-বেদনার এক দলিল। প্রযুক্তির দাপটের মধ্যেও সংবাদপত্রের চিঠির পাতায় পাঠকের সরাসরি অংশগ্রহণ যেন এক নিরবচ্ছিন্ন ঐতিহ্য। ঈদ এলেও পাঠকের সেই কলম থামে না—হাসি-ঠাট্টা, স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার মিশেলে চিঠিগুলো হয়ে ওঠে আমাদের সবার কথা। পাঠকদের তেমন কয়েকটি চিঠি:
গ্রন্থাগারে ‘ঈদ সংখ্যা’ চাই
ঈদ উপলক্ষে জাতীয় দৈনিকগুলো বৃহৎ কলেবরে ‘ঈদ সংখ্যা’ প্রকাশ করে থাকে। দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুব কম নয়। এসব প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারে ঈদ সংখ্যা থাকা জরুরি বলে মনে করি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি সত্যিকারভাবে ঈদ সংখ্যা কেনে, তাহলে বিশাল পাঠকসমাজ গড়ে উঠবে। সমাজে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম ‘ডিভাইস আসক্তি’ থেকে কিছুটা হলেও বিরত থাকবে।
বিষয়ভিত্তিক বইয়ে সাধারণত নির্দিষ্ট ‘টপিক’ থাকে। কিন্তু ঈদ সংখ্যা হলো পাঁচমিশালি উপাদানের সম্ভার। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, পেশাজীবী—সবার জন্যই ঈদ সংখ্যা একটি আকর্ষণীয় সাহিত্য উপকরণ। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের এটি অবশ্যই পড়া উচিত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রন্থাগারে ঈদ সংখ্যা কিনে শিক্ষার্থীদের পড়ার সুযোগ করে দিতে পারে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের এ ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।
এমদাদ হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা
ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ
ঈদুল ফিতর সন্নিকটে। ইতিমধ্যে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে অনেকেই। জীবন-জীবিকার তাগিদে ইটপাথরের শহরে বসবাস করলেও সবার মন পড়ে থাকে নিজ গ্রামে।
ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। ঈদে মানুষ প্রধানত রেল, সড়ক ও নৌপথেই যাত্রা করে। বিশেষ করে সড়কপথ নিরাপদ রাখা জরুরি। প্রতিবছর উৎসব উদ্যাপন করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এ ছাড়া ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন ভোগান্তির অন্যতম কারণ। চালকের অসতর্কতা, অসচেতনতা বা বেপরোয়া গতিতে চালানো এবং অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের ফলে দুর্ঘটনা বেড়ে যায়। এ সময় চালক পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে গাড়ি চালানোর ফলেও দুর্ঘটনা ঘটে।সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করছি।
আল আমীন, মানিকগঞ্জ
গাজায় মৃত্যু আর ক্ষুধার ঈদ
উৎসব আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে পুনর্মিলনে উজ্জীবিত করে। বছর ঘুরে ঈদ আসে, যা শুধু মুসলমানদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ঈদ হলো সামাজিক বন্ধনের অন্যতম উৎসব। এর প্রভাব ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও আনন্দ বয়ে আনে।
ঈদ বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক মূল্যবোধ ও সমতার বার্তার শিক্ষা দেয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক আইন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি, বিশ্ববাসীর প্রতিবাদ—কোনো কিছু আমলে না নিয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। তাদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। গাজাবাসীর কাছে ঈদ মানে কান্না, ক্ষুধা, স্বজন হারানোর বেদনা। পুরো বিশ্ব যখন আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে আনন্দ করবে, তখন তারা বোমার শব্দে ছোটাছুটি করবে, ধ্বংসস্তূপের মাঝে হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন আর লন্ডভন্ড ভবনের ছায়ায় আতঙ্কে দিন পার করবে। যে শিশুটির ঈদে সালামি আর বেড়ানো নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা, সে হয়তো নতুন পোশাকের পরিবর্তে জড়িয়ে থাকবে স্বজনের রক্তমাখা কাপড়ে।
বন্ধ হোক যুদ্ধ ও অস্ত্রের প্রতিযোগিতা। প্রতিটি দেশ তার সার্বভৌমত্ব এবং শান্তিতে বসবাসের অধিকার ফিরে পাক।
রকিবুল হক সায়েম, বাকলিয়া, চট্টগ্রাম
ঈদের বাজার এবং আমার পকেট
ঈদ এলেই মনে হয়, আমি কি অর্থমন্ত্রী? কেননা, বাজারে ঢুকলেই সবকিছু এত দামি লাগে, যেন আমি দেশের বাজেট নিয়ে গবেষণায় নেমেছি! ছোটবেলায় আব্বু ৫০০ টাকা দিলেই রাজকীয় শপিং হয়ে যেত। আর এখন? ৫ হাজারেও কিছু হয় না!
দোকানে ঢুকে এক পাঞ্জাবির দাম জিজ্ঞেস করতেই দোকানদার এমনভাবে তাকালেন, যেন আমি ‘ক্রেতা’ নই, ‘তদন্ত কর্মকর্তা’! ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়ে বুঝলাম, আমাদের পকেট যত ছোট, দোকানদারের হাসি তত বড়!
মুনতাসির, গাজীপুর
ঈদ কার্ডের সোনালি স্মৃতি
ছোটবেলার ঈদ মানেই ছিল নতুন জামা, ঈদ সালামি আর সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল ঈদকার্ড দেওয়া ও পাওয়া। ডিজিটাল যুগে ঈদ শুভেচ্ছা জানানো হয় মোবাইল বার্তায় বা সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু ঈদকার্ডের সেই ভালোবাসা ও আবেগের গভীরতা সত্যিই ছিল অন্য রকম।
একসময় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ঈদকার্ডের ছোট্ট দোকানের পসরা নিয়ে বসত দোকানিসহ কিশোর-কিশোরীরা। তখন স্কুল বা পাড়ার বন্ধুদের মাঝে কার্ড বিনিময় ছিল ঈদের আনন্দের অন্যতম অংশ। ঈদের আগের দিন বন্ধুর হাতে কার্ড তুলে দেওয়ার মধ্যে ছিল এক অন্য রকম আনন্দের ব্যাপার।
কালের আবর্তে এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ঈদ কার্ডের প্রচলন অনেক কমে গেছে। ঈদের শুভেচ্ছা জানানোর এই চমৎকার ঐতিহ্য যদি আবার ফিরে আসে, তাহলে ঈদের উৎসব আরও হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠবে।
আলতাফ হোসেন হৃদয় খান, ঠিকানা প্রকাশে অনিচ্ছুক
ঈদের নামাজের জামাত ও জুতো বদল
ঈদের নামাজের পর আমার সবচেয়ে বড় ভয়—আমার নতুন জুতা খুঁজে পাওয়া যাবে তো?
একবার নামাজ শেষে দেখি, আমার চকচকে নতুন জুতার বদলে পড়ে আছে এক বৃদ্ধ, বয়স্ক স্যান্ডেল! মনে হলো, কেউ একজন আমার নতুন জুতা নিয়ে আমাকে তার ‘ঐতিহ্যবাহী’ স্যান্ডেল উপহার দিয়েছে!
বাড়ি ফেরার পথে ভাবলাম, ঈদের দিনে নতুন পোশাক পরলেও জুতা বদল হওয়া যেন এক ‘ঈদীয় সংস্কৃতি’ হয়ে গেছে!
সীমান্ত, কেরানীগঞ্জ
অতিরিক্ত ভাড়া
পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য শহর থেকে গ্রামে পাড়ি জমায় হাজার হাজার মানুষ। কেউ যায় বাসে, ট্রেনে আবার কেউ যায় লঞ্চে। কিন্তু ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা ঝুঁকির সঙ্গে বড় বিপত্তি হলো অতিরিক্ত ভাড়া। যাত্রীদের জিম্মি করে নির্ধারিত ভাড়া থেকে দ্বিগুণ বা তিন গুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হয়। প্রতিবছর প্রশাসনের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে ঈদের ১০ দিন আগে ও পরে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়।
নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় যেন না করতে পারে, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর অবস্থান গ্রহণের অনুরোধ করছি।
মোহাম্মদ আল-আমিন, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ঈদের সালামি–ছোটদের বিজয়
ছোট ভাই এবার ঈদের নতুন কৌশল আবিষ্কার করেছে। সে ঠিক করেছে, বড়দের থেকে সালামি তুলতে হলে একটু অভিনয় করতে হবে!
প্রথমে আব্বুর সামনে গিয়ে বলল, ‘আব্বু, তোমার ঈদ মোবারক!’ আব্বু খুশি হয়ে পঞ্চাশ টাকা দিলেন। একটু পর আম্মুর কাছে গিয়ে বলল, ‘আম্মু, তুমি তো আমাকে বেশি ভালোবাসো, তাই না?’ সঙ্গে সঙ্গে আম্মুর কাছ থেকেও টাকা!
এভাবে পুরো বাসার বড়দের কাছ থেকে সালামি তুলে নিয়ে যখন আমি ভাগ চাইতে গেলাম, সে বলল, ‘তুমি তো বড়, তোমার তো উপার্জন আছে!’ বুঝলাম, ঈদে সালামির আসল আনন্দ ছোটদের একচেটিয়া বিজয়!
রিফাত, বোদা, পঞ্চগড়
টিকিট সিন্ডিকেট
ঈদের সময় সাধারণ মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা অনলাইনেও টিকিট কিনতে পারে না। কাউন্টারে নির্দিষ্টসংখ্যক টিকিট বরাদ্দের গল্প শুনিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয় যাত্রীদের। অথচ ঠিক সেই সময়ই একশ্রেণির দালালের কাছে পাওয়া যায় সেই ‘নেই’ হয়ে যাওয়া টিকিট, কয়েক গুণ বেশি দামে! এটা কীভাবে সম্ভব? এর পেছনে শক্তিশালী সিন্ডিকেট আছে, যারা নিজেদের স্বার্থে পুরো ব্যবস্থাটাকেই জিম্মি করে রেখেছে।
এ সময় বাংলাদেশ বিমানের টিকিটের দুর্নীতি নিয়ে না বললেই নয়। বছরের পর বছর প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে চলেছে, অথচ টিকিটের দাম কমে না, বরং বাড়তেই থাকে। সৌদি আরবগামী ফ্লাইটের টিকিটের দাম একসময় দেড় লাখ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সরকার নিয়ম করল—পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে টিকিট বুকিং করতে হবে। ফলে টিকিটের দাম ৬০ শতাংশ কমে গেছে। ৭০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে সেই টিকিট, যা আগে ছিল দেড় লাখ! ট্রেনের অবস্থাও একই রকম। টিকিট পেতে চাইলে যুদ্ধ করতে হয়, কিন্তু কোথাও না কোথাও দুর্নীতি চলছেই। প্রশ্ন হলো, যদি ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়, তাহলে রেল খাত কেন লোকসান গোনে?
এই সিন্ডিকেটের শিকড় উপড়ে না ফেললে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ কোনো দিন কমবে না।
ফিয়াদ নওশাদ ইয়ামিন, শিক্ষার্থী, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ
শৈশবের সেমাই
একটা কথা ভাবলে কষ্ট হয়—আমাদের শৈশবের ঈদ কি বেশি সুন্দর ছিল? নাকি আমরা বড় হয়েছি বলে ঈদের আনন্দ কমে গেছে?
ছোটবেলায় মা যখন ঈদের দিন সকালে সেমাই রান্না করতেন, সে এক স্বর্গীয় স্বাদ! এখনকার ‘ফাস্টফুড টাইপ’ সেমাই খেতে গিয়ে মনে হয়, স্বাদ কম, স্মৃতি বেশি! ঈদের দিন এখন সবাই ব্যস্ত মোবাইল ফোনে উইশ পাঠাতে, অথচ আগে আমরা ছোটখাটো ঈদের উৎসব করতাম আত্মীয়দের সঙ্গে।
তবু ঈদ আসে, মনে করিয়ে দেয়—শৈশবের দিনগুলো যত দূরেই থাক, স্মৃতির সেমাই কখনো বাসি হয় না!
মাহবুব সিয়াম, লক্ষ্মীপুর
ঢাকার ঈদ উৎসব কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি বহু শতাব্দীর ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সামাজিক রীতিনীতির এক বর্ণিল প্রতিচ্ছবি। মুঘল আমল থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত এই উৎসবের রূপ ও রীতিতে অনেক পরিবর্তন এলেও এর মূল চেতনা আজও বহমান।
১৯ ঘণ্টা আগেঅপারেশন সার্চলাইটের নৃশংসতায় তখন আকাশে উড়ছে শকুন। রাজপথে চিৎকার করছে কুকুর। আকাশে ‘কা কা’ করে কর্কশ কণ্ঠে ডেকে কাকেরা বুঝিয়ে দিচ্ছে, সোনার বাংলাকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েই এগোচ্ছে পাকিস্তানি হানাদারেরা।
২ দিন আগেসংগীত যাঁর ধ্যান, সাহিত্য যাঁর প্রাণ, আর দেশপ্রেম যাঁর জীবনদর্শন—তিনি সন্জীদা খাতুন। তাঁর নাম উচ্চারণ করলেই একধরনের আলো ছড়িয়ে পড়ে, যেটি জাতিসত্তা, চেতনাবোধ আর মননের প্রসারের আলো। তাঁর কণ্ঠে উচ্চারিত সুর, তাঁর জীবনচর্চা, তাঁর মনন ও প্রজ্ঞা—সব মিলিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন এক অনন্য সাংস্কৃতিক চরিত্র।
২ দিন আগেএক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর। এটি মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান এ দিন আনন্দে মেতে ওঠে। বিভেদ ভুলে একে অপরকে আপন করে নেয়। ধনী-গরিব সবাই মিলে ঈদগাহে যায়, এক কাতারে ঈদের নামাজ আদায় করে।
২ দিন আগে