আশেকা ইরশাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক চেয়ারপারসন। তাঁর গবেষণার ক্ষেত্র জেন্ডার, ভূ-কৌশলগত ও আঞ্চলিক সম্পর্ক নিয়ে। ফিলিস্তিন পরিস্থিতিতে আরব বিশ্বের ভূমিকা, হামাসের কার্যকারিতাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা।
মাসুদ রানা
এবার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটে আরব দেশগুলো কেন কোনো কঠোর অবস্থানে যেতে পারল না?
বর্তমানে গাজায় মর্মান্তিক পরিস্থিতি চলছে। সেই জায়গায় আরব দেশগুলোর একটা শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অনেকের মতো আমিও প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তো দূরের কথা, কোনোভাবেই আলাদাভাবে শুধু কয়েকটি দেশ ছাড়া সৌদি আরব, কাতারসহ অনেক দেশ এ জায়গায় কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করছে না। এটা দুঃখজনক ব্যাপার।
এটার জন্য আমার কাছে বড় কারণটা মনে হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এসব দেশের, বিশেষ করে সামরিক, কৌশলগত অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত এবং তাদের রেজিমের প্রতি একধরনের সমর্থন আছে। যেহেতু এসব দেশ মার্কিনদের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা এতটাই বেশি যে এসব দেশে তাদের সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত গড়ে উঠতে দেখেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা ইউনাইটেড আরব আমিরাতের কথা বলতে পারি। এ কারণে আরব দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ন্যূনতম যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার কথা, তা করেনি। মুসলমান শব্দটা যদি বাদও দিই, শুধু মানবতার খাতিরেও তাদের যতটুকু ভূমিকা থাকার কথা ছিল, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ইসরায়েল বিষয়ে আরব বিশ্বে ঐকমত্য নেই। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
এটার জন্য ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব বিশ্বের ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের বিষয়টা দেখতে হবে। ইসরায়েল এবং আরব বিশ্বের সম্পর্কটা সব সময় নিয়ন্ত্রিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি যে সহমর্মিতার সম্পর্ক এবং সাপোর্ট বলেন, যেটা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকেও দেখেছি। এই দুই দেশের সম্পর্কটা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। তারা পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের মতো। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের রাজনীতির সম্পর্ক অনেক গভীর, যার বিশ্লেষণ করতে হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ইস্যুও এসে পড়ে। শক্তিশালী ইসরায়েলের লবি, মিডিয়ার ওপর দখল—সব মিলিয়ে সম্পর্কের মাত্রা বহুমাত্রিক। তারা এ জায়গায় পরস্পরের পরিপূরক।
আমরা যদি লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাব ১৯৭৪ সালের যুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে, সেভাবেই সেই পলিসির নিরিখে আরব বিশ্ব পালন করে আসছে। তাদের নিজস্ব কোনো বৈদেশিক নীতি নেই। তাদের নিজস্ব কোনো বৈদেশিক নীতির কোনো মৌলিক ব্যাপার নেই। দিনের পর দিন সেই বৈদেশিক নীতি স্বাভাবিক না হয়ে অস্বাভাবিকতার দিকে অগ্রসর হয়েছে। এবং একটা স্বার্থপর বৈদেশিক নীতি আরব বিশ্ব পালন করে চলছে।
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকলে এই যুদ্ধ থেকে কি বের হয়ে আসা সম্ভব?
বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ধরনের কথা বলছেন, তাঁর সেইসব কথাবার্তা এবং পলিসি গ্রহণের জায়গাগুলোর মধ্যে ফ্যাসিবাদী হিটলার, মুসোলিনির মতো মনে হচ্ছে। যদিও তাঁরা কিছু হাস্যকর কথা বলতেন। তাঁরা নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। যাঁরা পুরো পৃথিবীকে বিপদ এবং অশান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু হাস্যরসের মাধ্যমে কিছু কথা বললেও, সেই কথাগুলো কিন্তু অত্যন্ত বিপজ্জনক ধরনের। যে কথাগুলো পুরো বিশ্বকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। তিনি যেভাবে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীকে অন্য দেশে স্থানান্তর করে সেখানে আবাসন ব্যবসা করবেন—এ কথাগুলো কিন্তু একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে অগ্রসরের ইঙ্গিত দেয়। ইসরায়েল বিপরীত পক্ষের কোনো ধরনের বাধা ছাড়া এখন পর্যন্ত জেনোসাইড চালিয়ে যেতে পারছে। সম্প্রতি অকুপাইড ইস্ট জেরুজালেমে জাতিসংঘ দ্বারা পরিচালিত ১০টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তারা বলেছে, তোমরা কোনো ধরনের স্কুল পরিচালনা করতে পারবে না। এভাবে তারা প্রতিটি জায়গায় সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চায় ফিলিস্তিনিদের। সে জন্য আমার কাছে মনে হয়, অন্তত এই মুহূর্তে দুই-তিন মাসের মধ্যে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমি সেটার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।
যুদ্ধের মাধ্যমে এই সংকট কাটানো সম্ভব না। এ জন্য আলোচনা খুব জরুরি দরকার। সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘ বা অন্য অন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো কোনো ভূমিকা গ্রহণ করতে পারছে না কেন?
আমরা যদি আলাপ-আলোচনার কথা বলি, তাহলে কিছু দিন আগে যে যুদ্ধবিরতির কথা কাতারে হয়েছিল, সেটা ভঙ্গ করার কোনো কারণই ইসরায়েল কিন্তু উপস্থাপন করতে পারেনি। কেন তারা যুদ্ধবিরতিতে গেল না, তারা আবার কেন ফিলিস্তিনে বোমা নিক্ষেপ করল—তার কিন্তু কোনো সঠিক ব্যাখ্যা ইসরায়েলের কাছে নেই।
সে জায়গা থেকে স্পষ্ট যে যুদ্ধ দিয়ে এ সংকট কাটানো যাবে না। জাতিসংঘের একধরনের সমস্যা আছে। যেমন একটি রাষ্ট্রের কিছু সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে, কিন্তু জাতিসংঘের সেটা নেই। তাদেরকে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। তাই ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত শক্তিশালী রাষ্ট্রটি ইসরায়েলের অভিভাবক হয়ে ঢুকে বসে আছে। তাহলে জাতিসংঘ একাই এখানে কোনো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। ফলে জাতিসংঘ কোনোভাবেই ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন বন্ধে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
এ জায়গায় একটাই পথ খোলা আছে, সেটা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপামর জনসাধারণ যদি অভ্যন্তরীণভাবে বড় ধরনের প্রতিবাদ সংগ্রাম করে মার্কিন সরকারকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান থেকে সরাতে পারে, তাহলে কিছু একটা হলেও হতে পারে। বিশেষ করে ট্রাম্প সরকার বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে পণ্যের শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে না। কারণ, সব দেশের তো অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত আছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। সে জন্য নিপীড়িত ফিলিস্তিনবাসীর পক্ষে দাঁড়ানোর মতো তেমন কোনো রাষ্ট্রই নেই।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে ‘হামাস’-এর ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমার কাছে হামাসের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। একটা কথা হলো, ভায়োলেন্স দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায় না, সেটা আমরা বুঝি। ২০২৪ সালে হামাসের ভূমিকা বুঝতে হলে আমাদের আরও পেছনের দিকে তাকাতে হবে। হামাস তো এক দিনে তৈরি হয়নি। একই সঙ্গে হামাস যেসব কাজ করেছে, সেটা কোনোভাবেই সমর্থন করা যাবে না। আবার কেন তারা সেসব কাজ করেছে, সেটাও আমাদের বোঝা দরকার। হামাস ইসরায়েলের অনেক মানুষকে জিম্মি করেছিল, সেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। কিন্তু বিশ্বের একটি বিশেষ গোষ্ঠী দিনের পর দিন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, যখন তারা আর তাদের সামনে কোনো পথ খোলা দেখতে পায় না এবং তাদের সামনে শুধু অন্ধকার, তখন নিপীড়িত জনগোষ্ঠী ভুল হলেও সেই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। এ কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা আইনবহির্ভূত কাজ করে থাকে। কিন্তু তাতে আসলে সমস্যার সমাধান হয় না।
বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের সমর্থনে যে বিক্ষোভ হয়েছে, তার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত রূপ দেখা গেল লুটতরাজের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিকভাবে এ জন্য আমরা কি হেয় হলাম না?
অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিকভাবে এ জন্য হেয় হয়েছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ জন্য দুঃখ পেয়েছি। এ কাজটা যারা করেছে, তারা অবশ্যই সুযোগসন্ধানী লোক। কিছু লোক লোভের বশবর্তী হয়ে লুটতরাজের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা এমন সময়ে ঘটল, যখন আমাদের দেশে একটা বড় ধরনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেখান থেকে আমরা একটা বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি। এই অবস্থায় এ ধরনের কার্যাবলি সত্যিই দুঃখজনক। আশা করি, ভবিষ্যতেও আমরা যদি এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে থাকি, তাহলে নিজেরা নিজেদের ক্ষতি না করি।
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ কী?
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ আসলে কী, এটা বলা তো খুব কঠিন। তবে খুব সংক্ষিপ্ত করে বললে বলা যায়, গাজা বর্তমানে যে অবস্থার মধ্যে আছে, সেখানে আর মানুষের বেঁচে থাকার উপায় নেই। ফিলিস্তিনবাসীকে অন্য দেশে স্থানান্তরের জন্যই এ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। হয়তোবা কয়েক মাসের মধ্যে তাদেরকে বিদেশের মাটিতে শরণার্থী হিসেবে জীবনটা কাটাতে হবে। বিশেষ করে যারা গাজা ও রাফা উপত্যকার অধিবাসী।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকে এবং আজকের পত্রিকার কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ।
এবার ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটে আরব দেশগুলো কেন কোনো কঠোর অবস্থানে যেতে পারল না?
বর্তমানে গাজায় মর্মান্তিক পরিস্থিতি চলছে। সেই জায়গায় আরব দেশগুলোর একটা শক্ত ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান অনেকের মতো আমিও প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তো দূরের কথা, কোনোভাবেই আলাদাভাবে শুধু কয়েকটি দেশ ছাড়া সৌদি আরব, কাতারসহ অনেক দেশ এ জায়গায় কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করছে না। এটা দুঃখজনক ব্যাপার।
এটার জন্য আমার কাছে বড় কারণটা মনে হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এসব দেশের, বিশেষ করে সামরিক, কৌশলগত অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত এবং তাদের রেজিমের প্রতি একধরনের সমর্থন আছে। যেহেতু এসব দেশ মার্কিনদের প্রতি অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা এতটাই বেশি যে এসব দেশে তাদের সামরিক ঘাঁটি পর্যন্ত গড়ে উঠতে দেখেছি। এ ক্ষেত্রে আমরা ইউনাইটেড আরব আমিরাতের কথা বলতে পারি। এ কারণে আরব দেশগুলোর ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ন্যূনতম যে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার কথা, তা করেনি। মুসলমান শব্দটা যদি বাদও দিই, শুধু মানবতার খাতিরেও তাদের যতটুকু ভূমিকা থাকার কথা ছিল, সেটা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ইসরায়েল বিষয়ে আরব বিশ্বে ঐকমত্য নেই। এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?
এটার জন্য ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরব বিশ্বের ত্রিমাত্রিক সম্পর্কের বিষয়টা দেখতে হবে। ইসরায়েল এবং আরব বিশ্বের সম্পর্কটা সব সময় নিয়ন্ত্রিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের নিরিখে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলের প্রতি যে সহমর্মিতার সম্পর্ক এবং সাপোর্ট বলেন, যেটা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর থেকে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ থেকেও দেখেছি। এই দুই দেশের সম্পর্কটা মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠের মতো। তারা পরস্পরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গের মতো। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের রাজনীতির সম্পর্ক অনেক গভীর, যার বিশ্লেষণ করতে হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ইস্যুও এসে পড়ে। শক্তিশালী ইসরায়েলের লবি, মিডিয়ার ওপর দখল—সব মিলিয়ে সম্পর্কের মাত্রা বহুমাত্রিক। তারা এ জায়গায় পরস্পরের পরিপূরক।
আমরা যদি লক্ষ করি, তাহলে দেখতে পাব ১৯৭৪ সালের যুদ্ধের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে, সেভাবেই সেই পলিসির নিরিখে আরব বিশ্ব পালন করে আসছে। তাদের নিজস্ব কোনো বৈদেশিক নীতি নেই। তাদের নিজস্ব কোনো বৈদেশিক নীতির কোনো মৌলিক ব্যাপার নেই। দিনের পর দিন সেই বৈদেশিক নীতি স্বাভাবিক না হয়ে অস্বাভাবিকতার দিকে অগ্রসর হয়েছে। এবং একটা স্বার্থপর বৈদেশিক নীতি আরব বিশ্ব পালন করে চলছে।
ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন অব্যাহত থাকলে এই যুদ্ধ থেকে কি বের হয়ে আসা সম্ভব?
বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ধরনের কথা বলছেন, তাঁর সেইসব কথাবার্তা এবং পলিসি গ্রহণের জায়গাগুলোর মধ্যে ফ্যাসিবাদী হিটলার, মুসোলিনির মতো মনে হচ্ছে। যদিও তাঁরা কিছু হাস্যকর কথা বলতেন। তাঁরা নিষ্ঠুর প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। যাঁরা পুরো পৃথিবীকে বিপদ এবং অশান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু হাস্যরসের মাধ্যমে কিছু কথা বললেও, সেই কথাগুলো কিন্তু অত্যন্ত বিপজ্জনক ধরনের। যে কথাগুলো পুরো বিশ্বকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে পারে। তিনি যেভাবে ফিলিস্তিনের গাজাবাসীকে অন্য দেশে স্থানান্তর করে সেখানে আবাসন ব্যবসা করবেন—এ কথাগুলো কিন্তু একটা ভয়ংকর পরিস্থিতির দিকে অগ্রসরের ইঙ্গিত দেয়। ইসরায়েল বিপরীত পক্ষের কোনো ধরনের বাধা ছাড়া এখন পর্যন্ত জেনোসাইড চালিয়ে যেতে পারছে। সম্প্রতি অকুপাইড ইস্ট জেরুজালেমে জাতিসংঘ দ্বারা পরিচালিত ১০টি স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। তারা বলেছে, তোমরা কোনো ধরনের স্কুল পরিচালনা করতে পারবে না। এভাবে তারা প্রতিটি জায়গায় সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিহ্ন করতে চায় ফিলিস্তিনিদের। সে জন্য আমার কাছে মনে হয়, অন্তত এই মুহূর্তে দুই-তিন মাসের মধ্যে ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আমি সেটার কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না।
যুদ্ধের মাধ্যমে এই সংকট কাটানো সম্ভব না। এ জন্য আলোচনা খুব জরুরি দরকার। সে ক্ষেত্রে জাতিসংঘ বা অন্য অন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো কোনো ভূমিকা গ্রহণ করতে পারছে না কেন?
আমরা যদি আলাপ-আলোচনার কথা বলি, তাহলে কিছু দিন আগে যে যুদ্ধবিরতির কথা কাতারে হয়েছিল, সেটা ভঙ্গ করার কোনো কারণই ইসরায়েল কিন্তু উপস্থাপন করতে পারেনি। কেন তারা যুদ্ধবিরতিতে গেল না, তারা আবার কেন ফিলিস্তিনে বোমা নিক্ষেপ করল—তার কিন্তু কোনো সঠিক ব্যাখ্যা ইসরায়েলের কাছে নেই।
সে জায়গা থেকে স্পষ্ট যে যুদ্ধ দিয়ে এ সংকট কাটানো যাবে না। জাতিসংঘের একধরনের সমস্যা আছে। যেমন একটি রাষ্ট্রের কিছু সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে, কিন্তু জাতিসংঘের সেটা নেই। তাদেরকে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করতে হবে। তাই ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত শক্তিশালী রাষ্ট্রটি ইসরায়েলের অভিভাবক হয়ে ঢুকে বসে আছে। তাহলে জাতিসংঘ একাই এখানে কোনো কিছু করার ক্ষমতা রাখে না। ফলে জাতিসংঘ কোনোভাবেই ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন বন্ধে কোনো ভূমিকা পালন করতে পারছে না।
এ জায়গায় একটাই পথ খোলা আছে, সেটা হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আপামর জনসাধারণ যদি অভ্যন্তরীণভাবে বড় ধরনের প্রতিবাদ সংগ্রাম করে মার্কিন সরকারকে ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান থেকে সরাতে পারে, তাহলে কিছু একটা হলেও হতে পারে। বিশেষ করে ট্রাম্প সরকার বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে পণ্যের শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। তাতে কোনো রাষ্ট্রপ্রধানই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে না। কারণ, সব দেশের তো অর্থনৈতিক স্বার্থ জড়িত আছে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। সে জন্য নিপীড়িত ফিলিস্তিনবাসীর পক্ষে দাঁড়ানোর মতো তেমন কোনো রাষ্ট্রই নেই।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ যুদ্ধে ‘হামাস’-এর ভূমিকাকে আপনি কীভাবে দেখেন?
আমার কাছে হামাসের ভূমিকা স্পষ্ট নয়। একটা কথা হলো, ভায়োলেন্স দিয়ে সমস্যার সমাধান করা যায় না, সেটা আমরা বুঝি। ২০২৪ সালে হামাসের ভূমিকা বুঝতে হলে আমাদের আরও পেছনের দিকে তাকাতে হবে। হামাস তো এক দিনে তৈরি হয়নি। একই সঙ্গে হামাস যেসব কাজ করেছে, সেটা কোনোভাবেই সমর্থন করা যাবে না। আবার কেন তারা সেসব কাজ করেছে, সেটাও আমাদের বোঝা দরকার। হামাস ইসরায়েলের অনেক মানুষকে জিম্মি করেছিল, সেটা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য না। কিন্তু বিশ্বের একটি বিশেষ গোষ্ঠী দিনের পর দিন তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, যখন তারা আর তাদের সামনে কোনো পথ খোলা দেখতে পায় না এবং তাদের সামনে শুধু অন্ধকার, তখন নিপীড়িত জনগোষ্ঠী ভুল হলেও সেই পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। এ কারণে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা আইনবহির্ভূত কাজ করে থাকে। কিন্তু তাতে আসলে সমস্যার সমাধান হয় না।
বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের সমর্থনে যে বিক্ষোভ হয়েছে, তার একটি অনাকাঙ্ক্ষিত রূপ দেখা গেল লুটতরাজের মাধ্যমে। আন্তর্জাতিকভাবে এ জন্য আমরা কি হেয় হলাম না?
অবশ্যই আমরা আন্তর্জাতিকভাবে এ জন্য হেয় হয়েছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ জন্য দুঃখ পেয়েছি। এ কাজটা যারা করেছে, তারা অবশ্যই সুযোগসন্ধানী লোক। কিছু লোক লোভের বশবর্তী হয়ে লুটতরাজের ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।
এ ধরনের ঘটনা এমন সময়ে ঘটল, যখন আমাদের দেশে একটা বড় ধরনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যেখান থেকে আমরা একটা বড় ধরনের বিদেশি বিনিয়োগ আশা করছি। এই অবস্থায় এ ধরনের কার্যাবলি সত্যিই দুঃখজনক। আশা করি, ভবিষ্যতেও আমরা যদি এ ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করে থাকি, তাহলে নিজেরা নিজেদের ক্ষতি না করি।
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ কী?
ফিলিস্তিনের ভবিষ্যৎ আসলে কী, এটা বলা তো খুব কঠিন। তবে খুব সংক্ষিপ্ত করে বললে বলা যায়, গাজা বর্তমানে যে অবস্থার মধ্যে আছে, সেখানে আর মানুষের বেঁচে থাকার উপায় নেই। ফিলিস্তিনবাসীকে অন্য দেশে স্থানান্তরের জন্যই এ অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছে। হয়তোবা কয়েক মাসের মধ্যে তাদেরকে বিদেশের মাটিতে শরণার্থী হিসেবে জীবনটা কাটাতে হবে। বিশেষ করে যারা গাজা ও রাফা উপত্যকার অধিবাসী।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকে এবং আজকের পত্রিকার কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ।
সূর্যোদয় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এবার যে নববর্ষের আগমন, তা রাঙিয়ে দিয়ে যাক প্রত্যেক মানুষের জীবন। বাংলা নববর্ষের উজ্জীবনী সুধায় স্নান করুক মানুষ। আশা ও আকাঙ্ক্ষার স্বপ্নপূরণে সার্থক হোক পৃথিবী। গ্লানি, জ্বরা মুছে গিয়ে অগ্নিস্নানে ধরণিকে শুচি করার যে আহ্বান জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ...
১২ ঘণ্টা আগেবাংলা নববর্ষ বরণকে কেন্দ্র করে আমাদের নগরকেন্দ্রিক জীবনে উপচানো আবেগ-উচ্ছ্বাস উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই আবেগ-উচ্ছ্বাস জাতিগত পারস্পরিক সৌহার্দ্যের নয়, সমষ্টিগতও নয়, একান্তই আত্মকেন্দ্রিকতায় সীমাবদ্ধ।
১২ ঘণ্টা আগেনতুন বছরে প্রবেশ করলাম আমরা। পৃথিবীব্যাপী বসবাসরত নানা জনগোষ্ঠী যেমন নতুন বছরকে উৎসবের মাধ্যমে বরণ করে নেয়, তেমনি বাঙালিও নানা আনন্দ-আয়োজনের মাধ্যমে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়। একটি নতুন আশা, উদ্দীপনা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বছরের প্রথম দিনটিতে।
১২ ঘণ্টা আগেরাজনীতি যদি মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক হয়, তবে তা শুধু ঢাকার পিচঢালা রাস্তায় নয়, প্রতিটি ইউনিয়নের মাটির পথে প্রতিফলিত হতে হবে। কিন্তু আমাদের দেশে রাজনীতি যেন একটি দূরবর্তী বিষয়—শুধু খবরের কাগজে থাকে, জীবনের ভেতরে তা প্রবেশ করে না।
১ দিন আগে