Ajker Patrika

জয়দেবপুরে গুলি

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৩, ১০: ১২
জয়দেবপুরে গুলি

১৯ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকা থেকে ২০ মাইল দূরে জয়দেবপুর ও তার আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনীর গুলিতে এদিন ২০ ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে বেসরকারিভাবে জানানো হয়। বহু লোক আহত হয়। 

স্থানীয় অধিবাসীরা জানায়, এদিন বেলা আনুমানিক আড়াইটায় সেনাবাহিনীর কোনো কোনো কাজের প্রতিবাদে জয়দেবপুরে প্রায় ১০ হাজার লোক এক শোভাযাত্রা বের করে। তারা জয়দেবপুর রেলগেটের কাছে মালগাড়িসহ অন্যান্য ভারী জিনিসপত্র ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেয়। এ সময় সেনাবাহিনী স্থানীয় লোকদের ওপর গুলি  ছোড়ে। সেনাবাহিনীর গুলিতে ১৪ বছরের নেয়ামত ও ৪০ বছর বয়সী মনু খলিফা নামে দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জয়দেবপুর সেনাবাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘যারা মনে করেন, বুলেট বা শক্তি প্রয়োগের দ্বারা গণ-আন্দোলন স্তব্ধ করা যাবে, তারা আহম্মকের স্বর্গে বসবাস করছেন।’ 

ধানমন্ডির বাসভবনে সমবেত দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘সামরিক কর্তৃপক্ষ প্রচার করেছেন যে, সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেটা যদি সত্য হয়, তবে জয়দেবপুরের এক বাজারে গিয়ে সেনাবাহিনী নিরস্ত্র নাগরিকদের ওপর গুলি চালাল কীভাবে? ঢাকায় অবস্থানরত প্রেসিডেন্ট এবং সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে আমি এই প্রশ্নের জবাব চাই।’ 

নিজের বাড়ির সামনে শোভাযাত্রা করে আসা সমবেত বিক্ষুব্ধ বিজ্ঞান কর্মচারীদের উদ্দেশে শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের স্বাধিকার অর্জনের জন্য কোনো কিছুকেই অসাধ্য বলে বিবেচনা করা হবে না। বাংলাদেশের রাজপথ অলিগলি শহীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আজ আবার বাঙালির রক্তে জয়দেবপুরের মাটি সয়লাব হয়ে গেছে। আর কত রক্ত চাও, আর কত রক্ত পান করলে তোমাদের তৃষ্ণা মেটে? আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান চাই। আর তোমরা চাও অস্ত্রের জোরে শক্তির জোরে শাসন করতে। কিন্তু বাঙালিদের শক্তির জোরে দাবাইয়া রাখা যাবে না।’ 

ন্যাপের প্রধান মওলানা ভাসানী জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে শেখ মুজিবকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের কাছে আহ্বান জানান। ন্যাপের প্রধান মওলানা ভাসানী চট্টগ্রামে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তৃতা করার সময় বলেন, ‘এই অবস্থায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া অহেতুক ঢাকায় এসে সময় নষ্ট করছেন। প্রেসিডেন্টের বোঝা উচিত যে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা অর্পণ ভিন্ন পাকিস্তানকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার জানা উচিত, তিনি জনগণের প্রতিনিধি নন। সুতরাং জনগণের ওপর কর্তৃত্ব করার কোনো অধিকার নাই। সেনাবাহিনীর আস্থার ওপর তার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকা-না থাকা নির্ভর করে।’ 

দেশের রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়ার উপদেষ্টারা এদিন সন্ধ্যায় ঢাকার প্রেসিডেন্ট ভবনে এক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠক দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয় এবং তাতে উভয় পক্ষের তিনজন করে সদস্য যোগদান করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ ও ড. কামাল হোসেন। প্রেসিডেন্টের পক্ষে ছিলেন এ আর কর্নেলিয়াস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান। বৈঠক শেষে ধানমন্ডির বাসভবনে ফিরে তাজউদ্দীন আহমেদ অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, উপদেষ্টা পর্যায়ের বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক সমস্যাবলী ও সংশ্লিষ্ট বিষয় আলোচিত হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘কোনো ফর্মুলা সম্পর্কে আলাপ হোক আর না হোক, বহু কিছু সম্পর্কে আলাপ হয়েছে।’ শাসনতান্ত্রিক ইস্যু সম্পর্কে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কি না, প্রশ্ন করা হলে জনাব তাজউদ্দীন বলেন, ‘অবশ্যই শাসনতান্ত্রিক সংকট আজ দেশের মূল সমস্যা।’ 

এদিন বিশিষ্ট স্বাধীনতাসংগ্রামী ভাষা আন্দোলনে কারাবরণকারী নারায়ণগঞ্জের প্রবীণ নেতা খান সাহেব ওসমান আলী মারা যান। তিনি মরহুম এইচ এম সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। 

অসহযোগ আন্দোলনের অষ্টাদশ দিবসে ঢাকার পথে পথে ছিল মিছিল, বিক্ষোভ ও সমাবেশ। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজে স্বাধিকার আন্দোলনে সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের আশু আরোগ্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। 

পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো এদিন বলেন, ক্ষমতার ব্যাপারে তাদের হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্র করা হলে তিনি চুপ করে থাকবেন না। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনি পূর্ব পাকিস্তানের লোকদের শক্তি দেখেছেন, সরকার হলে পশ্চিম পাকিস্তানের শক্তি আপনারা দেখতে পাবেন।’ 

এদিকে পশ্চিম পাকিস্তানের ভুট্টোবিরোধী যুক্তফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ নেন পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকগণ। 

গ্রন্থনা: জাহীদ রেজা নূর

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

জোরপূর্বক অপুর স্বীকারোক্তি নিয়েছেন বিএনপির ইশরাক, এনসিপির ব্যবস্থা করা সংবাদ সম্মেলনে দাবি স্ত্রীর

‘মিরপুরের উইকেটের পাশে পুঁইশাক বের হচ্ছে, এত বছর হয়নি কেন’

ভোররাতে হাঁসের মাংস খেতে ৩০০ ফুটে যান আসিফ মাহমুদ, না পেয়ে যান ওয়েস্টিনে

উপদেষ্টা ফরিদা আখতার ভুলভাবে কথা বলেছেন: প্রেস সচিব

নীলা মার্কেটের হাঁসের মাংস নাকি ওয়েস্টিনের—কোনটি সেরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত